রিশফা পর্ব ০৩

@Admin
0

 


 লেখক: গালিব আবরার

তৃতীয় পর্ব
রিশফার এমন ভয়ানক রূপ দেখে আমি চমকে গেলাম। কেন যেনো আমার গলা দিয়ে একটা শব্দও বের করতে পারছি না আমি। ছাদের দিকে তাকিয়ে রিশফা-কে ইশারায় বললাম " তুমি কি আমাকে মেরে ফেলার জন্য ফুলের টব টা ফেললে....?
রিশফা কর্কশ গলায় বললো " তোকে না আসতে না করেছিলো সে। তাহলে কেনো আসলি তুই। তোর নিজের জন্য মায়া হয় না...!
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঠিক এগারো টা বাজে। রিশফার কথা শুনে কানের ওপর দুটো থাপ্পর মেরে মাথা ঝাঁকি দিলাম। যেনো তার কথা আমি ঝেড়ে ফেলে দিলাম মাথা থেকে। এবার তার রিয়েক্ট দেখার জন্য ওপরে তাকালাম। কিন্তু তখন সেখানে রিশফা ছিলো না। আমি আর দেরি না করে সোজা গিয়ে কলিং বেল দিলাম বাসায়। সেদিনের মতো আজকেও দরজা খুলে গেলো। আমি ধীরে ধীরে প্রবেশ করলাম। কারো কোনো সারা শব্দ নেই।
আমি ডাকলাম " আন্টি, আন্টি বাসায় আছেন...?
কোনো উত্তর নেই। সত্যি বলতে এই রহস্য জানার কৌতুহল আমাকে ভয় পেতে দিচ্ছে না। আমি দেখতে চাই এখানে কি হচ্ছে। তার জন্য যদি মরতেও হয় তা-ও মেনে নিবো।
তারপর আস্তে আস্তে রিশফার পড়ার ঘরে প্রবেশ করলাম। দেখলাম ঠিক ঐদিনের মতো-ই রিশফা মনোযোগ দিয়ে খাতায় কি যেনো আঁকছে।
আমি ডাক দিলাম " রিশফা......
রিশফা চমকে উঠে সালাম দিয়ে বললো " স্যার আজকে আপনি তিন মিনিট দেরি করে এসেছেন। যারা সময়ের মূল্য দেয় না তাদের কে আমি পছন্দ করি না...!
নিজের ছাত্রীর মুখে এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১:০৩ বাজে।
আমি বললাম " তোমার জন্য-ই তো দেরি হলো। আমার মাথায় ফুলের টব ফেলে আমাকে মারতে চেয়েছিলে কেন....!
রিশফা খুব সাবলীল ভাবেই জবাব দিলো " আমি আপনাকে মারতে চাইবো কেনো। আমার তো জীবিত মানুষ পছন্দ...!
এটা শুনে আমি হেঁসে উড়িয়ে দেওয়ার ভান করলাম যেনো আমি এটা ইয়ার্কি হিসেবেই নিয়েছি। কিন্তু আমার মনে অন্য কিছু চলছে। আমি জানি রিশফা মজা করছে না। কিন্তু আমাকে শান্ত থাকতে হবে। আমার ভয়-টা প্রকাশ পেয়ে গেলে হয়তো এখান থেকে আর ফিরে যাওয়া হবে না আমার।
তাহলে রিশফা কি মানুষ না...। দেখতে তো একদম মানুষের মতো-ই স্বাভাবিক। শুধু ওর চোখগুলো একটু অদ্ভুত। নীল রঙের চোখ আগে কখনও দেখি নি। কেমন একটা মায়া কাজ করে ওর চোখে।
রিশফা বললো " স্যার আপনি একটা সাইকো কারণ আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আর আসবেন না। মানুষ হিসেবে যতোটুকু সাহস থাকা দরকার ততোটুক সাহস থাকা ভালো। লিমিটের বাইরে সাহস দেখাতে গিয়ে অনেক মানুষ-ই তার প্রাণ হারিয়েছে....।
রিশফার এসব রহস্যময় কথা শুনে ভিতর টা নড়াচড়া দিলেও ওকে বুঝতে না দিয়ে বললাম " তোমার এসব আধ্যাত্মিক কথাবার্তা বাদ দিয়ে পড়ায় মনযোগ দাও। পরীক্ষায় যদি ফেল করো তাহলে তোমার মা আমার বেতন মেরে দিবে..!
আচ্ছা আজকে তোমার মা কে দেখলাম না বাসায়। আন্টি কি আজকে বাসায় নেই....?
রিশফা বইয়ের দিকে তাকিয়েই বললো " মা তো ছাদে গিয়েছে চাঁদ দেখার জন্য। আজকে চাঁদ টা পরিপূর্ণ রূপ নিয়েছে।
কি অদ্ভুত কথা বলে এই মেয়েটা। আমি বললাম " রিশফা আমার অনেক তৃষ্ণা পেয়েছে। এক গ্লাস পানি এনে দিবে..।
সাথে সাথে রিশফা চেয়ার থেকে উঠে পানি আনতে চলে গেলো। এই প্রথম রিশফা-কে হাঁটতে দেখলাম। তার পায়ের দিকে তাকালাম। না পা তো ঠিক-ই আছে। শুনেছি ভূত-প্রেতের পা উল্টো থাকে। কিন্তু রিশফার হাঁটার ভঙ্গি একদম আলাদা। যেনো কোনো রোবট হেঁটে যাচ্ছে।
আমি বসে বসে ভাবছি কি করবো এখন। এখানে কোনো কিছুই স্বাভাবিক না। কিছু একটা হচ্ছে এখানে। রিশফার মা এতো রাতে ছাদে গিয়েছে চাঁদ দেখতে। ব্যাপার টা কেমন অদ্ভুত। আর রিশফার এসব রহস্যময় কথা আমাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে বারবার....।
এর মাঝেই রিশফা আসলো একটা পানির গ্লাস হাতে। আমাকে পানি দিয়ে আবার সে বসে বইয়ের দিকে মনোযোগ দিলো।
আমি পানি টা মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকলাম। পানি যে এতো স্বাদ হতে পারে তা কখনও ভাবি নি। অদ্ভুত একটা মিষ্টি ঘ্রান আসছে পানি থেকে। পুরো টা খেয়ে নিলাম।
তারপর গ্লাস টা টেবিলে রেখে হাত দিয়ে মুখ টা মুছে নিলাম।
**রিশফা পানি টা খুব মজার ছিলো। এ ধরনের পানি আমি কখনও খাই নি এর আগে।
এই বলে হঠাৎ নিজের হাতের দিকে চোখ গেলো আমার। হাতে রক্ত লেগে আছে। হাত টা জামায় মুছে আবার মুখে হাত দিলাম। এবার আমি ঘাবরে গেলাম। রক্ত টা আমার মুখ থেকে লেগেছে। তাহলে কি রিশফা আমাকে পানির বদলে রক্ত খাইয়েছে....!
রিশফার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে তার আঁকা সেই ছবিটায় এলোমেলো ভাবে কলম চালাচ্ছে। প্রাণীটার মুখটাকে ঝলসে দিচ্ছে কলম দিয়ে।
মুখের ভিতর কেমন যেনো লাগছে এখন। রক্ত খেয়েছি ভাবতেই পেটের ভিতরের সবকিছু উল্টে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
এবার আর সাহস দেখানোর সাহস করলাম না। উঠে দৌড় দিলাম দরজার দিকে। কিন্তু দরজা টা বাইরে থেকে বন্ধ। অনেক টানাটানি করলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম রিশফা পড়ার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। একটুও নড়াচড়া করছে না।
অবশেষে দরজা খুলে গেলো। আমি বের হয়ে শরীরের সব শক্তি দিয়ে দৌড়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলাম। কিন্তু একি আমি আবার সেই রিশফা-দের দরজার সামনে। রিশফা এখনো সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি আবার দৌড়ে নামলাম সিঁড়ি বেয়ে কিন্তু এবারও ঘুরেফিরে সেই দরজার সামনেই চলে আসলাম। আমি বুঝে গেলাম এখান থেকে বের হতে দিবে না আজ আমাকে। তাই আমি এবার দৌড় দিলাম ছাদের দিকে।
মানুষ যতো-ই সাহসী হোক। মৃত্যু চোখের সামনে দেখলে ভয় তাকে পেতেই হবে।
ছাদে গিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। নিচে নামার মতো কিছু আছে কি না।
হঠাৎ আমার চোখ পড়লো কালো জুব্বা পড়া কেউ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে রিশফা-কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। কালো জুব্বা বলতে যারা জাদুবিদ্যা চর্চা করে তাদের অন্যরকম এক ধরনের কালো পোশাক থাকে। তখন-ই আমার মনে পড়লো রিশফা বলছিলো তার মা ছাদে চাঁদ দেখার জন্য এসেছে।
তাহলে এটাই কি রিশফার মা। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় ডাক দিলাম " আআআআআআন্টি........!
ডাক শুনে সে ধীরে ধীরে আমার দিকে মুখ ঘুরালো। রিশফার মায়ের অন্য এক রূপ। সারা মুখে রক্ত লেগে আছে। গলায় বিভিন্ন মালা ঝুলানো। আর হাতে কঙ্কালের খুলি।
রক্ত মাখা মুখে উদ্ভট একটা হাসি দিলো আমার দিকে তাকিয়ে।
আমি জানি যতো যাই হোক আমি এই মূহুর্তে জ্ঞান হারাবো না। তাই ইচ্ছে করেই পড়ে গেলাম জ্ঞান হারানোর ভান করে। চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম। প্রায় পাঁচ মিনিট হয়ে গেলো কোনো সাড়া শব্দ নেই। একবার ভাবলাম চোখ খুলে দেখবো। আবার ভাবলাম এভাবেই থাকি আর কিছুক্ষণ।
হঠাৎ ফিসফিস করে কথা বলার আওয়াজ শুনতে পেলাম। নিশ্চয়ই রিশফা আর তার মা কথা বলছে।
একটু স্পষ্ট করে শোনার জন্য খরগোশের মতো কান খারা করে দিলাম।
রিশফার মা বলছে " তোকে না বলেছিলাম পরবর্তী আমাবস্যা পর্যন্ত এই ছেলেকে বুঝতে দেওয়া যাবে না কিছু। তাহলে এতো তাড়াহুড়ো করার কারণ কি..?
রিশফা বললো " আমি কি করবো। ওর সাহসের পরীক্ষা নিতে গিয়েই তো এতকিছু হয়ে গেলো। অন্য সবার চেয়ে ওর সাহস অনেক বেশি। এতো সহজ হবে না ওকে আমাবস্যা পর্যন্ত ধরে রাখা....।
রিশফার মা বললো " ধরে যে রাখতেই হবে। না হলে ডোরিয়া আমাদের মেরে ফেলবে...!
**আমি সবকিছু শুনছিলাম কান পেতে। কিন্তু এই ডোরিয়া টা আবার কে..........!💀💀💀
Continue........
Written by: Galib Abraar

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)