অদৃশ্য সুখ

@Admin
0


 জানেন ভাবি, এই তীব্র গরমেও আমি না খুব সুখেই আছি।

থাকব না কেন? বাসায় কারেন্ট আছে, আইপিএস আছে, এসি আছে।

রান্নাঘরে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে, অন্য আট, দশজনের মতো আমি দরদর করে ঘামতে থাকি না। কিছুক্ষণের জন্য এসির নিচে বসতে পারে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সাহেব যখন বাসায় থাকে না, তখন এসির রিমোটটা সরিয়ে রেখে যান।

ফ্যান আছে তো! আবার এসি কেন? বিল উঠবে তো! গতমাসে একবার সতেরো হাজার টাকা বিল এসেছে।

বলি বিলটা তো আর আমি দেই না। বিল আবার কোথা থেকে দেব? বিশ বছরের বিবাহিত জীবনে বিশ টাকা রোজগার করে সংসারে দিতে পেরেছি? বসে বসে অন্ন ধ্বংস করা ছাড়া।

জানেন ভাবি, আমাদের একটা মার্সিডিজ গাড়িও আছে। ম্যালা টাকা দাম। প্রায় এক কোটি টাকা। জানেন কয় ডিজিটে এক কোটি হয়? জানেন হয়তো। আমিও জানি। কারণ সাহেব প্রায় বলে তো! ৮ ডিজিটে হয় এক কোটি।
বলতে হয়, না বললে ভুলে যাই যে!

বাজারে গেলেও গাড়ি, স্কুলে গেলেও গাড়ি, বাবার বাড়িতে গেলেও গাড়ি।
কেনরে বাপু! রাস্তায় এত বাস, সিএনজি কেন আছে? একটায় চড়ে চলে গেলেই তো! বড়জোর বিশ টাকা লাগবে!

জানেন ভাবি, আজ ডাক্তারের কাছে যাব। কিন্তু ভাবতেই কেমন হাঁপিয়ে যাচ্ছি, সরকারি হাসপাতালে গিয়ে টিকেট কেটে, লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখানো বিরাট হ্যাপা।

না, না, সমস্যা আমার প্রকট কিছু না, শুধু টয়লেট চেপে রাখতে রাখতে কোষ্ঠ কাঠিন্য হয়ে গেছে।

টয়লেট চেপে না রেখে আসলে উপায়ও ছিল না, আমি ওয়াশরুমে গেলে না-কি বিকট গন্ধ হয়। উনি ভীষণ রাগারাগি করেন। না করে উপায় আছে? উনার আবার গন্ধ সহ্য হয় না। বড়, বড় ছেলে, মেয়ের সামনে বিষয়টা নিয়ে কথা শুনতে বড় লজ্জা লাগতো। তাই তো ইচ্ছে, অনিচ্ছে টয়লেট চেপে বসে থাকতাম।

আপনি হয়তো বললেন, হয়তো সমস্যা হয়েছে, ভালো কথা। কতটাকা আর ভিজিট লাগবে, একটা প্রাইভেট ক্লিনিকে ডাক্তার দেখালে তো আর কষ্ট হতো না।

বোকা! প্রাইভেট ক্লিনিকে কেন যাব? সরকার কত কোটি, কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে স্বাস্থ্য খাতে। কত বড় বড় ডিগ্রিধারী ডাক্তার সেখানে। আমাদের সৌখিনতার জন্যই রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হয়।

জানেন ভাবি, গতকাল আব্বা - আম্মা এসেছিল আমায় দেখতে। আজ অবশ্য চলেও গেছেন। বাসায় কত কাজ!

কী ভেবেছেন? বাবা-মাকে আপ্যায়ন করার জন্য দুবাই থেকে আনা কোকারিজের জিনিসপত্র আবার শোকেচে সাজিয়ে রাখার কাজ!

না, না এত ঝামেলা করতে যাইনি। পাড়ার মোড়ের দোকান থেকে আঠারোশ টাকা দিয়ে কেনা ডিনারসেটটা দিয়েই কাজ সেরেছি।
কাচের তো, বাবা - মা কি এত কিছু বুঝেন?

এগুলো আসলে দামী কোকারিজ যত্রতত্র বের করার অনুমতি নেই। ছোট ননাশ যখন লন্ডন থেকে ফিরবে তখন বের করব, আর না হয় অফিসের বস বাসায় আসলে।

আগামী সপ্তাহে আন্নার বিয়ে, শহরের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি সেন্টারে হবে। শত শত মানুষের উপস্থিতি থাকবে। সবাই শাড়ি, গয়না, সাজ, পোশাক নিয়ে পরিকল্পনা করছে।

আমার অবশ্য এত পরিকল্পনা নেই। কি নিয়ে পরিকল্পনা করব? ঐসব সোনার গয়না, টয়না আমার নেই, আমি পরি না। গোল্ড প্লেটের একসেট কিনে নিয়েছি বাইশশ টাকা দিয়ে। সেটা দিয়েই বিয়ে, জন্মদিন আর বউভাতের কাজ সারি।

কী দরকার লক্ষ লক্ষ টাকার সোনা গায়ে জড়ানোর! বাবা- মা বিয়ের সময় কিছু দিতে পারেনি তো! সেই টাকা দিয়ে আশিয়ান সিটিতে একটা প্লট বরাদ্দ দেয়া যায়।

আমার সাহেব কিন্তু ভীষণ ভালো, কোনো নারী লোভ নেই। নেশা, ভাং কিছু করে না। বন্ধু- বান্ধব নিয়ে বাহিরে আড্ডাও দেয় না। শিক্ষিত তো, চাকরিও করে বেশ বড় পদে।

আমি না বেশ সুখেই আছি। আমার গাড়ি আছে, বাড়ি আছে। পরিচয় দেয়ার মতো স্বামী আছে।

যাই হোক, সব জিনিস ব্যাবহারে একটু সাশ্রয় আমি না হয় করি, তাতে কি! মেয়েদের একটু হিসাবি হতে হয়। তবেই সংসারের উন্নতি

আমার এত এত সুখ দেখে আপনি আবার হিংসা করবেন না।

জানেন ভাবি, আমি না বেশ সুখেই আছি। অদৃশ্য সুখ। অস্পর্শ সুখ।

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)