রিশফা পর্ব ০২

@Admin
0

 


লেখক: গালিব আবরার
দ্বিতীয় পর্ব
আমি একটু হেসে বললাম " ভুল জায়গায় সাহস দেখাতে গিয়ে বিপদে পড়িস না ভাই। তোর মতো অনেক শয়তান কে সাইজ করছি। এখন বিরক্ত না করে আমাকে আমার মতো যেতে দে....!
এবার সে গাছের নিচ থেকে বেরিয়ে এলো ধীরে ধীরে। তার মুখটা আমার কাছে উন্মুক্ত হলো। কোথায় যেনো দেখেছি তাকে। হ্যাঁ মনে পড়েছে। রিশফার আঁকা সেই অদ্ভুত প্রাণী টার মতো একদম। তার দেহ মানুষের মতো হলেও চেহারা ভয়ংকর পশুর মতো। এবার একটু ঘাবরে গেলাম।
আমি কিছু বলার আগেই সে বললো " দেখতো আমার মতো কাউকে সাইজ করেছিস কি না এর আগে।
মুখে ভয়ংকর একটা হাসি।
আমি বললাম " আমাকে মারতে চাইলে এখন-ই মেরে ফেল। পরে আর এমন সুযোগ না-ও পেতে পারিস...!
এবার সে একদম আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে জামার ভিতর থেকে তার লোমশ হাত টা বের করে আমার কাঁধে রাখলো। আমার মনে হলো যেনো একটা বড় পাথর আমার কাঁধে এসে পড়লো।
সে বললো " তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়েছি। তুই-ই প্রথম যাকে আমি ভয় দেখাতে ব্যর্থ। আর এই জন্যই তুই এখনো বেঁচে আছিস। তোকে একটা সুযোগ দিলাম আমি। এরপর থেকে রিশফাকে পড়ানো তো দূরের কথা, এই গ্রামের আশেপাশে যেনো তোকে না দেখি। এখন চলে যা সোজা। পিছনে তাকাবি না....!
এখান থেকে রিশফাদের বিল্ডিং-টা স্পষ্ট দেখা যায়। বিল্ডিং-এর দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম রিশফা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে এবং এদিকেই তাকিয়ে আছে। চাঁদের আলোয় রিশফার এতো দূর থেকেও রিশফার মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বুঝলাম কিছু একটা তো গড়বড় আছে।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে সোজা হাঁটা শুরু করলাম। আর পড়াতে আসবো কি না জানি না। সেটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। এখন বেশি সাহস দেখাতে গেলে হয়তো আজকে বেঁচে ফেরা হবে না। খুব দ্রুত পা চালালাম। আপাতত এই জায়গা টা ত্যাগ করতে হবে। হঠাৎ পিছন থেকে শিস বাজানোর শব্দ ভেসে আসলো। আমি পিছনে না তাকিয়ে আরো জোরে হাঁটা দিলাম।
শিস বাজানোর শব্দ টা যেনো আমার সাথে সাথে আসছে। এই বুঝি আমাকে খপ করে ধরে ফেলবে পিছন থেকে। সহ্য করতে না পেরে দ্রুত পিছনে তাকিয়ে বললাম " আরে ভাই তুই-ই তো চলে যেতে বললি তাহলে আবার এসব করতাছোস কেন...!
দেখলাম একটু দূরে একজন দাঁড়িয়ে আছে আর আমাকে হাতের ইশারায় ডাকছে। কাছে গিয়ে খেয়াল করলাম এটা সেই লোকটা যার কাছে আমি ঠিকানা জিজ্ঞেস করেছিলাম। এখনো সেই অদ্ভুত ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি একটু ধমকের স্বরে বললাম " ঐ মিয়া এইভাবে আমাকে ভয় দেখানোর মানে কি। আর এভাবে কেন তাকিয়ে আছেন। তখনও খেয়াল করেছিলাম আপনার তাকিয়ে থাকা। সমস্যা কি...?
লোকটা কেমন একটা বৃদ্ধ কন্ঠে বললো " আমি অবাক হচ্ছি তুমি ঐ বাসা থেকে জীবিত ফিরে এসেছো। এর আগে কেউ জীবিত ফিরে নি...!
**মানে কি বলছেন। ঐ বাসাটা যে একটু অদ্ভুত সেটা আমি বুঝে গিয়েছি কিন্তু জীবিত ফেরা না ফেরা এগুলো কি ধরনের কথা..!
লোকটা উল্টো ঘুরে চলে যেতে লাগলো। যেতে যেতে বললো " রিশফা কোনো সাধারণ মেয়ে না। আজকে বেঁচে গেছো। পরেরবার বাঁচতে না-ও পারো। আর কখনো এদিকে আসবে না....।
আমি তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম। কে এই রিশফা৷ কি হচ্ছে এখানে। আবির এই ঠিকানা পেলো কোথায় সব জানতে হবে আমাকে।
সেদিনের মতো বাসায় চলে আসলাম। সকাল ১০ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আবির কে কল দিলাম কিন্তু বারবার ওর ফোন সুইচ অফ আসছে। তাই চিন্তা করলাম আজকে কলেজ যাবো না। আবিরের বাসায় চলে গেলাম সোজা।
গিয়ে জানতে পারলাম আবির নাকি আজ তিনদিন হলো বাসায় ফিরে নি। ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না ওকে।
আবিরের পরিবার টা একটু এলোমেলো। ওর মা বাবার মাঝে সম্পর্ক ভালো না। সব সময় ঝগড়া লেগে থাকে। তাই আবির যে দুইদিন ধরে ঘরে ফিরে নি সেটা নিয়ে তাদের তেমন মাথা ব্যাথা নেই।
কিন্তু আমার যে আবির-কে লাগবেই। রিশফা সম্পর্কে জানতে হলে আবিরের কাছ থেকে আগে জানতে হবে ঐ ঠিকানা সে কোথায় পেলো।
সব ফ্রেন্ডদের বাসায় খবর নিলাম কিন্তু কেউ আবিরের কোনো খোঁজ জানে না।
তবে এক ফ্রেন্ড বললো " তিনদিন আগে আবিরের সাথে তার কথা হয়েছিলো। কথায় কথায় আবির জানায় অনেক বড়লোকের একটা মেয়ের টিউশনি পেয়েছে সে। মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতন। তাই বাবার কাছ থেকে আর ভিক্ষা চাওয়া লাগবে না হাত খরচের জন্য.....!
আমি অনেকটা শকড হয়ে গেলাম এটা শুনে। তার মানে আবির আমার আগে রিশফার টিউশনি টা পেয়েছিলো। তাহলে সে আমাকে দিয়ে দিলো কেনো। সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আবির-কে না পেলে এসব প্রশ্নের উত্তর পাবো না।
সেদিন বাসায় ফিরতে একটু রাত হয়ে গেলো। আমাদের বাসায় যেতে হলে একটা বাঁশের ঝাড় পেড়িয়ে যেতে হয়। যখন আমি বাঁশের ঝাড় টা অতিক্রম করলাম তখন-ই পকেটে থাকা ফোন টা বেজে উঠলো।
ফোন বের করে দেখলাম আবির কল দিয়েছে। তাড়াতাড়ি করে কল টা রিসিভ করে বললাম " কিরে শালা তুই কই। আজকে সারাদিন তোরে খুঁজতে খুঁজতে আমার স্যান্ডেলের তলা ক্ষয় করে ফেলেছি...।
ওপাশ থেকে আবির বললো " পিছনে তাকা একবার...!
আমি সাথে সাথে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম আবির বাঁশ ঝাড়ের কাছে মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে। আমি দৌড়ে গেলাম। আবির হাতের ইশারায় আমাকে ওর সামনে যেতে বাঁধা দিলো।
আমি থেমে গিয়ে খেয়াল করলাম ওর মাথা টা দেখা যাচ্ছে না। ঠিক যেমন গতকাল রাতে প্রথমে ঐ প্রাণীটার মাথা দেখা যাচ্ছিলো না।
আমি বললাম " আবির তুই ঠিক আছোস। কই ছিলি এই তিনদিন...?
আবির বললো " তুই আমাকে দেখোস নাই গতকাল। আমিতো তোকে আয়না তে দেখলাম। আমি এখন থেকে ঐ আয়নার ভিতরেই থাকবো রে। বাইরের দুনিয়া আমার কাছে ভালো লাগে না....।
**এসব কি বলতাছোস তুই। পাগল হয়ে গেলি নাকি। আর তোর মুখ দেখাচ্ছিস না কেন। নতুন বউ নাকি তুই...!
আবির হেসে দিয়ে বললো " তুই সহ্য করতে পারবি না। আমার এখন যেতে হবে। তোকে যা বলার জন্য আসলাম সেটা হলো রিশফার ব্যাপারে বেশি কৌতুহল দেখাস না। সেটা তোর জন্য ভালো হবে...!
এই বলে আবির চলে যাচ্ছে। আমি চেষ্টা করলাম আবিরের পিছনে যাওয়ার কিন্তু আমার পা যেনো নড়ছেই না। আবির কে অনেকবার ডাকলাম কিন্তু সে শুনলো না। অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।
এবার আমার পা স্বাভাবিক হলো। আমি তাড়াতাড়ি করে ঘরে চলে এলাম। ভাবতে লাগলাম এটা কি সত্যি-ই আবির ছিলো। নাকি আবিরের রূপে অন্য কেউ ছিলো। কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
এভাবে চিন্তায় চিন্তায় কেটে গেলো আরো তিনদিন। বুধবার চলে আসলো। আজকে রিশফাকে পড়াতে যাওয়ার ডেট। আমি কি করবো ভাবছি, যাবো নাকি যাবো না। আমি মন স্থির করতে পারছি না।
অবশেষে ঠিক করলাম আমি যাবো আজ। যা হওয়ার হবে। আমি ও দেখে নিবো কি হয়.....!
মনে সাহস সঞ্চয় করে চলে গেলাম। তখন রাত ১০:৫৫ মিনিট। রিশফা-দের বিল্ডিং-এর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ছাদ থেকে বড় একটা ফুলের টব ঠিক আমার সামনে ধপাস করে পড়লো। আমি পিছিয়ে গেলাম একটু। অল্পের জন্যে আমার মাথায় পড়ে নি। ওপরে তাকাতেই দেখি রিশফা একটা কালো রাগান্বিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে.............💀💀💀💀
Continue.....
Written by: Galib Abraar


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)