সুখ আজ তার পোষ মেনেছে

@Admin
0

 




-- তোর জন্য না একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছিলো হিমা। কিন্তু তাদের শর্ত আছে একটা।

অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল হিমা। মায়ের কথা শুনে খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ না করে শুধু বলল হুম।
-- শোন হিমা ছেলেরা কিন্তু অনেক বড়লোক! অনেক টাকা ওদের। ছেলেও দেশের বাইরে থাকে। ওর সাথে তোর বিয়ে হলে তোকেও দেশের বাইরে নিয়ে চলে যাবে। খুব সুখী থাকবি তুই।
হিমা উওর দিলো তো?
-- উফ! হিমা তুই বুঝতে পারছিস না ব্যাপারটা!
হিমা পাশ থেকে জবাব দিলো আমি সবই বুঝতে পেরেছি। এখন বলো আমি কী করতে পারি এই ব্যাপারে?
-- শোন হিমা ছেলে কিন্তু অনেক ভালো ভদ্র ফ্যামিলির তোর শুধু কাজ হলো ছেলের ও তোর মতো একটা বাচ্চা আছে ওকে দেখে রাখা।
হিমা জবাব দিলো হুম। কিন্তু এখন আমি কাজে যাচ্ছি আম্মু। তুমি জায়েরাকে একটু দেখে রেখো গেলাম আমি।
হিমার অফিস থেকে ফেরার পর ও হিমাকে নানা ভাবে বিয়েতে রাজি করারনোর চেষ্টা করল হিমার মা ইরফা খাতুন। এক পর্যায়ে আর না পেরে হিমা বললো আচ্ছা আমি রাজি এখন তোমরা যা ভালো বুঝো করো।
-- তোর বাবা আর আমি আমরা দুজনেই তো রাজি। তোকে নিয়েই সমস্যা ছিলো আর এখন তুই ও তো রাজি। তবে একটা কথা ছিলো রে।
হিমা মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো কী মা?
-- আসলে তোর সাথে যদি ওই ছেলের বিয়ে হয় তাহলে তুই আর তোর মেয়ে জায়েরার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে পারবি না।
হিমা জেনো আঁতকে উঠল মায়ের কথায়! সাথে সাথে হিমা এটাও বলল
-- তাহলে আমার এই বিয়েতে কোনো প্রকার মত নেই মা। দরকার নেই আমার আবার বিয়ে করার। নিজের সামান্য সুখের জন্য আমি জায়েরাকে ওর মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত করতে পারবো না মা। আমি এই বিয়ে করবো না। তুমি না করে দিয়ো ওনাদেরকে।
-- তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস হিমা? এতো বড় একটা বাড়িতে তোর বিয়ে হবে আর তুই কিনা না করছিস? কতো সুখে থাকবি তুই ওখানে।
-- আমি পাগল হইনি মা। সারাদিন পরে আমি যদি ঘরে ফিরে আমার মেয়েটাকেই না দেখতে পাই তাহলে আমার কীসের সুখ?
-- শোন হিমা তুই সারাদিনই কাজের জন্য বাইরে বাইরেই থাকিস জায়েরাকে তো আমিই দেখে রাখি। এমনিতেও জায়েরাকে আমারই দেখতে হয় আর ওমনিতেও জায়েরাকে আমারই দেখতে হবে শুধু শুধু ওই বাচ্চা মেয়েটার জন্য তুই নিজের জীবন নষ্ট করবি কেনো?
-- তাও মা। আমি তো তাও দিনশেষে আমার মেয়েটাকে একটু দেখতে পারতাম কিন্তু তখন তো তাও পারবোনা।
-- আমার কসম দিলাম তোকে হিমা হয়তো তুই এই বিয়ে করবি নাহলে তোর সাথে এখানেই আমার সম্পর্ক শেষ।
শেষ পর্যন্ত মায়ের জেদ আর লোভ এর কাছে হেরে গিয়ে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো হিমা। ছেলের বাড়ি থেকে লোক আসলো বিয়ের পাকা কথা হলো। কিন্তু,হিমার মন ভালো নেই মেয়েটাকে ছাড়া যে ঘুমোতে অবধি পারে না সে!
বিয়ের আগেরদিন রাতে সারারাত ঘুমন্ত মেয়েকে জরিয়ে ধরে কাঁদল হিমা। হিমার মনে হলো তার সকল সুখের ভান্ডার এখানে কিন্তু সে সুখ খুঁজতে যাচ্ছে অন্য কোনো এক কুটিরে!
অবশেষে বিয়েটা হয়েই গেলো হিমার। বিয়ের এক সপ্তাহ পরই বরের সাথে কানাডা চলে এলো হিমা। এখানে এসে হিমার কোনো কাজই করা লাগে না শুধু সময় মতো তার বর আরফান আহমেদ এর ছোট্ট ছেলে আরিয়ান এর খাওয়া আর ঘুম পাড়ানো বাদে। আরফান আহমেদ ও খুব ভালো ভাবেই মিশে গেছে হিমার সাথে। আর আরিয়ান তো হিমাকে বলতে পাগল। সারাদিন হিমার পাশে পাশে থাকে। সুখ যেনো এখন হিমার খুব নিকটে কিন্তু হিমা চাইলেও ছুঁতে পারছে না। আরিয়ানকে দেখলেই হিমার জায়েরার কথা আরো বেশি বেশি মনে পড়ে কারন জায়েরা আর আরিয়ান সমবয়সী। আরিয়ান এর মতো জায়েরাও হিমাকে দেখলে মা মা বলে ছুটে আসতো। কিন্তু এখন আর জায়েরা ছুটে আসে না। কারন তার মা এখানে থাকলেও সে তো খুবই দূরে। আরফান আহমেদ আর তার পরিবারের কড়া নিষেধ যেনো হিমা জায়েরার সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক না রাখে। কিন্তু হিমা এখনো খুব করে চায় তার মেয়ে জায়েরাকে একটু জড়িয়ে ধরে আদর করতে একটু কোলে নিয়ে হাঁটতে কিন্তু নিষেধ নামের শব্দটির কাছে পরাজিত সে। চাইলেও মেয়ের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারে না হিমা।
আজকাল হিমার মন আগের তুলনায় বেশ ভালো থাকে। কারন তার বর আরফান তার কষ্ট হয়তো খানিক হলেও বুঝতে পেরেছে। কানাডা থেকে আরফান অনেক কিছু পাঠায় হিমার মেয়ে জায়েরার জন্য। ড্রেস, চকলেট, জুতো, লোশন, সেম্পো, ক্রিম থেকে শুরু করে সব কিছু পাঠানো হয় জায়েরার জন্য। মেয়েকে না দেখতে পেলেও এসব পেয়ে নাকি হিমার মেয়ে জায়েরা খুব খুশি হয় হিমা এটা তার মায়ের কাছ থেকে শুনেছে যদিও। তবুও হিমার খুবই খুশি হয় কারন তার মেয়ে তার থেকে দূরে থাকলেও ভালো আছে সুখে আছে এটাই বড় কথা।
আজ রাত ১২ঃ০০ বাজে জায়েরার জন্মদিন। হিমা ১২ঃ০০ টা বাজতেই তার মাকে একটা ফোন দিয়ে বলে দিলো যে তার পক্ষ থেকে যেনো একবার জায়েরাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেয়। হিমার মাও তাতে সায় দিলেন। হিমা তার মায়ের সাথে কথা বলে ফোন কাটতে না কাটতেই পেছন থেকে কে জেনো বলে উঠলো
-- তুমি কার সাথে কথা বলছো হিমা!
হিমা চমকে উওর দিলো
-- আমার মায়ের সাথে।
-- ওহ! আমি না অনেকদিন ধরেই তোমাকে একটা কথা বলবো ভাবছিলাম বলবো বলবো করে আর বলা হয়নি।
-- কী কথা?
-- তোমার মেয়ে জায়েরা তোমার মাকে ছাড়া থাকতে পারবে না?
-- হঠাৎ এই প্রশ্ন করলেন যে?
-- না তোমার যদি অনুমতি থাকে তো তাহলে আমি তোমার মেয়ে জায়েরাকে এখানে আনার ব্যবস্থা করি?
হিমার খুশিতে যেনো নাচতে ইচ্ছে করলো৷ চোখ থেকে খুশিতে পানিও গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোটা। নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে হিমা ওখানেই কেঁদে ফেললো।
-- এই মেয়ে কাঁদছো কেনো তুমি?
-- আপনি জানেন না আজ আমি কতো খুশি! কতোদিন পরে আমি আবার আমার মেয়েটাকে দেখবো। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে খুব!
-- থাক আর কেঁদো না। আমি খুব জলদি তোমার মেয়েকে তোমার কাছে ফিরিয়ে আনছি।
খুব বেশি সময় লাগলো না জায়েরাকে হিমার কাছে নিয়ে আসতে। জায়েরাও হিমাকে পেয়ে খুব খুশি। জায়েরাকে ওখানে একটা স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হলো। হিমা নিজে আজ জায়েরা আর আরিয়ানকে একসাথে রেডি করে দিলো স্কুলে যাওয়ার জন্য।
পাশাপাশি দুই ভাইবোন একজন একজনের হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার জন্য হেঁটে যাচ্ছে আর খুব দূর থেকে কেউ মুগ্ধ হয়ে এই দৃশ্যটা উপভোগ করছে আর চোখ মুছছে...
সুখ জিনিসটা সত্যি আজ তার পোষ মেনেছে।
সমাপ্ত। 🙂
( সত্য ঘটনা অবলম্বনে)


নুজহাত_আদিবা

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)