মেয়েলী জীবন

@Admin
0

 



--- এতো নড়াচড়া করছো কেনো আফরিন? চুপচাপ সুয়ে থাকতে পারো না? সমস্যা হচ্ছে আমার।

--- আসলে আমার....

--- "হয়েছে আর বাহানা করতে হবে না। সারাদিন অফিসে খাটুনি করে তোমার জন্য একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারছি না। সেই থেকে শুধু নড়াচড়া করেই যাচ্ছো। সারাদিন তো বাসায় শুয়ে-বসে সময় কাটাও তুমি, তোমার না ঘুমালেও চলবে। আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাতে দেও, এতো আশপাশ করলে আমার অস্বস্তি লাগে।"

বিরক্তি কণ্ঠে কথাগুলো বলে, অন্য পাশ ফিরে সুয়ে পড়লো শুভ্র।অথচ তার পাশের মানুষটা পিরিয়ডের অসহ্য ব্যাথায় কা'ত'রা'চ্ছে, এগুলো তার কাছে নিছক বাহানা মাত্র।স্বামী'র কথা শুনে মেয়েটার চোখের কার্নিশ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো দু’ফোটা জল, ভিতর থেকে বেরিয়ে আসলো একটা ভারি দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

স্বামীর ধমক খেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বিছানায় ঘাপটি মেরে সুয়ে আছে আফরিন,ওপাশের মানুষটা তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। না আর সহ্য করা যাচ্ছে না এই অসহ্য পেট, কোমড় ব্যথা। স্বামী'র ঘুমের ডিসটার্ব হবে ভেবে নিঃশব্দে পাশের ঘরটায় চলে গেলো।এখানেই একাকী সারারাত ছ'ট'ফ'ট করতে করতে শেষ রাতে ঘুমিয়ে পড়ছে মেয়েটা।

বেলা সাতটায় অফিসের জন্য রেডি হয়ে, ডাইনিং টেবিলে আজ নাস্তা পেলো না, তবেই বউয়ের খোঁজ নিলো শুভ্র। খোঁজ নিতে নিতে পাশের রুমে চলে গেলো। আফরিন কে এই সময় ঘুমে দেখে মেজাজ বিগড়ে গেল শুভ্র'র। ঘুমন্ত মেয়েটা'কে এক ধাক্কা দিয়ে মেজাজ নিয়ে বললো,

--- "তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো আফরিন? আমার নাস্তা কোথায়?"

--- "আসলে রাতে ঘুম হয়নি তাই উঠতে পারিনি। তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি এক্ষুণি বানাচ্ছি।"

--- "হয়েছে লাগবে না। তুমি তো এটাই চেয়েছো আমি না খেয়ে অফিসে যাই।"

বলেই হনহনিয়ে চলে যেতে নিলো শুভ্র। আফরিন পিছন থেকে হাত ধরে বললো,

--- "প্লিজ না খেয়ে যেওনা। স্যরি আর এমন হবে না!"

শুভ্র শুনলো না, মেয়েটার হাতটা ঝাড়ি মেরে রেখে চলে গেলো। আফরিন ছলছল চোখে সেদিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

--- "আহা পুরুষ! প্রতিনিয়ত নারীর শরীর ছুঁয়ে নিলেও মন ছুঁতে পারলে কই?"

অতঃপর ব্যস্ত হয়ে একা হাতে সমস্ত কাজ করে নিলো। এরিমধ্য ডাইনিং থেকে একমাত্র ননদ, তনয়া বললো,

--- "ভাবী আমার নাস্তা?"

আফরিন পরটা, ডিম মামলেট এগিয়ে দিলো। যা দেখে তনয়া বাড়ি মাথায় তুললো। বাড়ির আদরের মেয়ে কিনা, আহ্লাদের শেষ নেই! চিৎকার চেঁচামেচি করে বললো,

--- "তুমি জানো না আমি এসব খাই না। আমার চিকেন, খিচুড়ি কই?"

--- "আজ একটু কষ্ট করে এগুলো খাও বোন। শরীর'টা ভালো লাগছে না আমার। কাল থেকে করে দিবো।"

পিছন থেকে শ্বাশুড়ি বলে উঠলো,

--- "তুমি জানো না বউ মা? মেয়েটা সকালে খিচুড়ি ছাড়া কিছু খায় না। তোমার সংসারে আমরা মা-মেয়ে বো'ঝা হয়ে গেছি, বুঝেছি এখন থেকে তোমার কথা মতোই খেতে হবে।"

বলেই মেয়ে'কে নিয়ে বাহিরে চলে গেলো।সকাল গড়িয়ে দুপুর নেমেছে। আফরিন তীব্র ব্যাথা সহ্য করে একা একা দুপুরের রান্না-বান্না শেষ করে সবে মাত্র গোসল করে এসেছে। মাএ শ্বাশুড়ি এসেছে বাসায়। সঙ্গে দুই কেজি গুঁড়ো মাছ নিয়ে এসেছে। আফরিনে'র এবার কান্না পাচ্ছে, ভিত কণ্ঠে বললো,

--- "এগুলো এখন ফ্রিজে রেখে দেই মা? পরে কে'টে নিবো।"

--- "না না। সে-কি কথা? এখনই কে'টে রাখতে হবে না হয় খেতে মজা লাগবে না।"

আফরিন আর কিছু বললো না। অসহ্য কোমড় ব্যাথা নিয়ে মাছ গুলো একা একা কা'ট'তে লাগলো।হঠাৎ মনে পড়ে গেলো মায়ের কথা। সেও তো বাবা'র ঘরের আদুরী কন্যা ছিলো। পিরিয়ডের সময় গুলোতে মা তাকে যত্ন করে খাইয়ে দিতো,একটি কাজও করতে দিতো না।
এখন শ্বশুর বাড়িতে এতো কাজ করেও দিনশেষে শুনতে হয়,

--- "সারাদিন কি এমন কাজ করো তুমি?" (আহ্ মা! সত্যিই তোমার মতো কেউ না।)

পরক্ষণেই হুট করেই মেয়ে'টার মস্তিষ্কে প্রশ্নই ঘুরছে,

--- "আচ্ছা মেয়েদের শ্বশুর বাড়ি'র মানুষ গুলো এমন হয় কেনো? তাদের কেনো বাড়ি'র মেয়ে'র মতো দেখে না? মেয়ে - বউদের মধ্যে কেনো এতো পার্থাক্য রাখে তারা?"বাবার ঘরের রাজকন্যাটা -শ্বশুর বাড়িতে চা'ক'রে'র মতো খে'টে'ও তার যোগ্য সম্মান পায় না..!😅💔
তবে এটাই কি মেয়েদের জীবন?

(সমাপ্ত)-----

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)