Mithun Chandra Das
স্যার, আমার গার্লফ্রেন্ডকে খুঁজে পাচ্ছি না।
কতক্ষণ ধরে খুঁজে পাচ্ছেন না?
প্রায় তিনঘন্টা তিরিশ মিনিটের মতো হবে।
স্যার, এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মেয়েটা একা একা কোথায় কী করছে কে জানে!
মাত্রই তো সন্ধ্যা হয়েছে। গভীর রাত তো আর না। এ-যুগের ছেলেমেয়েরা সন্ধ্যা হলেই বাহিরে ঘুরতে বের হয়। আপনি শুধু শুধু চিন্তা করছেন।
স্যার, আমার গার্লফ্রেন্ড সন্ধ্যায় কখনো বের হয় না ঘুরতে। সে শুধু দিনের বেলাতেই আমার সাথে ঘুরতে বের হয় বাহিরে।
হাজার-হাজার কপোত-কপোতী একে-অপরের সাথে সন্ধ্যার পরে ঘুরতে বের হয়। আপনারা কেন বের হন না?
কারণ স্যার, আমার গার্লফ্রেন্ড এর বাবা টাকলা একটা বদমাইশ টাইপ লোক। রাতে বাসায় ফিরে তার মেয়েকে দেখতে না পেলে বা যদি শুনে সন্ধ্যার পরে কোথাও বের হয়েছিলো, তাহলে দুনিয়া নামক বাগানটা টাকলা বাবায় ধ্বংস করে ফেলে। এজন্যই আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে সবসময়ই দিনের বেলা ঘুরতে বের হই। এতে করে গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ঘুরতেও পারি এবং তার বাবার হাত থেকেও বাঁচতে পারি।
ওহ আচ্ছা, তাহলে এই ব্যাপার! আপনার তো খুব বুদ্ধি।
আমার গার্লফ্রেন্ডও এই কথা বলে, স্যার।
সে ঠিক আছে, এবার আপনার গার্লফ্রেন্ড এর নাম বলুন এবং তার কোনো ছবি আমাদেরকে দিন।
স্যার, তার নাম বলা যাবে না।
তাহলে ছবি দিন।
ছবি তো আরো আগে দেয়া যাবে না।
তাহলে আমরা আপনার গার্লফ্রেন্ডকে কিভাবে খুঁজে বের করবো?
এটা তো ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্যার।
তো?
ডিজিটাল বাংলাদেশে নাম এবং ছবি ছাড়া একটা মানুষকে খুঁজে পাওয়া কি কোনো ব্যাপার নাকি, স্যার! আপনারা চাইলেই আমার গার্লফ্রেন্ডকে খুঁজে বের করে দিতে পারেন।
ফাইজলামি করেন আমার সাথে? ছবি দিন বা নাম বলুন তাড়াতাড়ি।
স্যার, সত্যি আমি নাম এবং ছবি কোনোটাই আপনাকে দেখাতে পারবো না।
তাহলে যেভাবে এসেছিলেন, সেভাবে বাসায় চলে যান। শুধু শুধু আমাদের সময় নষ্ট করবেন না।
প্লিজ স্যার, এমন করবেন না। আমি বিপদে পড়ে যাবো তাহলে।
আমাদের কিছু করার নেই। আপনি আপনার গার্লফ্রেন্ড এর নাম বা ছবি কোনোটাই আমাদের দিচ্ছেন না। সো, আপনি এখন আসতে পারেন।
স্যার, এমন করবেন...!
সেন্ট্রি, এই পাগলটাকে এখনই এখান থেকে বের করুন।
দুইজন সেন্ট্রি টাইপ অফিসার এসে ছেলেটাকে দুইপাশ থেকে ধরে টানতে টানতে থানার বাহিরে নিয়ে যেতে লাগলো। তখন ছেলেটা চিৎকার করে বলে উঠলো,
স্যার, বিশ্বাস করেন, আমি যদি আমার গার্লফ্রেন্ড এর নাম আপনাকে বলি বা তার ছবি আপনাকে দেখাই তাহলে আমি বড়ই বিপদে পড়ে যাবো।
অফিসার তার চেয়ার থেকে উঠে এসে ছেলেটার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
আমরা আপনাকে পুরপুরি সাপোর্ট দেবো যাতে করে আপনার গার্লফ্রেন্ড এর বাবা আপনার কোনো ক্ষতি করতে না পারে। আপনি যেহেতু প্রাপ্ত বয়স্ক, সেহেতু আপনার ভালোবাসার অধিকার সম্পূর্ণ আছে। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আপনাদের বিয়ে দেবো। তারপর দেখবো কে আপনার একটা পশম বাকা করে?
সত্যি বলছেন, স্যার?
আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।
ছেলেটা সাথে সাথে পকেট থেকে তার মোবাইলটা বের তার গার্লফ্রেন্ড এর ছবি দেখিয়ে বললো,
স্যার, আমার গার্লফ্রেন্ড এর নাম হচ্ছে রুহি। এই দেখুন তার ছবি। আর রুহির বাবা হচ্ছেন আপনি। আপনার ছোট মেয়ে রুহি-ই আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ড।
পুলিশ অফিসারের চোখ র'ক্তে'র মতো লাল হয়ে গেল সাথে সাথে। মেজাজটা প্রচন্ড পরিমাণে খারাপ হয়ে গেল তার। নিজের রাগ সামলে রাখতে না পেরে সাথে সাথে একটা চড় বসিয়ে দিলো ছেলেটার গালে। আর দাঁত চিবোতে চিবোতে বললো,
বেয়াদব ছেলে, নিজের হবু শ্বশুরকে কেউ টাকলা বাবা বলে! আর আমি বদমাইশ টাইপ লোক, তাই না?
না মানে স্যার।
আবারও একটা চড় বসিয়ে দিলো তার গালে। চড় দিয়েই সাথে সাথে বললো,
বেয়াদব ছেলে, নিজের হবু শ্বশুরকে কেউ স্যার বলে!
সমাপ্ত।
আসাদ