রিশফা ৭ম ও শেষ পর্ব

@Admin
0

 




**রিশফা**
শেষ পর্ব
আরে আয়না গেলো কোথায়। এখন আমি কি করবো। আয়না ছাড়া রিশফাকে মুক্ত করবো কিভাবে। মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবতে লাগলাম। তাহলে কি ডোরিয়া আমাদের প্ল্যান সম্পর্কে জেনে গিয়েছে। এই জন্যই আয়না সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তার মানে রিশফা বিপদে আছে।
এর মাঝেই দরজায় টোকা পড়লো। আমি দিশেহারা হয়ে দরজা খুলে দেখলাম আন্টি দাঁড়িয়ে আছে। আন্টি বললো " তোমার হাতে আর সময় নেই। চলো এখন দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আমি বাধ্য ছেলের মতো আন্টি-কে অনুসরণ করলাম। মন টা কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। রিশফা এখন কেথায় আছে তাহলে। এই দুইদিন আসলো না কেনো আমার সাথে দেখা করতে।
এখন দিন নাকি রাত সেটা বুঝতে পারছি না। বাইরে অন্ধকার নাকি আলো সেটাও দেখতে পাচ্ছি না। আন্টি-কে জিজ্ঞেস করলাম এখন কয়টা বাজে...?
আন্টি গম্ভীর গলায় বললো " আমাদের সবার জন্য এখন রাত ২ টা। আর তোমার জন্য তোমার জীবনের ১২ টা বেজে গেছে এখন।
আমি বুঝতে পারলাম আন্টিও জানে আমি আর রিশফা অন্য কেনো প্ল্যান করছিলাম। আমি চুপ করে রইলাম।
আন্টি আমাকে নিয়ে ছাদের সেই চিলেকোঠায় প্রবেশ করলো। অদ্ভুত একটা লাল রঙের আলো তে পুরো রুম টা সজ্জিত। ফ্লোরের মাঝ বরাবর একটা সার্কেল অঙ্কন করা। সার্কেল টা পুরো মোমবাতি দিয়ে ঘেরাও করা। আর এক পাশে বড় রাজকীয় চেয়ার রাখা।
আমি বুঝতে পারলাম এই চেয়ারেই ডোরিয়া বসবে এবং তার সামনে-ই আমাকে বলি দেওয়া হবে। হঠাৎ বিকট একটা শব্দে পুরো রুম টা কেঁপে উঠলো। মনে হলো যেনো বিল্ডিং টা ধসে পড়ছে। আমি কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঝুকে রইলাম। একটুপর স্বাভাবিক হলো সব। আমি চোখ খুলে দেখলাম সেই সজ্জিত রাজকীয় চেয়ারে একজন বিশাল আকৃতির দানব বসে আছে। আমি মনে মনে একটু ভয় পেলাম কারণ এমন বিশাল আকৃতির মানুষ তো দূর, কোনো জন্তু জানোয়ারও দেখি নি জীবনে। চোখ থেকে যেনো আগুন বের হচ্ছে। আন্টি তার সামনে হাটু গেড়ে বসে বিড়বিড় করে কি যেনো পড়ে যাচ্ছে। এটাই হয়তো ডোরিয়ার আসল রূপ।
আমি এখনো বুঝতে পারছি না রিশফা কোথায়। তার-ই তো আমাকে বলি দেওয়ার কথা।
হঠাৎ সে তার হাত উঠিয়ে তিনবার চেয়ারে বারি দিলো। আন্টি সাথে সাথে উঠে গিয়ে রুমের এক কোণে থেকে একটা মোটা গাছের খাড়ি নিয়ে আসলো। গাছের খাড়িটা তার সামনে রেখে আমাকে ধরে নিয়ে বসিয়ে দিলো সেখানে।
ডোরিয়া ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো " তোর ভয় পাওয়ার কেনো কারণ নেই। তুই এমন একজনের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করছিস যে তোকে মুক্তি দিবে। তুই আর রিশফা মিলে যে ফন্দি এঁটেছিলি সেটা আমি জানতে পারবো না কিভাবে ভাবলি। আমি সবকিছু সম্পর্কে অবগত আছি। তাই আয়না টা খুলে রিশফার মা-কে লুকিয়ে রাখতে বলেছিলাম। তোদের মতো সাধারণ মানুষেরা আমাকে কখনো ধোকা দিতে পারবি না।
আমি বললাম " আমি তোর উদ্দেশ্যে নিজের ইচ্ছা-তে উৎসর্গ হচ্ছি না। আর আমি তোর কাছে মুক্তি-ও চাই নি। এখানে যা হচ্ছে তা আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হচ্ছে।
ডোরিয়া বললো " এখানে শুধু আমার হুকুম চলে। তোর কোন ইচ্ছের মূল্য নেই এখানে।
এরপর চেয়ারের পিছন থেকে একটা ধারালো তরবারি বের করে রিশফার মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে ডোরিয়া বললো " সময় হয়েছে। আমি রক্তের গন্ধ পাচ্ছি....!
রিশফার মা হাঁটু গেড়ে বসে তরবারি টা নিয়ে এসে আমার মাথা টা গাছের খাড়ির সাথে লাগিয়ে দিলো।
আমি চিৎকার বলে উঠলাম " আমাকে যেহেতু মেরেই ফেলবি তাহলে আমার একটা শেষ ইচ্ছে পূরণ কর। অপূর্ণ ইচ্ছে নিয়ে মরে গেলে আমার আত্মা শান্তি পাবে না।
ডোরিয়া বললো " ঠিক আছে বল তোর শেষ ইচ্ছে কি। আমি তোর ইচ্ছে পূরণ করবো...!
**আমি মরার আগে একবার রিশফার মুখোমুখি হতে চাই। তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে চাই। আমি তাকে মুক্ত করতে পারলাম না। আমার এই ইচ্ছে টা অপূর্ণ থেকে গেলে আমি শান্তি পাবো না।
ডোরিয়া বললো " রিশফা-কে লোহার শিকলে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আমার অজান্তে ও এমন টা করার সাহস পায় কি করে। তাই ওর সাথে তোর দেখা করানো সম্ভব না। অন্য কোনো ইচ্ছে থাকলে বল....!
**আমি ডোরিয়া-কে ভরকে দেওয়ার জন্য বললাম " আমি তো ভেবেছিলাম তুই সবকিছু করতে পারোস। সামান্য একটা ইচ্ছে-ই পূরণ করতে পারলি না, তোর কাছে আর অন্য ইচ্ছের কথা বলে লাভ কি। নে নে আমার মাথা কেটে ফেল। দেরি করিস না...!
ডোরিয়া খুব রেগে গেলো। গড়গড় শব্দ করতে করতে বললো " আমি ডোরিয়া। আমি যা খুশি তা করতে পারি। ঠিক আছে তোর ইচ্ছে পূরণ করা হবে। রিশফা-কে এখানে নিয়ে আসছি।
রিশফার মা বললো " না না ডোরিয়া। এটা করবেন না। ওর অন্য কোনো প্ল্যান থাকতে পারে।
ডোরিয়া বললো " আয়না তো তোর কাছে। আয়না ছাড়া অন্য কোনো প্ল্যান-ই কাজে আসবে না আজকে।
এই বলে ডোরিয়া হাতের ইশারায় ওপর থেকে রিশফা-কে নিচে ফেললো। রিশফার পায়ে শিকল দিয়ে বাঁধা। চেহারা টা কেমন মলিন হয়ে গেছে। নীল রঙের চোখ গুলো গর্তে চলে গেছে।
আমি ধীরে ধীরে রিশফার কাছে গেলাম। রিশফা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা হাসি দিয়ে বললো " আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই স্যার। আপনি আপনার চেষ্টা করেছেন।
আমি বললাম " ছোটবেলা থেকে কখনও হারতে শিখি নি। আমার বাবা-কে দেখতাম নেশা করে এসে প্রতিদিন আমার মা-কে মারধর করতো। এসব দেখতে দেখতে নিজেকে পাথরের মতো তৈরি করেছি। মা-কেও কথা দিয়েছিলাম আমি তাকে বাবা নামক জানোয়ার থেকে রক্ষা করবো একদিন। আমি আমার কথা রেখেছিলাম। নিজ হাতে বাবা-কে কেটে টুকরো টুকরো করেছি। আজ পর্যন্ত এই সত্য আমার মা ছাড়া কেউ জানে না। তাই কাউকে এমন কথা দেই না যেটা আমি রাখতে পারবো না। আমি তোমাকে মুক্ত করবো বলেছিলাম। আমি আমার কথা রাখবো....!
রিশফা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ডোরিয়া বললো " কাউকে মিথ্যা সান্ত্বনা দিস না। তুই রিশফা-কে দেওয়া কথা রাখতে পারবি না। কারণ তোর কাছে আয়না নেই। এবার অনেক হয়েছে। তোর সময় শেষ। তৈরি হয়ে নে মরার জন্য...!
আমি বললাম " আরে কাকা একটু দাড়াও না। আমার মা আমাকে সব সময় একটা কথা বলতো " বিজয়ের উল্লাস খুব তাড়াতাড়ি করতে নেই। এখনো আমি হেরে যাই নি। কে বলছে আমার কাছে আয়না নেই।
জামার ভিতর থেকে আয়নার ছোট একটা ভাঙা টুকরো বের করে সোজা রিশফার গলায় চালিয়ে দিলাম। রিশফা আগুনের ফুলকির মতো হাসতে হাসতে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে লাগলো।
ডোরিয়া গর্জন দিয়ে উঠে বললো " ওর কাছে আয়নার টুকরো গেলো কিভাবে। তুই-ও এর সাথে জড়িত। এই বলে রিশফার মায়ের বুকে তরবারি টা বিঁধে দিলো।
আমি চলে গেলাম একটু আগে " ওয়াশরুমে ঢুকে দেখলাম সেখানে আয়না নেই। মাথায় হাত দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে ভাবতে লাগলাম এবার কি হবে। তাহলে কি আমি ব্যর্থ হবো আজ। এর মাঝেই দরজায় টোকা পড়লো। আমি দিশেহারা হয়ে দরজা খুলতে যাবো এমন সময় চোখ পড়লো যেখান থেকে আয়না টা খোলা হয়েছিলো সেখানে এক কোণে ছোট একটা টুকরো ভেঙে রয়ে গেছে। আমি যেনো দেহে প্রাণ ফিরে পেলাম। শয়তানি একটা হাসি দিয়ে আয়নার টুকরো নিয়ে জামার ভিতর ঢুকিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম........।
ডোরিয়া ক্ষুধার্ত বাঘের ন্যায় গড়গড় করতে করতে বললো " তুই আজকে জিতে গেলি। কিন্তু আমি তোকে ছাড়বো না। আমি আবার ফিরে আসবো।
এটা বলতে বলতে ডোরিয়া কালো ধোয়ার মতো বাতাসে মিশে গেলো।
রিশফা এখনো হাসছে। ওর চোখে মুখে খুশির ঝলক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
আমি হাত নাড়িয়ে রিশফাকে বিদায় দিলাম। খুব ইচ্ছে করছিলো রিশফাকে ধরে রেখে দেই নিজের কাছে। কিন্তু এটা তো সম্ভব না। রিশফাও চলে গেলো। মন টা একটু খারাপ হলো কিন্তু এটা ভেবে ভালো লাগছে যে আর কেউ এই নোংড়া বলির পাঠা হবে না আজ থেকে। এই বিল্ডিং আজ থেকে অভিশাপ মুক্ত।
কিন্তু একটা কথা মাথায় ঢুকছে না এখনো। ডোরিয়া তো চাইলে এখন -ই আমাকে মেরে ফেলতে পারতো। তাহলে মারলো না কেন। প্রশ্ন টা থেকেই যাচ্ছে।
**তারপর কেটে গেলো প্রায় দুই মাস। নতুন দুইটা টিউশনি পেয়েছি। তারা জীবিত মানুষ। সবাই যে মৃত হবে এমন তো কথা না। খুব ভালোভাবেই কাঁটছিলো দিনগুলো। রিশফার কথা মাঝে মাঝে মনে পড়ে।
হঠাৎ একদিন আমার ফোনে অচেনা একটা নাম্বার থেকে কল আসে। আমি ব্যস্ত থাকায় কেটে দিলাম কল টা। আবার কল আসলো। এবার রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলাম " কে.....?
**স্যার আমি রিশফা। আমাকে বাঁচান.........!!💀💀💀
##রিশফা'র এই চ্যাপটার টা এখানেই শেষ হলো। রিশফা কি তাহলে মুক্তি পায় নি। জানতে হলে অপেক্ষা করুন সিজন -২ এর জন্য। আর অবশ্যই আপনাদের সাপোর্ট আমাকে পরবর্তী সিজন লেখার জন্য উৎসাহিত করবে........।😊
A story by : Galib Abraar

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)