রিশফা - পর্ব ০৬

@Admin
0

 



গালিব আবরার
ষষ্ঠ পর্ব
এএএ্যাাা এটার মানে কি। যে রিশফা আমাকে মারার জন্য এতো কিছু করছে সে আবার আমাকে বাঁচাতে চায়। তুই ইয়ার্কি করতাছোস আমার সাথে....!
আবির বললো " আমি ইয়ার্কি করছি না। এখান থেকে পালানোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। তুই এখন রিশফা-দের বাসায় ফিরে যাবি। বাকি টা না হয় রিশফার মুখ থেকেই শুনবি। রিশফা তোর জন্য অপেক্ষা করছে....।
এই বলে আবির ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি ডাকতে লাগলাম " আবির শোন আমার কথা। রিশফা আমাকে কেন বাঁচাতে চায়। উত্তর দিয়ে যা। শা*লা অন্তত তোর কাঁটা মাথাটা তো নিয়ে যা। এটা এখানে পড়ে থাকবে নাকি।
কিন্তু আবির চলে গেলো। তাকিয়ে দেখলাম না সেখানে কোনো মাথা আছে আর না কোনো পঁচা মৃতদেহ। আমি গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাম। কি করবো এখন। আবিরের কথা মতো রিশফাদের বাসায় ফিরে যাবো নাকি এখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো। মাথা টা আমার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
অবশেষে ঠিক করলাম এতদূর যেহেতু এসেই গেছি তাহলে এটার শেষ দেখে যাই। আমি রিশফাদের বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য মন স্থির করলাম।
বিল্ডিং-এর সামনে দাড়িয়ে আছি। ভিতরে যেতে মন টা সায় দিচ্ছে না। বারবার মনে হচ্ছে এটা হয়তো রিশফার কোন ফাঁদ হতে পারে আমাকে বাসায় নেওয়ার। আবার মনে হচ্ছে রিশফা-কে একবার বিশ্বাস করেই দেখি।
ভাবতে ভাবতে বাসায় ঢুকে পড়লাম। রিশফা কোনো জীবিত মানুষ না এটা ভাবতেই মনের ভিতর মোচর দিয়ে উঠলো। এসেই যেহেতু পড়েছি এখন আর ভয় পেয়ে লাভ কি।
আগের চেয়ে অন্যরকম লাগছে বাসা টা। সিড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় হঠাৎ চিৎকার চেচামেচির শব্দ ভেসে আসলো। কেউ খুব কাকুতি মিনতি করে বলছে " ছেড়ে দাও আমাকে। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। ছেড়ে দাও।
আমি নিজের মন কে সান্ত্বনা দিলাম এসব তো স্বাভাবিক। আমি এখানে দাওয়াত খেতে আসি নি যে আমাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করবে। মৃত মানুষের বাসায় এসেছি। নিজেকে যতোটা পারি শান্ত রাখার চেষ্টা করছি।
সোজা গিয়ে দরজায় কলিং বেল দিলাম। আজকে আর দরজা আপনাআপনি খুলছে না। কয়েকবার টোকা দিলাম কিন্তু কারো কোনো সাড়া শব্দ নেই। একটু বিরক্ত হলাম। আবির বললো রিশফা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাহলে সে কোথায়। দরজা খুলছে না কেন......?
হঠাৎ উপর থেকে কারো পায়ের শব্দ ভেসে আসলো। কেউ এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে। তার মানে ছাদে কেউ আছে। আমি আস্তে আস্তে ছাদের দিকে উঠতে লাগলাম। ছাদে গিয়ে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে কাউকেই দেখতে পেলাম না।
হঠাৎ আমার কানের কাছে কেউ ফিসফিস করে বললো " মরার জন্য চলে এসেছিস।
আমি সাথে সাথে পিছনে তাকালাম। কেউ নেই সেখানে। তাহলে কি রিশফা আমাকে ফাঁদে ফেললো।
সামনে তাকাতেই দেখলাম রিশফা খোলা চুলে নীল চোখ নিয়ে ঠিক আমার মুখের সামনে। আমি হঠাৎ এভাবে রিশফাকে দেখে চমকে পিছনে গিয়ে ধপাস করে পড়ে গেলাম। রিশফা তার সূঁচালো দাঁত বের করে ভয়ংকর একটা হাসি দিলো।
আমি নিজেকে সামলে উঠে শরীর থেকে ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বললাম " বাঁচার জন্য আসতে বলেছো নাকি মারার জন্য। এভাবে কেউ আপ্যায়ন করে নাকি....!
এবার রিশফা তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলো। তারপর ছাদের এক কোণে গিয়ে বসলো। আমিও তার পাশে দূরত্ব বজায় রেখে বসলাম। কারো মুখে কোনো কথা নেই।
তারপর রিশফা বললো " স্যার জানেন এভাবে থাকতে আমার অনেক কষ্ট হয়। আমি তো মরে গিয়েছিলাম কিন্তু আমার মা আমাকে ফিরিয়ে এনেছে। আমার প্রতি অতি ভালোবাসা আমার মা-কে এই অন্ধকার পথে নিয়ে গিয়েছে। আমি মুক্তি চাই এসব থেকে। আমি চাই না আমার দ্বারা আর কারো মৃত্যু হোক। আমি যতদিন মুক্তি না পাবো ততোদিন একজন করে মরতে থাকবেই। আমার আর কোনো পথ নেই। তাই মরার পর মানুষের আত্মা যেখানে চলে যায় আমি সেখানে যেতে চাই।
**তাহলে এতোগুলো মানুষ-কে কেন মারলে। আমার বন্ধু আবির-কেও মেরে ফেললে। তাদের কারো কাছে সাহায্য চাইতে। হয়তো অনেক আগেই তুৃমি মুক্তি পেয়ে যেতে...!
রিশফা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো " তারা কেউ আপনার মতো সাহসী ছিলো না স্যার। আমি আপনার মতো একজনের অপেক্ষায় ছিলাম। আপনাকে প্রথমদিন যখন আয়নাতে ভয় দেখালাম তখন-ই বুঝে গিয়েছিলাম আপনি এতো সহজে ভয় পাবেন না। আর আমাকে মুক্ত করতে হলে সাহসের সাথে ডোরিয়ার মোকাবেলা করতে হবে। আগের কেউ সেটার যোগ্য ছিলো না। আমি তাদের কে মারি নি। তাদের ভয় তাদের-কে মেরে ফেলেছে।
**হ্যাঁ বুঝলাম। আমি তোমাকে মুক্ত করতে পারবো কি না জানি না। তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। কিন্তু যদি না পারি তাহলে কি হবে...?
রিশফা বললো " তাহলে আর কি হবে। আপনাকে মারতে আমার খুব খারাপ লাগবে কিন্তু মারতে হবেই। তারপর আবার আপনার মতো কারো জন্য অপেক্ষা। এর মাঝে হয়তো আরো অনেকের প্রাণ যাবে...!
আমি বিড়বিড় করে বললাম " শা*লা আমার তো কোনো অপশন-ই নেই। তার মানে আমার বেঁচে থাকার অল্প একটু চান্স আছে। কি আত্মা ফাত্তার খপ্পরে পড়ে এখন জীবন-টাই দিতে হবে।
রিশফা বললো " সত্যি-ই আপনার কোনো অপশন নেই। কি কি করতে হবে সেটা আপনার বন্ধু আপনাকে বুঝিয়ে দিয়েছে নিশ্চয়ই। আমাবস্যা আসতে আর মাত্র দুইদিন। এই দুইদিন আপনি এখানে থাকবেন আমার বন্দী হয়ে। কেউ যেনো বুঝতে না পারে আপনি ইচ্ছে করেই বন্দী হয়ে আছেন। এমন কি আমার মা-ও যেনো এসব না জানে। সে জানলে এটা হতে দিবে না। কারণ আমাকে দ্বিতীয় বার হারাতে চাইবে না সে।
**যথা আজ্ঞা মহারাণী।
আচ্ছা তুমি যে ডোরিয়ার উদ্দেশ্যে বলি দাও। সেটা কি এক ঘায়ে গর্দান আলাদা করে ফেলো। আমি যদি ব্যর্থ হই তাহলে তো আমার সাথেও এমনটা করবে তাই না...?
রিশফা বললো " হ্যাঁ ঠিক তাই। বড় একটা তলোয়ার দিয়ে আপনার শরীর থেকে মাথা টা আলাদা করে ফেলবো। আমি তো এখন-ই আপনার শরীরে মাথা দেখতে পাচ্ছি না....!
হাসতে হাসতে বললো রিশফা।
আমি বললাম " ইয়ার্কি করবা না একদম। আমার এদিকে ফাটছে আর তুমি হাসতাছো। আচ্ছা মাথা কাটা ছাড়া অন্য কোনো সহজ পদ্ধতি নেই মারার। মাথা কেটে ফেললে তো অনেক কষ্ট হবে...!
রিশফা বললো " আছে তো। আপনার জন্য একদম সহজ মৃত্যু। আপনার দুই পা ধরে দুইদিকে টান দিয়ে ছিড়ে ফেললে আপনার কষ্ট কম হবে হয়তো। এর চেয়ে সহজ মৃত্যু আমার জানা নেই...।
**না থাক মাথা কেটে ফেলাই ভালো হবে। দ্বিতীয় টা বেশি কষ্ট হবে।
রিশফা খুব সুন্দর মায়াবি হাসি দিয়ে বললো " তেমন কিছুই হবে না৷ আমার বিশ্বাস আপনি পারবেন এটা করতে।
**আজকে আর রিশফার চেহারায় ভয়ানক ভাব টা নেই। খুব মায়াবি লাগছে চাঁদের আলো তে। দেখলে বুঝা যায় না এই মেয়েটা মারা গিয়েছে। যদি আমি রিশফাকে মুক্ত করতে না পারি তাহলে মরার পর ভূত হয়ে ওর সাথে প্রেম করবো...।
**দুইদিন কেটে গেলো। আমাকে একটা অন্ধকার রুমে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এই দুইদিন আমার খাবার দাবার যত্নের কোনো কমতি ছিলো না। কারণ বলি দিতে হলে সুস্থ সবল তরতাজা মানুষ লাগে। আমাকে সেভাবেই তৈরি করা হলো। এই দুইদিনে রিশফা একবারো আসে নি এখানে। মেয়েটা কোথায় গেলো কে জানে।
হঠাৎ রুমের দরজা টা খুলে গেলো। রিশফার মা সেই কালো জাদুবিদ্যার পোশাকে রুমে প্রবেশ করলো। আমাকে বললো " চলো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে...!
আমি মনে মনে বললাম " আপনি যে কি সারপ্রাইজের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে সেটা আমি ভালো করেই জানি। কিন্তু সারপ্রাইজ পাওয়ার আগে আমাকে বাথরুমে গিয়ে আয়না টা ভেঙে তার টুকরো সাথে নিতে হবে। রিশফা হয়তো সেখানেই অপেক্ষা করছে।
আমি পেটে হাত দিয়ে কুজো হয়ে বললাম " আন্টি আমার একটু যেতে হবে। খুব চাপ দিয়েছে। এই অবস্থায় সারপ্রাইজ খুব একটা ভালো হবে না...!
আন্টি হাসি দিয়ে বললো " যাও যাও। তাড়াতাড়ি পেট পরিস্কার করে এসো। আমি কিছুক্ষণ পর আসছি।
আমি পেটে চাপ দিয়ে দৌড় দিলাম ওয়াশরুমের দিকে। এমন অভিনয় করলাম যেনো আর একটু হলেই আমার কাপর খারাপ হয়ে যেতো। নিজে-কে নিয়ে খুব গর্ব করতে ইচ্ছে করছে। অভিনয় টা খুব ভালো পারি.....।
ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আয়নার দিকে তাকাতেই বড় রকমের ধাক্কা খেলাম। সেখানে কোনো আয়না নেই..........💀💀💀
Continue........


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)