রিশফা -------- ১ম পর্ব

@Admin
0

 




 সময়টা ছিলো ২০১৫ সাল। সবে মাত্র অনার্স ১ম বর্ষে আমি। নিজের হাত খরচ চালানোর জন্য একটা টিউশনি করতাম। ছাত্রের বাবা ছিলো পুলিশ কর্মকর্তা। হঠাৎ-ই তার ট্রান্সফার হয়ে যায় অন্য কোথাও। তাই তারা চলে যায় আর আমার হাত খরচের মাধ্যমটাও হারিয়ে যায়।

তখন আমি অনেক খুঁজেও আরেকটা টিউশনি জোগাড় করতে পারলাম না।
তারপর একদিন রাতে আমার বন্ধু আবির কল করে বললো একটা টিউশনি আছে। ক্লাস নাইনের এক মেয়ে কে পড়াতে হবে। মেয়ের বাবা ইতালি থাকে। তাই বেতন নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। বাড়িয়েই দিবে। কিন্তু শর্ত হলো সপ্তাহে দুইদিন পড়াতে যেতে হবে রাত ঠিক ১১ টা থেকে ২ টা....।
এমন শর্ত শুনে আমি সাথে সাথে না বলে দেই। কারণ রাত ১১ থেকে পড়াতে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। সকালে আমার ক্লাড শুরু হয় ১০ টা বাজে। ঘুমাবো কখন এই টাইমে পড়াতে গেলে।
কিন্তু তারপর আবির যা বললো তাতে আমার ঘুম হারাম হয়ে গেলো। ও বললো ১৫ হাজার টাকা বেতন দিবে। এবার ভেবে দেখ।
তখন আমার কাছে ১৫ হাজার টাকা ১৫ লক্ষ টাকার সমান। আমি খুশিতে গদগদ হয়ে হ্যাঁ বলে দিলাম। আবির আমাকে ঠিকানা টেক্সট করে দিলো। আর বললো শুধুমাত্র শনিবার এবং বুধবার রাতে যেতে হবে।
আমার কাছে বিষয় টা কেমন জানি অদ্ভুত লাগলো কিন্তু টাকার নেশায় কিছুই মাথায় নিলাম না।
দুইদিন পর শনিবার আমি রওয়ানা দিলাম আবিরের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী। শহর থেকে অনেকটা বাহিরে হিন্দুপাড়া নামে একটা গ্রাম আছে। সেখানে বেশিরভাগ বাসিন্দা-ই হিন্দু ধর্মের অনুসারী।
আমি সেখানে গিয়ে একজনকে ঠিকানা দেখিয়ে বললাম ভাই এই বাড়ি টা কোনদিকে বলতে পারেন...?
সে আমার দিকে কিভাবে যেনো তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো " সামনে গিয়েই একটা পুরনো বিল্ডিং পাবেন। ঐটাই আপনার ঠিকানা...।
আমি সামনে হাঁটা শুরু করলাম। একবার পিছনে তাকিয়ে দেখলাম লোকটা এখনো সেই অদ্ভুত ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন যেনো একটু লাগছে আমার ভিতরে। মনটা সায় দিচ্ছে না যেতে। কিন্তু ১৫ হাজার টাকার কথা মনে পড়তেই আবার মন বদলে যায়। না গিয়ে দেখি।
একটা পুরনো বিল্ডিং-এর সামনে এসে দাঁড়ালাম। হ্যাঁ এটাই সেই ঠিকানা। ১১ টা বাজতে আর এক মিনিট বাকি। আমি গিয়ে দরজায় নক করার সাথে সাথে দরজা খুলে গেলো। মনে হচ্ছে কেউ যেনো আমার জন্য দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো। দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো ক্যাত শব্দ করে। কিন্তু সেখানে কেউ ছিলো না। তাহলে দরজা খুললো কে..।
আমি কখনো ভূত-প্রেত এসবে ভয় পেতাম না। অনেক দেখেছি জীবনে এসব। একটা কথা বুঝে গিয়েছিলাম সেটা হলো তাদেরকে ভয় পেলেই তারা মাথায় চড়ে বসে। তাই নিজেকে খুব শান্ত রেখে বাসায় প্রবেশ করলাম.....।
বাসার ভিতরটা কেমন যেনো অন্যরকম দেখতে। প্রতিটা দেয়ালে আরবীতে কিছু লেখা-লেখি করা। অদ্ভুত অদ্ভুত ছোট পোকা মাকড়ের চিত্র আঁকা। সবচেয়ে বড় কথা বাসার ভিতর টা একদম নিস্তব্ধতায় ঘেরা। কোন একটা ছোট শব্দও কানে আসছে না....।
একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা একটা রুম থেকে হাসি মুখেই বেরিয়ে এলেন। আমাকে বললো " তুমি নিশ্চয়ই গালিব। আবির তোমাকে পাঠিয়েছে..!
আমিও এক গাল হেসে দিয়ে বললাম " জ্বি আন্টি।
তারপর আন্টি একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে বললো " ঐ রুমে যাও। রিশফা ওখানেই আছে। দেখো বাবা ভালোমতো পড়াতে হবে। ও অনেক ফাঁকিবাজ।
ওওও তার মানে আমার ছাত্রীর নাম রিশফা।
আমি বললাম " সেটা নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না আন্টি। আমি রিশফাকে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট বানিয়ে দিবো।
এই বলে রুমে গেলাম। দেখলাম রিশফা এক মনে খাতায় কি যেনো অঙ্কন করছে। আমি গিয়ে হলাক কাশি দিতেই সে উঠে সালাম দিলো। আমি সালামের উত্তর দিয়ে বসলাম।
খাতার দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম সে অদ্ভুত একটা প্রাণীর ছবি আঁকছিলো। এমন প্রাণী বাস্তবে নেই। শুধু কল্পনাতেই আঁকা সম্ভব।
তারপর আমি তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম " আজ থেকে আমি তোমাকে পড়াবো। মন দিয়ে পড়াশুনা করতে হবে।
সে কথা ঘুরিয়ে বললো " স্যার আপনার প্রিয় খাবার কি...?
আমি একটু অবাক হলাম। তবুও নিজে কে সামলে নিয়ে বললাম " আমার প্রিয় খাবার বিরিয়ানি...!
আমি জিজ্ঞেস না করলেও সে অদ্ভুত একটা হাসি দিয়ে বললো " বিরিয়ানি কোনো খাবার হলো। আমার তো প্রিয় তাজা রক্ত আর মানুষের মস্তক....!
একটু ঘাবরে গিয়ে বললাম " এসব কি ধরনের ইয়ার্কি। আমি তোমার স্যার। পড়াশুনা বাদে কোনো ফালতু কথা হবে না আজ থেকে...।
সে একটু মন খারাপ করেই পড়ায় মনযোগ দিলো। বারবার আমার মনে হচ্ছিলো কেউ যেনো উঁকি দিয়ে আবার চলে যাচ্ছে। হতে পারে আন্টি । তার মেয়েকে ঠিকমতো পড়াচ্ছি কিনা সেটা দেখছে হয়তো।
আমার চোখ খুব জ্বলতে লাগলো হঠাৎ করে। মনে হচ্ছে যেনো চোখে কেউ মরিচ ডলে দিয়েছে। আমি রিশফা-কে পড়া দেখিয়ে বললাম " ওয়াশরুম টা কোনদিকে তোমাদের...?
সে হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলো। আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে পানি দিলাম। তারপর আয়নায় তাকিয়ে দেখললাম চোখ লাল হয়ে আছে। ভালোভাবে চোখে মুখে পানি দিলাম। এখন একটু ভালো লাগছে। ওয়াশরুম থেকে বের হতে যাবো হঠাৎ খেয়াল করলাম আমি তো চলে যাচ্ছি কিন্তু আয়নার ভিতরে আমার প্রতিবিম্ব টা এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে। আমি চোখ ডলা দিয়ে আবার তাকালম আয়নার দিকে। এবার সেখানে কেউ নেই। এমন কি আমার কোনো প্রতিবিম্ব সেখানে নেই। এটা কেমন আয়না। যেহেতু আমি এসবে ভয় পাই না খুব একটা তাই ভাবলাম এখানে কেউ তো আছে যে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে।
তাই আমি আস্তে করে বললাম " এই ছোট্ট ওয়াশরুমে কি ভয় দেখাস আমাকে। সাহস থাকলে বাইরে দেখা করিস...।
এই বলে চলে আসলাম। রিশফা বললো " স্যার তাকে দেখেছেন...?
আমি হকচকিয়ে উঠলাম। মানে কাকে দেখবো...!
রিশফা কিছু না বলে তার আঁকা সেই প্রাণী টার দিকে তাকালো। কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে তার আচরণ।
সেদিনের মতো পড়ানো শেষ করে বের হলাম বাসা থেকে। বাসার ভিতরের তাপমাত্রা আর বাইরের তাপমাত্রা অনেক পার্থক্য। বাসার ভিতর টা যেনো অন্য একটা জগৎ।
রাত তখন ২ টা। আমি হিন্দু পাড়ার চিকন গলি দিয়ে হাঁটছি। তখন কোনো গাড়ি পাবো না জানি। তাই হেঁটে-ই যেতে হবে।
হঠাৎ দেখলাম একটা গাছের নিচে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখটা তো বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু দেহ টা বিশাল আকৃতির। যেমনটা রেসলার দের হয়।
আমি বুঝে গেলাম এটা অন্য কিছু। তাই তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় বললাম " আর মানুষ পাইলি না ভয় দেখানোর জন্য....!
ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো " তোকে তো ঐ ওয়াশরুমেই মেরে ফেলতাম। কিন্তু তুই সাহসের কথা বলছোস তাই এখানে তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম আমার সাহস দেখানোর জন্য............।💀💀💀
Galib Abraar

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)