রিশফা পর্ব ৪

@Admin
0

 




**রিশফা**
গালিব আবরার
চতুর্থ পর্ব
শুয়ে শুয়ে সবকিছু শুনলাম কিন্তু কিছুই মাথায় ঢুকলো না। তারা মা মেয়ে আসলে কি চায়। কেন তারা আমাকে আমাবস্যা পর্যন্ত জীবিত রাখতে চায়। আর এই ডোরিয়া-ই বা কে যাকে মা মেয়ে ভয় পাচ্ছে....।
এসব পরেও জানা যাবে। এখন নিজেকে বাঁচাতে হবে আমার। ধীরে ধীরে এক চোখ খুলে চারপাশ টা একটু দেখার চেষ্টা করলাম। কাউকে দেখলাম না। মা মেয়ে গেলো কোথায়। হঠাৎ দেখলাম চিলেকোঠার কাছে দুইটা ছায়া দেখা যাচ্ছে। তার মানে তারা ঐখানে দাঁড়িয়ে-ই এতক্ষণ এসব বলছিলো।
এখন ছাদ থেকে লাফ দেওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই। তিন তলা থেকে লাফ দিলে অন্তত মরবো না। বড়জোর হাত পা ভাঙবে।
মনে মনে এক দুই তিন বলে উঠে সোজা দৌড় দিয়ে দিলাম ছাদ থেকে ঝাপ। প্রায় দুই মিনিট আলুর বস্তার মতো নিচে পড়ে রইলাম। আমার সবকিছু যেনো ঝাপসা হয়ে আসছে। মাথা টা ভনভন করে ঘুরছে।
একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর বুঝতে পারলাম হাত নাড়াতে পারছি না। হয়তো ভেঙ্গে গিয়েছে। কিন্তু এখন আমাকে এই জায়গা থেকে যেতে হবে। অনেক কষ্টে উঠে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড় দিলাম। হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া এসে আমাকে দূরে ছিটকে ফেলে দিলো। আমার চোখ গেলো ছাদের দিকে। রিশফা হাওয়ায় ভেসে আছে মাথা ওপরের দিকে দিয়ে।
চোখের পলকে রিশফা একদম আমার কাছে চলে আসলো। সূচালো দাত গুলো বের করে বললো " শুধু শুধু নিজেকে ক্লান্ত করছেন কেন স্যার। আপনি এই গোলকধাঁধা থেকে বের হতে পারবেন না।
আমি অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে সামান্য হাসি দিয়ে বললাম " আমাকে তুৃমি সাইকো বলছিলে না তখন। সাইকোদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমি তোমার এই গোলকধাঁধা থেকে বের হয়ে দেখাবো....।
এটা বলে রিশফার ঐ ভয়ানক রূপ উপেক্ষা করে সোজা হাঁটা দিলাম। দেখি আমাকে কে আটকায়....!
হিন্দু পাড়া অতিক্রম করার সময় মনে হলো কেউ আমার পিছু নিয়েছে। আমি স্পষ্ট তার উপস্থিতি টের পাচ্ছি। রিশফা হয়তো আমার পিছু নিয়েছে। আরো জোরে হাঁটা দিলাম। এবার সেই শিস বাজানোর শব্দ টা কানে ভেসে এলো।
থমকে দাঁড়ালাম। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম সেই লোকটা দাঁড়িয়ে আছে একটা কাপড়ের ব্যাগ হাতে।
আমি বললাম " এখন আপনার সাথে বকবক করার সময় নেই। কোনো রকম জান নিয়ে ফিরে এসেছি। আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে৷ হাত ভেঙে ফেলেছি.....।
এই বলে উল্টো ঘুরে চলে আসতে যাচ্ছিলাম তখন-ই সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো " রহস্য না জেনেই চলে যাচ্ছিস। চাইলেই কি তুই চলে যেতে পারবি...!
আমি দাঁড়ালাম তার কথা শুনে। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করলাম " আপনি কি জানেন এই রহস্য। কি হচ্ছে ঐ বাড়িতে। কে এই রিশফা...?
লোকটা রাস্তার পাশে গিয়ে একটা গাছের গোঁড়ায় বসলো। আমাকেও সেখানে বসতে বললো।
আমি গিয়ে তার পাশে বসলাম। আমার যেনো মনে হলো আমি কোনো বরফ খন্ডের পাশে বসেছি। তার শরীর থেকে প্রচুর ঠান্ডা হাওয়া বের হচ্ছে।
হঠাৎ সে তার ঠান্ডা হাত দিয়ে আমার ভাঙ্গা হাত টা ধরে মোচর দিলো। আমি চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু অনুভব করলাম এখন হাতে কোনো ব্যাথা নেই। নাড়িয়ে চাড়িয়ে ভালো ভাবে দেখলাম আমার হাত একদম ভালো।
আমি বললাম " এটা কিভাবে করলেন। আপনি আসলে কে...?
সে আমার কথা এড়িয়ে গিয়ে বলতে শুরু করলো "
**রিশফা ছিলো খুব-ই সাধারণ একটা মেয়ে। খুব চঞ্চল প্রকৃতির হাসি-খুশি থাকতো সবসময়। প্রতিদিন এদিক দিয়েই স্কুলে যেতো এবং স্কুল থেকে সোজা বাসায় চলে আসতো। কোনোরকম বাজে আড্ডায় নিজেকে জড়াতো না। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন রিশফা নিখোঁজ হয়ে যায়। সবাই তাকে পাগলের মতো খোঁজলো। কোথাও রিশফা-কে খুঁজে পাওয়া গেলো না। রিশফার মা থানায় জিডি করলো । রিশফার বাবা-ও ইতালি থেকে চলে আসলো মেয়ের নিখোঁজের সংবাদ শুনে।
এইটুকো বলে তিনি থামলেন। আমি আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তারপর কি হলো। রিশফাকে কিভাবে খুঁজে পাওয়া গেলো...?
তিনি আবার বলতে লাগলেন " দুইদিন কেটে গেলো কিন্তু কেউ রিশফার খোঁজ দিতে পারলো না। রিশফা নিখোঁজ হয় শনিবার বিকালে স্কুল থেকে ফেরার সময়।
অবশেষে বুধবার রাত ১১ টা বাজে রিশফাকে খুঁজে পাওয়া গেলো তাদের বিল্ডিং-এর-ই পিছনে.....।
**কোথায় ছিলো রিশফা এই কয়েকদিন। তারপর কি তাকে জিজ্ঞেস করা হয় নি....?
লোকটা একটা অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললো " মৃত মানুষ-কে জিজ্ঞেস করে কি উত্তর পাওয়া যাবে..!
আমি অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম " মৃত মানুষ মানে। সেদিন কি রিশফার লাশ পাওয়া গিয়েছিলো....?
**হ্যাঁ হাত পা মুখ বাঁধা অবস্থায় বিল্ডিং-এর পিছনে নালার মাঝে রিশফার লাশ ভেসে উঠেছিলো। পুলিশ এসে লাশ নিয়ে গেলো পোস্ট মর্টামের জন্য। রিশফার বাবা আদরের মেয়েকে হারিয়ে পাগলের মতো হাউমাউ করে কাঁদছিলো। রিশফার বাবার কান্না দেখে সেদিন কেউ তার চোখের পানি আঁটকে রাখতে পারে নি। এতো সুন্দর একটা ফুটফুটে মেয়ের এমন রহস্যময় মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছিলো না।
কিন্তু রিশফার মা একটুও কাঁদে নি সেদিন। সবাই ভেবেছিলো মেয়ের শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে। রিশফা-কে এনে দাফন কাফন করা হলো। প্রায় অনেকদিন তদন্ত চললো কিন্তু পুলিশ রিশফার মারা যাওয়ার কোনো ক্লু খুঁজে পেলো না।
এদিকে একদিন হঠাৎ মেয়ের চিন্তায় রিশফার বাবা স্ট্রোক করে মারা গেলো। রিশফাদের পরিবার টা একদম এলোমেলো হয়ে গেলো।
স্বামী ও মেয়ে হারানোয় রিশফার মা দিন দিন কেমন যেনো হয়ে গেলো। হঠাৎ রিশফার মাও একদিন উধাও হয়ে গেলো গ্রাম থেকে। প্রতিবেশি রা অনেক খুঁজেও তাকে আর পায় নি।
তারপর কেটে গেলো চার মাস। হঠাৎ একদিন রিশফার মা গ্রামে ফিরে এলো। সবাই তাকে দেখে অনেক খুশি হলো। জিজ্ঞেস করলো " এতোদিন কেথায় ছিলো, কি করছিলো...?
রিশফার মা কারো কথার কোনো জবাব দিলো না। সেই যে এসে বাসায় প্রবেশ করেছে সেদিন থেকে আর কোনদিন সে বাসার বাইরে বের হয় নি। প্রতিবেশি রা মাঝে মাঝে তাকে শুধু রাতের বেলা ছাদে দেখতে পেতো....।
**রিশফার যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে সে কে, যে এখন রিশফার মায়ের সাথে আছে। আর রিশফার মা এতোদিন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলো....?
এবার সে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো " ব্ল্যাক ম্যাজিক...!
মানে রিশফার মা রিশফাকে ফিরিয়ে আনতেই এতোদিন নিখোঁজ ছিলো। সে এমন কারো কাছে গিয়েছিলো যে তার মেয়ে-কে ফিরিয়ে দিতে পারবে। এর বিনিময়ে অবশ্য তাকে একটা ভয়ংকর শর্ত দেওয়া হয়েছিলো৷ রিশফার মা তার মেয়ে-কে ফিরিয়ে আনতে সবকিছু করার জন্য প্রস্তুত ছিলো।
শর্ত টা ছিলো প্রতি আমাবস্যায় একজন যুবক বলি দিতে হবে তাকে উদ্দেশ্য করে....!
আমি বললাম " কাকে উদ্দেশ্য করে। রিশফার মা কার কাছে গিয়েছিলো...?
লোকটা ভয়ংকর একটা হাসি দিয়ে বললো " ডোরিয়া নামের এক ভয়ানক সত্তার কাছে গিয়েছিলো সে। ডোরিয়া সাধারণ কেউ নয়। রক্তচোষা পিচাশদের সর্দার সে।
এবং রিশফার মা তার সেই শর্তে রাজি হয়েছিলো। ডোরিয়া রিশফাকে ফিরিয়ে এনেছে। সেই থেকে প্রতি আমাবস্যা তে একজন করে যুবক ডোরিয়া-কে উৎসর্গ করতে হয়।
এই আমাবস্যায় তুই উৎসর্গ হইবি। আর এ জন্যই এতো আয়োজন। তুই যতো চেষ্টা-ই করিস না কেন।। মরতে তোকে হবেই।
আমি হতাশাগ্রস্ত চেহারায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম " রিশফা কিভাবে মারা গিয়েছিলো সেদিন। আর আমার কি কোনো পথ নেই এ থেকে বাঁচার....?
লোকটা আমার হাঁটু তে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো " অনেক জেনে ফেলছিস আজকে। বকি টা না হয় মরার আগেই জানবি.....!
**আপনি এতোকিছু কিভাবে জানেন। আপনি কে....?
লোকটা আমার মুখের কাছে এসে ঠান্ডা নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বললো " আমি ডোরিয়া............💀💀💀
Continue......
Written by: Galib Abraar

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)