স্যার I Love You সকল পর্ব একসাথে | ফুল এপিসোড

@Admin
0

 আজ ৬বছর পরও ঠিক ওই জায়গাটায় এসে দাঁড়িয়ে আছি! এটাই সেই জায়গা যেখানে আমি ৬বছর আগে আমার স্যার-কে ভালোবাসি বলে প্রপোস করে ছিলাম!

কিন্তু স্যার আমার ভালোবাসা প্রত্যাক্ষণ করে চলে গিয়ে ছিলো যাওয়ার আগে কিছু কথা বলে গিয়েছিল!
আমি ভাবতাম স্যারও আমাকে ভালোবাসে শুধু বলতে পারছে না। তাই আমিই সাহস করে বলে ছিলামএকদম পুরাই ফিদা, টোটাল ফিল্মি স্টাইলে প্রপোস করে ছিলাম। আমাদের শহরে সন্ধ্যার পরের দৃশ্যটা অনেক সুন্দর। আমি মনে মনে ঠিক করে ছিলাম এমন এক সন্ধ্যে বিকেলে তাকে আমার মনের কথা জানাবো।
আজ যে করেই হোক প্রাইভেট পড়ানো শেষ হলেই স্যারকে বাহিরে আমার সাথে ঘুরতে নিয়ে যাবো
তাই আজকে একটা গোলাপি রাঙা শাড়ি পরেছি।
দুই হাত ভর্তি চুড়ি, চোখে গাড় করে কাজল!
ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক!
আর চুল গুলো খুব সুন্দর ভাবে ফুলিয়ে খোঁপা করে বেধে নিয়েছি!
আর সামনে দিয়ে কয়েকটা চুল বের করে রেখেছি!
কানে (স্যারের দেওয়া) ঝুমকো ঝোড়া পরেছি!
এর আগে একবার স্যারকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে গিয়েছিলাম তখন আমার এই কানের ঝুমকো জোড়া অনেক পছন্দ হয়েছিল।
বাড়ি ফিরার পর বাড়িতে ঢুকতে যাবো তখন স্যার পিছন থেকে আওয়াজ দেয় আমাকে আমি পেছনে ঘুরে তাকাই উনি চোখের ইশারায় উনার সামনে যেতে বলেন।
আমি উনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলি,
– জি স্যার।
– তোমার হাতটা দাও তো!
– কিন্তু কেনো?
– দাও বলছি।
– হুম দিলাম। (স্যারের দিকে এক হাত বাড়িয়ে)
স্যার উনার হাত আমার হাতের উপর রেখে বললেন!
এটা তোমার জন্য ভাবতে পারো ছোটো একটা গিফট!
কিন্তু এখন খুলবে না সোজা রুমে গিয়ে দেখবে!
ওকে এখন আমি যাই!
-যা চলে গেলো যাই রুমে গিয়ে দেখি এই প্যাকেট এর মধ্যে কি আছে
রুমে গিয়ে প্যাকেট টা খুলতেই আমি অবাক
এটা তো ওই ঝুমকো দুই জোড়া যেটা আমি পছন্দ করে ছিলাম শুধু স্যার সাথে ছিলো বলে লজ্জায় নিতে পারিনি,, তার মানে স্যার লক্ষ করেছিলো আমার যে ঝুমকো জুড়ো পছন্দ হয়েছিল
ভাবতে ভাবতে অনেক খুশি হয়ে গেলাম,,,
ভেবেছিলাম একদিন স্যারকে পরে দেখাবো তাই আজকেই পরলাম!
এখনো পুরোনো সৃতির কথা মনে করলে কত খুশি হয়ে যাই। আজও আছে স্যারের দেওয়া ঝুমকো জোড়া আমি আজও খুব যতন করে রেখে দিয়েছি আমার স্যারের দেওয়া প্রথম ও শেষ উপহারটা।
সেই দিনের কথা মনে পরলে আজও অন্ততর কেঁপে কান্না আসে!
জানি না স্যার কোথায় আছে? কেমন আছে?
কি করছে? কিচ্ছু জানি না সে দিন সন্ধ্যার পর আর স্যারকে দেখতে পাইনি অনেক খুঁজে ছিলাম স্যারের বাড়িতেও গিয়েছিলাম কিন্তু যেতে অনেক টা দেরি করে ফেলেছিলাম!
গিয়ে দেখি স্যার উনার মা-কে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন!
আশে পাশের প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস করে জানতে পারি স্যার শহর ছেড়ে চলে গেছেন!
সেই রাস্তায় বসে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম!
কি দোষ ছিল আমার ভালোবাসায় স্যার
কি ভুল ছিলো, কি অপরাধ ছিলো আমার
যে এইভাবে চলে গেলেন আমাকে ছেড়ে
ভালোবাসেন না ঠিক আছে শহর ছেড়ে কেনো চলে গেলেন, একটা বার দেখার সু্যোগ ও দিলেন না
স্যারররররররররর, আমি আপনাকে ভালোবাসি স্যার!
তারপর আমার আর কিচ্ছু মনে ছিলো না!
দুইদিন পর জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হসপিটালে
আম্মু পাশে বসে কান্না করছে! নার্স আমাকে দেখে ডাক্তার কে ডাকতে থাকে
ডাক্তার রোগীর জ্ঞান ফিরেছে!
ডাক্তার আমাকে দেখে বাবাকে বাহিরে নিয়ে কি যেনো বলে চলে যায়!
“ আম্মু আমার কি হয়েছে আমি হাসপাতালে কেনো? ”
আম্মু কান্না করার জন্য কথা বলতে পারছে না চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক কান্না করেছে আর হয়তো কিছু খায়ওনি।
-“ মা’রে তোর যে এক্সিডেন্ট হয়েছিল মা, আজ দুইদিন পর তোর জ্ঞান ফিরেছে মা! ডাক্তার বলেছিলো তুই কোমায় চলে গেছিস! কিন্তু আমার আল্লাহর উপর ভরসা ছিলো উনি আমার মেয়েকে আমার বুকে আমার ফিরিয়ে দিয়েছেন! ”
(আম্মু কথা গুলো কান্না করতে করতে বললো)
“ আম্মু দুইদিন আমি অজ্ঞান ছিলাম! ”
“ ইতি মামনি এখন তুমি বেশি কথা বলো না তুমি পুরো পুরি সুস্থ হওনি! তুমি সুস্থ হয়ে উঠু আগে, তারপর আমরা বাড়ি গিয়ে অর কথা বলবো। ওকে মামনি! ”
“ কিন্তু আব্বু? ”
আব্বু আমাকে আর কিছু বলতে দিল না আম্মুকে নিয়ে কেবিনের বাহিরে চলে গেলো?
আমি শুয়ে শুয়ে স্যারের কথাই ভাবছিলাম!
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি!
আজ ২২ আগষ্ট ঠিক সন্ধ্যে ৭:৪৫ মিনিট সেই দিনটায় সেই টাইমে ৬ বছর আগে স্যারকে প্রপোস করি ব্রীজটার উপরে দাঁড়িয়ে, হাতে ছিলো এক গুচ্ছ সাদা গোলাপ। স্যার সাদা গোলাপ অনেক পছন্দ করতেন তাই সেটা দিয়েই প্রপোস করি।
স্যার আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, আমি স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে এক পা হাঁটু গেঁড়ে বসে স্যারের দিকে তাকিয়ে দুই হাত দিয়ে ফুলগুলো স্যারের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলি!
“ স্যার I Love You ”
৬বছর পর আজও আমি স্যারকে সে-রকমই ভালোবাসি সময়ের সাথে সাথে আমার ভালোবাসাও বেড়েই চলেছে!
প্রতি সপ্তাহে এক বারের জন্য হলেও আমি এই জায়গাটায় আসি, কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর একা একাই হাঁটি!
আজও হাঁটছি এখানে আসলে মনে হয়, স্যার আমার সাথেই আমার হাত ধরে আছেন।
আর বলছেন, “ আর কত অনেক তো হলে চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই! ”
জানেন তো স্যার এখন আর কেউ বলে না, অনেক তো হলে চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই।
আজও অনেক ভালোবাসি স্যার আপনাকে অনেক মিস করি আপনাকে নিজের থেকেও বেশি!
আপনার কসম!
ব্রীজের নিচে বসেই কেঁদে কেঁদে বললাম আর কত কষ্ট করবো? আমি যে আর পারছি না স্যার আপনাকে ছাড়া থাকতে।
চলবে?
স্যার i love you
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
সূচনা_পর্ব

স্যার I Love You
পর্ব ২
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
____________
আমাকে দেখে ড্রাইবার আঙ্কেল দৌঁড়ে আমার কাছে আসে কাঁধের উপর হাত রেখে বলেন,
“ ইতি মামনি কান্না করো না চল বাড়ি চল! ”
“ হুম আঙ্কেল আপনি যান আমি আসছি ”
বলে দুইহাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গালে ল্যাপ্টে থাকা অশ্রুকণা মুছে গাড়িতে উঠে বসলাম।
গাড়ির কাচ নামিয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছি!
নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে অজস্র পানি ঝরছে!
ড্রাইবার আঙ্কেল: ‘ মামনি আমরা এসে পরেছি! ’
“ ও আমি খেয়াল করিনি, সরি! ”
বাড়িতে ডুকে কোথায় দাঁড়ালাম না আম্মু একবার ডাক দিয়েছিল কিন্তু আমি সোজা রুমে চলে আসি!
আর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেই কারণ আম্মু আমাকে দেখলে ঠিক বুঝে যেতো আমি কান্না করেছি!
ফ্রেশ হয়ে বেরোতেই দেখি আম্মু বিছানায় বসে আছে!
‘ আম্মু তুমি কখন এলে? ’
– যখন তুমি আমাকে ইগনোর করে রুমে চলে এসেছিলে তখন।
– মানে কি? তুমি ৩০ মিনিট ধরে রুমে বসে আছো?
‘ হুম, তাড়াতাড়ি নিচে খেতে এসো। ’ আর কিছু না বলে আম্মু চলে গেলো।
আমিও পিছু পিছু লক্ষী মেয়ের মতো চলে আসলাম!
আব্বু- মামনি তোমার ক্লিনিক কেমন চলছে?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আব্বু!
আব্বু- মামনি তোমার জন্য একটা ছেলে দেখেছি, তুমি কাল ছেলেটার সাথে মিট করো!
— আব্বু ইম্পসিবল, কোনো ভাবেই না!
আম্মু- তোর বাবা কি বলছে সেটা তো আগে শুনে নে!
– আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না! আমি শুধু স্যারকে ভালোবাসি আর স্যারকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না কখনোই না! সারাজীবন এমনেই থেকে যাবো তবুও কাউকে বিয়ে করবো না! আমার বিয়ে নিয়ে কেউ আর একটা কথাও বলবে না তা না হলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো! (উঠে চলে আসলাম)
আম্মু- মেয়েটা না খেয়েই চলে গেলো!
আব্বু- আমি কি কিছু ভুল বলেছি? নাসিমা!
আমি ওর বাবা আমি কি নিজের মেয়েকে এভাবে তিলে তিলে কষ্ট পেতে দেখতে পারি বলো?
শাওন কে তো আমি কত জায়গায় খোঁজার চেষ্টা করেছি কিন্তু না ওর কোনো খোঁজ পেয়েছি না ওর মা-র কোনো খোঁজ পেয়েছি! একমাত্র মেয়েকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে তো আমার কলিজা ফেটে যায়!
আমি তো শুধু এই টুকুই চাই আমার মেয়ে খুশি থাকুক!
এটা চাওয়া কি আমার অপরাধ?
আম্মু- তুমি কষ্ট পেও না, আমি ওকে বোঝাবো পরে!
তুমি প্লিজ এখন খেয়ে নাও!
আব্বু- আমার মেয়ে না খেয়ে চলে গেছে আমি কিভাবে খাই? আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না নাসিমা! আমার মেয়েটাকে বুঝিয়ে খাইয়ে দিয়ে আসো!
শাওন চলে যাওয়ার পর আমাদের মেয়েটা কেমন যেনো হয়ে গেছে, ৬বছরে অনেক পাল্টে গেছে
নিশ্বাস তো নিচ্ছে কিন্তু জীবিত লাশ হয়ে আছে!
আমি আমার ৬বছর আগের ইতি কে ফিরে পেতে চাই
(এই বলে আব্বু চলে গেলো তার রুমে)
আম্মু রুমে এসে দেখে আমি রুমে কোথাও নেই!
ওয়াশরুমে অথবা বারান্দায় যায়নি তো?
কোথাও নেই দেখে আম্মু ভাবলো, “ছাঁদে যায়নি তো?”
আম্মু দৌঁড়ে ছাঁদে এসে দেখে আমি ছাঁদের এক কোণে মন খারাপ করে বসে আছি!
আম্মু- ইতি! এত রাতে ছাঁদে কেনো আসছিস মা?
‘ আম্মু তুমি এখানে আসছো কেনো? যাও রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো আমাকে একা থাকতে দাও প্লিজ! ‘
‘ তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে মা আমরা যে তোর কষ্ট হইতে পারছি না, তাই তো তোর বাবা! ‘
‘ আম্মু প্লিজ, আর কিচ্ছু বলবা না! আমি স্যারের জায়গায় কাউকে কল্পনাও করতেও পরিনা! আর তোমরা বলছো অন্য একটা ছেলের সাথের সাথে দেখা করতে আমি পারবো না! ‘
“ শাওন ৬বছর হয়েছে চলে গেছে আর তুই এখনও ওকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছিস! কেনো মা? তুই তোর লাইফে এগি ” আম্মুকে আর কিছু বলতে দিলাম না, নিজেই বলতে শুরু করলাম।
– আম্মু আর কিছু বলবা না, আমি বাড়ি থেকে চলে যাই এটাই তো যাও নাকি? ওকে ফাইন কালকেই চলে যাবো!
আম্মু: ‘ তোকে আমি আর তোর বাবা আর কিচ্ছু বলবো না যা ইচ্ছা কর কিন্তু বাড়ি ছেড়ে যাসনা মা!
তোকে ছাড়া আমরা থাকতে পারবো না। ‘
আম্মু কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। আমি আম্মু আব্বুর কষ্ট বুঝতে পারছি কিন্তু আমার যে কিছু করার নাই
আমি যে স্যারকে অনেক ভালোবাসি!
আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি অনেক কালো কালো মেঘ জমেছে আকাশের বুকে!
তার থেকে বেশি মেঘ আমার বুকে জমে পাথর হয়ে গেছে! মনে হচ্ছে বৃষ্টি আসতে পারে!
আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, “ স্যার আপনি কবে ফিরে আসবেন? আপনাকে যে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে! আমার তো আপনাকে ছাড়া থাকতে অনেক কষ্ট হয় আপনার কি আমার কথা একবারও মনে পরে না! আপনার চোখে তো আমি আমার প্রতি ভালোবাসা দেখেছিলাম তো কিভাবে ভুলে গেলেন আমাকে? ”
কাঁদতে কাঁদতে চোখ বন্ধ করলাম, আর ডুব দিলাম ৬ বছর আগের আমি পুরানো স্মৃতি তে।
চলবে?


------------------------------------------------



স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_০৩
____________
“ আম্মু আমি আমার ড্রেস খুঁজে পাচ্ছি না একটু খুঁজে দিয়া যাও। ” রুম থেকে চেচিয়ে বললাম।
“ তুই একটু খুঁজে নে আমি কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছি! ” আম্মু বলল।
‘ আম্মু আমার লেট হয়ে যাচ্ছে একটু এসে খুঁজে দাও না! ‘
আম্মু- উফফফ এই মেয়েকে নিয়ে কি যে করি? এত বড় হয়ে গেছে এখনো নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে পারে না। আর আমি কষ্ট করে গুছিয়ে দিলে সেগুলো অগোছালো করে রাখে আর পরে আম্মু এটা পাচ্ছি না ওটা পাচ্ছি না এটা খুঁজে দিয়ে যাও ওটা খুঁজে দিয়ে যাও উফফ।
– আমমমমমমমম্মু।
আম্মু- আসছি তো চিৎকার করছিস কেনো?
আম্মু রুমে এসে কিছুক্ষণ খোঁজার পর, ‘ এই নে তোর ড্রেস, অসহ্য একটা কাজও ঠিকঠাক মতো করতে পারিস না। তোকে নিয়ে যে আমাদের কি হবে?
একমাত্র আল্লাহ জানেন। এত বড় হয়ে গেছিস কিন্তু এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলি।
‘ ও আম্মু, আমি এমনই থাকতে চাই উমমম্মাহ। ’
আম্মুকে জড়িয়ে ধরে একটা পাপ্পা দিলাম। আম্মুকে একটু জড়িয়ে ধরে পাপ্পা দিলেই আম্মু গলে যায় আর কিছু বলে না, রাগ গলে পানি পানি হয়ে যায়, যখন ছোটো ছিলাম তখন দেখতাম আম্মু আব্বুর উপর একটু বেশি রেগে গেলেই আব্বু আম্মুকে এইভাবে জড়িয়ে ধরে আর বললাম না আমার বুঝি লজ্জা করে না।
তাই দেখে দেখে আমিও শিখে গেছি।
আম্মু: একদম বাবা মতো হয়েছিস, তাড়াতাড়ি নিচে আয় নাস্তা রেডি।
– ওকে আম্মু!
কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামতেই আব্বু বলল, – মামনি গুড মর্নিং!
– ওওও আব্বু গুড মর্নিং।
আব্বু- এসো আব্বুর পাশে বসে নাস্তা করো!
‘ ওকে আব্বু!’ আব্বুর পাশে বসতেই আব্বু আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে।
আম্মু- আমাকে তো সবাই ভুলেই গেছে!
আব্বু- আরে আমার লক্ষী সুন্দরী বউ আসো আমার পাশে বসো আমি তোমাকেও খাইয়ে দিচ্ছি!
হা করো!
আম্মু লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গেছে আর আব্বুর পাশে বসে হা করে খাচ্ছে।
– আম্মুর বিষয়ে আরেকটা কথা বলি, আমার আম্মু প্রশংসা পেতে খুব পছন্দ করে আর সেটা যদি আব্বু করে তাহলে তো কথাই নাই, আর বেশি বেশি প্রশংসা করলে এই যে এখনের মতো লাল টমেটো হয়ে যায়।
– আচ্ছা আব্বু-আম্মু আমার শেষ আমি যাই!
আব্বু- দাঁড়াও মামনি, তোমাকে একটা কথা বলার আছে!
– হ্যা বলো!
আব্বু ডেকে বলল, “ তোমাকে প্রাইভেট পড়াতে একজন নতুন স্যার আসবে বুঝেছো এইবার ওর সাথে কোনো দুষ্টামি করবে না! ও খুবই ভদ্র ছেলে বুঝেছো? এর আগেও ১০টা স্যার তোমাকে পরাতে এসে পালাইছে ৩দিনও টিকে নাই লাস্ট স্যার ৪ দিন টিকছিলো। জানি না কি করো যে তারা পালাতে বাধ্য হয়, এইবার এমন কিছুই করবে না তুমি! ”আম্মু ও আব্বুর সাথে একটু তালেতাল দেয়।
ওকে ওর কলেজের ফাজিল বন্ধু গুলার সাথে মিলা মিশা বন্ধ করে দাও ও এমনি ঠিক হয়ে যাবে। ফাজিল বন্ধুদের সাথে মিশে ফাজিল হয়ে যাচ্ছে দিনদিন!
একটু শাসন করো মেয়ে কে।
আমি মনে মনে বলে উঠি, “ আম্মু তুমি তো জানো না ওই ফাজিলদের দলের লিডার হচ্ছি আমি.।ওরা কি ওদের থেকে বড় ফাজিল আমি। হাহাহা.
আব্বু- দুষ্টামি করো না ওকে মামনি! ( আব্বু কপালে একটা চুমু দিলো আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো অফিসে)
আমিও আব্বুর সাথে বেরিয়ে অন্য গাড়িতে উঠে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হলাম।
আর ওই স্যার গুলার সাথে কি করছিলাম একটু বলি।
৯নাম্বার স্যার যে আমাকে পরাতে আসছিলো হেই বেডা একটু বোকা বোকা আছিলো হেরে একদিন চায়ের সাথে তেলাপোকা দিছিলাম।
হেয় তো চায়ের উপরে তেলাপোকা সাতার কাটতাছে দেখিয়া উল্টাই পাল্টাই দৌঁড়।
১০নাম্বার স্যারেরে তো রাস্তায় সব গুলা বান্ধবী মিল্লা এমন ধুলাই দিছিলাম আমারে কেনো জীবনে আর কোনো ছাত্র-ছাত্রী কে সে পড়ায় নাই।
আর বাকি গুলারে একটু উত্তম মাধ্যম দিছিলাম হেতেই হেরা সব ভাগছিলো।
ভাবতাছি এইটার সাথে কি করমু?
ভাবতে ভাবতে আমার গাড়ি থেমে গেলো।
“ কি হয়েছে আঙ্কেল? কলেজ তো এখনো অনেক দূর। এখানে ব্রেক করলেন কেনো? ”
“ ইতি মামনি মনে হচ্ছে গাড়ির ইন্জিনি নে কিছু প্রবলেম হয়েছে। ”
“ ওকে আঙ্কেল তুমি গাড়ি গ্যারেজে নিয়ে যাও ঠিক হয়েগেলে বাড়ি চলে যেও আমি রিকশা করে কলেজ চলে যাচ্ছি! ”
“ তুমি যেতে পারবে মামনি? ”
“হ্যাঁ আমি ঠিক যেতে পারবো। ”
অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি একটাও রিকশা খালি নাই উফফফ। আমার এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে!
কিছুক্ষণ পর একটা রিকশা দেখলাম! ( যাক বাবা)
“ ওই রিকশা এদিকে আসো! ”
“ ওই মামা এদিকে আসো! ”
পাশে কোথা থেকে একটা ছেলে এসে আমার ডাকা রিকশা ওনি মামা বলে ডেকে নিচ্ছেন ম্যাজাজ টা গেলো বিগড়ে!
রিকশা ওয়ালা- কোথায় যাবেন আপনারা?
আমি- কোথায় যাবেন মানে কি আমি আগে ডেকেছি আপনাকে তাই আমি যাবো!
ছেলেটা: আমিও ডেকেছি আমিই যাবো আমার যাওয়াটা ইমপোর্টেন্ট! আপনি অন্য রিকশা করে চলে যান না প্লিজ। আমার চাকরির ইন্টারভিউ আছে! টাইমলি না পৌঁছাতে পারলে জব টা হাত থেকে চলে যাবে প্লিজ!
আমি-
“ তাতে আমার কি আমি আগে রিকশা ডাকছি! তাই আমিই যাবো! আর আমার কলেজের জন্য লেট হয়ে যাচ্ছে! ”
ছেলেটা- না আমি যাবো।
আমি– আমি যাবো।
১০মিনিট এই ভাবেই গেলো রিকশাওয়ালা বেশ মজাই নিচ্ছে আর মুখ চেপে হাসছে।
ছেলেটা বেশ ঝগড়াটে কিন্তু আমার তো লেট হয়ে যাচ্ছে! কালকে বৃষ্টি হয়েছে তাই রাস্তার জাগায় জাগায় কাঁদা আর পানি জমে আছে!
ছেলেটা বেশি বারাবারি করছে আর আমার শয়তানি মাথায় একটা তুফানি আইডিয়া আসলো।
ছেলেটা যেই রিকশায় উঠতে যাবে তাকে এক ধাক্কা দিয়ে দিলাম কাঁদায় ফেলে সাথে কাঁদা পানি ফ্রি।
আর টুস করে রিকশায় উঠে বসলাম। সবাই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হাসছে
ছেলেটা কতক্ষণ আমার দিকে বলদের মতে তাকিয়ে ছিলো!
কিন্তু এখন ছেলেটার দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলাম ছেলেটা বেশ কিউট আর হ্যান্ডসাম এতক্ষণ ঝগড়া করছি তাই খেয়াল করি নাই কিন্তু এখন ওই সে যেমনই হোক না কেনো তাতে আমার কি?
“ রিকশা মামা তাড়াতাড়ি চলো আমার কলেজের জন্য দেরি হয়ে গেছে এমনিতে অনেকটা! ”
রিকশাচালক- আপা কাজটা কি আপনি ঠিক করছেন?
-কি করতাম বলেন ছেলেটা কিভাবে ঝগড়া করছিলো আপনি তো দেখছেনই আর আমার ও অনেক লেট হয়ে গেলো আজ তো স্যার ক্লাসে ডুকতেই দিবে না।
কলেজের সামনে এসে রিকশা ভাড়া দিয়া এক দৌঁড় দিলাম সোজা ক্লাসের সামনে গিয়ে থামলাম।
হাঁপাতে হাঁপাতে, “ আসবো স্যার? ”
“ না! তুমি আজকে বাহিরেই থাকো। ”
স্যার উনার পুরো ক্লাস আমাকে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখলো। অন্য স্যারের ক্লাসে ঢুকলাম!
সবগুলো ক্লাস করলাম কলেজ ছুটি কি মজা!
কলেজের পাশে একটা ফুলের বাগান আছে সেখানে এসে আমরা সবাই আড্ডা দেই আমি আগেই এসে বসে আছি!
তানিম, রুবেল, মুন্নী, মিম আর আব্রু এই পাঁচটা আমার কুত্তা কুত্তী বন্ধু বান্ধবী আর আমার ফাজিলের দল।
আমার কাছে এসে বসে বসলো, আর বললো,
‘ কিরে আজ আমাদের ছাড়াই চলে এলি আর ক্লাসেও খুব একটা দুষ্টামি ফাজলামি করিসনি কি হয়েছে একটু বলবি? ’
তার ওদের সব খুলে বললাম রাস্তার ঘটনা।
ওরা তো হাসতে হাসতে ৩২টা হাঁত বাহির করে দিচ্ছে আর হাসতে হাসতে এক জন আরেক জনের উপরে গিয়ে পরছে।
‘ ওই তোরা চুপ করবি? ’ বলে ইচ্ছা মত দিলাম কত গুলা কিল ঘুসি। আরও বললাম,
‘ ছেলেটার সাথে ঠিক করি নাই, ওইভাবে ধাক্কা দেওয়া একটু উচিত হয় নাই। ছেলেটা বলছিলো ওর ইন্টারভিউ আছে আর আমি কাঁদায় ফেলে দিলাম! ইসসস। ’
মুন্নী- এখন আর ইসস ইসস করে কি করবি যা করার তা তো করেই দিছোস।
আব্রু- ছেলেটা কেমন ছিলো রে?
আমি- অনেক কিউট আর হ্যান্ডসাম ছিলো।
মিম- ওও প্রেমে টেমে পরে যাওনি তো আবার?
রুবেল- কিরে বিকেলে চল সবাই ফুচকা খেতে যাই!
তানিম- আইডিয়া টা ভালো!
মুন্নী,মিম,আব্রু এক সাথে, ‘ ওকে ডান! ’
আমি- আমি যেতে পারবো না রে!
মুন্নী- কেন?
আমি- আজ বিকালে আমার নতুন প্রাইভেট স্যার আসবে আমাকে পড়াতে!
সবগুলা একসাথে-নকিহহহহহ? আবার আরেকটা স্যার! এবার এটার সাথে কি করবি?
আমি, ‘ভাবছি কি করবো? ’
আচ্ছা চল সবাই এখন বাড়ি যাই টাটা।
বলে সবাই চলে গেলো।




-------------------------------

স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_০৪
_____________
আব্দুল আঙ্কেল- মামনী তোমার কলেজে যেতে বা আসতে রাস্তায় কোনো সমস্যা হয় নাই তো? আবুল আঙ্কেল হচ্ছে আমাদের ড্রাইবার উনার নাম আবুল কালাম।
– না আঙ্কেল আমার কোনো অসুবিধা হয়নি!
আবুল আঙ্কেল- যাও বাড়ির ভেতরে যাও!
বাড়ির ভেতরে ডুকে দেখি আম্মু কিচেনে কি জেনো করছে আমিও পিছন থেকে আম্মুকে ভয় দেখানোর জন্য জরে চিৎকার দিলাম!
আমি- ভাউউউউউ (আম্মুর পেছন থেকে)
আম্মু– আআআআআ।
(চিৎকার দিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে আমি। আমি তো হাসতেছি)
আমি- হাহাহা।
আম্মু- তুই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস?
আমি: হুহহ আর তুমি ভয় পেয়েছো ও।
আম্মু- ওরে পাঁজি মেয়ে দাঁড়া দেখাচ্ছি তোকে মজা! (আম্মু রুটি বানানোর বেলুন নিয়ে দিলো আমাকে দৌঁড়ানি আমিও এক মিনিটও দাঁড়াইনি এক দৌঁড়ে রুমে এসে দরজা ভেতর থেকে লক করে দিছি!
হিহিহি কি মজা আম্মু কে ভয় দেখাইছি কত্তো দিন পর। ডিংকা চিকা ডিংকা চিকা এ এ এ ওওও, গানে নাচতে নাচতে ওয়াশরুমে গেলাম ফ্রেশ হতে!
ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গেলাম, দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি আর নিজেই নিজেকে বলছি- ওই ছেলেটার সাথে একটুও ঠিক করি নাই কি করবো ছেলেটারই দোষ আল্লাহ জানে ইন্টারভিউ দিতে পারছে কি না আর না দিতে পারলে তো আমার জন্য ছেলেটা চাকরি ছাড়া হবে ইসসসস।
রাগ উঠলে যে মাথা ঠিক থাকে না। যতসব উল্টা পাল্টা কাজ করি এখন নিজেরই গিল্টি ফিল হচ্ছে
যা হওয়ার তো হয়েই গেছে আরেকদিন পেলে ছেলেটার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে সরি বলে দিবো।
এরমধ্যেই আমার ভাবনায় পানি দিতে কে জেনো দরজা নক করছে।
‘ কে রে? দাঁড়াও আসতাছি একটু শান্তি মতো ভাবতেও দিবে না! ’
দরজা খুলতেই সায়েমা আন্টিকে দেখে অবাক হলাম অস্ফুটস্বরে বলে উঠলাম, ‘ তুমি কখন আসছো? ’ আমাদের কাজের ভুয়া উনি উনার গ্রামের বাড়ি গিয়েছিল।
আন্টি- মামনি, এই তো একটু আগেই গ্রাম থেকে আসছি! তুমি আসো বড় আফা তোমাকে খেতে ডাকতে আমাকে পাঠাইছে!
– হুম চলো!
খাওয়া দাওয়া শেষে বসে বসে টিভি দেখছিলাম টম এন্ড জেরি আর হাসছিলাম (হাহাহা)
আম্মু- টম এন্ড জেরি দেখিছ আর ওদের মতোই হচ্ছিস! টিভি অফ করে যা রুমে গিয়ে পড়তে বস।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শাওন চলে আসবো যা তাড়াতাড়ি যা।
“ আম্মু, শাওন কে? ”
আম্মু- কিসের শাওন? বড়দের নাম ধরে ডাকছো কেন?
– যাহ বাবা আমি কি করলাম? নামটা না বললে কি বলে ডাকবো আমি তো চিনিই না তাকে সেজন্যই তো বললান কে শাওন?
আম্মু- আবার শাওন? যাইহোক শাওন হচ্ছে তোর নতুন স্যার। তো স্যার বলবি আবার যদি নাম ধরে ডাকিস?
-“ ওকে ওকে আর নাম ধরে বলবো না স্যারই বলবো! ”
হিহিহি স্যার না কি বলবো সেটা তো সময়ই বলে দিবে আম্মিজান দেখো খালি তোমার স্যারের সাথে কি করি? Wait and Watch মনে মনে।
আম্মু- যা রুমে গিয়ে পড়তে বস! আর হ্যা দুষ্টামি একদম করবি না সুন্দর আর ভদ্র মেয়ে হয়ে থাকবি!
– ওকে আম্মু! (বলে উঠতে যাবো তখনি)
আম্মু- কি ব্যাপার আজকে আমি যা বলছি কোনো তর্ক না করেই রাজি হয়ে যাচ্ছিস! ডাল মে কুছ কালা হে?
নিশ্চয়ই কারো সাথে আবার কিছু করছিস?
“ কোই না তো আম্মু আমি রুমে গেলাম। ”
আমি যখনই উল্টা পাল্টা কিছু করি আম্মু ঠিক বুঝে যায়। কোনো মতে পালিয়ে রুমে চলে আসলাম!
আব্বু থাকলে তো আম্মু আব্বুর সামনে কিচ্ছু বলে না কিন্তু আব্বু না থাকলে আম্মুর থেকে একটু দূরেই থাকি
আমি অনেক চঞ্চল, দুষ্টু ও পাজি মজা করতে খুব পছন্দ করি সারাদিন শুধু তাই করি।
আব্বু কিছু বলে না কিন্তু আম্মু ছাড় দেয় না।
আব্বু বলে- ‘ এই বয়সে করবে না তো কবে করবে আমার মেয়ের যা ইচ্ছা তাই করবে! ’
আম্মু- এই বলে বলে মেয়ের মাথা নষ্ট করেছো। তোমার আশকারা পেয়ে পেয়ে মেয়ে আজ এত পাঁজি হয়েছে। সারাদিন কারো না কারোর কমপ্লেন আসেই শুধু তোমার মেয়ে বলে কেউ কিছু বলে না।
এইগুলা ভাবতে ভাবতেই কারো গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম একটা ছেলের। সে আমার রুমে ডুকে সালাম দিলো।
“ আসসালামু আলাইকুম ”
আমি- ওয়ালাই।
ছেলেটাকে দেখে তো আমি পুরাই টাসকি খাইয়া গেছি
ছেলেটার সাথে আম্মু দাঁড়াই আছে! আমি ছেলেটার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। ছেলেটা ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে!
আম্মু- ইতি সালামের উত্তর দেও!
আমি তো ভয়ে শেষ বাড়িতে আব্বু ও নেই এই ছেলে যদি আম্মুর কাছে আমার নামে বিচার দেয় আম্মু তো আমাকে মাথার উপরে উঠাইয়া একটা আছারই মারবে!
এই ছেলে কি আমি নামে বিচার দিতে আসছে?
আল্লাহ গো এইবারে মতো আমাকে বাঁচাই দেও এই ছেলেকে আর জীবনেও কিছু বলতাম না আর সাথে একটা শুকনো ঢোক গিল্লাম (এত সব কিছু মনে মনে বললাম)
আবারও আম্মু বলল- ইতি শাওনের সালামের উত্তর দেও!
আমি আরও একটা জাটকা খেলাম। শাওন মানে আমার নতুন স্যার! এইবার আমি শেষ আমাকে এইবার আম্মুর হাত থেকা কেউ বাঁচাতে পারবে না! আল্লাহ গো।
ছেলেটা সেই একই ভাবে তাকাই আছে মরন আর কোনো ছাত্রী পাননি পড়ানোর জন্য? এক মিনিট এক মিনিট ছেলেটা যদি আম্মু কে সব বলে দিতো তাহলে আম্মু আমার এখনও এত শান্ত হত না তার মানে কিছুই বলে নাই ইয়াহু।
আমি খুশি হয়ে সালামের উত্তর দিলাম,
আমি- ওয়াআলাইকুমুস সালাম।
যাক বাবা বাঁচলাম কিছুই বলে নাই শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিলাম!
আম্মু- শাওন বাবা এই হচ্ছে আমার একমাত্র মেয়ে ইতি আর তোমার ছাত্রী। তুমি ওকে পড়াও ততক্ষণে আমি তোমার জন্য নাস্তা পাঠাচ্ছি!
স্যার- না আন্টি আপনার ওই সব কিছুই করতে হবে না!
আম্মু- তোমার অতশত ভাবতে হবে না, তুমি বসো আর ওকে পড়াও আমি কিছু নিয়ে আসছি আর ইতি যদি খুব দুষ্ট ও যদি কিছু বলে তোমাকে তুমি সোজা আমাকে বলবে ওকে বাবা বসো আমি আসি!
আমিও বসলাম স্যারও বসলো! আসছে পর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল আর এখন বইয়ের এর দিকে।
আমি- এই বই ছাড়া আর কিছু চিনে না নাকি? যাক বাবা উনাকে যখন পাইছি তাহলে সরি বলেই দেই আর সাথে থ্যাংকস ও আম্মুকে কিছু না বলার জন্য হুম এখনই বলবো। ( মনে মনে)
আমি- স্যার!
শাওন- জি বলুন! (বইয়ের দিকে তাকিয়ে)
আমি- বলুন? আমাকে আপনি আপনি করছে বাহ বেশ ভদ্র তো উনি সাথে হ্যান্ডসামও দূর কি ভাবছি আমি! (মনে মনে)
আমি– Sir. I’m Sorry! & Thank you!
স্যার- সরি কেনো আর ধন্যবাদই বা কেনো?
আমি- আমার মুখের দিকে না তাকালে বুঝবি কি ভাবে গাধা? (একটু রেগে)
আমি- ওই যে আপনি আম্মুর কাছে আমার নামে কোনো কমপ্লেন করেননি তাই!
স্যার- আপনার নামে শুধু শুধু কমপ্লেন কেনো করবো?
(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি- মানে কি শুধু শুধু বলতে উনি কি সকালের কথা ভুলে গেছেন নাকি?
স্যার- আপনাকে আমি কোথায় জেনো দেখেছি।
আমি- সকালেই তো দেখলি আর কি ঝগড়া টাই না করলি! আর এখন ভাব ধরা হচ্ছে যে কিছুই মনে নাই! (মনে মনে)
চলবে?


--------------------
স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা।
পর্ব_০৫
__________
“ স্যার সকাল বেলা যে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে কাঁদা পানিতে ফেলে দিছিলাম তার জন্য সরি! ” (সরি বলে মাথা নিচু করে রইলাম)
স্যার- হ্যা তাইতো আপনিই তো সেই মেয়েটা।
আমি- স্যার আইএম সরি স্যার প্লিজ আম্মুর কাছে কমপ্লেন করবেন না প্লিজ স্যার!
স্যার- ইট’স ওকে! আপনি সরি বলছেন এটাই অনেক! আর আমি কারো নামে কমপ্লেন করা পছন্দ করি না! নেক্সট টাইম খেয়াল রাখবেন এমন কারো সাথে করবেন না!
আমি- ওকে স্যার ধন্যবাদ! স্যারের প্রতিটা কথায় জেনো আমি মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি! কি সুন্দর করে কথা বলে আর আপনি আপনি বলছে এত সম্মান আমাকে আগে আর কোনো স্যার দেয়নি
(মাথায় একটা আসতে করে চাটা মারলাম কি সব উল্টা পাল্টা ভাবছি)
আম্মু- আসবো বাবা?
স্যার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আরে আন্টি আসুন না এটা তো আপনারই বাড়ি পারমিশন নেওয়ার কি আছে! ’
আম্মু- নাও বাবা পড়াতে পড়াতে কিছু খেয়ে নেও!
স্যার- আন্টি এত কিছু আনার কি ধরকার ছিলো?
আম্মু- বাবা এইসব তো কিচ্ছু না!
স্যার- আন্টি আমাকে এইসব আর দিবেন না প্লিজ আমি এখানে খেতে আসি না পড়াতে আসি,, যেদিন এমনি আসবো সেদিন না হয় খেতে দিবেন এখন শুধু কফি টা দিন! ( মৃদু সুরে বললো)
মনে হলো কোকিল যেনো কুহু কুহু করছে।
ভাবনায় ডুবে আমি ভাবছি, উনি কি সত্যিই এত ভালো নাকি নাটক করছে? যাই হোক আসতে ধীরে জানতে পারবো!
স্যার- তাছাড়া আন্টি আমি পড়াশোনার সময় খাওয়া দাওয়া একদম পছন্দ করি না। আপনি প্লিজ কষ্ট পাবেন না! কফির মগটা হাতে নিয়ে বললো।
আম্মু- ওকে বাবা! সায়েমা খাবার ট্রেটা নিয়ে কিচেনে রাখো!
আমি অনেক উঁকিঝুকি দিলাম বসে থাকার জন্য কিচ্ছু দেখতে পেলাম না আম্মু কি কি আনছে তাই বলেই উঠলাম,
আমি– আম্মু আমাকে কিছু একটা দিয়ে যাও আমি খাবো খুব সুন্দর স্মেইল আসছে!
স্যার- একদম না! পড়তে পড়তে খেলে সব খাবারের সাথে গিলে খেয়ে ফেলবেন! আন্টি কিচ্ছু দিবেন না পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত!
আমার আম্মুও ফাজিল স্যারের সাথে তাল মিলালো!
আম্মু- ঠিক বলেছো বাবা! খেতে খেতে পড়ে তাই তো পড়াশোনা কিচ্ছু মনে থাকে! পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিচ্ছু পাবি না!
আমি- আম্মু একটা একটা একটা প্লিজ!
যাহ না দিয়েই চলে গেলো সব এই বজ্জাত স্যারের জন্য!
স্যার- কফি খাচ্ছে আর হাসছে!
আমি- হাসিটা কি সুন্দর হাসলে কত কিউট লাগে
ধুর আবারও কি ভাবছি (মনে মনে)
আমি- আপনি ৩২টা দাঁত বাহির করে বেটকাচ্ছেন কেনো?
ইচ্ছে করছে একটা পাঞ্চ মেরে ৩২টা দাঁত ফালাই দেই কিন্তু সেটা তো করতে পারবো কারণ অত শক্তি আমার নাই ১টা দাঁতই ফালাইতে পারমু না আর কোই ৩২টা এবার ভাবনার সাগর থেকে বের হই!
স্যার হাসি থামিয়ে বলল, এটা আপনার শাস্তি আমাকে সকালে কাঁদায় ফেলে দেওয়ার জন্য!
আমি: আপনি না কমপ্লেন করা পছন্দ করেন না তাহলে?
স্যার: কমপ্লেন কখন করলাম? ভুলের শাস্তি দিলাম!
আমি- আমার সাথে বজ্জাতগিরী, দেখাচ্ছি মজা বজ্জাত স্যার কোথাকারের! (মনে মনে)
আমি- স্যার আমার কলমের কালী শেষ! আপনি কি একটু কষ্ট করে আমাকে ওই টেবিলের ২নাম্বার ড্রয়ার থেকে একটা কলম এনে দিবেন প্লিজ!
স্যার- ওকে আপনি বসেন, আমি এখুনি এনে দিচ্ছি!
স্যার খুঁজতে খুঁজতে বললেন, ‘ কোথায় ইতি এখানে তো আপনার কোনো কলম নেই! ’
আমি- নেই মানে কি স্যার আমি এখুনি আসছি! স্যারের সামনে গিয়ে স্যারের পায়ের উপরে পা দিলাম ইচ্ছে করেই হিল জুতো পরে ছিলাম শেষ স্যারের পা!
একটু খোঁজার এক্টিং করলাম। পরে বললাম কোই এখানে নাই তো অন্য কোথায় আছে হয়তো!
স্যার আর সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিলেন!
স্যার– আআআআআ।
আমি- কি হইছে স্যার আপনি ঠিক আছেন তো?
স্যার- মিস ইতি আপনি আমার পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আছেন!
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠি, ‘ ওও হ্যা তাইতো, সরি স্যার সরি সরি ’ এমন একটা ভাব ধরি যে আমি কিছুই জানি না।
আমি- সরি স্যার আপনার বেশি লাগেনি তো?
স্যার তো আহহ আহহ আহহহ করছে। আমার তো প্রচুর হাসি পাচ্ছে অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখেছি!
স্যারের পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি স্যারের পা লাল হয়ে গেছে! স্যার অনেক সুন্দর তার গায়ের রং ফর্সা তাই লাল স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে!
আমি দৌঁড়ে নিচে আসলাম আর ফ্রিজ থেকে বরফ নিলাম আবার এক দৌঁড়ে রুমে আসলাম!
পরে নিজেই স্যারের পায়ে বরফ লাগিয়ে দিলাম!
আমি- সরি স্যার!
স্যার- ইট’স ওকে।
প্রায় ১০ মিনিট পর, ‘ আমি স্যার এখন কেমন লাগছে ব্যাথা কমছে? ’
স্যার- ধন্যবাদ আপনাকে! অনেকটাই কমে গেছে!
এখন চলুন পড়তে বসুন!
আমি- স্যার আপনি বাড়ি চলে যান, কালকে পড়াতে আসবেন আর বাকিটা আমি পড়ে নিবো!
স্যার: না না! আজকের পড়া আজকেই পরতে হবে হাজার কষ্ট হলেও আমি কথা দিলে সেটা রাখি। কথার খেলাফ করি না! আপনার আব্বুকে কথা দিয়েছি আর আমি কথা ভাঙতে পারবো না!
আমি জেনো আরও মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি স্যারের প্রতি এত সৎ মানুষ এখনো আছে?
২ঘন্টা পড়ানো শেষ হলেই স্যার এখন চলে যাওয়ার জন্য উঠেছেন!
আমি স্যারকে বাড়ির গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে যাই!
আমি চলে আসবো তখন পিছু ডেকে বললেন,
স্যার- ইতি!
আমি পিছনে ঘুরে তাকাতেই উনি বললেন!
“ আমি জানি আপনি ইচ্ছে করেই আমার পায়ের উপর পা দিয়েছিলেন! আপনাকে আগে যতগুলো স্যার পড়িয়ে ছিলো তারা ৩/৪ দিনের মধ্যে চলে যেতো আর আসতো না কেনো? সেটা জানার জন্য আমি তাদের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম তারা আমাকে সবটা বলেছিলো আর আপনাকে পড়াতে আসতে বারণও করে ছিলো! তবুও আমি আসছি কারণ আমি মধ্যবিত্ত আমার বাবা নেই মা আর আমি। আমার পড়াশোনার পাশাপাশি আমি একটা জব খুঁজছিলাম সেটা পাচ্ছিলাম না আর তখন আপনার বাবা বললো আপনাকে পড়ানোর কথা তাই আমি রাজি হয়ে যাই!
একেবারে কিছু না করার থেকে কিছু একটা করা ভালো!
সব কিছুর পর আজকে আমার একটা কাজের অফার আসছিলো অনেক খুশি ছিলাম। আপনাকে চিনতাম না তবুও ভাগ্য সেই আপনার সাথে দেখা করিয়ে দেয় আর আপনি আমাকে কাঁদায় ফালিয়ে দেন! যে কারণে আমি ইন্টারভিউ দিতে যেতে পারিনি! একটা অফার আসছিলো কাজের সেটাও চলে গেলো!
এখানে পড়াতে এসে দেখি আপনি। আপনাকে যে পড়াবো শান্তি মতো এটাও ভাবিনি আর তাই হলো। আমার মা অসুস্থ আর মাকে সুস্থ করার জন্য টাকা প্রয়োজন!
আমি বুঝেছিলাম আপনি সকালে যেটা করেছিলেন সেটা ইচ্ছে করে করেননি আপনার কলেজের জন্য লেইট হচ্ছিল তাই করেছিলেন! কিন্তু এখন ইচ্ছে করে করেছেন। আমি রাগ করিনি কারণ আমাকে আঘাত করে আবার আপনি নিজেই আমার আঘাতে মলম লাগিয়ে দিয়েছেন!
আপনাকে দেখে এটা তো বুঝেছি, আপনি কাউকে কষ্ট দিলে তার চাইতে বেশি কষ্ট আপনি নিজে পান তাই
রাগ কন্ট্রোল করে ভাবমা চিন্তা করে কাজ করবেন!
যাতে পরে নিজেকে কষ্ট পেতে না হয়!
চিন্তা করবেন না, আমি এইসব কথা গুলো কাউকে বলবে না আসি!
ভালো থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।
আসসালামু আলাইকুম ”
আমি কিছুই বলতে পারলাম না দুই চোখ বেয়ে অজড়ে পানি পরছে!
এইভাবে কেউ কখনো বলেনি কারো কথায় কখনো এত কষ্ট পাইনি!
কিন্তু স্যার যা বলে গেছে সবই তো সত্যি!
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম চুপ করে
আর চোখ বেয়ে পানি পড়ছিলো
কিছুক্ষণ পর সায়েমা আন্টি আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
আন্টি, “ ইতি মামনি তুমি এখানে এত রৌদ্রে কেনো দাঁড়িয়ে আছো বাড়ির ভেতরে চলে! ”
আমি কিছু না বলে বাহির থেকে সোজা রুমে চলে এলাম আর ঠাসসস করে রুমের দরজা আটকে দিলাম!
বিছানায় শুয়ে বালিশ চেপে কাঁদতে লাগলাম!
চলবে?



-------------------------

স্যার I Love You .
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_০৬
________
এই প্রথম কেউ আমার ভুল গুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো! কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ি তাই রাতে কেউ আর ডাক দেয়নি! আম্মু রাতে রুমে খাবার রেখে গিয়েছিল হয়তো ভেবেছিল রাতে যখন ঘুম ভাঙবে উঠে খেয়ে নিব! কিন্তু রাতে আর ঘুম ভাঙ্গেনি।
সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে ছিলাম সেজন্য খুব ভোরেই ঘুম ভেঙে যায়, ঘুম থেকে উঠে দেখি আযান দিচ্ছে!
আযান শুনে আর শুয়ে থাকতে পারিনি জানি না কিভাবে বিছানা থেকে উঠি ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে পড়লাম!
নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলাম আমার সব ভুলের জন্য মোনাজাতেই কান্না করে দিলাম! নামাজ শেষ করে কিচেনে গেলাম এক কাপ কফি বানালাম কফির মগ নিয়ে রুমে ডুকে বারান্দায় চলে গেলাম!
কি সুন্দর সকাল অন্তর জুড়িয়ে যায় মিষ্টি মিষ্টি রোদের আলো হালকা বাতাস অনেক দিন পর এত সকালে উঠলাম! সত্যিই সকাল সুন্দর!
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর নিচে চলে গেলাম গিয়ে দেখি!
আম্মু আর খালেদা আন্টি কিচেনে সকলের জন্য নাস্তা বানাচ্ছে। খালেদা আন্টি হচ্ছে আমাদের নতুন মেড গ্রাম থেকে নিয়ে আসছে সায়েদা আন্টি, আমাকে দেখে আম্মু বলল,
আম্মু- কিরে তুই আজ এত সকালে কিভাবে উঠলি সূর্য কোন দিকে উঠছে?
আমি- আম্মু আমি তোমাকে নাস্তা বানাতে হেল্প করি? ( একটু হাসি দিয়ে)
আম্মু আর খালেদা আন্টি, কিহহহহ।
খালেদা- বড় আফা আমি কি ঠিক শুনতাছি নাকি?
আম্মু- আমিও তাই ভাবতেছি রে খালেদা।
আমি- কি এমন বললাম যে তোমরা দুজনে হা করে তাকিয়ে আছো। আমি কি তোমাদের হেল্প করতে পারি না নাকি?
আম্মু আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমার দুই গালে হাত দিয়ে কপালে চুমু দিলো আর বললো!
আম্মু- তোর কিচ্ছু করতে হবে না, আমার সোনা মা তোর রান্না করতে কষ্ট হবে তুই রুমে গিয়ে পড়তে বস আমি আর খালেদাই পারবো তুই যে বলছিস তাতেই আমার অন্তর জুড়াই গেলো! আমাকে জড়াই ধরে কিছুক্ষণ চোখের তিতা পানি ফেললো।
আমি- কি আম্মু কোনোদিন কিছু করি না বলে এত কথা বলো আর আজ করতে চাচ্ছি তুমি মানা করছো।
আম্মু- আচ্ছা যা ওই পিঁয়াজ গুলো কুঁচি কুঁচি করে কেটে দে.
আমি- ওকে ২ মিনিটে করে দিচ্ছি।
২ মিনিট কি ৫ মিনিট পর!
আম্মু- কিরে তোর কাটা হয়নি এখনো? ( বলে পিছনে তাকিয়ে আম্মু অবাক)
খালেদা হিহিহি করে হাসছে। আমি এদিকে ১টা পিঁয়াজ ও কাটতে পারি নাই। চোখের জল নাকের জল মিলেমিশে একাকার।
আম্মু আর খালেদা আন্টি দুজনে আমার এই অবস্থা দেখে জরে জরে হাসছে।
তাদের হাসির শব্দ বাহিরে ডায়িং রুম পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে, তাদের হাসির শব্দ শুনে আব্বু নিউজ পেপার টা টেবিলের উপর রেখে, কিচেনে এসে দেখে আমার এই অবস্থা আর তারা হাসছে!
আব্বু- চুপ করে তোমরা আমার মেয়েটা কাঁদছে আর তোমরা হাসছো? (আমাকে কাঁদতে দেখে আব্বু অনেকটা রেগে গেছে আর আব্বুর ধমক শুনে দুজনেই চুপ হয়ে গেছে)
আব্বু আমার কাছে এসে বলল- তুমি এসব কেনো করছো মামনি? উঠো নিজের কি অবস্থা করছো মামনি! তোমাকে এসব করতে কে বলছে? (আম্মুর দিকে তাকিয়ে)
খালেদা- স্যার আমরা কিচ্ছু বলি নাই ইতি মামনি নিজের ইচ্ছেতেই এসে বলছিলো বড় আফাকে হেলেপ
করবে!
আব্বু- ওইটা হেলেপ না খালেদা ওটা হেল্প হবে বলো হেল্প!
খালেদা- হেলেপ।
খালেদা আন্টির কথা শুনে আমি আর না হেসে থাকতে পারলাম তাই একটু হেসে দিলাম। আমার দেখাদেখি বাকিরা সবাই হাসছে।
তোমরা বাপ মেয়ে যাও বের হও আমাদের কাজ করতে দাও অনেক হইছে হাসিঠাট্টা। আম্মু বলল।
আজকে আমার ইতি মামনি নাস্তা বানাতে চাইছে তাই আজ ইতিই নাস্তা বানাবে, তোমরা দু’জন বাহিরে যাও আর নয়তো গিয়ে টিভি দেখো। আব্বু বলল।
আমি- কিন্তু আব্বু আমি তো ( আব্বু আমাকে আর কিছু বলতেই দিলো না নিজেই বলতে লাগলো)
আব্বু- আজ আমি আর আমার মামনি দু’জনে মিলে নাস্তা বানাবো যাও তোমরা।
আমি- আব্বু তুমি পারবে?
খালেদা আন্টি- স্যার আপনি আর রান্না?
আম্মু তো মহা খুশি খালেদা আন্টির উদ্দেশ্য বলল,
আম্মু- ওকে চল খালেদা। (দুজনে চলে গেলো)
আব্বু আর আমি নাস্তা বানাচ্ছি পৃথিবীর বেস্ট ফিলিংস। নিজের আব্বুর কাছ থেকে প্রথম রান্না শেখা
আমি অনেক খুশি! প্রতিদিন দুষ্টামি ফাজলামি করে দিন পার করে দেই কিন্তু আজ মনে হচ্ছে জীবনটা নতুন ভাবে নতুন অধ্যায় থেকে শুরু হইছে সারাজীবন যেনো এমনই থাকে মনে মনে বললাম।
আব্বু আমাকে নিজের হাতে সব শিখিয়ে দিচ্ছে। আমাদের নাস্তা বানানো প্রায় শেষের দিকে অনেক কিছু বানাচ্ছি আমি আর আব্বু মিলে।
ওই দিকে আম্মু আর খালেদা আন্টি বসে বসে টিভি দেখছে!
খালেদা বলে উঠল, আফা আমি একটা বার গিয়া দেইখা আহি ওনারা কি করতাছে আল্লাহই জানে আমার খুব ভয় লাগতাছে যদি উল্টাই পাল্টায় ফালায়।
আম্মু বলল, আরে খালেদা তুই তো জানিসই না তোর স্যার সব ধরনের রান্না পারে, দেশি বিদেশি সব!
আমার মধ্যে যখন ছোট্ট ইতি প্রবেশ করে ছিলো তখন আমি বুঝিনি কিন্তু ও ঠিক বুঝতে পেরেছিল আর তখন থেকেই আমার খেয়াল রাখতো ৩মাস পর টেস্ট করাই রিপোর্ট পজিটিভ আসছিলো উনি তো খুশিতে হাত্মহারা হয়ে গিয়েছিলো!
তারপর থেকে আমারে কিচেনে প্রবেশ করতে দেয়নি নিজেই সব করতো রান্না বান্না বাড়ির দেখা শোনা প্লাস আমার খেয়াল রাখা কখন কি লাগবে কি না লাগবে কি খেতে হবে প্রতিদিন একেক ধরনের খাবার বানাতো আর নিজের হাতে খাইয়ে দিতো আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম বাড়ি থেকে কেউ মেনে নেয়নি আমাদেরকে তাই পালাতে বাধ্য হই। তার পরে কেউ আর আমাদের কোনো খোঁজ নেয়নি। আজ উনি এতো বড় Business man হয়েছে শুধু আল্লাহর রহমতে আর উনার কষ্টের জন্য সারা রাত জেগে কাজ করতেন আর দিনে আমার সেবা করতেন দেখতে দেখতে ১০মাস চলে যায় ইতির ও জন্মানোর সময় হয়ে যায় ইতি হওয়ার পর আমাদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি! আল্লাহর রহমত আমাদের ইতি। সেদিন সর্ব প্রথম ইতিকে ওর বাবাই কোলে নিয়েছিলো আর নাম দিয়েছিলো ইতি। বলেছিলো, আমারর কষ্টের দিন শেষ আজ থেকে তোর হাত ধরে পারি দিবো আমাদের সুখের দিনে। বলে ইতির কপালে চুমু দেয় ইতির ২বছর পর্যন্ত উনিই রান্না করতেন আর আমাকে ইতির দেখাশোনাও করতেন। ২মিনিট ও একা রেখে যেতে পারতাম না কোথাও।
তাইতো দেখিস না মেয়ে বলতে প্রাণ মেয়েকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না! কখনো আমাকে আমার ফ্যামিলির অভাব বুঝতে দেয়নি অনেক ভালোবাসে আমাদের আর আমরাও উনাকে অনেক ভালোবাসি উনার মতো স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার আল্লাহর কাছে হাজারও শুকরিয়া।
খালেদা আন্টি আম্মুর কথা শুনতে শুনতে কান্না করে দেয় আর আম্মুও চোখের কোনায় থাকা জল টা মুছে নেয়!
তুই কাঁদছিস কেনো পাগলি আর শোন এই ব্যাপারে কিছুই জেনো ইতি জানতে না পারে! ইতি এই সব ব্যাপারে কিচ্ছু জানে না!
খালেদা আন্টি-ঠিক আছে আফা!
তারপর দুজনেই আবার টিভি দেখতে থাকে।
এই দিকে আমাদের নাস্তা রেডি আমি খুশিতে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
অনেক আইটেম বানিয়েছি আমরা সব গুলো খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখলাম বাহ কেমন একটা ফিলিংস আসতাছে এখন আমার প্রথম রান্না বলে কথা।
আমি- আম্মু আমাদের শেষ খেতে আসো!
আম্মু আর খালেদা আন্টি তো অভাক এত কিছু তাদের চোখ কপালে।
আব্বু- আমার মেয়ে প্রথম রান্না করছে খেয়ে দেখো!
সবাই খেতে খেতে অনেক প্রশংসা করলো আমার!
কিন্তু সব কিছু তো আব্বুই করেছে আমি তো শুধু
আমি আব্বুর প্রশংসা করলাম আব্বু বললো আমি কি করলাম সব তো তুমিই করলে।
আমি উঠে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলাম আর নাস্তা শেষ করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম!
স্যার আবার ঘুরছে নতুন ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য আর চাকরির জন্য!
কলেজের ক্যাম্পাসে বসে আছে সব গুলা ওদের দেখে আমিও গেলাম ওদের কাছে।
রুবেল আী মুন্নী বলল- কিরে তুই এত আগে আজ কিভাবে আসছি?
বাকি তিনজন কি চুপ থাকবে নাকি ওরাও বলছে।
আমি ভদ্র মেয়ের মতো ওদের কথার উত্তর দিচ্ছি!
নাঈম আর মিম- কিরে তের ওই প্রাইভেট টিচারের কি খবর কি করলি ওনার সাথে নাকি কিছুই করিসনি।
আব্রু- আমাকেও বল!
আগেই বলে দেই রুবেল আর মুন্নী বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড আর নাঈম আর মিম ওরাও গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড ডেট করছে ওরা আর আব্রু বেচারি আমার মতোই সিঙ্গেল।
আমি ওদের সব গুলোকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ‘ ওই যে রামছাগল যাকে ধাক্কা দিয়া কাঁদায় ফালাইয়া দিছিলাম ওই ছেলেই আমার স্যার। ’
রুবেল মুন্নী নাঈম মিম- কিহহহহহহ?
আব্রু- What a Coincidence! স্যারটা কেমন Handsome নাকি রে?
আমিও কিছু না বুঝেই বলে ফেললাম।
আমি- তা তো অবশ্যই যা কিউট আর হ্যান্ডসাম।
আমার কথা শুনে ওরা পাঁচ জনের হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা।
আমরা বুঝতে সময় লাগেনি মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠলাম, হায় আল্লাহ আমি কি বলে ফেললাম? তৎপর দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলাম।
সবাই এক সাথে বলল- অনেক হ্যান্ডসাম তাই নারে?
আমি কি বলবো এই প্রথম কোনো ছেলের প্রশংসা করলাম তাই মাথাটা নিচু করেই রাখলাম কতক্ষণ। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ওরাও সবাই চুপ হয়ে গেলো!
তারপর সবাই মিলে কলেজের ভেতরে গেলাম!
৬জন একসাথে আমি সবার আগে দলের লিডার বলে কথা!
তারপর ওই সব মানুষের কাছে গেলাম যাদের সাথে দুষ্টামি ফাজলামি করেছিলাম যাদের যাদের কষ্ট দিয়েছিলাম সবার কাছে গিয়ে সরি বললাম ক্ষমা চাইলাম। সবাই খুশি হয়ে মাফ করে দিলো তারপর সকল টিচার্সদের কাছেও গেলাম তাদের সাথে কখনো ফাজলামো করি নাই তবুও তাদের কাছেও ক্ষমা চাইলাম!
সবাই তো অভাক এক রাতে কি এমন হলো ইতি পুরাই চেঞ্জ হয়ে গেলো!
সবাই ক্লাসে গেলাম তিন ঘন্টা পর ছুটি হলো। কলেজের বাইরে গেইটের সামনে সবাই এক সাথে বলে উঠল, ‘ কি হয়েছে তোর তুই এতটা চেঞ্জ হলি কিভাবে? ’
আমি- ওদের কিছুই বললাম না শুধু বললাম তোদের আমার সাথে কোথাও যেতে হবে!
ওরাও সবাই রাজি হয়ে গেল! তারপর সবাই এক সাথে আমার গাড়িতে উঠলাম আর ওরা ওদের গাড়িগুলো কে বাড়ি চলে যেতে বলে ড্রাইবাররা চলে যায়!
আমরাও যেতে থাকি! সবাই আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করছে আমি কিছুই বলছি না!!
গাড়ি চলছে তো চলছেই, গাড়ি থামাতে বললাম ড্রাইবার আঙ্কেল গাড়ি থামলেন!
সবাই গাড়ি থেকে নামলাম তারপর এক এক করে ওই ১০টা স্যারের বাড়ি খুঁজে তাদের বাড়ি গেলাম তাদের সবার কাছে আমার আগের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইলাম তারাও অনেপ খুশি হয়ে ক্ষমা করে দিলেন!
এইভাবে যত মানুষের সাথে দুষ্টামি ফাজলামি করেছিলাম সবার কাছে ক্ষমা চাইলাম আমার বাড়ির আশে পাশের সবার থেকে ক্ষমা চাইলাম!
ওরা ৫জন আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কিছু বলছে না সবাইকে সরি বলা শেষ!
ড্রাইবার আঙ্কেল ও অনেক অভাক হয়েছেন!
বুঝতেই পারছি!
আমি: তোদের তো খিদে লাগছে চল আমার সাথে!
সব- কোথায়?
কিছুই বললাম না আবার গাড়িতে উঠে চলে এলাম
একটা রেস্টুরেন্টে। ভেতরে ডুকলাম ড্রাইবার আঙ্কেল আমাদের সাথে আসতে চায়নি কিন্তু আমিও ছাড়িনি জোর করে নিয়ে আসছি!
ড্রাইবার আঙ্কেলকে আমাদের বাড়িতে অনে বছর ধরে আছেন। আমি ছোটে থেকেই দেখে আসছি আর আমাকে অনেক আদর করেন ছোটো থেকেই আমাদের ফ্যমিলির এক জন বলতে পারেন।
ওরা সবাই খাচ্ছে আর আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!
আমি- কিছু কি বলতে চান আপনারা সবাই?
সব কয়ডা এক সাথে বলল, এইসব কিছু কিভাবে সম্ভব আমাদের বল এত চেঞ্জ কে করলো তোকে?
ড্রাইবার আঙ্কেল বলল, আমিও অনেক অভাক হয়েছিল মামনি তুমি আজ কোনো দুষ্টামি ফাজলামি করো নাই আর যাদের যাদের সাথে করেছিলো তাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছো!
আমিও তাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম, কাল স্যারের সাথে যা যা করেছি আর স্যার যাওয়ার আগে যা যা বলে গেছেন কানতে কানতে ঘুমাই গেছিলাম ওইটাও বলছি।
সব গুলো একসাথে আবারও বলল, ওও নতুন স্যার আসতে না আসতেই তোকে চেঞ্জ করে ফেলছে বাহ স্যার তো মনে হয় জাদু জানে।
ড্রাইবার আঙ্কেল বললেন, শাওন বাবা ছেলেটা অনেক ভালো তোমরা দেখলে বুঝবা! ইতি মামনি তুমি এখন যেমন আছো তেমনই সবসময় থেকো আর দুষ্টামি ফাজলামি কেনো করবা না। এখনই তো করার বয়স কিন্তু কারো মনে কষ্ট দিয়ে কিছু করো না! ( বলে আঙ্কেল চলে গেলেন কারণ উনার খাওয়া শেষ)
মুন্নী, রুবেল, আব্রু, মিম, নাঈম দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল, কুছ কুছ হোতা হে ইয়ার!
আমি হেসে ফেললাম আর বললাম, ‘ তেমন কিছুই না। ’
তারপর রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে ওদেরকে ওদের বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে নিজের বাড়ি চলে এলাম!


--------------------------- -----------------------------

স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_০৭
_________
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম, বাথরুম থেকে বের হয়ে রুমে এসে দেখি আম্মু বিছানার উপর বসে আছে আমাকে দেখে আম্মু বলল,
আম্মু: আয় মা খেয়ে নে, এত লেইট করলি যে আজ?
আমি- আমি আর আমরা সব ফ্রেন্ডস’রা বাহির থেকে খেয়ে আসছি!
আম্মু- বাহির থেকে খেতে গেলি কেনো আমাকে একটা কল দিয়ে বলতে পারতি মা আমি সব রান্না করে রাখতাম বাড়িতে নিয়ে আসতি ওদের সাথে আমিও একটু গল্প করতাম!
আমি- আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম আরে আমার লক্ষী আম্মু নেক্সট টাইম নিয়ে আসবো ওকে!
আম্মু চলে গেলো!
কিছুক্ষণের মধ্যেই স্যারের আসার সময় হয়ে যাবে!
স্যার কি আসবে নাকি আসবে না! স্যারের আসার সময় হয়ে গেছে কিন্তু স্যার এখনো আসছে না আমার তো খুব ভয় করছে যদি আর না আসে ভাবতে ভাবতে বারান্দায় গেলাম! ধুর এখনো কেনো আসছে না!
আবার রুমে এসে পড়ার জন্য বই খুলে বইয়ের সামনে বসে পড়লাম! কিছুতেই মন লাগছে না শুধু কালকের স্যারের বলা কথা গুলো মনে পরছে! উফফ ভাল্লাগে না বইটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালাম পিছনে ঘুরতেই দেখি।
স্যার দরজা দিয়ে ডুকছেন! আমি তো অভাক আমি কোই ভাবছিলাম উনি আসবেন না কিন্তু উনি তো আমার সামনেই।
স্যার- মিস ইতি! কোথায় হারিয়ে গেছেন?
আমি- জি স্যার? কোথাও না স্যার! (স্যারের ডাকে ধ্যান ভাঙলো)
স্যার- চেয়ারে বসুন! দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?
আমি- ওও জি স্যার!
স্যার- আইএম সরি!
আমি- স্যার আপনি সরি কেনো বলছেন?
স্যার- আমার আসতে ৩০মিনিট লেইট হয়ে গেলো তাই!
আমি- ওওও ইট’স ওকে! এবার আমার সরি বলার পালা উফফ কেমনে যে বলি! বিড়বিড় করে বললাম।
আমি- Sir! I’m Really very Sorry for Everything!
স্যার- ইট’স ওকে! আমি আসার সময় আপনার পূর্বের স্যারদের সাথে রাস্তায় হঠাৎ করেই দেখা হয়েছিল। আর সবাই বললো আপনি তাদের কাছে তাদের বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন! তারা খুবই খুশি হয়েছে আপনার এই ব্যবহারে! কখনো কাউকে ছোটো করবেন না বা কষ্ট দিবেন না আপনি অন্যের সাথে যেমন ব্যবহার করবেন তেমন ব্যবহারই প্রকৃতি আপনাকে ফিরিয়ে দিবে! তাই চেষ্টা করবেন সবাইকে সবার প্রাপ্প সম্মান টুকু দেওয়ার সে যেমনই হোক ধনি গরিব ছোটো বড়। আই হোপ আপনি বুঝতে পেরেছেন!
আমি হা করে তাকিয়ে আছি। বাহ কি সুন্দর করে বুঝিয়ে বললো পুরাই ফিদা!
স্যার- মিস ইতি! বুঝতে পেরেছেন?
আমি- জি জি জি স্যার!
স্যার ওকে তো পড়া শুরু করা যাক! স্যার পড়াচ্ছে আর আমি স্যারকে দেখছি। পড়ছে মানে কি? পড়াচ্ছে।
স্যার- আমার দিকে না তাকিয়ে থেকে বই কলম আর খাতার দিকে তাকান তাহলেই পড়া বুঝবেন!
আমি- উনি কি করে বুঝলেন যে আমি উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম চোখ কি আরও চার পাঁচটা আছে নাকি? কোই না তো চোখ তো দুইটাই তাও আবার সামনেই তাহলে! (মনে মনে বললাম আর কি)
স্যার- মিস ইতি! (একটু রেগে গেলেন)
আমি- জ.জ. জি স্যার! একটু তোতলাতে তোতলাতে বললাম।
স্যার- আপনি তোতলাতেও পারেন! বলে হাহাহা করে হাসছে।
আমি- মোটেও আমি তোতলাইনি! বলে রাগি লুকে ওনার দিকে তাকালাম। ফুল ক্রাশ হাসলে কত কিউট লাগে। আব বাসবি কার পাগলে আব মেরি জান লোগে
কেয়া? হিন্দি তে ডায়লগ দিয়ে বললাম।
খালেদা আন্টি স্যারের জন্য কফি নিয়ে আসছে!
খালেদা আন্টি- আসবো স্যার?
স্যার- হ্যাঁ হ্যাঁ আসুন না প্লিজ!
খালেদা আন্টি- স্যার আপনার কফি এখানে রাখছি! কফির মগটা রেখে খালেদা আন্টি চলে গেলো।
স্যার কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর শব্দ হচ্ছে!
আমি তো শব্দ শুনে কয়েকবার উনার দিকে আড় চোখে তাকালাম স্যার তা লক্ষ্য করে বললো,
স্যার- কি কফি খাবে? কফির মগটা আমার দিকে একটু এগিয়ে দিয়ে বলল।
“শয়তান কুত্তা হারামি ফাজিল আফ্রিকান বান্দর উগান্ডার ভূত মনে মনে ১০০ টা গালি দিলাম! ”
আমি- না স্যার আপনিই খান আমি কারো মুখের টা খাইনা!
স্যার- তো তাকিয়ে ছিলেন কেনো? নজর লাগলে আমার পেট খারাপ হবে না বুঝি? একটা শয়তান মার্কা হাসি দিয়ে।
“ এ হালায় বলে কি ইচ্ছা তো করতাছে একটা ঘুসি দিয়া নাকটা চেপ্টা করে দেই বেশি লম্বা হইয়া গেছে শুধু ভালো হইয়া গেছি বলে কিছু বললাম না। আগের আমি থাকলে এতক্ষণে দাঁত একটাও থাকতো না। মনে মনে বললাম! ”
আমি আর স্যারকে উদ্দেশ্য করে কিছু বললাম না!
এইভাবেই কেটে গেলো কয়েকদিন!
সবাই তো অভাক একদিন রাতে আব্বু বলেই ফেলল,
আব্বু- ইতি আগের থেকে অনেক পাল্টে গেছে!
আম্মু- হ্যাঁ যা বলেছো সব হয়েছে ওই শাওন ছেলেটার জন্য ও আসার পর থেকে ইতিকে পুরোই পাল্টে ফেলছে! ভাড়ি মিষ্টি ছেলে!
আব্বু- তুমি ঠিক বলেছো! এখন আসো ঘুমাই সকালে অফিস যেতে হবে!
পরেরদিন কলেজের মাঠে বসে আছি সবাই।
মুন্নী, মিম, আব্রু বলল, কি ব্যাপার জানু কি চলছে?
আমি- কি চলছে মানে?
নাঈম, রুবেল- কি চলছে মানে বুঝিস না? না ন্যাকা।
সবগুলা একসাথে চিৎকার দিয়ে বলল, তোর আর স্যারের সাথে কি চলছে?
আমি- উফফ কানটা আমার ঝালাপালা করে দিলি তো তোরা।
মুন্নী- এখন বল।
‘ আমি কি বলবো? ”
মিম আমার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বলল, বুঝিস না তুই আমরা কি বলছি নাকি ইচ্ছে করে এমন করছিস?
আমি- মাথায় হাত দিয়ে উফফ এত জোরে কেউ টোকা দেয়? ডাইনী।
নাঈম: কেউ আমারে একটা বাঁশ আইনা দে ওরে পিটাই।
“ আমি আবার কি করলাম? ”
আব্রু- উফ তোরা কথা ঘোরাচ্ছিস কেনো সোজা সোজা বললেই পারিস!
সবাই আব্রুকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ আচ্ছা তুই বল ’
আব্রু বললো, ‘ আচ্ছা ওকে বলছি। ’
আব্রু,‘ সত্যি করে বলবি কিন্তু ইতি তোর আর স্যারের মধ্যে কি কিছু চলছে নাকি? মানে প্রেম টেম ভালোবাসা এমন কিছু। ’
আমি যেনো আকাশ থেকা পড়লাম উৎকন্ঠে বললাম,
‘ কি বললি এমন কিছুই নেই। ’
রুবেল- কিছুই নাই মানে কি? আমরা না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড আর আমাদের কাছে মিথ্যা বলছিস তুই ইতি।
মুন্নী- ওই তোরা রেগে যাচ্ছিস কেনো?
মিম- কিছু নাই বললে কিভাবে হবে ইতি তুই কি একবারও ভাবছিস? তুই এখনকার তুই আর ৭ দিন আগের তুই এর মধ্যে কত পার্থক্য আর এটা শুধু হয়ে তোর স্যার আসার পর থেকে আর এই ৭ দিনে তুই অন্য কোনো কথা বলিসনি শুধু স্যারের কথা ছাড়া অন্য কথা বললেও তুই ১বার হলেও স্যারের কথা বলিস একটা ১বার হলেও স্যারের কথা বলিস একটা বারও কি ভাবছিস?
আমি আব্রুর ফোন দিয়ে গেমস খেলছিলাম!
ওর কথা শুনে ওর দিকে অভাক হয়ে রইলাম কারণ ওর কথা গুলো একদম সত্যি!
আব্রু- আরে বুঝিস না ইতি প্রেমে পরেছে আমাদের ইতি স্যারের প্রেমে পরেছে!
আমি- একদমই না এই গুলা ভোয়া কথা।
রুবেল- ভোয়া কথা না, কোই তোর চোখ তো অন্য কথা বলছে!
নাঈম- ইতি তুই যখন স্যারের কথা বলিস তখন তোর মুখে এক বালতি ভর্তি হাসি ফুটে উঠে আর দুই চোখ ভরে স্যারের প্রতি ভালোবাসা সম্মান আর তুই বলছিস ভুয়া কথা!
মিম, মুন্নী- ইতি তুই কি বুঝতে পারছিস না তুই স্যারকে ভালোবেসে ফেলেছিস!
আব্রু- আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে আমাদের ইতি প্রেমে পরেছে।
আমি- ওই ডাইনি তুই প্রেমের কি বুঝিস হ্যাঁ একটাও তো প্রেম করতে পারিস নি। এখন আবার বড় বড় কথা।
আব্রু- প্রেম করি নাই তো কি হইছে সব জানি আমি হুহহ সব। চোখ টিপ দিয়ে বললো। সবাই ওর কথা শুনে হেসো দিলো।
ওদের হাসতে দেখে আমার ম্যাজাজ বিগড়ে গেলো
ওই তোরা যাবি এখান থেকা যা বলছি আর নয়তো পিটাই ভূত বানাই ফেলমু। (হেবি রেগে গেছি)
আমাকে রাগতে দেখে ওরা যার যার মতো উঠে চলে যায়! আমি আর দেখিনি ওরা শয়তান গুলা কোনদিক গেছে আব্রুর ফোনটা আমার হাতেই!
ফোনটা হাতে নিয়ে গাছের সাথে হেলান দিয়ে ভাবছি। আমাদের কলেজের মাঠে একটা বড় কৃষ্ণচুড়া ফুল গাছ আছে।
ভাবছি আর আনমনে বলে উঠি, আশেপাশে কেউ আছে কি না খেয়াল করিনি।
আমি- ওই শয়তান গুলা যা বললো সব কি সত্যি?
মানে কি আমি সত্যি স্যারকে ভালোবেসে ফেলেছি?
গাছের পেছন থেকা সব গুলা বাহির হয়ে আসলো আর চিৎকার করে বললো!
২টা শয়তান ৩টা ডাইনি, হ্যাঁ রে তুই সত্যিই স্যারকে ভালোবেসে ফেলেছিস। বলছে আর ফিক ফিক করে হাসছে।
আমি- তোরা যাস নাই গাছের পিছনে লুকাই ছিলো?
সবগুলা- তুই প্রেমে পড়েছিস ইতি।
আমি- দাঁড়া তোদের হচ্ছে।
বলে সবগুলার পিছনে ছুটতে লাগলাম ওরা পাঁচজন পাঁচ দিকে ছুটে বেড়াচ্ছে আর আমি একা কতক্ষণ দৌঁড়ানো যায় উফফ হাঁপাই গেছি রে মাঠের মাঝখানে বসে পড়লাম! আর সব গুলা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে কলেজের ভেতরে ডুকে গেছে।
আমি- তোদেরকে তো পরে দেখে নিবো শয়তান গুলান।
বসা থেকে উঠতে যাব আর তখনি আব্রুর ফোনে একটা মেসেজ আসলো মেসেজ টা সিন করতেই যেনো আমার মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়লো।
বিশ্বাসই হচ্ছে না! আমাদের সামনে এত সাধু সেজে থাকে আর তলে তলে এত দূর দাঁড়া দেখাচ্ছি তোকে এবার আমার পালা আমাকে এতক্ষণ অনেক কিছু বলছো এবার তোমাকে কে বাঁচাবে বেইবি ডাইনী বুড়ি আসছি আমি রেডি থাকো! একটা শয়তান মার্কা হাসি দিলাম।
তারপর উঠে ক্লাস রুমে গেলাম আমাকে মুচকি হাসতে দেখে সব গুলা অভাক হলো!
আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে আসবে তখনই ক্লাসে স্যার চলে আসলো তাই কিছু বললো না!
আব্রু তো ভুলেই গেছে ওর ফোন আমার কাছে।
সবগুলা ক্লাস শেষ সবাই মিলা ফুচকা খেতে আসলাম!
ওর এখনও মনে নাই ফোন যে আমার কাছে ওও ভাবছে ওর ফোন ওর কাছেই! হঠাৎ করেই ফোন খুঁজতে শুরু করলো!
আব্রু- আমার ফোন? আমার ফোন কোথায় অনেক বার বললো আর খুঁজছে তো খুঁজছেই সব ফুচকা খাওয়া বাধ দিয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে!
আমি আজকে আইসক্রিম খাচ্ছি আর ওর কান্ড দেখছি! মুচকি মুচকি হাসছ ইচ্ছা করছে জোরে জোরে হাসতে কিন্তু তা করা যাবে না!
বাকিগুলা বলল- দেখ তোর ব্যাগে আছে কি না!
আব্রু- নাই কোথাও নাই আমি দেখছি তো।
ওর মনেই নাই ওর ফোন যে সকালে আমাকে দিছিলো যাইহোক এবার আমাকে বলতেই হবে আর নয়তো ডাইনী এখন কান্না করার মতো অবস্থা।
চলবে?

-----------------------------------------------------------

স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_০৮
___________
আমি: তোর মোবাইল পেয়ে যাবি এত খুঁজিস না! তুই এইটা বল তুই এভাবে পাগলের মতো ফোন খুঁজছিস কেনো? ফোনের মধ্যে কোনো স্পেশাল কিছু আছে নাকি?
আব্রু: না স্পেশাল কে থাকবে? না মানে কি থাকবে!
শুধু একটা মেসেজ করতাম আম্মুকে আর কিছু না!
সবাই খাচ্ছে আর আব্রুকে দেখছে! এই প্রথম ও ফোনের জন্য এত টেনশন করছে!
আমি: ওও মেসেজ করবি তুই কিন্তু তুই তো কখনো আন্টিকে মেসেজ দিস না ডাইরেক্ট কল দিস?
আব্রু: কিসের মেসেজ কোন মেসেজ আমি কখন মেসেজের কথা বললাম? আম্মুকে কল দিবো তাই খুঁজছি!
আমি: ওও আন্টিকে কল দিবি? আমি তো ভাবছিলাম শ্রাবনকে মেসেজ করবি!
নাঈম: কে শ্রাবন?
মিম, মুন্নী: শ্রাবন মানে কে সে?
রুবেল: কিরে বলবি তো শ্রাবন কে?
সব গুলা খাওয়া বাদ দিয়া অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকাই আছে। সব চাইতে বেশি অবাক তো আব্রু হইছে!
আব্রু: তুই আমার ফোন চেক করছিস!
সবগুলা: কিরে কিছু বলবি তো নাকি কে শ্রাবন?
আমি: ওরে জিগা! চোখ দিয়ে ইশারায় আব্রু কে দেখালাম।
সবগুলা এক সাথে: শ্রাবন কে?
আব্রু চুপ করে বসে আছে আর আমাকে মনে মনে বকতেছে!
আমি বললাম, ‘ হেতি পেরেম করে পেরেম ফেসবুক পেরেম! ’
২সপ্তাহ ধরে আর আমাদের কিচ্ছু বলে নাই
ওরে কিলা সবাই!
এক এক করে সবাই মিলে ওরে বাষন দিলো!
আমি বাদ যাবো কেন স্যারকে নিয়ে আমাকে হেবি জ্ঞান দিছে আমিও একটু দেই।
আমি: আব্রু তুই আমাদের বললেই পারতি আমরা কি তোরে খাইয়া ফেলতাম আমাদের সবার ব্যাপারে সব জানোস আর তুই তোরটা লুকালি তোর থেকা এটা আশা করি নাই হুহহ এত টাই পর ভাবিস তুই আমাদের? এই নে তোর ফোন তোর শ্রাবন অনেক গুলা মেসেজ দিচ্ছে।
ওরে ওর ফোন দিলাম ও আইসা আমাদের তিনজনকে জড়াইয়া ধরলো আর কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘ সরি রে দোস্ত আর হবে না এমন প্লিজ তোরা মাফ করে দে। ’
সবাই: যা মাফ করলাম।
আমি: একটা শর্তে মাফ করবো! শ্রাবন তোর সাথে দেখা করতে চায়! যেদিন দেখা করবি আমরাও যাবো।
আব্রু: তুই জানলি কেমনে মানে তুই সব মেসেজ দেখছোস?
আমি: হো!
আব্রু: ইতি। বলে চিৎকার দিয়ে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো।
সবাই হাসতে হাসতে শেষ!
আমি: আজ সকালেও তো খুব বলছিলি আমাকে এখন নিজেরই তো পোল খুলে গেলো না!
আব্রু: আমি তোর শর্ত মানলাম, তোদের সবাইকে সাথে নিয়ে যাবো ঠিক আছে কিন্তু তোকেও আমার শর্ত মানতে হবে!
আমি: কি শর্ত?
আব্রু: ওদের দুইটার বয়ফ্রেন্ড গুলা তো ওদের লগেই আছে তাই তোকে তোর বয়ফ্রেন্ড ক্রাস বাঁশ যাই ভাবিস তোর স্যারকে নিয়ে আসতে হবে তাহলেই তুই যেতে পারবি!! শেষ কথা।
আমি: কিহহহহ স্যারকে?
সব কয়ডা শয়তান ওর কথার সাথে তাল মিলালো।
আমি ধুর স্যারকে কিভাবে নিবো ভাবতে লাগলাম!
আব্রু: সামনের শুক্রবার মনে থাকে জেনো সবার!
ওকে!
মিম, নাঈম: ওকে!
মুন্নী, রুবেল: ওকে!
আমি: ঘোড়ার ডিম ওকে!
এখন স্যারকে কি বলে রাজি করবো ধ্যাত ভাল্লাগে না!
কিছু তো একটা বলে রাজি করাতেই হবে! বাড়ি গিয়ে ভাববো।
আব্রু: কি নিয়ে আসতে পারবি তোর স্যারকে?
সবগুলা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে!
আমার তো খুব রাগ হচ্ছে।
আম বললাম, ‘ আমি স্যারকে নিয়ে আসবো আগা মাথা ঘোড়ার ডিম একটা বুঝিয়ে কিন্তু কথা দিতে হবে আমি যে স্যারকে ভালোবাসি তোরা উনাকে কিছু বলবি না আর তেমন কোনো ইশারাও করবি না উনি আমার সাথে আমার স্যার হয়ে আসবে ওকে। ’
রুবেল- আগে তুই তোর স্যারকে রাজি তো করা। বলেই ৩২টা দাঁত বের করে হাসছে ওর সাথে মুন্নী নাঈম মিম আব্রু ও হাসছে।
‘ থাক তোরা আমি গেলাম! ’ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে আসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়িতেও চলে আসি!
বাড়িতে এসে কলিং বেল চাপতেই আম্মু এসে দরজা খুললো।
আম্মু- ইতি আজ এত দেরি হলো কেনো?
আমি- আম্মু ওই বন্ধুদের সাথে ফুচকা খেতে গিয়েছিলাম তাই।
আম্মু- আচ্ছা যাও ফ্রেশ হয়ে আসো! লাঞ্চ করে নাও!
আমি- ওকে আম্মু!
তারপর রুমে আসলাম ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম!
ফ্রেশ হলাম নিচে গেলাম খেলাম তারপর একটা কফির মগ হাতে নিয়ে বারান্দায় বসে বসে ভাবতে লাগলাম কি বলবো স্যারকে স্যার কিভাবে নিবে রাজি হবে কি না!
এত ভাবলাম তারপরও মাথায় কিচ্ছু আসছে না!
কিছুক্ষণ পর স্যারও চলে আসবে!
আমিও পড়তে বসে পড়লাম আজ খুব সুন্দর করে পড়লাম কোনো বার্তি কথা বলি নাই যা বলেছে তাই করেছি শুধু। স্যার অনেক অবাক এত উন্নতি বাহ।
স্যার পড়ানো শেষ হলে চলে যায়! এই ভাবেই দিন চলে যায়! আজ বৃহস্পতিবার আর কালকেই শুক্রবার আজ কলেজ গেলেই সবাই প্রশ্ন করবে উফফ তারপরেও যেতে তো হবেই! বিছানা থেকে উঠে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো ইতি!
ফ্রেশ হয়ে রেডি হলো নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লো!
কলেজ এর মাঠে! মুন্নী আর রুবেল পাশাপাশি বসে আছে। মিম আর নাঈমও দুজনে দু’জনের কাছাকাছি বসে আছে!
আব্রু ফোনে শ্রাবনের সাথে প্রেম করছে!
বলতে গেলে 3 Love Birds একসাথে মধ্যে খানে আমি কাবাবে হাড্ডি হবো।
মিম: ওই তো আমাদের গ্রুপের ভদ্র মেয়ে আসছে!
রুবেল মুন্নী নাঈম আব্রু মিমের কথা শুনে কলেজ গেইটের দিকে তাকালো!
ভদ্র মেয়ের মুড অফ নিশ্চয়ই স্যারকে বলতে পারে নাই আর নয়তো স্যার রাজি হয় না-ই!
আমি ওদের মাঠে দেখে ওদের সামনে গেলাম।
ইতি: কিরে তোরা সবাই এত হাসছিস কেনো?
মুন্নী: কিরে তোর মুড অফ কেনো?
আব্রু: স্যার নিশ্চয়ই যাবে না বলছে হাহাহা।
মিম- স্যারের এত বড় সাহস তোকে না করে। (রাগে মুখ লাল হয়ে গেছে)
রুবেল- তুই কি আধোও বলছিস স্যারকে নাকি বলিস নাই?
নাঈম- আমি সিউর ওও স্যারকে বলে নাই তাই তো চুপ করে আছে!
ইতি- আসলে আমি বলতে পারি নাই।
আব্রু মুন্নী মিম- তুই আর বলতে পারিস নাই আমরা কি ঠিক শুনছি শয়তানের নানী ও সামান্য একটা কথা বলতে পারে নাই।
রুবেল, নাঈম- তুই কি স্যারকে ভয় পাস?
ইতি- না কিন্তু উনি যদি আমাকে ভুল বুঝে আর যেতে রাজি না হয় অথবা আমাকে যদি আর পড়াতে না আসে তখন তাই ভেবেই বলতে পারছি না।
মুন্নী- ইতি!
আব্রু- ভালোবাসিস আর বলতে পারিস না।
মিম- তোর হইছে টা কি তুই তো এমন ছিলি না!
নাঈম- তোমরা একটু চুপ থাকবে!
রুবেল- ইতি সত্যি সত্যি স্যারকে ভালোবেসে ফেলেছে তাই ইতি চায় না ওর কোনো কথায় স্যার রাগ করে চলে যাক! আর আমার কাছে একটা প্লান আছে যাতে লাঠিও না ভাঙে আর সাপও না মরে।
সব গুলো রুবেল কে বললো কি প্লান রুবেল সবাইকে বললো আর সাথে ইতিকে খুব ভালো করে বুঝিয়ে বললো! সবার রুবেলের প্লানটা ভালো লেগেছে!
ইতি- প্লানটায় কাজ করবে তো?
সবগুলা এক সাথে চিল্লানি দিয়া বলল, ‘ Definitely করবে। ’
রুবেল- প্লান কাজ করবে তুই শুধু সুন্দর করে গুছিয়ে স্যারকে বলতে পারলেই হবে।
ইতি- ‘ পারবো! হইছে সবাই এখন ক্লাসে চল
সবাই ক্লাসে চলে যায়! ’
এইভাবে ক্লাস সব গুলো শেষ হলো সবাই কলেজের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে যার যার গাড়ির জন্য মধ্যখান থেকে আব্রু বলল, ‘ ইতি স্যার রাজি হলে কল দিস আমাদের ওকে? ’
ইতি- ওকে আর রাজি না হলে দিবো না! তখন তোরা বুঝে নিস আমি আসবো না!
সবগুলা- দেখিস স্যার রাজি হবে!
আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ কাল পার্কে দেখা হবে।
আব্রু- পার্কে যাওয়ার আগে আমরা সবাই একসাথে লাঞ্চ করবো ওকে। বাই মাথায় রাখিস সবাই
ইতি- ওকে!
নাঈম মিম- ওকে।
রুবেল মুন্নী- আচ্ছা ওকে!
ইতি চলে গেলো ওর গাড়িতে করে!
আব্রু চলে গেলো ওর স্কুটি দিয়ে!
নাঈম মিমকে ড্রপ করে দিবে ওর বাড়ির সামনে বলে গাড়িতে উঠে চলে গেলো!
রুবেল- বাবু কি ভাবছো তোমাকে ড্রপ করে দিবো নাকি আমি?
মুন্নী- না আমি চলে যেতে পারবো কিছুক্ষণের মধ্যে আমার গাড়ি চলে আসবে!
রুবেল- ওই আমি থাকতে তুমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে আর আমি চলে যাবো? ভাবলে কি করে হুহহ চলো উঠো গাড়িতে।
মুন্নী চুপচাপ গাড়িতে উঠে পরে জানে এখানে কিছু বললে হাত ধরে টেনে গাড়িতে উঠাবে কলেজের গেইটের সামনে টানাটানি করলে মান সম্মান সব যাবে তাই উঠে চুপ করে বসে আছে!
আর মনে মনে কষতে লাগল নিজেকে ধ্যাত গেলো আমার ফুচকা খাওয়ার প্ল্যান বেসতে।
রুবেল- জানি বেবি তুমি কি ভাবছো! (মনে মনে)
কিছুক্ষণ পর,
রুবেল- ড্রাইবার গাড়ি থামাও! ড্রাইবার গাড়ি থামালো।
মুন্নী- এখানে গাড়ি থামাতে বললে কেনো আমার বাড়ি তো এখনো অনেক দূরে তাহলে। (রুবেলের মুখের দিকে তাকিয়ে)
রুবেল- এই ভাবে তাকিয়ে থেকো না বেবি আমার লজ্জা লাগে! (বলে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল)
মুন্নী- অসভ্য ফাজিল শয়তান কুত্তা উগান্ডা ইসস লজ্জায় মরি মরি অবস্থা! (মনে মনে গালি দিলো)
রুবেল- হইছে হইছে আর গালি দিতে হবে না! এখন নামো গাড়ি থেকে।
মুন্নী- ওকে নামছি তো!
দুজনে গাড়ি থেকে নামল।
রুবেল- ড্রাইবার তুমি গাড়ি পার্ক করো আমাদের আসতে একটু দেরি হবে!
ড্রাইবার- ওকে স্যার!
রুবেল- চলো আমার সাথে!
মুন্নী- কোথায়? আমি যাবো না কোথাও আপনার সাথে।
রুবেল মুন্নীর হাত ধরে ছিলো তাই আরও একটু হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো!
রুবেল- কেনো যাবে না তুমি কি আমাকে ভয় পাও নাকি?
মুন্নী- ন. না মানে! (কাঁপা গলায় বললো)
রুবেল- না মানে কি তুমি কি ভাবছো আমি তোমার সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করবো ছিহ তুমি আমাকে ওইরকম ভাবতে পারলে?
( রুবেল আজ পর্যন্ত মুন্নীকে টাচ করে নাই শুধু হাতে ধরা ছাড়া)
কিভাবে ভাবলে তুমি তোমাকে আমি ভালোবাসি নোংরামি করার কোনো ইচ্ছা রুচি আমার নাই মুন্নী এই চিনলে তুমি আমাকে!
(রুবেলের চোখ লাল হয়ে আছে রাগে)
আশেপাশের মানুষ রুবেলের চিৎকার শুনে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে! মুন্নী দাঁড়িয়ে থেকে কান্না করে দেয় সত্যিই তো কিভাবে ভাবলো ও এইসব! রুবেল মুন্নীর হাত ছেড়ে দিয়ে বললো।
রুবেল- চলো তোমাকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে আসি!
মুন্নী কাঁদছে রুবেল দেখেনি!
রুবেল- কি হলো চলো! (চিৎকার দিলো রুবেল অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলো)
মুন্নী ধমক শুনে রুবেলের হাত ধরলো।
মুন্নী- তুমি যেখানে বলবে আমি যাবো চলো!
রুবেল- হাত ছাড়ো বলছি আমার সাথে কোথাও যেতে হবে না!
মুন্নী- না আমি ছাড়বো না! (বলে কান্না করেই যাচ্ছে)
রুবেল পিছনে ঘুরলো হাত ছাড়ানোর জন্য তখন তার নজর বন্ধি হলো মুন্নী কাঁদছে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল,
রুবেল মুন্নীর চোখের পানি গুলো মুছে দিলো আর বলতে লাগলো,
রুবেল- মুন্নী তুমি কাঁদছো কেনো? কাঁদছো কেনো বেবি আইএম সরি প্লিজ কান্না থামাও তুমি কাঁদলে যে আমার কষ্ট হয় প্লিজ কান্না করো না আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দেবো না প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আর কখনো বকবো না তোমাকে প্লিজ! (রুবেল পাগলের মতো করছে)
‘ এক শর্তেই কান্না থামাবো। ’ বলল মুন্নী।
রুবেল- বলো কি করতে হবে আমাকে আমি করবো কান ধরে উঠবো বসবো বলো যা বলবে তাই করবো!
তবুও তুমি কান্না থামাও!
মুন্নীর এখনের কথা শুনে অনেক হাসি পাচ্ছে তবুও হাসি আঁটকিয়ে বললো!
মুন্নী- তুমি যেখানে নিয়ে যেতে চেয়েছিলে সেখানে নিয়ে যেতে হবে!
রুবেল– মাথা নিচু করে আছে! কিছুক্ষণ পর
আচ্ছা চলো দু’জন হাঁটছে!
মুন্নীর অনেক ইচ্ছে হচ্ছে রুবেল ওর হাতটা ধরুক কিন্তু রুবেল মাথা নিচে করে শুধু হেঁটেই যাচ্ছে!
কিছুক্ষণ পর দুজনে পৌঁছে গেলো!
মুন্নী তো অবাক!
সামনে একটা ঝিল! ঝিলটার আশপাশে কত সুন্দর ফুলের বাগান এবং ওর সামনেই রাখা আছে একটা টেবিল আর দু টো চেয়ার টেবিলের উপর রাখা আছে ফুচকা ৪/৫ প্লেট সাজিয়ে রাখছে কিছু লোক পাশেই ফুচকাওয়ালা আর তারচেয়ে বড় চমক হচ্ছে টেবিলে প্লেটের মাঝখানে রাখা মুন্নীর পছন্দের বেলী ফুল!
মুন্নী অবাক দুই নয়নে দেখে যাচ্ছে কি সুন্দর
মুন্নী– এই সব রুবেল আমার জন্য করেছে আর আমি
রুবেল– তোমার ভালো লেগেছে? তুমি আজ ভার্সিটি শেষে ফুচকা খেতে যেতে তাই আমিই এই প্ল্যানটা করেছি তোমার ভালো লেগেছে?
মুন্নী পেছনে ঘুরেই রুবেল কে জড়িয়ে ধরলো আর ও অনেক খুশি এত খুশি বলে বোঝানো যাবে না!
রুবেল মুন্নীকে খুশি দেখে বললো–
তোমার যে ভালোলেগেছে আমি ধন্য তোমাকে খুশি করতে পেরেছি (এই বলে মুন্নীর কপালের চুল গুলো সরিয়ে ওর কপালে আলতো করে একটা চুমি দিলো)
মুন্নী লজ্জা পেয়ে রুবেলের বুকে মুখ লুকালো! রুবেলও বুঝতে পেরে মুন্নীকে জড়িয়ে ধরলো!
তারপর দু’জনে একসাথে ফুচকা খেলো মুন্নী রুবেলকে আর রুবেল মুন্নীকে খাইয়ে দিল!
রুবেল- চলো তোমাকে এখন বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে আসি!
মুন্নী- এক মিনিট! (বলে টেবিলের উপর রাখা বেলি ফুলগুলো নিজের হাতে নিলো আর ফুলগুলো নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রান শুখতে লাগলো তারপর ফুলের উপর কিস করলো)
রুবেল- বাহহহ কখনো তো আমাকে এভাবে কিস করলে না আর ফুলকে।
মুন্নী– বেলি ফুল যে আমার খুব প্রিয়!
রুবেল- মুন্নীর দুই গালে ধরে বললো ওরে আমার বাবু তোমার পছন্দ বলেই রেখেছি!
তারপর পিছনের হাত সামনে এনে একটা গিফট এর বক্স মুন্নীর হাতে দিলো!
মুন্নী- এটা কি?
রুবেল- সারপ্রাইজ! বাড়িতে গিয়ে খুলবে আর এখন চলো!
চলবে?


-------------------------------------


স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_৯
_____________
মুন্নী আবারও রুবেলকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল
“ সরি তখন তোমাকে ওইভাবে বলার জন্য সত্যি সরি ”
“ ইট’স ওকে বাবু তুমি না বললে আর কে বলবে এখন চলো গাড়িতে উঠো তোমাকে তোমার বাড়িতে ড্রপ করে দেই ” মুন্নী রুবেলের গাড়িতে উঠে বসে তারপর রুবেল মুন্নীকে ওর বাড়ির সামনে ড্রপ করে চলে যায়!
ইতি রুমের মধ্যে পায়চারী করছে। কিছুক্ষণ পর দরজায় কেউ নক করছে ইতির আর বুঝতে বাকি রইল না ওর স্যার এসে পরেছে। ইতি দরজা খুলে দেয়!
স্যার প্রতিদিনের মতই আজও ইতিকে পড়াচ্ছে কিন্তু আজ ইতি কে অনেক ডিস্টার্ব মনে হচ্ছে!
স্যার– ইতি আর ইউ ওকে?
ইতি– জি স্যার! (অনেকটা ঘাবড়িয়ে বলল)
স্যার– কি হলো ভয় পাচ্ছো কেনো কোনো সমস্যা থাকলে বলো! (এত দিনে স্যারও ইতির সাথে ফ্রি হয়ে গেছে আর ইতিও)
ইতি– স্যার আমি আপনাকে একটা রিকুয়েষ্ট করতে চাই প্লিজ না করবেন না প্লিজ প্লিজ প্লিজ!
স্যার– আচ্ছা কি কথা বলো!
“স্যারআপনিকালআমারসাথেএকটুবাহিরেযেতেপারবেন প্লিজ! ”এক নিশ্বাসে বলে এখন হাঁপাচ্ছে।
“ কি বললা বুঝি নাই? এক গ্লাস পানি ইতির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো পানি খাও ” ইতি ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিয়ে গ্লাস টা টেবিলের উপর রাখল!
“ হুম এখন তোমার এক হাত দিয়ে তোমার একপাশের নাক চেপে ধরো আর অন্য পাশ দিয়ে নিশ্বাস নাও।
ইতি– হুম (একহাত দিয়ে নাক চেপে ধরে)
স্যার– নিশ্বাস নাও এবার উপর পাশে চাপ দিয়ে ধরে এই দিক দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ো হুম করো!
ইতি– হু করছি!
স্যার– ভেরি গুড! এখন কিছুক্ষণ এমন ভাবেই শ্বাস নেও আর বের করো!
দীর্ঘ ৫মিনিট পর!
স্যার- হুম এখন হাত সড়াও!
ইতি- জি।
স্যার- এখন কেমন লাগছে?
ইতি- ভালো আগের থেকে বেটার!
স্যার- এখন বলো এত হাইপার কেনো হয়েছিল?
আর কালক কি করবো সেটা আবার বলো এবার শান্ত হয়ে সুন্দর করে বলো!
“ স্যার! কাল আমরা সব বন্ধু আর বান্ধবীরা মিলে এক সাথে লাঞ্চ করে বাকি সময় ঘুরবো! সবাই সবার বিএফ সাথে নিয়ে যাবে। আর যার বিএফ নাই সে যেতে পারবে না। কিন্তু আমি যেতে চাই। তাই আমি বলেছিলাম আমি আপনাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো তাতে ওরা দ্বিমত করেনি! আর সরি আপনাকে না জিজ্ঞেস করেই ওদের বলে দিয়েছিলাম প্লিজ রাগ করবেন না আর আপনি না যেতে চাইলে আমি ওদের বলে দিবো! ” মাথা নিচু করে করুণ কন্ঠে বললো ইতি। এমন ভাবেই বললো শাওনের আর না করার সাধ্য নেই।
“ কিন্তু ওখানে তো সবাই যার যার বয়ফ্রেন্ড এর সাথে যাবে আর আমি তোমার স্যার বয়ফ্রেন্ড নই! ” স্যার বলল।
“ তাতে কোনো সমস্যা নাই। আপনি শুধু ” কিছু বলতে গিয়েও না বলে থেমে যায় মাথা নিচু করে ফেলে। স্যার কর্কশকন্ঠে বলে, “ পড়ায় মন দেও। ”
ইতি মুড অফ করে পড়তে লাগল। মুখটা তার বাংলার পাঁচের মতো হয়ে গেছে। স্যার এখনি চলে যাবেন তাট চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।
ইতি মুড অফ করে বাচ্চা বাচ্চা ফেস করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্যারের উত্তরের আশায়!
স্যার চেয়ার থেকে উঠে ইতির সামনে দাঁড়িয়ে মলিনকন্ঠে বলল,
“ কাল আমি রেডি হয়ে থাকবো! তুমি আমাকে পিক করে নিও! ওকে ”
ঠোঁটে ল্যাপ্টে আছে তার অমায়িক হাসি। এতদিনে আজ প্রথম স্যার হাসলেন আর যেতেও রাজি হয়ে গেলেন! ইতি এত খুশি হয়েছে যে চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠে স্যারকে জরিয়ে ধরে স্যার তো ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইতি বুঝতে পারলো ও ওর স্যারকে জরিয়ে ধরেছে সাথে সাথে স্যার ছেড়ে দিয়ে একটু পিছিয়ে আসে! ইতস্তত হয়ে অস্ফুটস্বরে বলে,
‘ সরি স্যার! আমি একটু এক্সাইটেড হয়ে গেছিলাম তাই বুঝতে পারিনি! ’ মাথা নিচু করে রেখেছে ইতি– লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে মনে মনে ভাবছে, ‘ ইসসস কি করলাম স্যার কি ভাবছে? ’
স্যার কিছু না বলেই মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো!
ইতি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল স্যারের যাওয়ার দিকে আনমনে বলে উঠল, ‘ স্যার কিছু বললো না কেনো? তার মানে কি স্যার ও আমাকে ইয়াহহহহু ’ বলে চিৎকার দিয়ে বিছানার উপর উঠে নাচতে লাগলো ইতি। ইতি খুশির ঠেলায় ভুলেই গেছে ও যে বলেছিল, কাল ওদের সাথে যেতে পারলেই কল দিবে আর না পারলে কল দিবে না! রাতে খেয়ে তারাতাড়ি শুয়ে পরে স্যারের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে।
ওদিকে ওরা ইতির কল না আসায় ভেবে নেয় ওরা ইতি কাল যাবে না,, স্যার রাজি হয়নি।
সবার মুড অফ হয়ে যায় ইতি যাবে না ভেবে।
পরেরদিন-
আজ প্রথম স্যারের সাথে বাহিরে যাবো। তাই আম্মুর থেকে একটা শাড়ি নিয়ে আসি আর সেটা পরবো।
দীর্ঘ ৩০মিনিট ঘাটাঘাটি করেও কোনো শাড়ি পছন্দ হয়নি, মুড অফ করে বিছানায় বসে পরলো।
ইতির মা আলমারি থেকে শপিং ব্যাগ এনে ইতির হাতে দেয় আর বলে এটা তোর নিশ্চয়ই পছন্দ হবে।
ইতি শপিং ব্যাগ খুলতেই অভাক খুব সুন্দর একটা পিংক কালারের হাফসিল্ক শাড়ি!
ইতি ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু দিয়ে থ্যাংঙ্কিউ বলে নিজের রুমে চলে আসে!
এখন পুরো ১ঘন্টা ধরেও একটা শাড়ি পরতে পারছে না! উফফ নিজের উপর নিজের বিরক্তির শেষ নেই।
ইতির আম্মু– কিরে হলো তোর?
রুমে ডুকে দেখে ইতি কোনো রকমে শাড়ি পেচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইতির আম্মু মেয়ের এই অবস্থা দেখে হেসে দিলো!
ইতি– আম্মু! (বিরক্ত হয়ে)
ইতির মা– দে আমি পরিয়ে দেই!
তারপর সুন্দর করে কুঁচি দিয়ে মেয়েকে শাড়ি পরিয়ে দেয় এবং নিজের হাতেই সাজিয়ে দেয় কি আর সাজ চোখে গাঢ় করে কাজল আর ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক আর চুল গুলো চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে ছেড়ে দেয়। কিছু চুল ভাগ করে সামনের দিকে দিয়ে আর বাকি গুলো পেছনে ছেড়ে দিছেন তাতেই ইতিকে দেখতে পরীর মতো লাগছে!
মেয়েকে শাড়িতে এত সুন্দর লাগছে দেখে ইতির মা নিজের চোখের কার্নিশ থেকে এক আঙুল দিয়ে কাজল নিয়ে মেয়ের কানের পেছনে লাগিয়ে দেয় আর বলে!
“ আমার পরীর মত মেয়ের যেনে কারো নজর না লাগে। ” কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলেন।
ইতি নিজেকে খুব ভালো করে আয়নাতে দেখছে খুশিতপ আহ্লাদী স্বরে বলল,
“ শাড়িতে তো আমাকে বেশ লাগে নিজেই ক্রাশ খাচ্ছি। মাঝেমধ্যে শাড়ি পরলে খারাপ হবে না! ”
২মিনিট পর!
ইতি– এখন আমি হাঁটবো কিভাবে আল্লাহ গো যদি পরে যাই? শাড়ি পরে হাঁটা যায় আজিব মানুষ যে কিভাবে পরে আল্লাহ এই এই খুলে গেলো মনে হচ্ছে শাড়িটা!
ইতি– ও আম্মু গো শাড়ি খুলে গেলো গো।
ইতির মা কিচেন থেকে দৌঁড়িয়ে আসে এসে দেখে সব ঠিক আছে ইতি নিজেই শাড়ির কুঁচি ধরে দাঁড়িয়ে আছে!
ইতির মা– তুই এভাবে কুঁচি ধরে রাখলে সত্যিই খুলে যাবে ছাড়!
মেয়েকে ধমক দিয়ে। তারপর নিজেই হেঁটে দেখাচ্ছে শাড়ি পরে কিভাবে হাঁটতে হয়! ইতি ওর আম্মুর দেখানো অনুযায়ী হেঁটে চলে গেলো এখন আর শাড়ির কুঁচি ধরতে হয়নি!
মেয়ে বন্ধু বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছে আর মা শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছে বাহ ভাবা যায় শুরুতে দ্বিমত করেছিলেন। ইতির আম্মুর বাহিরে খাওয়া পছন্দ না তাই কিন্তু পরে যখন জানলো শাওন ও যাচ্ছে তখন আর কোনো কিছু বলেনি! মেয়েকে নিজের হাতেই সাজিয়ে দেয় আসলে উনারও শাওনকে ভালো লাগে আর লাগবেই না কেনো নম্র ভদ্র শিক্ষিত ছেলে বড়দের সম্মান করে!
ইতি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় ওয়েট করছে স্যারের জন্য।
স্যারের আসতে লেট হচ্ছে দেখে ইতি গাড়ি থেকে নেমে যায় আর গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
স্যার আসছে স্যারই বলেছিল ইতিকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে। উনি এখান থেকেই ওর সাথে যাবে।
কিছুটা সামনে আসার পর স্যার লক্ষ্য করলেন একটা মেয়ে গোলাপী কালারের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে চুলগুলো মুখের সামনে এসে পরে আছে তাই চেহারা দেখা যাচ্ছে না! কিন্তু স্যার এগিয়ে আসছেন!
হটাৎ ইতি মাথা উঠিয়ে ওর বাম পাশের রাস্তার দিকে তাকালো!
ইতি তাকানোর সাথে সাথেই স্যার দাঁড়িয়ে গেলেন!
কারণ উনারা দু’জন দু’জনের থেকে আর মাত্র ১০কদম দূরে দাঁড়িয়ে আছে আর এখন তো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ওই শাড়ি পরা মেয়েটা যে ইতি।
স্যার– ইতি আজ শাড়ি পরেছে! কি সুন্দর লাগছে ওকে দেখছে! কিন্তু ওও শাড়ি কেনো পরলো? (মনে মনে) এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! ইতি অবাক কিভাবে সম্ভব এটা কি ভাবে?
স্যারও পিংক কালারের একটা শার্ট পরে আসছেন!
দু’জন দু’জনের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল!
স্যার নিজের চোখ নামিয়ে নিল আর ইতিও অন্য দিকে ঘুরে তাকালো!
দু’জনেই চুপ করে গাড়ি উঠে পরলো! পুরো রাস্তা কেউ কিছু বলেনি! কিন্তু দুজনেই দু’জনের দিকে তাকাতে গেলেই দুজনের চোখে চোখ পরে গেছে আর দুজনেই লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে যায়।
ওই দিকে রেস্টুরেন্টে বসে আছে মুন্নী, রুবেল মিম নাঈম আর আব্রু কিন্তু শ্রাবন এখনো এসে পৌঁছায়নি!
মুন্নী– ধ্যাত ইতি টা আসতে পারলো না কিছু ভাল্লাগছে না ধুর! (বিরক্তির স্বরে)
“ সব এই আব্রুর বাচ্চির জন্য হইছে ওই তো বলছে স্যারকে নিয়ে আসতে হবে আর নয়তো আসা যাবে না। ” আব্রুর মাথায় টোকা দিয়ে বল মিম।
আব্রু– উফফ! আস্তে আমি কি জানতাম না-কি? ওর স্যার যে রাজি হবে না। আমি তো ভাবছিলাম রাজি হবে আর ওর স্যারকে দেখার সুযোগ পাবো আমরা।
রুবেল– কিন্তু তোর ভাবনায় পানি ঢেলে দিছে স্যার আর ইতির আসা বন্ধ হইছে। (রাগী কন্ঠে)
আব্রু– সরি। (মাথা নিচু করে)
নাঈম– কিন্তু এই শ্রাবন কেনো আসছে না এখনো?ও কি রাস্তা হারিয়ে ফেলছে নাকি?
মিম– হ্যাঁ যার জন্য আসলাম তারই খবর নাই!
মুন্নী– মনে হয় জ্যামে আটকে পরেছে।
রুবেল– প্রায় ৩০মিনিট ধরে ওয়েট করছি। আর কত?
ওই আব্রুর বাচ্চি কল দে!
আব্রু– আমার ফোনে এমবি নাই! আমি তো ওয়াই-ফাই চালাই।
নাঈম– কল দিবি এতে এমবি ওয়াই-ফাই করতাছোস কেন?
মুন্নী– তোর মেসেঞ্জারে কল দিতে হবে না এমবি নাই যখন নাম্বারে কল দে!
আব্রু– নাম্বার নাই।
রুবেল– কিহহ?
নাঈম– মাথা খারাপ প্রেম করিস আর নাম্বার নাই!
মিম– ওর আকাশে উড়াইন্না কথা শুনে আমরা সব রেস্টুরেন্টে এসে বসে আছি বাহহহ ইচ্ছে করতাছে ওরে। (দাঁতে দাঁত চেপে)
মুন্নী– তোর মাথায় কি গোবর ভর্তি না-কি তুই নাম্বার নিবি না!
সবাই আব্রুকে বকছে।
এমন টাইমে আব্রুর পেছনে একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো!
ছেলে– এই যে ম্যাডাম মাথায় হাত দিয়ে আছেন কেনো?
“ ওয়েটার ওই গ্লাসে করে এক গ্লাস পানি দাও তো গলাডা শুকাই গেছে ” আব্রু কপালপ হাত ঠেকিয়ে বলল।
মুন্নী মিম রুবেল নাঈম ওর দিকে তাকিয়ে আছে!
ছেলে– এই যে নিন ম্যাম আপনার এক গ্লাস জল।
আব্রুর সামনে গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল সে এদিকে আব্রু ছেলেটাকে ওয়েটার ভাবছে।
রুবেল– এই ছেলেকে দেখে তো মনে হচ্ছে না ও এখান কার ওয়েটার! (ফিসফিস করে বলল)
নাঈম– ঠিক বলছিস!
মিম– আপনি কে আর এখানে কি চান?
মুন্নী– যান তো ভাই আমরা এমনি একজনের ওয়েট করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি আর উপর থেকে আপনি।
আব্রু– না জানি আবাল টায় কখন আসবে? আর জানিই তো না আসবে কি না! (মুখ ফুলিয়ে বলল)
ছেলেটা আবাল শুনে কিছু না বলেই আব্রুর পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়ল!
আব্রু– এই ওয়েটার আপনার সাহস তো কম না আপনি আমার পাশে বসছেন!
কথা বলতে বলতে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেটার দিকে ঘুরলো দিতে যাবে একখানা ঘুসি হাত আটকে গেলো তার।
আব্রু— আ. আ. আপনি? (তোতলিয়ে বলল)
মুন্নী– তুই উনাকে চিনিস!
ছেলে– হুম আমি এই রেস্টুরেন্টের সামান্য একজন ওয়েটার। (মুখে হাসি দিয়ে ছেলেটা বলল)
রুবেল– আপনাকে দেখে তো ওয়েটার মনে হচ্ছে না!
আব্রু– আ’ম সরি।
ছেলেটা তুচ্ছ হাসি দিয়ে বলল, “ আহহ সরি বলছো কেনো? আমি তো আবাল তাই না? ”
মিম– আব্রু আপনাকে কখন আবাল বললো?
“ আব্রু তো শ্রাবন ভাইয়াকে বলছে! ” আর কিছু না বলেই সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল মুন্নী!
রুবেল– তার মানে হচ্ছে আপনিই শ্রাবন?
নাঈম– নাইচ টূ মি ইউ! (হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
আব্রু– সরি শ্রাবন!
শ্রাবন সবার কাছে মাফ চাইলো!
শ্রাবন– I’m Sorry Guys!
শ্রাবনকে অন্য কিছু বলার আগেই মিম শ্রাবন কে থামিয়ে দিয়ে বললো!
মিম– সরি কেনো?
চলবে?





----------------------------------
স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_১১
__________
আব্রু, মিম, মুন্নী, শ্রাবন, নাঈম, রুবেল।
ওরা যার যার গার্লফ্রেন্ড এর হাত ধরে সোজা হাঁটছে অন্য দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের পেছনে আমরা আছি নাকি নেই একবারের জন্যও তাকাচ্ছে না।
ইতির তো ওদের এইভাবে দেখতে প্রচুর রাগ হচ্ছে স্যারের উপর। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে উপরে আর তাকাবে না ভাবছে তাকালেই ওদের তিন জোড়া শালিক পাখি দেখতে হবে।
ইতি– আনরোমান্টিক গরু মহিষ কুত্তা ছাগল মিনিমাম কমন সেন্স টুকু নাই, ওরা সবাই হাত ধরে হাঁটছে আমারও তো ইচ্ছে করছে নাকি গরু একটা বুঝেও বুঝে না নাকি সত্যিই বুঝে না। আনরোমান্টিক পুরাই আনরোমান্টিক কি সুন্দর পরিবেশ কি সুন্দর হাতে হাত রেখে পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটবো কিন্তু না স্যার না যেনো ছাগল। যা করার আমাকেই করতে হবে।
হুম আমি গিয়ে ধরবো নাকি উনার হাত, কিন্তু যদি কিছু বলে তাহলে তো পাবলিক প্লেসে মান সম্মান যাইবো।
কিন্তু আমার ফ্রেন্ডের সামনে কিছু বলতে পারবে না।
ইতি ধীর পায়ে হাঁটছে আর নিজে নিজেই বিড়বিড় করছে। এটাই ঠিক হবে আমি নিজেই গিয়ে ধরি।
বলে মাথা তুলে পাশে তাকাতেই দেখলো ওর পাশে স্যার নেই।
ইতি– আরে স্যার গেলো কোই আমাকে একা রেখে চলে যায়নি তো! খুঁজতে খুঁজতে ইতির চোখ গেলো সোজা রাস্তার দিকে একা একা হাঁটতে হাঁটতে বেশ অনেকখানি চলে গেছে স্যার!
ইতি– অসভ্য লোক ফাজিল লোক আমাকে রেখে একা একা চলে যাচ্ছে।
বলে শাড়ির কুঁচি গুলো দুইহাত দিয়ে ধরে হাঁটু সমান উপরে তুলে দিলো দৌঁড়।
স্যার নিজের মতো করে হাঁটছে ওনার মনেই নেই ওনার পাশে ইতি ছিলো সবসময় একা একা চলাচল করে তাই। ইতি দৌঁড়াচ্ছে আর স্যার বলে চিল্লাচ্ছে!
স্যার– মনে হচ্ছে কেউ আমাকে ডাকছে?
বলে পেছনে ঘুরতেই ওনার পেছনে ইতি নেই। ইতি গেলো কোই? বলেই সামনে চোখ পড়লো ইতির দৌঁড়ানোর দৃশ্যের উপর।
মনে হচ্ছে কোনো মুভির সিন সুট হচ্ছে আর হিরোইন শাড়ি দুই হাত দিয়ে ধরে দৌঁড়াচ্ছে।
স্যারের চোখ আটকে গেলো ইতির উপর মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইতির দিকে।
কি সুন্দর লাগছে ইতিকে ওই যে শাড়ি পরেছে স্যার শুু একবার দেখে ছিল ওনাকে পিক করার সময় গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ইতি তখন একবার তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিয়ে ছিল!
ইতির দিকে আজ পর্যন্ত স্যার এই ভাবে তাকায়নি যেভাবে এখন তাকিয়ে আছে, ইতি কেনো অন্য কোনো মেয়ের দিয়ে তাকায়নি আজই প্রথম আর সেটাও আবার ইতি।
ইতিকে দেখতে একদম একটা কিউটের ডিব্বা পুতুলের মতো লাগছে।
(আমি আবার এখন পর্যন্ত পরী টরী দেখি নাই তাই জানি না তারা দেখতে কেমন, পুতুল দেখছি তাই পুতুলের মতোই বললাম)
স্যারের দৃষ্টি এখনো ইতির উপরেই আটকে আছে, ইতির দৌঁড়ো এসে স্যার সামনে দুই হাঁটু চেপে ধরে হাঁপাচ্ছি।
একটু সোজা হয়ে দাড়িয়ে আপনার মাথায় কি কিছুই নেই সেই কখন থেকে ডাকছি হেঁটেই যাচ্ছেন আশে পাশে আমি আছি কি না নাই দেখার প্রয়োজন ও মনে করেন নাই যদি হারাই যাইতাম? আজব চুপ করে আছেন কেন স্যার ও স্যার?
স্যার যেনো হারিয়ে গেছে অজানায় ইতির এত কথা স্যার শুনতেই পাচ্ছে না, দুই চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে ভালোবাসার দৃষ্টিতে ইতির মুখের দিকে এত দূর দৌঁড়ে আসাতে ইতির কপালে নাকে ঘাম জমেছে,
তাতে ইতিকে আর সুন্দর লাগছে।
ইতি স্যারকে ডেকেই যাচ্ছে এতবার ডাকার পরও সাড়াশব্দ না পেয়ে স্যারের হাত ধরে নাড়া দিয়ে স্যার বলে ডাকলো স্যার একটু নড়েচড়ে উঠে।
স্যার– হুম হুম কি হইছে?
ইতি– কি হইছে মানে আমি যে আপনাকে এতক্ষণ ধরে এতকিছু বললাম আপনি কিছুই শুনতো পাননি?
স্যার– কি বলছো? (প্রশ্নবোধক চিহ্ন)
তারপর পরেই কিছু একটা ভেবে বললো হ্যাঁ হ্যাঁ শুনতে পেয়েছি!
ইতি– সত্যি?
স্যার– হুম হুম চলো এখন ওরা অনেকদূর চলে গেছে!
ইতি– জি চলুন!
স্যার– হু চলো! এই দাঁড়াও দাঁড়াও! তুমি আমার হাত ধরেছো কেনো? ছাড়ো আমার হাত!
ইতি– ধরেছিই যখন আর ছাড়ছি না!
স্যার– হাত ছাড়ো বলছি ইতি! রাস্তার মাঝখানে সিন ক্রিয়েট করো না!
ইতি– স্যার প্লিজ এমন করছেন কেনো হাত টাই তো ধরেছি!
স্যার– না তুমি আমার হাত ধরবা কেন আজব!
ইতি– আশ্চর্য আজবের কি আছে ওরাও তো ধরেছে।।
স্যার– ওরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড ইতি আর আমি তোমার স্যার হাত ছাড়ো।
হাত ইতিকে একটা ধমন দিয়ে নিজের বল শক্তি প্রয়োগ করে নিজের হাত ইতির হাতের মধ্য থেকে ছাড়িয়ে নিলো!
স্যার– কথায় কথায় গায়ে হাত দিবা না আর আমাকে তো টাচ করবেই না!
ইতি আর কিছু বলছে না নিচের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে খাম্বার মতো সোজা হয়ে। ইতি না চাইতেও ইতির চোখ থেকে একফোঁটা জল বেয়ে পরলো! স্যার সেটা লক্ষ্য করলেও ইতিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই! পাশ থেকে গ্রামের ৩/৪ জন লোক এসে দাঁড়িয়ে নানান প্রশ্ন করতে শুরু করলো!
প্রথম ব্যক্তি– কি হচ্ছে কি এখানে আর তোমরাই বা কারা এ গ্রামে তো আগে দেখি নাই!
দ্বিতীয় ব্যক্তি– দেখেতো মনে হচ্ছে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসছে, আর মেয়েটা কাঁদছে কেন এই মেয়ে এদিকে তাকাও। (ইতির দিকে হাত বাড়িয়ে)
স্যার সাথে সাথেই লোকটির হাত খোপ করে ধরে ফেলে রাগী গলায় বলল,
স্যার– একদম গায়ে হাত দেবেন না!
এতক্ষণ শান্ত থাকলেও এখন অনেক রেগে গেছে লোকটার সাহস কি করে হয় ইতিকে স্পর্শ করার কথা চিন্তা ভাবনা করার।
তৃতীয় ব্যক্তি– দেখো দেখো সাহসের কি দেখছো ছেড়া এক তো পলাইয়া আসছো আর এখন বড় বড় কথা বলতাছো, রাস্তার মধ্যে ফালাইয়া ধোলাই দিলে বুঝবা কত সাহস!
স্যার– আরে আপনাদের সমস্যা কি জানেন না বুঝেন না এসেই উল্টা পাল্টা কথা বলছেন!
চতুর্থ ব্যক্তি– দেহো দেহো চোরের মায়ের বড় গলা তোর বেডারে। (মারার প্রস্ততি নিয়ে)
স্যার ধমক দিয়ে কি বললেন আপনাদের সাহস কি করে হয় আমার মাকে নিয়ে বাজে কথা বলার!
ইতি আর চুপ করে থাকতে পারল না এখন কারণ এখন পরিস্থিতি কিছু টা ভিন্ন হয়ে গেছে এখন চুপ থাকলে মারামারি হতে পারে আর স্যারও বেশ রেগে গেছে!
ইতি লোকগুলোর দিকে ঘুরে দাঁড়ালো চোখের জল মুছে বলতে লাগলো!
ইতি– দেখুন আমরা এখানে ঘুরতে আসছি আপনারা ভুল বুজছেন আমাদের সাথে আরও মানুষ আছে ওই যে যাচ্ছে ওরা পেছনে তাকিয়ে।
প্রথম ব্যক্তি– কারা যাচ্ছে ওদিকে তো কেও নাই।
ইতি– স্যার ওরা সব গেলো কোই কই?
স্যার ইতির কথা শুনে পেছনে তাকালো দেখে তিন জোড়া শালিক পাখি উধাও।
তৃতীয় ব্যক্তি– আমাদের থেকে বাঁচার জন্য মিথ্যাে বলছে!
ইতি– না আমি মিথ্যে বলছি না! স্যার পেছনের দিকেই ঘুরে আছে আর রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে!
চতুর্থ ব্যক্তি– দুই টাকে ধইরা নিয়া চল বিয়া পরাই দেই।
ইতি– আহহ কি সুন্দর কথা আমিও তো এটাই চাই
কিন্তু এইভাবে না একটুও না। (মনে মনে)
ইতি– দেখুন আপনার ভুল করছেন!
দ্বিতীয় ব্যক্তি– মেয়েকে ছাড় পোলা ডারে ধর। (পরনে লুঙ্গি কাছা দিতে দিতে বলল)
ইতি– একদম না আপনারা উনাকে কিচ্ছু করবেন না আপনারা জানেন না আমি কার মেয়ে ভালো হবে না কিন্তু।
দ্বিতীয় ব্যক্তি– কিহহহ আমাদের ভয় দেখাইতাছে এই মাইয়া। আমাদের গ্রামে আইসা আমাদের কেই ভয় দেহায়।
ইতি– আপনার গ্রাম মানে কি গ্রামে আপনারা থাকেন পুরো গ্রাম টা তো আর আপনি কিনে রাখেননি।
দ্বিতীয় ব্যক্তি– কি কি কইলি মাইয়া! ( বলেই ইতিকে ধাক্কা নিয়ে রাস্তায় ফেলে দিলো)
ইতি– আহহহহহহহহহহ!
ইতির চিৎকার শুনে স্যার তাকালো আর দেখলো ইতি নিচে পরে আছে মানে ওকে ধাক্কা দিছে!
স্যার– ওর গায়ে হত কে দিছে। (রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে এখনি বম ব্লাস্ট হবে)
স্যারের চোখ মুখ দেখে পেছন থেকে চতুর্থ আর তৃতীয় ব্যক্তি কেটে পরলো!
দ্বিতীয় ব্যক্তি– আমি দিছি ধাক্কা কি করবি তুই ওরে তো খালি খালি ধাক্কা দিছি তোরে তো
আর বলার আগেই খাইলো সোজা নাকের উপর!
স্যার– দ্বিতীয় ব্যক্তিকে পাঞ্চ মারলো নাক বেয়ে রক্ত বের হচ্ছে, তোর সাহস হয় কি রে ইতিকে টাচ করার ওকে ধাক্কা মারার ওকে হার্ট করার জন্য তোকে আজ আমি কি যে করবো আজ পর্যন্ত আমি ওকে একটা ধমক ও দেইনি আর তুই বলেই ইচ্ছা মতো পিটাইতাছে প্রথম ব্যক্তি ধরতে আসলে তাকেও দিছে কয়েকটা
ইতি তো অবাক এত শান্ত প্রকৃতির ছেলে স্যার আর এই স্যার কে তো ও চিনেই না।
ইতি– কি মিথ্যা কথা! কখনো বলে ধমক ও দেয় নাই একটু আগে ধমক দিলো কে? (মুখ ভেংচি দিয়ে)
স্যারের কথার গভীর মানে ইতি বুঝতে পারলো না!
ওইদিকে রাস্তার পাশেই কিছুটা দূরে ধান ক্ষেত আর সেখানে কিছু কৃষক কাজ করছে সেখানে গিয়ে চতুর্থ আর তৃতীয় ব্যক্তি কিছু একটা বললে কিছু মানুষ তারাতাড়ি ওদের সাথেই দৌড়াতে দৌড়াতে এদিকেই আসছে আর স্যার তো মারছেই আধা মরা করে ফেলছে।
ইতি দেখতে পেলো মানুষ ওদের দিকেই আসছে এখানে থাকা আর সেভ নয়, তারাতাড়ি করে উঠে স্যারের হাত ধরে টানতে থাকে কিন্তু হাতি তো হাতিই
হাতির শক্তির সামনে আমাদের ইতি তুচ্ছ
ইতি– স্যার থামুন লোকটা মরে যাবে তো!
স্যার ওদিকে দেখুন কত মানুষ আসছে চলুন পালাই!
স্যার ইতির কথায় সামনে তাকিয়ে দেখলো প্রায় ৭/৮ জন!
তারাতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে পরলো একা থাকলে হয়তো ভাবতো না কিন্তু ওর সাথে ইতি আছে আর ওই লোক গুলো ওর কিছু করতে না পারলেও ইতিকে নিয়ে রিস্ক নিতে চায় না।
সামনে আসতে তাকা লোক গুলোর দিকে তাকালো একবার নিচে মাটিতে পরা লোকটার দিকে তাকলো..
কিছু একটা ভেবে ইতির হাত শক্ত করে মুঠি বন্ধ করে নিয়ে উল্টো দিকে দিলো দৌঁড়!
ইতি হাত ধরায় অবাক হয়েছে কিছুক্ষণ আগে এই হাত ধরা নিয়েই কত কিছু হল আর এখন উনি নিজেই ধরছে!
স্যার যে দৌঁড় দিবে ইতি ভাবতেই পারেনি!
শাড়ি পরা ছিলো হঠাৎ দোঁড় দেওয়ার জন্য পরে যেতে নিলে স্যার ধরে ফেলে।
ইতি এক হাত তো স্যার ধরেই রাখছে আরেক হাত দিয়ে শাড়ি ধরে দু’জনেই দিলো দৌঁড়।
পেছনের লোক গুলো ওদের দৌড়াতে দেখে নিজেরাও দৌড় দিলো কিন্তু মাটিতে পড়ে থাকা মানুষ গুলোকে দেখে তাদের আর পিছু না নিয়ে ওদেরকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যায়। পরে সব কিছু জিজ্ঞেস করাতে প্রথম তৃতীয় চতুর্থ ব্যক্তি সব খুলে বলে আর দোষ দ্বিতীয় ব্যক্তিরই ছিলো। লোকটা এমনই এর আগেও গ্রামেরই মানুষের সাথে এমন অনেকবার করেছে তাই আর ইতিদের খুঁজতে লোক ওদের পিছু করেনি!
স্যার আর ইতি এখনো হাত ধরে দৌড়াচ্ছে দেখে এবার সত্যি সত্যি মনে হচ্ছে ওরা বাড়ি থেকে পালিয়েছে!
দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে দু’জনেই হাঁপিয়ে গেছে
রাস্তার পাশে দুজনেই দাঁড়িয়ে পরছে দুজনেই হাঁপাচ্ছে। কোথায় এসে পৌঁছিয়েছে নিজেরাও জানে না!
ইতি– পানি।
স্যার– এখানে পানি কোথায় পাবো?
বলে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো সামনে মাঠে খুব বড় জমজমাট একটা মেলা বসেছে আর অনেক মানুষ মেলার মধ্যে তো নিমিষেই পানি পেয়ে যাবে! ইতি পেছনে তাকিয়ে দেখে ওদের পেছনে কেউ নেই!
ইতি– স্যার ওরা আমাদের পিছু পিছু কেনো এলো না?
স্যার– তো তুমি কি চাচ্ছিলে ওরা আমাদের পিছনে পিছনে আসুক?
ইতি– হ্যাঁ! ফিল্মে তো তাই হয়।
স্যার– এখানে কি কোনো ফিল্ম চলতেছে না-কি গাধা!
ইতি- স্যার?
স্যার– চুপ!
ইতি– কিন্তু স্যার?
স্যার– একদম চুপ! (ধমক দিয়ে)
আমি- কিন্তু আমি গাধা নই। আপনি গাধা।
স্যার- কি বললে?
আমি- কোই কি বললাম?
স্যার– ওই তো মেলা হচ্ছে চলো ভেতরে যাই পানি পেয়ে যাবো!
ইতি– ওয়াও এই প্রথম মেলায় আসলাম আব্বু তো কোথাও যেতেই দেয় না কি সুন্দর!
চলবে

............................ .................

স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_১২
________
“ আমি যখন ছোটো ছিলাম এই ক্লাস 5/6 এ পড়ি তখন একবার স্কুল পালিয়ে বন্ধুদের সাথে গিয়েছিলাম।
তারপর এই আজকে ” ইতি উল্লাসী কন্ঠে বলল।
“ক্লাস 6 এ পড়তে তখন তুমি ছোটো ছিলে? ” ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুঁড়ে শাওন।
ইতি- হুম কেন?
স্যার– কিছু না এখন চলো!
ইতি– স্যার আপনি এতক্ষণ কিভাবে দোঁড়াচ্ছিলেন খেয়াল করেন নি না-কি? (মেকি হাসি দিয়ে)
স্যার ইতির দিকে তাকিয়ে– কিভাবে?
ইতি– আমার হাত ধরে! (নিচের দিকে তাকিয়ে)
স্যার– ইতি।
ইতি– সরি স্যার!
স্যার একটা শপের সামনে গিয়ে সালাম দিলেন,
স্যার– আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া একটা সাহায্য লাগবে!
দোকানদার– ওয়ালাইকুম আসসালামু, জি ভাই বলেন?
স্যার– এখানে কি কোথাও পানি পাওয়া যাবে?
দোকানদার– হ্যা ভাই ওই সামনে গিয়ে বামে যাবেন ওখানেই চাপকল আছে!
স্যার– ওকে থ্যাংঙ্কিউ!
দু’জনেই পেট ভরে পানি খেলো! দু’জনের এক জনেরও জানা নেই তারা কোথায় আছে? আর বাকি তিন জোড়া শালিক পাখি কোই আছে? দু’জনেই হাঁটছে মেলার ভেতর ঘুরে দেখছে!
ইতি– স্যার আমি ওটা কিনবো! (বাচ্চাদের মতো বায়না করে)
স্যার– ইশশ তুমি কি বাচ্চা না-কি? (ইতির দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙিয়ে বলল)
ইতি– স্যার প্লিজ! (বেবি ফেস করে)
স্যারের ইতির মুখ দেখে আর না করার সাধ্য নেই!
ইতি– আমার পার্স গাড়িতেই রেখে আসছি প্লিজ স্যার।
স্যার– ওকে দিচ্ছি!
একটা লোকের সামনে গিয়ে স্যার বলল– ভাইয়া এই এই খেলনা টা কত?
লোক– ভাই ৩০টাকা।
স্যার– কিহহহ ৩০টাকা এর মধ্যে তো পানি ছাড়া কিছুই নাই তাহলে ৩০টাকা কেন?
লোক– আপনে নিলে নেন না নিলে নাই!
ইতি– ৩০টাকা তাই কেমন করছে জন্মের কিপ্টা! (মুখ ভেংচি দিয়ে)
স্যার– আচ্ছা দেন একটা!
লোক– আপনি কার জন্য নিবেন আপনার বাচ্চার লাইগা নাকি আপনার সাথে তো বাচ্চা দেখতাছি না।
স্যার– আরে মিয়া ধুর বিয়াই করলাম না আর বাচ্চা!
আমি নিবো ওই বুড়ি মেয়েটার জন্য! ( আঙ্গুল দিয়ে ইতিকে দেখিয়ে বলল)
ইতি– কিহহ আমি বুড়ি?
লোক– এই যে লন খেলনা!
স্যার– হো লন আননের টিয়া!
লোক–
স্যার– এই নাও তোমার খেলনা! (ইতির হাতের মধ্যে দিয়ে)
ইতি– মোটেও এটা খেলনা না!
ইতি তো এটা পেয়ে খুব খুশি! চটপট করে জিনিস টা খুললো আর দুই হাতে দুইটা নিয়ে স্যাম্পুর পানির মধ্যে চুবাচ্ছে আর মুখের সামনে এনে ফু দিচ্ছে!
আর প্ল্যাস্টিকের গোল ফাঁকা জায়গা দিয়ে পানির বেলুন বের হচ্ছে! ( আচ্ছা এইযে পানির মধ্যে চুবিয়ে জিনিস টা ফু দিলে পানির বেলুন বের হয় এইটা আমার ছোটো বেলায় অনেক পছন্দ ছিল এখনো অনেক পছন্দ করি কিন্তু এটার নাম আমার মনে নেই তাই লিখতে পারলাম না দুঃখিত)
ইতি বেলুন গুলো দেখছে আর মিষ্টি মিষ্টি হাসছে বেলুন গুলো ফুটে যেতেই আবার ফু দিচ্ছে আবার বেলুন বের হচ্ছে ইতি আরও হাসছে। ইতির এই কান্ড দেখে স্যার ও হাসছেন।
স্যার– এই মেয়েটা সত্যিই বাচ্চা!
ইতি নিজের মতো করেই ফু দিয়ে বেলুন উড়াচ্ছে!
স্যার– ইতি চলো ওই রাস্তার পাশে গিয়ে ঘাসের উপর বসি!
ইতি ফু দিতে দিতে বলল, ‘চলেন স্যার!’
দু’জনেই রাস্তার পাশে বসে আছে ইতি নিজের মতো ফু দিয়ে বেলুন বানাচ্ছে।
মাঝে মাঝে স্যারের মুখের দিকেও ফু দিচ্ছে আর পানির বেলুন গুলো স্যারের মুখের সাথে লেগে ঠাসঠুস ফুটে যাচ্ছে। দু’জনেই খিলখিল করে হাসছে এ জেনো এক অন্য রকম অনুভূতি।
কিছুক্ষণ পর তিন জোড়া শালিক পাখি মেলার মধ্যে থেকেই বেরিয়ে এলো! হ্যাঁ ওরা মেলার মধ্যেই ছিল!
আব্রু– রাস্তার ওপাশে কারা বসে আছে রে?
রুবেল– আরে এরা কারা?
মুন্নী– আমি যা ভাবছি তোরাও কি তাই ভাবছিস?
মিম– আরে রাখ তোর ভাবা ভাবি আমি যা দেখছি তোরা ও তাই দেখছিস?
নাঈম– কিভাবে সম্ভব?
শ্রাবন– সবই সম্ভব!
মুন্নী– ইতি আর স্যার! ভাবা যায় স্বপ্ন দেখছি না তো.
আব্রু– অনেক লেইট হইছে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, চল ওদের কাছে বাড়ি ফিরতে হবে তো নাকি।
আব্রু– ইতি. (পেছন থেকে ডাক দিলো)
ইতি আর স্যার কারো ডাক শুনে পেছনে তাকালো!
ওদের দেখে ইতির তো বেশ মেজাজ খারাপ হলো উঠে দাঁড়িয়ে ওদের সামনে গিয়ে পাঁচ ও টারে দিলো ইচ্ছা মতোন বচ্চন।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি কি হল সব বললো সবগুলা হাসতে হাসতে মাটিতে গোড়াগুড়ি খাওয়া অবস্থা!
তারপর সবাই আবার হাঁটা শুরু করলো!
হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির কাছে এসে পরলো যে যার মতো ড্রাইব করছে ইতি স্যারকে যেখান থেকে পিক করেছিলো সেখানে আবার ড্রপ করে দিলো। সবাই চলে গেলো সবার গন্তব্যে আজকের দিনটা সবার কাছে শরণীয় হয়ে থাকবে! বেশি তো ইতির কাছে স্যারের সাথে এতটা সময় পার করতে পেরেছে! তা-ও আবার একেলা।
ইতি রাতে বেলকনিতে গিয়ে ওর লাভ বার্ড পাখি গুলোর খাঁচার সামনে দাঁড়ালো পাখির খাবার শেষ সাথে পানি ও ইতি খাবার দিয়ে পানি আনতে গেলো!
ইতি আজকে সারাদিন কি কি হলো সব পাখিগুলোকে বললো!
তার পর রুমে গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পরলো!
সকালে মেড সার্ভেন্টের দরজা নক করাতে ইতির ঘুম ভাঙে উঠে দরজা খুলে দিতেই সার্ভেন্ট কফি দিয়ে চলে যায়!
ইতি কফির মগ হাতে নিয়ে বেলকনিতে চলে আসে!
কিছুক্ষণ বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিল পরে পাশে পাখিগুলোর কাছে গিয়ে দেখলো কোনো কিছু লাগবে না!
ইতি– না সব আছে! (মানে খাবার আর পানি)
ইতি চলে এলো রুমে আবার চলে গেলো ওয়াশরুম একদম কলেজেট জন্য রেডি হয়ে বের হবে!
প্রতিদিনের মতো ব্রেকফাস্ট করে ইতি বেরিয়ে পরে কলেজের উদ্দেশ্য।
কলেজে সবগুলা এখনো আসে নাই!
সারারাত প্রেম আলাপ পারছে ফোনে যার যারডার লগে।
ইতি কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছে একা ওদের তো আসার খবরই নাই! (বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে)
ওইদিকে আর মাত্র ৩০মিনিট পর ক্লাস শুরু হবে!
এতসকাল হয়েগেছে দেখে নাঈম, রুবেল, মিম,মুন্নী,আব্রুর আম্মুরা অনেকবার রুমে এসে ডেকেগেছে, আবার এসে দেখে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বংশধররা এখনো ঘুম থেকে উঠছে না!
সব মায়েরা চলে গেলো বাথরুমে। সাথে আসার সময় নিয়ে আসলেন এক মগ ঠান্ডা পানি।
ঠুস করে ঠেলে দিলেন শয়তান গুলার উপর!
ঠান্ডা পানির স্পর্শে সব গুলা লাফ দিয়ে উঠে বসলো সাথে কাঁপছে।
নাঈম, রুবেল, মিম, মুন্নী, আব্রু- উফফ আম্মু কি করলা?
আম্মুরা– কয়টা বাজে দেখছিস কলেজ যাবি না নাকি?
‘ ওরে বাবা রে’ বলে সব গুলা লাফ দিয়া উইঠা দৌঁড় দিলো ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে কলেজের উদ্দেশ্য বের হলো না খেয়েই, খেতে গেলেই দেরি হবে আর স্যার বলে দিয়েছিল।
আজকে সবাইকে থাকতে হবে দেরি হলে পানিশমেন্ট দেওয়া হবে৷ তাই।
ওরাও কলেজে ক্লাস স্টার্ট হওয়ার ২মিনিট আগেই এসে পরে! সবাই অলরেডি ক্লাসে বসে আছে। ৫জন এক প্রকার দৌঁড়ে ক্লাসে ডুকলো এক সাথে।
কয়েকটা ঘন্টা পর কলেজের ক্লাস শেষ হলো আর ছুটি হলো!
সবাই এক সাথে!
আব্রু– কাল না তোকে আর তোর স্যারকে অনেক কিউট লাগতেছিল এক সাথে।
মিম– পুরাই ফিদা!
মুন্নী–তোরা মেড ফর ইচ আদার!
রুবেল– আমি তো চোখই সরাতে পারছিলাম না!
নাঈম– ঠিক বলছিস! কাল তো ইতির খুশির শেষ ছিল না!
ইতি– ও হো হো হো, (মুখ সাত রকমের ভেংচি দিয়ে)
শুধু কি আমার নাকি তোদের ও তোরা মনে হয় ওখানে ছিলিই না শুধু আমাকে বলছিস!
সবগুলা হাসতাছে
আব্রু– আচ্ছা বাদ দে! এটা বল তুই স্যার কে I love you কবে বলবি?
সবাই ইচ্ছুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইতির দিকে।
মুন্নী– এক তরফা ভালোবাসতে তো ১মাস পার করলি এবার বলেই দে!
মিম,নাঈম,রুবেল– হুম হুম বলা উচিত!
ইতি কিছু একটা ভেবে বলল, ‘দেখ আর কিছুদিন পর আমার বার্থডে সেদিন এনাউন্সমেন্ট করবো। ’
রুবেল, মিম, মুন্নী, আব্রু, নাঈম– কিহহহহহহহ?
(সবগুলা আকাশ থেকা পরলো এই মাইয়া বলে কি)
ভালোবাসি বলতে পারলো না এখনো আর বিয়ের এনাউন্সমেন্ট করবে!
আব্রু– তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?
মুন্নী– তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?
মিম– তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?
নাঈম– তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?
রুবেল– তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?
ইতি– আরে আজব পাগল হবো কেনো? আমার বার্থডে তে আমি স্যারকে প্রপোজ করবো!
আকাশ, নাঈম– ও তাই বল!
মিম, আব্রু, মুন্নী- আমরা তো ভাবছিলাম বিয়ের জন্য প্রপোজ করবি!
ইতি– এত বেশি ভাবিস কেন!?
মুন্নী, আব্রু, মিম– কারণ আমরা এমনই।
আচ্ছা এখন চল বাড়ি ফিরতে হবে তো নাকি!?
ওকে আল্লাহ হাফেজ!
আল্লাহ হাফেজ!
আল্লাহ হাফেজ!
সবাই চলে গেলো যার যার গাড়ি করে!
চলবে?

--------------
স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_১৩
________________
বিকেলে ইতি পড়ার টেবিলে বসে আছে স্যার আসার নামে খবর নাই!
৩০ মিনিট পর~
স্যার আসলেন ইতি স্যারের দিকে একবার তাকালো আর চোখ সরিয়ে নিলো ভদ্র ও লক্ষী মেয়ের মতো পড়তে শুরু করে।
স্যার- আজকে একটু অবাক হয় কারণ ইতি রোজ অনেক ভাবে স্যারকে জ্বালায় কখনো হাত থেকে বই কেড়ে নেয় কখনো কলম নিয়ে নেয় কখনো চুলে হাত দেয় চুল ধরে টানাটানি করে আবার কখনো কফি এক চুমুক খেলে সেটা খাওয়ার জন্য জেদ ধরে।
আর কখনো তো স্টক দেওয়ার জন্য ওইরকম করে ওই যখন আসতে আসতে কাছে আসে তখন ছি ছি ছি কি ভাবতাছি। (মনে মনে) (আপনারা আবার উল্টা পাল্টা কিছু ভাইবেন না। বি পজিটিভ)
পড়ানো শেষ হলে স্যার উঠে চলে যেতে নেয়।
ইতিঃ স্যার। (পেছন থেকে ডাক দেয় স্যার পেছনে ঘুরে তাকায়)
স্যার- কিছু বলবে ইতি।
ইতিঃ স্যার । স্যারের সামনে দাড়িয়ে।
স্যারঃ বলো।
ইতিঃ স্যার আগামী শনিবার আমার জন্মদিন আপনি প্লিজ আসবেন। আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো। কাল তো শুক্রবার আসবেন না তাই আমি আজকেই বললাম।
স্যারঃ ওকে চেষ্টা করবো।
বলেই স্যার চলে যায়।
হল রুমে বসে গল্প করছে ইতির বাবা মা।
স্যারকে যেতে দেখে ইতির মা তাকে ডাক দিয়ে তাদের কাছে আসতে বলেন।
স্যার তাদের কাছে এসে বসলে। তারাও স্যার ও স্যারের আম্মুকে সহ ইনভাইট করেন।
স্যারও আসবো বলে চলে যায়।
পরেরদিন জুম্মার নামাজ পরে বাড়ি ফিরে স্যার।
রুমে বসে কাগজপত্র ঠিক করছিলেন নতুন কক্সবাজারে একটা প্রাইভেট কোম্পানি থেকে জবের অফার আসছে। চাকরি টা এখনও কনফার্ম করেনি। কেনো জানি স্যার এর চাকরির অফারটা ক্যানসেল করে দিতে ইচ্ছে করছে কারণ সে নিজেও জানে না।
সন্ধ্যা ৬টা বাজে।
হঠাৎ ফোন বেজে উঠে স্যার কল রিসিভ করেন।
অপর পাশ থেকে ইতি।
ইতি- স্যার কাল তো আমার জন্মদিন তো আপনার কাছে আমি কিছু চাইবো দিবেন?
স্যারঃ কি?
ইতিঃ আগে বলেন দিবেন!
স্যারঃ আমার সামর্থের মধ্যে হলে দেবো।
ইতিঃ ইশশশ তেমন কিছু না। আমি বাহিরে ঘুরতে যেতে চাই আপনার সাথে আপনি কিন্তু না করবেন না প্লিজ।
স্যারঃ বাহিরে?
ইতিঃ স্যার প্লিজ চলুন না। প্লিজ না করবেন না।
স্যার- আচ্ছা ঠিক আছে তুমি রেডি হয়ে থাকো আমি তোমার বাড়ির সামনে আসছি।
ইতিঃ আপনাকে যেতে হবে না আমিই চলে আসছি আপনি রেডি হয়ে আপনাদের রাস্তার মোড়ে চলে আসুন।
স্যারঃ কি তুমি এই সন্ধ্যে বেলায় রাস্তার মোড়ে একা একা দাঁড়িয়ে আছো।
ইতিঃ আমার সাথে গাড়ি আছে আপনি তারাতাড়ি আসুন। বলেই ঠুসস করে ইতি কল কেটে দেয়।
স্যার চটজলদি করে নেবি ব্লু কালারের একটা শার্ট পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।
হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার মোড়ে এসে দূর থেকে দেখে ইতি দাড়িয়ে আছে।
ইতির পরনে হোয়াইট কালারের থ্রি পিছ!
কাছে এসে দেখে শুধু দুইচোখে গাড় করে কাজল দিয়েছে। ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়ার প্রয়োজন পরে না কারণ ইতির ঠোঁট অলরেডি গোলাপী।
স্যার কতক্ষণ ইতির দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইতিঃ দেখা শেষ হলে চলুন যাওয়া যাক। ইতির কথায় স্যারের ধ্যান ভাঙে।
স্যারঃ হুম হুম চলো।
ইতি আর স্যার পাশাপাশি হাঁটছে আর হাঁটতে হাঁটতে দু’জনেই একটা ঝিলের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। পাশেই হাইওয়ে রোড সাথে ঝিল ঝিলের সামনে হচ্ছে নানান জিনিসের ছোটো খাটো স্টল যেমন- খাবার দাবার, ফল-মূল, মেয়েদের মেক-আপ এর সব ধরনের জিনিসপত্র চুড়ি কানের দুল ঝুমকো, জামা কাপড়, ফুচকা ইত্যাদি ইত্যাদি সিরিয়ালে সব কিছু আছে।
এখানে সন্ধ্যের পর সব কিছু পাওয়া যায়।
আর সন্ধ্যের পর এখানে হাঁটতে বেশ লাগে। এতদিন ইতি বন্ধুদের সাথে আসতো ওর অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো একদিন স্যারকে নিয়ে আসবে আর আজ ওর ইচ্ছা পূরন হয়ে গেলো।
স্যারের সব থেকে বেশি ভালো লাগে ইতির চঞ্চলতা ফটফট কথা বলা আর কথার মধ্যে হাত এদিক সেদিক করে নাড়াচাড়া করা আর সব চাইতে বেশি কথা শেষ হতেই এক গাল হাসি দেওয়া। এই হাসির দিকে তাকিয়ে জেনো সারাজীবন পার করে দেওয়া যাবে।
অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর স্যারঃ- কিছু খাবে ইতি?
ইতিঃ না।
স্যারঃ ফুচকা?
ইতিঃ আপনি খাওয়ালে খেতে পারি।
স্যারঃ আমিই খাওয়াবো তাছাড়া ছেলেরা সাথে থাকলে কোনো মেয়েই বিল দেয় না এটা আমি জানি।
ইতিঃ ঠিক তো মেয়েরা কেন দিবে?
স্যারঃ হইছে এখন চলো আর ভাবতে হবে না।
দু’জনেই হেঁটে একটা ফুচকার দোকানে এসে বসলাম।
আমি- মামা দুই প্লেট ফুচকা দিয়েন তো ঝাল বেশি করে দিবেন।
স্যার- আমার টাতে ঝাল দিবেন না।
আমি- কেন স্যার আপনি ঝাল খান না?
স্যার- না।
১০ মিনিট পর দুই প্লেট ফুচকা দিয়ে গেলো।
ফুচকাওয়ালা একটা ভুল করে ফেলছে আমার ঝাল দেওয়া ফুচকা সে স্যারকে দিয়ে দিছে আর স্যারের টা আমাকে দিয়ে দিছে।
স্যারের তো ফুচকা খেয়ে নাক মুখ লাল হয়ে গেছে।
আমি খাওয়া বন্ধ করে স্যারের কাছে গেলাম।
আমি- স্যার আপনি ঠিক আছেন তো কি হয়েছে?
স্যার- ইতি ঝাল!
স্যার দুইহাত মুখের সামনে এনে বাতাস করছে আর ঝাল ঝাল বলে চেচাচ্ছে আমার দেখে প্রচুর হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসলে চলবে না। বলেই ফুচকাওয়ালার কাছে পানি চাইলাম তার কাছে পানি নাই শেষ হয়ে গেছে দিলাম ইচ্ছা মতো ধমক ফুচকা বিক্রি করে আর পানি নাই। এদিক সেদিক দৌড়াতে লাগলাম আর দেখলাম একটা জিলাপির দোকান বানিয়ে বিক্রি করছে দিলাম দৌঁড় এসে কয়েকটা জিলাপি কিনে আবারও দিলাম দৌঁড়, দৌঁড়ে স্যারের সামনে আসলাম আর উনাকে জিলাপি দিতেই সে গপ-গপ করে খেয়ে নেয় এখন একটু সস্থির নিশ্বাস নিচ্ছে আর আমার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে আছে।
স্যার- ইতি পাগল তুমি এত ঝাল দিয়ে কেউ ফুচকা খেতে চায় আজ আমার জায়গায় তুমি খেলে কি হতো বুঝতে পারছো।
আমি- আমি আমি আমি তো এই এই এইটুকু ঝাল দিতে বলছিলাম আর ফুচকাওয়ালা যদি ঝাল বেশি দেয় তাইলে আমার কি দোষ। সরি স্যার!
স্যার- এইরকম আর কখনো করো না বেশি ঝাল খাওয়া উচিত না।
আমি- আপনার তো শরীর খারাপ হচ্ছে চলুন বাড়ি চলুন।
স্যার- হুম চলো।
দু’জনেই হাঁটতে শুরু করি কিছুদূর যেতেই আমার পা থেমে যায়। আমাকে থেমে যেতে দেখে স্যারও পেছনে তাকায় আর আমি কোনদিকে তাকিয়ে আছি সেদিকেও খেয়াল করে। আর একটু সামনে আসতেই স্যার বাহানা দিয়ে কোথায় জেনো চলে গেলো আর কিছুক্ষণ চলেও এলো হেহেহেহে।
তারপর আবারও হাঁটতে শুরু করি। কিছুদূর আসতেই গাড়িতে উঠে পরলাম।
স্যার- আগে আমি তোমাকে তোমার বাড়ি ছাড়বো আর সেখান থেকেই আমি চলে আসবো।
আমি- কিন্তু স্যার আপনি একা একা.?
স্যার- পারবো চিন্তা করো না।
আমি- আচ্ছা।
মনের মধ্যে একটা আফসোস রয়েই গেলো।
গাড়ি এসে আমাদের গেইটের সামনে ব্রেক করলো।
গাড়ি থেকে নেমে স্যারকে বিদায় দিয়ে বাড়িতে ঢুকতে যাবো স্যার পিছন থেকে আমাকে ইতি বলে ডাক দিলেন আর আমিও উনার ডাক শুনে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াই।
আমি- জি স্যার কিছু বলবেন?
স্যার- তোমার হাতটা দাও তো!
আমি- কিন্তু কেনো?
স্যার- দাও বলছি.
আমি- হুম দিলাম। (স্যারের দিকে এক হাত বাড়িয়ে)
স্যার উনার প্যান্টের পকেট থেকে হাত বের করে উনার হাত আমার হাতের উপর রেখে বললেন!
এটা তোমার জন্য, ভাবতে পারো ছোটো একটা গিফট!
কিন্তু এখন খুলবে না, সোজা রুমে গিয়ে দেখবে!
ওকে এখন আমি যাই!
-যা চলে গেলো।
যাই রুমে গিয়ে দেখি এই প্যাকেট এর মধ্যে কি আছে? কলিংবেল বাজাতেই একজন স্টাফ এসে দরজা খুলে দেয়। আর আমি দৌঁড়ে রুমে চলে আসলাম আর প্যাকেট টা খুলতেই আমি অবাক!
এটা তো ওই ঝুমকো দুই জোড়া যেটা আমি পছন্দ করে ছিলাম। শুধু স্যার সাথে ছিলো বলে লজ্জায় নিতে পারিনি। তার মানে স্যার লক্ষ্য করেছিলো আমার যে ঝুমকো জুড়ো পছন্দ হয়েছিল ভাবতে ভাবতে অনেক খুশি হয়ে গেলাম।
একদিন স্যারকে পরে দেখাবো হিহিহি স্যারকে যেদিন প্রপোজ করবো সেদিনই পরবো।
পুরো ১০মিনিট ঝুমকো জোড়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর আম্মু আসলো আর ডিনার করার জন্য ডেকে গেলো। রাতে খেয়ে শুয়ে পরি।
পরেরদিন সকালে আজ আর কলেজে যাইনি।
কারণ আজ আমার জন্মদিন আর বাড়ি ডেকোরেশন করার জন্য ডেকোরেশনের লোক চলে আসে আর তারা তাদের কাজ শুরু করে দেয়।
চলবে,,



------------------------------------
স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_১৪
___________
আব্বু ঘুম থেকে মাত্র উঠলাম এখনো বেডেই বসে আছি। এদিকে সকাল ১১ টা বাজে!
বেড থেকে নামতে যাবো আর দেখলাম ফ্লোর ভর্তি হার্ট বেলুন রেড কালারের!
এখন চোখ গেলো সোফার সামনে টি টেবিলের উপর একটা বক্স বেশ বড়ই মনে তো হচ্ছে গিফট বক্স,, বক্স যখন গিফটের বক্সই হবে আমিও কেমন জানি উল্টা পাল্টা কথা ভাবতাছি।!
তো পা দিয়ে বেলুন গুলো ঠেলে ঠেলে গেলাম বক্সটার কাছে আর বক্সটা হাতে নিলাম।
বক্সটার উপরে কার্ডে লেখা আছে- আমার মামনির জন্য ছোট্ট গিফট আজকের পার্টিতে তুমি এটাই পরবে। ইতি তোমার আব্বু।
আমি- উফফ আব্বু!
বলেই বক্সটা খুলতে যাবো ওমনি পেছন থেকে কারা জেনো হ্যাপি বার্থডে বলে চেচিয়ে উঠলো।
হঠাৎ করে চেনানোর জন্য ভয় পেয়ে যাই আর পেছন ঘুরে দেখি আমার আব্বু আম্মু আমার ১৪ গুষ্টি + আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মুন্নী মিম আব্রু রুবেল আর নাঈম!
আমি- এভাবে কেউ চেঁচায় ভয় পেয়ে গেছিলাম তো.!
বিরক্তি নিয়ে বললাম।
সবগুলা আর কিছুই না বলে আমাকে এসে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।
আমি- আল্লাহ গো মইরা গেলাম ছাড় ছাড়।
সবগুলা ছাইড়া দূরে দাঁড়াইয়া পরলো।
আমি- এভাবে কেউ শক্ত করে ধরে নাকি? বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছি।
— সরি!
তারপর আর কি সবাই এক এক করে জরিয়ে ধরলো আর বার্থডে উইশ করলো।
সন্ধ্যায়~
সব গেস্ট চলে আসলে আর পুরো বাড়ি হইচই এ ভড়ে গেছে।
আর এদিকে আমি এখনও রেডিই হই নাই।
আম্মু এসে তারা দিয়ে গেলো।
মনের মধ্যে ভয় হচ্ছে কেনো জানি মনে হচ্ছে স্যার আসবে কি আসবে না যদি না আসে।
ভাবতে ভাবতে আব্বুর দেওয়া বক্সটা খুললাম।
ওমা এটা তো প্রিন্সেস ড্রেস হিহিহি তারাতাড়ি করে পরপ রেডি হয়ে নিলাম।
প্রিন্সেস ড্রেস পরে নিজেকে এখন প্রিন্সেস প্রিন্সেস লাগছে এখন শুধু আমার প্রিন্স আসার অপেক্ষা হিহিহি।
বলেই রুমের বড় আয়নার সামনে দাড়িয়ে সাজতাছি মেক-আপ করতাছি আর কি।
রেডি হতে প্লাস মেক-আপ করতে ১ঘন্টা সময় লাগছে।
রেডি হয়ে হল রুমে চলে আসলাম। সবাই আবারও উইশ করলো।
এদিকে রাত ঘনিয়ে যাচ্ছে সবাই বলছে কেক কাটতে কিন্তু কিভাবে কাটবো স্যার তো এখনো আসেনি।
আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি।
এদিকে আব্বু আম্মু বারবার বলছে আমি দাঁড়িয়ে আছি কেনো কেক কেনো কাটছি না গেস্ট রা আর কত অপেক্ষা।
আম্মুর কথা শুনতে শুনতে আমার চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে।
এক ঘন্টা অপেক্ষা করেছি রাত নয়টা বেজেগেছে। স্যার কেনো আসলো না এখানে এত মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছি না।
মুন্নী মিম আব্রু রুবেল নাঈম হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার অবস্থা পাঁচ জনেই চোখ দিয়ে ইশারা করলো কেক কাটতে আমিও কেক কাটলাম সবাই হাত তালি দিচ্ছে কিন্তু আমার মনে তো শান্তি নেই খুব কান্না পাচ্ছে এত করে বললাম তবুও আসলো না।
আব্বু কেকের এক পিছ নিয়ে আমাকে খাওয়া নিলে আমি আব্বুর দিকে তাকালাম।
আব্বু আমার দিকে তাকাতেই আব্বুর মুখের হাসি মলিন হয়ে গেলো। কারণ আমার চোখে পানি।
আব্বু- ইতি মামনি কি হয়েছে?
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দৌঁড়ে চলে আসলাম রুমে আর দরজা ভেতর থেকে আটকে দিলাম। স্যার কেনো এলো না কাঁদতে কাঁদতে রুমের সব কিছু এদিক সেদিক ছুঁড়ে মারলাম বেডের পাশে বসে বেডের উপর মাথা রেখে কাঁদতে থাকলাম কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম নিজেও জানি না।
পরেরদিন ব্রেকফাস্ট না করেি রেডি হয়ে কলেজ যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরি আব্বু হল রুমেই ছিলো। আমাকে যেতে দেখে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো আগামীকাল এমন কেনো করেছি কি বলবো কোনো উত্তর নেই তাই কিছু না বলে মাথা নিচু করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলাম।
আজ কলেজ যেতে ইচ্ছে করছে না তবুও আসলাম।
ক্লাস শেষ হতেই ওরা পাঁচজন চেপে ধরলো কাল স্যার কেনো আসেনি এইটা সেইটা আরও অনেক কিছু।
আমি ওদের ধমক দিলাম আমি জানি না কেনো আসেনি কিচ্ছু জানি না। বলেই কলেজের মাঠে সবুজ সবুজ ঘাসের উপর বসে পরলাম। (ওপসস ঘাস গুলো চেপ্টা হয়ে গেলো।)
ওরা পাঁচজনেই সাজেস্ট করলো আমি জেনো স্যারের বাড়িতে যাই আর জেনো গিয়ে খোঁজ!
আমিও রাগ দেখিয়ে বলে দেই আমি কেনো যাবো? যাবো না আমি। বলেই ওদের সামনে থেকে উঠে আসলাম।
বিকেলে পড়ার টেবিলে বসে অপেক্ষা করছি সময়ের পর সময় ঘনিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আজও স্যারের আসার নামে খবর নেই।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো ইচ্ছা করছে টেবিলের উপর রাখা সব বই গুলো ছুঁড়ে ফেলি দেই।
সন্ধ্যা ৬টা রুম টু বারান্দা, বারান্দা টু রুম পায়চারি করছি হাজারবার স্যারকে কল দিয়েছি কিন্তু সেই এক কথা বন্ধ সংযোগ দেওয়া সম্ভব না। উফফ টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে। আর কিছুই ভাবতে পারছি না ওরা যা বলছে আমাকে তাই করতে হবে।
পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে আম্মু বাহির যাচ্ছি বলে বেরিয়ে পরলাম।
স্যারের বাড়ির ওই রোডে এসে আশেপাশের কিছু লোকদের স্যারের বাসা জিজ্ঞেস করলাম অনেকেই বলতে পারে না তারপর আবারও হাঁটতে লাগলাম স্যারের নাম ছাড়া কিচ্ছু জানি না কিছু দূর আসতেই দেখলাম সন্ধ্যে বেলায় সবাই চায়ের দোকানে বসে অনেপ মানুষই আড্ডা দিচ্ছে মনে হলো তারা হয়তো কিছু বলতে পারবে গেলাম তাদের কাছে আর স্যারের বাসা চিনে কি না জিজ্ঞেস করলাম তাদের মধ্যে একজন বললো চিনে এবং ওই চায়ের দোকানে একটা বাচ্চা কাজ করে তাকে আমার সাথে পাঠিয়ে দিলো।
কিছুদূর আসতেই বাচ্চাটা একটা দুইতলা বিল্ডিং দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
আমিও এসে কলিংবেল বাজাতে লাগলাম কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ নেই।
পাঁচ মিনিট পর উপর তলা থেকে একজন মহিলা নেমে আসলেন আমি তাকে সালাম দেই সে সালামের উত্তর নিয়ে জিজ্ঞেস করে আমি কে?
আমিও উত্তর দেই স্যারের স্টুডেন্ট দুইদিন ধরে পড়াতে যাচ্ছে না আর ফোন ও বন্ধ তাই খোঁজ নিতে আসলাম।আন্টিটা বললো ও বাড়িতে নেই। আমিও জানতে চাই নেই মানে কোথায় গেছে?
আন্টি বললো- শনিবার দিন সকালে হঠাৎ করে ওর মার শরীর বেশি খারাপ হয়ে যায় আর তখনই তাকে নিয়ে শাওন তোমার স্যার হসপিটাল চলে যায় দুইদিন হয়ে গেছে হসপিটাল ভর্তি এই দুইটা আগেও শাওন আসছিলো আর কি জানি নিয়ে আবারও চলে যায়।
আমি- স্যারের মা অসুস্থ?
আন্টি- হ্যাঁ।
আমি- কোন হসপিটালে উনারা আছে আপনি কি জানেন আন্টি বলতে পারবেন প্লিজ?
আন্টি- তা তো জানি না।
আমি- আচ্ছা আন্টি ধন্যবাদ এখন আমি আসি।
আন্টি- আচ্ছা।
সেও উপরে চলে গেলো আর আমিও হাঁটা শুরু করলাম। এদিকে স্যারের মা অসুস্থ আর আমি স্যারকে কত ভুল বুঝেছি। কিন্তু স্যার কোন হসপিটালে আছে সেটা তো আমি জানি না।
হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম গাড়ির কাছে।
ড্রাইবার আঙ্কেল- ইতি মামনি গাড়িতে উঠে বসো আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে তো আবার।
আমি- হুম চলো।
ডাইনিং টেবিলে আব্বু আম্মু জিজ্ঞেস করেছিলো স্যার কেনে আমাকে পড়াতে আসছে না আমিও বলি যে স্যারের আম্মু অসুস্থ ও হসপিটালে এডমিট আছে। এর চাইতে বেশি কিছু জানি না আর যেনো জিজ্ঞেস ও না করে। রাতে খেয়ে সোজা রুমে চলে আসলাম।
দুইদিন ঠিক মতো পড়তে পারিনি তাই আজ অনেক রাত পর্যন্ত পড়ি রাত ১টা ঘুম পাচ্ছে।
বই বন্ধ করে টেবিলের উপর সুন্দর করে গুছিয়ে রেখে বেডে এসে শুয়ে পরি। তার আগে ফোনটা বের করে ফোনের গ্যালারীতে ঢুকি সেদিন চুরি করে স্যারের একটা ছবি তুলেছিলাম সেটাই দেখছি দুইদিন ধরে দেখি না তাই ছবি দেখেই মন ভড়াতে হচ্ছে।
কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে মোবাইলটা আমার মুখের কাছে নিয়ে আসি আরও একটু ঠোঁটের কাছে নিয়ে আসি ছবিটাতে একটা কিস করে ফোন পাশে রেখেই ঘুমিয়ে পরি।
সকালে হঠাৎ ফোনের রিংটোন শুনে ঘুম ভেঙে যায় ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি স্যার কল দিয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে কল রিসিভ করলাম।
আমি- স্যার আপনি কেমন আছেন কোথায় আছেন ঠিক আছেন তো আপনার আম্মু কেমন আছে কেন হসপিটালে আছেন আপনারা আমি আপনাকে কতগুলো কল দিয়েছি তাী ঠিক নেই আমার অনেক টেনশন হচ্ছিল আপনাদেরকে নিয়ে। (এক নিশ্বাসে বলতেই থাকলাম)
স্যার- থামো থামো ইতি এতগুলো প্রশ্ন এক সাথে করলপ উত্তর কিভাবে দিবো একটা একটা করো আর হ্যাঁ সব কিছুর জন্য সরি আমি খেয়াল করিনি যে আমার ফোন বন্ধ আর এখন ফোন অন করতেই দেখলাম তোমার এতগুলো কল তাই কল বেক করলাম।
আমি- আমি আপনাকে কতদিন ধরে দেখিনা। আমও আপনার সাথে দেখা করবো আর আজকেই আর সেটাও ১ ঘন্টা পর এড্রেস মেসেজ করে পাঠিয়ে দিচ্ছি চলে আসবেন।
স্যার- কিন্তু আমি তো?
আমি- আমি কোনো কিছু শুনতে চাই না আমি আপনার সাথে দেখা করবো তো করবোই আর আমার আপনাকে অনেক অনেক ইমপোর্টেন্ট কথা বলার আছে আর সেটা আজকেই বলতে হবে সো আপনাকে আসতেই হবে আমি অপেক্ষা করবো।
স্যার- অনেক ইমপোর্টেন্ট কথা?
আমি- হ্যাঁ অনেক অনেক।
স্যার- তাহলে এখনই বলো।
আমি- ফোনে বলা যাবে না সামনা সামনি বলতে হবে আপনি বাস চলে আসবেন।
বলেই ফোন কেটে দিলাম আর এড্রেস মেসেজ করে পাঠিয়ে দেই বেড থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যাই তারাহুড়া করে ব্রেকফাস্ট করি।
আম্মু- এভাবে খাচ্ছিস কেন? আসতে খা.. দেখে তো মনে হচ্ছে তোর ট্রেন মিস হয়ে যাবে।
আমি- আম্মু টাইম নেই ট্রেনই মিস হয়ে যাবে। ওও আম্মু তোমার ওই নতুন সিল্ক শাড়িটা দাও না পরবো।
আম্মু- শাড়ি কেন কোথায় যাবি? কার সাথে দেখা করতে যাবি?
আমি- ও-ই ও-ই।
আম্মু- ওই ওই না করে সত্যি সত্যি বল।
আমি- আম্মু আমি ওই স্যারের সাথে দেখা করতে যাবো।
আম্মু- আচ্ছা যা আলমারি থেকে যেটা পছন্দ হয় বের করে পরে রেডি হো গিয়ে।
আমি আম্মুকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলাম আর দুইটা পাপ্পি দিলাম।
আম্মু- হইছে হইছে এখন যা পাগলী মেয়ে।
আমিও আম্মুর রুমে এসে আলমারি থেকে সন থেকে গরজিয়াস শাড়ি টা নিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম।
লাল শাড়ি সাদা পাইড়ের শাড়িটা খুব সুন্দর করে আঁচল ছেড়ে দিয়ে পরে নিলাম।
সঙ্গে হালকা সাজ চোখে গাড় করে কাজল ঠোঁটে লাল লিপস্টিক কপালে লাল টিপ কানে স্যারের দেওয়া ইয়ারিং দুই হাত মুঠি ভরে কাঁচের চুড়ি পায়ে নুপুর চুলের খোঁপায় বেলীফুল সাথে একটা গোলাপ ফুল!
রেডি হয়ে নিচে আসতেই আম্মু চোখের আর্নিশ থেকে এক আঙুল দিয়ে কাজল নিয়ে আমার কানের পেছনে লাগিয়ে দেয় আর বলে।
আম্মু- কারো নজর জেনো না লাগে।
আমি- আম্মু এইসব কুসংস্কার।
আম্মু- কোই না যাইতেছিলি যা বেশি কথা কইস না।
আমি আর কথা বাড়ালাম না বাহিরে এসে গাড়িতে উঠে বসলাম।
গাড়ি চলছে আমার বলা ঠিকানায় এসে গাড়ি থেমে যায়।
আমি গাড়ি থেকে নেমে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে পায়চারি করছি এটা একটা পার্কের মতো।
আমি- আমিই কি তারাতাড়ি চলে আসছি নাকি স্যারই আসতে লেইট করছে কোনটা।
বলতে বলতেই সাথেই একটা কাঁঠাল গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম।
দুই মিনিট পর আমার পিঠে ব্লাউজের মধ্যে কি জেনো ঢুকে পরছে পিঠে ব্লাউজের ভেতর হাটাহাটি করছে।
আমিও গাছ থেকে একটু সে গেলাম। ভয়ে আনি শেষ ছেংগা না তো আল্লাহ এই একটা জিনিস আমি জন্মের ভয় পাই।
হাত দিয়ে বাহির করার চেষ্টা করছি পেছনে কিছু তো দেখছিও না।
আমি- আহহহহহহহহহহহহ। (দিলাম এক চিৎকার)
পিঁপড়া কামড় দিছে রে।
চিৎকার থামিয়ে ওহহ আহহ করতে করতে ব্লাউজের উপর দিয়েই পিঁপড়া টাকে পিষে মেরে ফেললাম।
বর্তমানে পিঠে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর সব হয়েছে স্যারের জন্য স্যার যদি একটু তারাতাড়ি আসতো তাহলে আর পিঁপড়ার কামড় খেতে হতো না পিঠে জ্বলছে আর ফুলেও গেছে উফফ!
দীর্ঘ ২০ মিনিট পর ওই তো স্যারের মতো কাউকে এদিকে আসতে দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে সুন্দর করে দাঁড়িয়ে পরি।
চলবে,


-----------------------------
স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব ১৫
____________
একটু ভালো করে দেখতে লাগলাম। হ্যা এতো স্যারই বাহ বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে তো। আমি স্যারের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। স্যার হেঁটে আমার সামনে এসে দাঁড়ায় কিছু বলতে এমন সময় স্যার আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত লক্ষ্য করে। এখন দুই জনেই দুই জনেরই দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি!
কিছুক্ষণ পর আশেপাশের মানুষের কথায় আমাদের দু’জনেরই ধ্যান ভাঙ্গে!
স্যার- আজ হঠাৎ শাড়ি?
আমি- ইচ্ছে হলো তাই পরেছি।
স্যার- ওও তাহলে এটা বলো কেনো আসতে বলেছো।
আমি এদিকে সেদিক ভালোভাবে তাকালাম কেউ দেখছে না তো। না কেউ দেখছে না।
বলেই স্যারের পায়ের সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে পরলাম।
স্যার- কি করছো ইতি মানুষ কি ভাববে উঠো বলছি।
আমি- স্যার ওয়েট।
এক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিলাম। জানি না এখন কি ঘোড়ার ডিম উগান্ডা বলবো।
“ স্যার আপনি আমার লাইফে আসার পর থেকে আমার লাইফের সব কিছু পাল্টে গেছে। আজ থেকে ৩ মাস আগে আমি যেমন ছিলাম এখন আর তেমন নেই। আর সবটা হয়েছে আপনার জন্য আপনার জন্য আমি পাল্টে গেছি। প্রথম দিন যেদিন জানতে পারি আপনি আমার স্যার সেদিন খুব করে চেয়েছিলাম আপনাকে কিভাবে তাড়াবো? তারপরেই আপনার কিছু কথা শুনে আমার মন পাল্টে যায়। নিজের ভুল বুঝতে পারি। আর তারপর থেকেই আমার আপনার প্রতি কিছুটা ভালোলাগা কাজ করে। সে ভালোলাগা ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে। আমি জানি আপনি ও আমাকে ভালোবাসেন আর যদি তাই হয় তাহলে প্লিজ আমার ভালোবাসা কবুল করে নিন। আমার আব্বু আম্মুকে আমি রাজি করাবো। স্যার আপনি যদি আমাকে ভালোবাসেন তাহলে আমার প্রপোজ করার সাথে সাথেই এক্সেপ্ট করবেন। ”
বলেই চুলের খোঁপা থেকে গোলাপ ফুলটা খুলে নিলাম আর দুইহাত দিয়ে গোলাপ ফুলটাকে ধরলাম আর বললাম।
আমি- স্যার I Love You ~
স্যার আমার হাত থেকে ফুলটা নিয়ে বললো।
স্যার- ইতি I love you too ~
স্যারের মুখে ভালোবাসি শুনে উঠে দাঁড়িয়ে সোজা ঝাপিয়ে পরলাম স্যারের বুকে মানে জরিয়ে ধরলাম।
স্যারও আমাকে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো আর বললো।
স্যার- আমিও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি ইতি। সারাজীবন আমার বুকের মধ্যে খানে তোমাকে জরিয়ে ধরে রাখবো।
বলেই স্যার আমার দুই গালে হাত দিলেন আর স্যারের মুখ বরাবর ধরলেন স্যার কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন আর বললেন।
তোমার এই চোখ তোমার এই ঠোঁট আমাকে জেনো পাগল করে দেয়। বলেই স্যার স্যারের ঠোঁট জোড়া আমার ঠোঁট জোড়ার সাথে মিশিয়ে ধরলেন।
পাগলের মতো কিস করতে লাগলেন। আমার ঠোঁটের সব লিপস্টিক খাইয়া ফেলতাছে রে। (মনে মনে)
স্যার স্যারের মতো কিস করতে ব্যস্ত। পাঁচ মিনিট পর স্যার আমাকে ছেড়ে দিলো। তারপর স্যার উনার এক হাত দিয়ে আমার কোমড় চেপে ধরলো আর আরেক হাত দিয়ে আমার চুলের খোঁপা ধরলো আমাকে আবারও উনার কাছে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো আবারও আমার ঠোঁটে উনার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
এদিকে আমি সহ্য করতে না পেরে কোলবালিশ কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে পুরো বিছানায় গড়াগড়ি করতে লাগতাম আর কোলবালিশ কেই পাপ্পি দিতে শুরু করলাম। বেচারা কোলবালিশ নিজের ইজ্জত যেতে দেখে সহ্য করতে পারলো না তাই খাট থেকে পরে সুইসাইড করতে চাইলো।
গড়াগড়ি করতে করতে বেডের সাইডে এসে পরি আর কোলবালিশ নিয়ে ঠাসসসস করে ফ্লোরে পরে যাই।
ফ্লোরে পড়ার সাথে সাথেই চিৎকার দিয়ে বসে পরি।
আমি- ওরে আল্লাহ গো মাজা ডা মনে হয় ভাইঙ্গাই গেছে গা রে। এক মিনিট আমি ফ্লোরে কি করছি আর এই কোলবালিশ আমার পায়ের কাছে কি করে আর আমি আমার রুমে কেন আমি না স্যারের রুমে আছিলাম তাইলে কেমনে কি এদিকে ফোনের এলার্ম বেজে উঠে ফোনের এলার্ম বন্ধ করে মানে মাত্র ৬টা বাজে। আর আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখতে ছিলাম।
এত রোমান্টিক এটা স্বপ্ন ছিলো বাস্তব কেনো হলো না। হায় কি কিউট লাগতাছিলো আমারে আর স্যারকে কত হ্যান্ডসাম লাগতাছিলো।
কি রোমান্টিক স্বপ্ন ভাবতে ভাবতে ফ্লোরে বসেই আবার কোলবালিশকে টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে জরিয়ে ধরি।
দুই মিনিট পর চোখ যায় কোলবালিশের উপর।
আমি: ইয়াক থু। আমি আবার কোলবালিশ কে জরাই ধরছি কেউ দেখলে ইজ্জতের ফালুদা হইয়া যাইবো এই কোলবালিশ তোর জন্য যদি আমার মান ইজ্জত নিয়া টানাটানি হয় তোরে দেখিস ফাঁসিতে ঝুলাইয়া দিমু। বলেই দিলাম বিছানার উপর ঢিলা। মানে বেডের উপর ছুরে মারলাম।
আর চলে আসলাম ওয়াশরুমে কি রোমান্টিক স্বপ্ন।
ওইদিকে কোলবালিশ যদি কথা বলতে পারতো তাহলে এটা ঠিকই বলতো, “এতক্ষণ আমার ইজ্জতের ফেলুদা বানাইয়া এখন ঢিলা দিয়া ফালাইয়া দেওয়া। যাকে বলে জুতা মেরে গরু দান। ঘুমের মধ্যে এত আদর সোহাগ করলা আর ঘুম থেকা উঠলেই লাথি মাইরা ছু্ড়ে ফেলে দিলা। ”
আমি ১০০% সিউর বলতো!
ব্রেকফাস্ট করে কলেজ চলে আসলাম।
কলেজ ছুটি হতেই সব গুলা মিললা ক্যাফে তে চলে আসলাম আর ওদেরকে স্বপ্নের কথা বললাম।
আমার পাঠক পাঠিকারা আবার ভাইবো বা কিসমিস করছে ওইগুলাই বইলা দিছে ওইগুলা আবার সাথে বলা যায় না আর তোমরাও বইলো না যত হোক ইতি আর স্যারের মান সম্মানের প্রশ্ন বইলো না কিন্তু।
ওরা সবাই বললো এবার আমাকে স্যারকে সব পরিস্কার করে বলে দেওয়া উচিত! আমিও ঠিক করি আগামী শুক্রবার স্যারকে সব বলে দেবো আনার ফিলিংসের কথা আমি উনার জন্য যা ফিল করি সব বলে দেবো আর স্বপ্নে যেভাবে দেখেছি ঠিক সেভাবেই সেজে যাবো।
আজ থেকে স্যার পড়াতে আসছেন। এভাবেই চলছে দিন আর শুক্রবার ও গনিয়ে আসছে স্যারের। মায়ের অবস্থা তেমন ভালো নয় ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে।
আর গাজীপুরে উনার রোগ কোনো ডাক্তারই দরতে পারছেন না। স্যার মনে মনে প্ল্যান করে শনিবার দিন সকালে উনার মা কে নিয়ে মাদ্রাস চলে যাবেন। আর এই বিষয়ে স্যার ছাড়া কেউ জানে না। স্যার বাড়িওয়ালার কাছেও বলে দিয়েছে উনারা বাড়ি ছেড়ে শুক্রবার দিন সকালে চলে যাবে।
বাড়িওয়ালা ও দ্বিমত করে না কারণ নেই কোনো দ্বিমত করার কারণ উনি তো উনার বাড়ি ভাড়া পেয়েই গেছেন।
কাল বৃহস্পতিবার স্যার ভাবে কালকে ইতির বাবার কাছে জানিয়ে দেবে সে যে আর ইতিকে পড়াতপ পারবে নি কিন্তু স্যার ডিরেক্টর ইতিকে এ কথা বলতে পারবে না কারণ স্যারও যে বুঝে গেছে সে ইতিকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে কিন্তু ইতি আর স্যারের মিল হবে না কারণ ইতি যে বড়লোক বাপের এক মাত্র মেয়ে আর স্যার যে মধ্যবিত্ত।
রাতে খেয়ে শুয়ে পরে ইতি আর এদিকে স্যার সব কিছু প্যাকিং করছে।
চলবে


-------------------------------------------------------------

স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_১৬
______________
আজ বৃহস্পতিবার~
রোজ দিনের মত আজও ব্রেকফাস্ট করে কলেজ চলে আসি। কলেজ শেষ হতেই সবাই বসে গল্প করছি আজ সবাই আমাকে খোঁচাচ্ছে কারণ আমি সব কাজই ওদের কে বলে এবং জানিয়ে করি। কাল যে স্যার কে প্রপোজ করবো সেটা নিয়েই বকবক করছে সব কিছু নিয়ে আমার তো প্রচুর হাসি সাথে একটু একটু রাগ ও হচ্ছে কারণ ওরা এখন একটু বেশিই কথা বলছে।
তারপর সবাই এক সাথে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম ফুচকা খেতে হিহিহি। সবাই ফুচকার অর্ডার তো দিলাম কিন্তু এখনো আসছে না। অপেক্ষা করছি অপেক্ষার প্রহর শেষ করে ছয় প্লেট ফুচকার জায়গায় দিয়ে গেলো তিন প্লেট ফুচকা কি আর করার আমরা তিন ওদের তিনজনের প্লেট থেকে নিচ্ছি আর খাচ্ছি।
রুবেল, মুন্নি, মিম বলল, “ আমরাও কিন্তু তোদের প্লেট থেকে খাবো। ”
আমি, আব্রু, নাঈম– আরে খাইস খাইস আগে ফুচকা আসতে তো দে. না জানি কোন প্লেনে করে আসছে?
বলে সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলাম।
দোকান একটাই আর আমরা ছাড়াও অনেক মানুষ আছে ভিড় বেশি তাই আমরা আর ওয়েট না করে অর্ডার ক্যানসেল করে চলে আসলাম।
রাস্তার পাশে সব গুলো একটা আরেকটার পেছনে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে ৩০ মিনিট পর।
মুন্নী, মিম- হাঁপাই গেছি আর দৌড়াতে পারবো না।
আমি, আব্রু- গলা শুকাইয়া কাঠ হইয়া গেছে।
নাঈম, রুবেল- ঠান্ডা খাওয়া দরকার। চল সবাই মদির দোকানে।
সবাই চলে আসলাম মদির দোকানে এখন টোস হবে বিল কে দেবে? যার নাম উঠবে বিল তার দিতে হবে আর বাকিদের যা যা নিতে নিচ্ছে হবে সব নিতে পারবে কেউ কিচ্ছু বলতে পারবে না।
তো দোকানদারের কাছ থেকে একটা খাতার পেইজ আর একটা কলম নিয়ে আমাদের ছয় জনের নাম লিখলাম কাগজ গুলো বাজ করে টেবিলের উপর ফেললাম।
আব্রু- আজ আমি কাগজ উঠাবো, গতবার মুন্নী উঠাই ছিলো।
সবাই উঠালো!
আমি- আল্লাহ আল্লাহ আমার নাম জেনো না উঠে, উঠলে আজকা আমারে ফকিন্নি বানাইয়া দিবো। (চোখ বন্ধ কইরা মনে মনে বলতে লাগলাম)
আব্রু- ওওও ইতিইইই বিল দিবে আজকাে।
আমি চোখ খোলে তাকালাম মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বের হয়ে আসল,
আমি- হোয়াট?
রুবেল- এত অবাক হচ্ছিস কেনা আজ প্রথম মনে হয় বিল দিবি।
আমি- হো তোরা যেই রাক্ষস!
সবাই একটার বদলের তিন তিন তিন টা কইরা 7up coca cola speed তো আছে চিপস টিপস আরও যা যা আছে সব কিছু চার পাঁচটা কইরা নিছে।
মুন্নী- মামা কয়েকটা আইসক্রিম দাও তো।
আমি- আবার আইসক্রিম কেন? এত এত কিছু তো নিছিস-ই।
রুবেল, নাঈম- ট্রিট।
আমি- কিসের ট্রিট?
মুন্নী, আব্রু, মিম- কাল যে স্যার কে প্রপোজ করবি তার অগ্রিম ট্রিট হিহিহি।
আমি- প্রপোজ করি না আর তার আগেই তোরা।
মুন্নী- হইছে এখন টাকা দে যা।
আমিও আইসক্রিম নিলাম। তারপর সব কিছুর বিল দিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।
একটা খেলার মাঠে সবাই বসে আছি আর সব কিছু ভাগ করে সবাই মিলে খাচ্ছি!
আমি- এই ৩টা বেজে গেছে ৪টা বাজে স্যার আসবে। এখন যেতে হবে রে। উঠ উঠ সবাই।
তারপর সবাই উঠে যার যার গাড়িতে উঠে চলে আসলাম।
আসার আগে সবাই আবারও স্যারকে নিয়ে ইয়া এত্তো গুলা কথা শুনাইছে।
মুন্নী, আব্রু, মিম তো একটু বেশিই বলে ফেলছে।
স্যার যখন প্রপোজাল এক্সেপ্ট করবে তখন স্যারকে জরিয়ে ধরে চুম্মা দিতে। ইশশশ কি লজ্জার কথা ফাজিল গুলা বইলা হাসতে হাসতে গাড়িতে উঠে যায়।
ভাগ্যিস ওদেরকে স্বপ্নের কথা বলি নাই। বললে তো আমি শেষই হয়ে যেতাম।
যাক এত কিছু ভেবে কাজ নেই বাড়ি চলে আসছি।
বাড়িতে ঢুকে আম্মুকে জরিয়ে ধরলাম আর একটা চুম্মা দিলাম সাথে আব্বু কেও জরিয়ে ধরে চুমু দেই।
আব্বু, আম্মু- কি আমাদের মামনি আজ এতো খুশি কেনো?
আমি- আম্মু আব্বু আমি আজ খুব খুশি খুব খুব।
আব্বু- কারণ টা কি এত খুশির?
আমি- ওইটা কালকে বলবো। হিহিহি
বলেই দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে রুমে চলে আসি।
ফ্রেশ হয়ে খেয়ে টেবিলে বসে আছি।
কিছুক্ষণের মধ্যে স্যার চলে এলেন।
স্যারকে দেখে আমি হেঁসে দিলাম স্যার কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
তারপর পড়াতে বসেন। স্যারকে আজ কেমন জেনো লাগছে অচেনা অচেনা স্যার তো এমন ছিলো না তাহলে আজ কি এমন হলো যে স্যারকে আজ এমন লাগছে। পড়ানো শেষ হতেই স্যার উঠে যেতে নিলে স্যারকে আমি ডাক দেই।
স্যার পেছনে ঘুরে তাকায়।
স্যার- কিছু বলবে?
আমি- স্যার কালকের সন্ধ্যার পর ৩০ মিনিট সময় আমাকে দিবেন প্লিজ!
স্যার- কিন্তু আমার কাল কাজ আছে।
আমি- প্লিজ স্যার প্লিজ! খুব করে রিকুয়েষ্ট করলাম স্যার হয়তো আমার ফেস দেখে না করতে পারেনি ঠিক আছে বলে চলে গেলো।
একটু ফুচি দিয়ে দেখলাম স্যার আব্বুর সাথে কথা বলছে। কি কথা বলছে যেই কথা ইচ্ছা সেটা বলুক তাতে আমার কি। বেডের উপর শুয়ে ফোন টিপছি আর উদেরকে মেসেজ দিয়ে বললাম স্যার কাল আসবে।
ফোন টিপতে টিপতে বেডের উপর শুয়েই ঘুমিয়ে পরি।
গভীর রাত ৩টা বাজে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেলো। এখন কি করবো? কোনো কাজই তো নাই এত রাতে কি করবো ধুত ভাল্লাগে না।
বসে বসে ফোন টিপছি রুমের এপাশ ওপাশ পায়চারি করছি ঘুম বাবা জি প্লিজ আসো না প্লিজ।
দীর্ঘ দুই তিন ঘন্টা পর ঘুম আসে। ঘুমিয়ে পরি সকালে আর তারাতাড়ি উঠতে পারিনা।
ঘুম ভাঙ্গলো তো সকাল ১১টায়।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম আর রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম।
ফাস্ট মার্কেট গেলাম অনেক বেছে একটা শাড়ি কিনলাম! মার্কেট থেকে বেরিয়ে গোলাপ ফুল। তারপর বাড়ি ফিরে এলাম।
দুইদিন ধরে আমাকে এত খুশি দেখে আব্বু আম্মু তো অবাক কারণ ছাড়া এত খুশি কেন নাকি কারণ আছে যেটা আমি উনাদের কে বলছি না কোনটা।
দুপুরে লাঞ্চ শেষ করে রুমে চলে আসি। এখনই রেডি হবো কিন্তু সন্ধ্যে হতে তো অনেক দেরি।
কি করবো এই সময় তো জেনো কাটছেই না।
এদিকে ওরা পাঁচ জন একে একে কল দিয়েই যাচ্ছে মনে হচ্ছে আজ আমার বিয়ে আর ওরা আমাকে বিদায় দিচ্ছে ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে।
অনেক কষ্টের পর এখন সময় হয়েছে রেডি হওয়ার।
গোলাপি রাঙা শাড়ি পরেছি।
দুই হাত ভর্তি চুড়ি চোখে গাড় করে কাজল!
ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক!
আর চুল গুলো খুব সুন্দর ভাবে ফুলিয়ে খোঁপা করে বেধে নিয়েছি!
আর সামনে দিয়ে কয়েকটা চুল বার করে রেখেছি! (স্টাইল)
কানে স্যারের দেওয়া ঝুমকো ঝোড়া পরেছি!
খোঁপায় ফুল বেঁধেছি।
টোটাল রেডি হয়ে স্যারকে মেসেজ করে দেই আমি রেডি আপনি রেডি হয়ে রাস্তার মোড়ে অপেক্ষা করুন আমি আসছি।
আব্বু আম্মু এই সন্ধ্যে বেলা সেজে গুজে বেরো তে দেখে একশো টা প্রশ্ন করে। আমি তাদের জরিয়ে ধরে চুমু দিয়ে তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলে চলে যাই।
গাড়ি থেমেছে স্যার গাড়িতে উঠতে যাবে।
স্যার- ড্রাইবার কাকা ইতি কোথায়!
ড্রাইবার কাকা- ইতি মামনি হাইওয়ে রাস্তার পাশে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে আর আমাকে আপনাকে নিতে পাঠিয়েছে।
স্যার- আচ্ছা চলুন।
কিছুক্ষণ পর স্যার চলে আসেন কোথায় ইতি।
ড্রাইবার- ওই তো মামনি ওই যে দাঁড়িয়ে আছে।
স্যার- আচ্ছা আমি যাচ্ছি।
স্যার- ইতি।
স্যারের ভয়েস শুনে পেছনে তাকালাম।
“ ওয়াও কি সুন্দর লাগছে স্যার কে এই প্রথম পাঞ্জাবিতে দেখলাম তাও আবার ব্লাক পাঞ্জাবি। ” (মনে মনে)
স্যার- শাড়ি?
আমি- হুম কেনো আমাকে ভালো লাগছে না।
স্যার- আমি কিন্তু সেটা বলিনি। খুব সুন্দর লাগছে। তো বলো কেনো আসতে বলেছো।
আমি- আপনার হাত ধরে রাতের রাস্তায় হাঁটবো।
স্যার- কিহহহহহ।
আর কিছু না বলে স্যারের হাত ধরে নিলাম। চলুন আমার সাথে হাঁটুন।
স্যার- কিন্তু ইতি সবাই দেখছে।
আমি- চুপ দেখুক।
দু’জনেই পাশাপাশি হাঁটছি স্যার আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমিও স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি।
হাঁটতে হাঁটতে কিসের সাথে জেনো পা আঁটকে পরে যেতে নিলাম আর স্যার আমাকে ধরে নিলো।
আবারও আমাদের চোখে চোখ পরলো।
স্যার আমাকে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলো।
স্যার- আমরা কি এখানে শুধু হাঁটতে আসছি নাকি অন্য কিছু!
বলতে বলতেই আমি স্যারের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলাম পুরো ফিল্মি স্টাইলে।
খোঁপা থেকে গোলাপ ফুল নিয়ে স্যারের দিকে বাড়িয়ে বললাম।
আমি- স্যার I Love You ~
লাইক অনেক আগে থেকে কখনো বলার সাহসই হয়ে উঠেনি কিন্তু আজ আমি বলতে চাই পুরো পৃথিবীর সামনে চিৎকার করে বলতে চাই।
সেখানেই উঠে দাঁড়িয়ে আশে পাশের মানুষগুলোকে ডাক দিলাম। সবাই আমাকে দিকে তাকালো।
আবারও সবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলাম। আর চিল্লিয়ে বললাম।
– এই ছেলেটা হচ্ছে আমার স্যার আর আমি উনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
I Love You স্যার।
স্যার আমাকে কিছু বলে না অন্য দিকে ঘুরে হাঁটতে শুরু করে।
স্যারের এমন আচরণ সবটা আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো। আমি উঠে শাড়ির কুচি ধরে স্যারের পেছনে ছুটতে লাগলাম। কয়েকবার ডাক দিয়েছি কিন্তু স্যার পেছনে তাকায়নি।
আমি দৌঁড়ে স্যারের হাত ধরে স্যারকে আমার দিকে ঘুরালাম।
স্যারের চোখে পানি স্যার হাত দিয়ে পানি মুছে নিলো।
আমি- স্যার আপনি এভাবে চলে এলেন কেনো কিছু বলছেন না কেনো আপনার আমাকে পছন্দ নয় আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।
স্যার- ইতি ছাড়ো আমার হাত।
– ছাড়বো না আপনাকে বলতেই হবে আপনি আমাকে ভালোবাসেন কি না আমি আপনার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। প্লিজ স্যার!
স্যার- কথা ভালোবাসার নয় ইতি!
– মানে আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাহলে সমস্যা কোথায়?
স্যার- হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তোমার আমার যায় না।
– কেনো যায় না আমি আপনাকে ভালোবাসি। স্যারের দুই হাত চেপে ধরে বললাম। আর চোখ বেয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে।
স্যার- তুমি আর আমি এক না। তুমি অনেক
– অনেক কি? কি আমি অনেক?
স্যার- তুমি অনেক বড় বিজনেস ম্যান কোটিপতি বাবার এক মাত্র মেয়ে আর আমি সাধারণ মধ্যবিত্ত ছেলে আমার কাছে কোনো ভালো জবও নেই ইতি বুঝতে হবে আমি তোমার যোগ্য নই ইতি তুমি আরও ভালো ছেলে ডিজার্ভ করো আমাকে প্লিজ ভুলে যাও।
– আমি কোনো কিছু শুনতে চাই না। আমি শুধু আপনাকে ভালোবাসি আমি সব কিছুর বিনিময়ে হলেও আপনাকে চাই আমি আপনার সাথে আপনার জীবনসঙ্গী হয়ে থাকতে চাই প্লিজ স্যার আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না। আমি আপনাকে ভালোবাসি আপ,, আপনি আমাকে ভালোবাসেন না স্যার আপনি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন আপনি কি একটুও আমাকে ভালোবাসেন না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না,, কাঁদতে কাঁদতে স্যারের হাত ধরে মাটিতে বসে পরলাম।
স্যার ও কাঁদছে ভালোবাসার মানুষ কে ছেড়ে যাওয়া অনেক কষ্টের আর সেটা শুধু ছেড়ে যাচ্ছে যোগ্য নই বলে। বাক্ষ্মণ হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার ফল যে খুব একটা ভালো হয় না।
স্যার- ইতি নিজের থেকেও বেশি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তোমাকে আমি আমার করতে পারবো না আমি কখনো তোমার যোগ্য নই তুমি কোথায় আর আমি কোথায় প্লিজ আমাকে ভুলে যাও।
বলেই স্যার উনার হাত আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করেন।
মাটিতে বসে চিল্লিয়ে কাঁদছি আশেপাশের লোকেরা সবাই আমাকে দেখে আফসোস করছে।
আমি কেঁদেই যাচ্ছি কান্না যেনো থামছেই না স্বপ্নে কি দেখেছিলাম আর বাস্তবে হলো সম্পূর্ণ উল্টা!
আর কিছুই ভাবতে পারছি।
স্যারকেও আর দেখতে পারছি না।
রাস্তার সাইডে বসে চিল্লাতে শুরু করলাম।
– আমি আপনাকে ভালোবাসি স্যার আপনি না বাসলেও আমি আপনাকে ভালো বাসি আমি আপনাকেই ভালোবাসি আর আপনাকেই ভালো বাসবো এই ইতি আপনাকে ছাড়া আর কখনো কারো হবে না আমি সারাজীবন আপনার জন্য অপেক্ষা করবো স্যার I Love You ~ I Love You স্যার!
সব শেষে অনেক জোরে চিৎকার দিয়ে বললাম,
– শাওওওওওওনননননননন আআহহহহহহহহহ I Love You স্যার ~
কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে সেখানেই পরে যাই তরপরে আর কিছুই বলতে পারি না।
পরেরদিন দুপুরে~
চলবে



----------------------------------

স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_১৭
____________
পরেরদিন দুপুরে~
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে নিজের রুমে আবিস্কার করলাম। পাশেই আব্বু আম্মু বসে আছে।
কালকের কথা কাল কি হয়েছিলো আমার কাছে জানতে চায়? আমি তাদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করি আমি বাড়ি এলাম কিভাবে?
আম্মু বললো আমাকে নাকি ড্রাইবার আঙ্কেল রাস্তায় কাঁদতে দেখে আমার কাছে আসতে থাকে আর আমার কাছে আসার আগেই আমি নাকি সেন্সলেস হয়ে পরে যাই। তারপরে আঙ্কেল আর কয়েকজন লোক আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দেয় তারপর আঙ্কেল আমাকে বাড়ি নিয়ে আসেন।
আমি- আব্বু শাওন স্যার।
আম্মু- শাওন কি মামনি?
আব্বু- কেনো তুই জানিস না?
আমি- কি জানবো?
আব্বু- শাওন তো তোকে আর পড়াতে আসবে না সে ন করে দিয়েছে।
এতক্ষণ শুয়ে ছিলাম কিন্তু আব্বু কথা শুনে উঠে বসে পরলাম।
আমি- কি বলছো কি তুমি আব্বু এটা হতে পারে না কখন বলছে?
আব্বু- লাস্ট যে তোকে পড়াতে আসছিলো বৃহস্পতিবার দিন যাওয়ার সময় জানিয়েছে আর চলে গেছে।
আমি- তুমি এই কথা আমাকে আগে কেনো বলোনি। স্যার আপনি এভাবে যেতে পারবেন না।
আব্বু- তুই এখন একটু রেস্ট নে মামনি। আম্মু- কিছু খাবি শরীর তো দূর্বল মনে হচ্ছে।
দুপুরে খেয়ে রুমের মধ্যে পায়চারি করছি কোনো ভাবেই মনকে শান্ত করতে পারছি মনে হচ্ছে আমি স্যারকে হারিয়ে ফেলেছি কিন্তু আমার এমন কেনো মনে হচ্ছে না না আমি স্যারকে হারাতে পারবো না আমি এখনই যাবো স্যারের বাড়ি আর উনার সাথে আমার কথা বলতেই হবে।
রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলাম। আব্বু জিজ্ঞেস করেছিলো কোথায় যাচ্ছি উত্তর স্যারের বাড়িতে।
গাড়ি থেকে নেমে সোজা হেঁটেই যাচ্ছি।
স্যারের বাড়ির সামনে আসতেই দেখলাম দরজায় তালা মানে উনার আম্মু আবারও অসুস্থ হয়ে পরেছে। বেশ জোরে জোরেই বললাম আমার কথা শুনে পেছন থেকে কে জেনো বললো।
– শাওনের মা অসুস্থ হয়নি।
পেছনে ঘুরে তাকালাম আরে আন্টি আপনি কেমন আছেন।
আন্টি- ভালোই আছি। আজকেও স্যারকে খুঁজতে আসছো লাভ নেই পাবে না আর কখনোই পাবে না।
আমি- মানে আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
আন্টি- শোনো মেয়ে বুঝিয়ে বলছি। তোমার স্যার কাল রাতেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে আজ সকালে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু কাল রাতে কোথা থেকে এসে সব কিছু নিয়ে চলে গেছে। আর কোথায় গেছে কেউ জানে না তাই ভালো হবে এখানে আমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের বাড়ি চলে যাও।
আন্টির কথা গুলো জেনো আমার কলিজায় লাগলো হাঁটছি আনমনে আর ভাবছি। কি এমন হয়েছে যে গাজীপুর ছেড়ে চলে যেতে হলো আর চলেই যাবে তো আমাকে একটা বার বললো না কেনো এটা পরিস্কার স্যার এখান থেকে আরও আগেই চলে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলো কিন্তু কেনো স্যার আমি আপনাকে ছাড়া থাকবো কি ভাবে আপনার কি একবারও আমার কথা মনে হয়নি আপনি কিভাবে চলে গেলেন আমাকে ছেড়ে আমার আপনাকে ভালোবাসা ভুল ছিলো না স্যার ভুল তো আমার বাবার কোটি সম্পত্তি কেনো আল্লাহ কেনো আমাকে বড়লোক ঘরে জন্ম দিলা কেনো আজ এই সম্পত্তির জন্য আমার স্যার আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
জানি না কাঁদতে কাঁদতে কোথায় চলে আসছি চোখের পানি মুছতে লাগলাম দুই হাত দিয়ে।
স্যার কেনো আমার সাথে এমন করলেন কেনো ছেড়ে চলে গেলেন কেনো এত কষ্ট দিলেন আমার ভালোবাসায় কি ভুল ছিলো কেনো কেনো কোথায় খুঁজবো আপনাকে বলেই চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পরলাম।
হঠাৎ পেছনে থেকে ড্রাইবার আঙ্কেল ডাক দিলেন।
ড্রাইবার আঙ্কেল- ইতি মামনি সরে যাও ওখান থেকে।
পেছন থেকে ড্রাইবার আঙ্কেলের ডাক শুনে দাঁড়িয়ে উনার দিকে তাকাতে যাবো এমন টাইমে একটা ট্রাক এসে ধাক্কা মারে। ট্রাকের বারিতে উড়ে গিয়ে রাস্তার ওপাশপ পরি। সমস্ত শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে পুরো রাস্তা রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে বেশি রক্ত বের হচ্ছে কপাল আর মাথা থেকে। দুই মিনিটের জন্য পরিবেশ টা কেমন জেনো থমকে গেছে খুব কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে এই এখন বুঝি দেহ থেকে আত্মাটা বেরিয়ে যাবে।
চোখ খুলতে পারছি না খুব ভয় হচ্ছে মনে হচ্ছে আর এই পৃথিবীর আলো দেখতে পাবো না আমার আব্বু আম্মুকে দেখতে পাবো না আব্বু আম্মু বলে ডাকতে পারবো না আর স্যারকে কখনো স্যার বলে ডাকতে পারবো না। কোনো মতে চোখ খুলে তাকানোর চেষ্টা করলাম আর সামনে দেখছি ড্রাইবার আঙ্কেল আমার দিকেই আসছেন।
ড্রাইবার আঙ্কেল কাঁদছে আমার সামনে মাটিতে বসে আমার মাথা উনার কোলে নিলেন আমার মাথায় যেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছে সেখানে শক্ত করে চেপে ধরেছেন।
আমি- আঙ্কেল স্যার আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আঙ্কেল আমার কাছে বেশি সময় নেই আঙ্কেল আমি আর বাঁচবো না।
ড্রাইবার আঙ্কেল- মামনি মামনি চুপ করো তোমার কিচ্ছু হবে না তোমাকে আমি এখনই হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
আপনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছেন কেউ এ্যাম্বুলেন্স কল দাও!
আমি- আঙ্কেল আমাকে ক্ষমা করে দিও আমার আব্বু আম্মুর খেয়াল রেখো আর আমাকে ক্ষমা করে দিও।
ড্রাইবার আঙ্কেল- এই সব বলো না মামনি তোমার কিছু হবে না।
“ আমার কাছে সময় নেই আঙ্কেল আমাকে স্যার না বলেই চলে গেছে আঙ্ ”
আর কিছু বলতে পারলাম না তলিয়ে গেলাম ঘুমের দেশে। এদিকে ড্রাইবার আঙ্কেল আমাকে কোলে তুলে নিলেন আর একটা ট্যাক্সিতে উঠলেন।
আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো ডাক্তার ও নার্সরা আমাকে নিয়ে গেলেন ও.টি তে!
ড্রাইবার আঙ্কেল প্যান্টের পকেটে উনার মোবাইল খুঁজছেন কিন্তু নেই তখনই উনার মনে পরলো উনি ফোন রাস্তাতেই ফেলে আসছেন। রিসিপশনে গিয়ে ওখান থেকে ফোন নিয়ে বাড়িতে আব্বু আম্মুর কাছে ফোন দেয়। আব্বু আম্মু আমার কথা শুনে হন্য হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে।
হাসপাতালের বাহিরে আব্বু আম্মু ড্রাইবার আঙ্কেল আমার জন্য বসে আছে।
আমার আম্মু আমার জন্য ওই মায়াবী চোখ থেকে নোনা পানি ফেলছে। ওই দুটি চোখে আমি আমার পুরো জগৎ দেখতে পেতাম আজ ওই দুটি চোখে পানি আমার আম্মু আমার জন্য কাঁদছে যে চোখে কখনো পানি দেখিনি আজ আমার সেই আম্মু পাগলের মতো কাঁদছে।
আমার আব্বু আম্মুকে সামলানোর পুরো চেষ্টা করছে উপর থেকে নিজেকে নরমাল দেখালেও ভেতর থেকে ভেঙে গুড়িয়ে গেছে। আব্বু কাঁদলে যে আম্মুকে সামলানো যাবে না।
ড্রাইবার আঙ্কেল ও কাঁদছেন সাথে আমার কাঁধে হাত রেখে আব্বুকে শান্তনা দিচ্ছেন আমার নাকি কিচ্ছু হবে না।
আব্বু ড্রাইবার আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করেন আমার এক্সিডেন্ট কিভাবে হয়েছে।
আঙ্কেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব বলেন। আব্বুর আর বুঝতে বাকি থাকে না যে আমি স্যারকে ভালোবেসে ফেলেছি। আর স্যারের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারিনি। আর এই এক্সিডেন্ট।
ড্রাইবার আঙ্কেলের কথা শুনে আম্মু- সব আমার দোষ আমি যদি তখন ওকে বাড়ি থেকে বেরো তে না দিতাম তাহলে আমার কলিজা আমার বুকেই থাকতো আল্লাহ আমার মেয়ে টা কে আমার বুক খালি করে নিয়ে যেও না আল্লাহ জীবনে বাপ মা হারানোর কষ্ট একমাত্র এই মেয়ের মুখ চেয়ে ভুলে গেছি আল্লাহ আমি আমার বাপ মা’কে কষ্ট দিয়েছিলাম সে কষ্টের ফল তুমি আমার মেয়েকে আমার বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দিও না আল্লাহ ধরকার হলে তুমি আমাকে নিয়ে নাও তবুও আমার ফুলের মতো মেয়েটার জীবন ভিক্ষা দাও আল্লাহ।
আর আঙ্কেল এটাও বলে ওইদিন রাস্তায় ইতি মামনি সেন্সলেস হয়ে গেছিলো কেনো কাঁদছিলামই বা কেনো জানেন আমি বলছি ইতি মামনি ওইদিন সেজেগুজে হাইওয়েতে স্যারের জন্য অপেক্ষা করছিলো স্যার যেতেই কিছুক্ষণ পর স্যারকে প্রপোজ করে মামনি আর সে শুধু মাত্র ইতি মামনি আপনার মেয়ে বলতে কোটিপতি বলে ইতি মামনির ভালোবাসা প্রত্যাখান করে চলে যায়। সে কোনো বড়লোকের মেয়েকে বিয়ে করবে না আর তারপরেই কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়ে পরে আর কালকেই এই শহর ছেড়ে চলে যায়।
আব্বু- তুমি আমাকে এইগুলো আগে কেনো বলোনি?
ড্রাইবার আঙ্কেল- ইতি মামনি বলতে বারণ করেছিলো।
এদিকে ঔ.টি থেকে ডাক্তার বের হলেন।
আব্বু দৌঁড়ে এলেন তার কাছে এবং আমার অবস্থা জিজ্ঞেস করেন।
ডাক্তার- দেখুন আমরা আমাদের সম্পূর্ণ দিয়ে চেষ্টা করছি। আপনার মেয়ের অবস্থা খুবই ক্রিটিকেল! আমরা জোর দিয়ে বলতে পারছি না আমরা উনাকে বাঁচাতে পারবো কি না উনার বাঁচার চান্স মাত্র ১% আর না বাঁচার ৯৯% গাড়ি এক্সিডেন্টে বেশি আঘাত পেয়েছে মাথায় তাই আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না উনি আধও বাঁচবেন কি না আমরা ঢাকা থেকে আরও দুইজন ডাক্তারকে আসতে বলেছি। আর আপনার মেয়ে যদি মানে বলতে চাচ্ছি যদি আল্লাহর রহমতে বেঁচে যায়। তাহলে কোমায় চলে যাবে। বাকিটা আল্লাহ জানে আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন মেয়ের জন্য বেশি বেশি দোয়া করুন। বলেই ডাক্তার চলে গেলো।
আম্মু ডাক্তারের কথা শুনে সেখানেই চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে বসে পরলো আর আব্বু ডাক্তার যেতেই দুই হাঁটু ভেঙে ফ্লোরে বসে পরে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না এবার কেঁদেই দিলো।
দুই চোখ বেয়ে অনবরত নোনা জল জড়ছে।
আমার আব্বু আম্মু কাঁদছে!
আমি আর বাঁচবো না ভেবেই উনারা আরও বেশি কাঁদছে আম্মু উঠে গিয়ে আব্বুকে জরিয়ে ধরে আর দু’জনেই গোলাগুলি ধরে কাঁদছেন আর আমি এখনও ঘুমিয়ে আছি আমার অপারেশন চলছে আধও বাঁচবো কি না তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
দু’জন ডাক্তার ঢাকা থেকে আসলে বাকি একজন ডাক্তার ও নার্স আব্বু আম্মুর কাছে যায় ব্রণ সই করানোর জন্য যদি এই অপারেশনের ধরান আমার মৃত্যু হয় তাহলে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ দ্বায়ী নয়।
আব্বু আম্মু ব্রন সই করা বাদ দিয়ে দু’জনে দু’জনের দিকে তাকিয়ে আবার ও চোখের জল ফেলছে।
সই করতেই ডাক্তাররা আমার অপারেশনের জন্য ও.টি তে ঢুকেন আর ও.টির রেড লাইট জ্বলে উঠে.!
লাইট জ্বলার সঙ্গে সঙ্গে আম্মু চিৎকার দিয়ে আব্বুকে জরিয়ে ধরে।
আম্মু- আমার মেয়ে আমার ইতি আমার সোনা আমার নাড়ি ছেরাধন আমি কলিজার টুকরা আল্লাহ আমার মেয়েকে জীবন দান করো আল্লাহ।
আব্বু কিছু বলছে না শুধু আম্মুকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কাঁদছে।
আমার এক্সিডেন্টের খবর কিভাবে জানি আমার দাদা দাদী ও নানা নানীর কাছে খবর চলে যায়।
এতবছর রাগ করে থাকলেও আজ নাতনীর এমন অবস্থায় তারা আর রাগ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারলেন না। সবাই চলে এলেন হাসপাতাল আব্বু আম্মুকে দেখে তারাও দৌঁড়ে এসে তাদের সন্তানদেরকে জরিয়ে ধরলেন।
আম্মুকে নানা নানী জরিয়ে ধরে শান্তনা দিচ্ছেন।
নানা, নানী- আমাদের নাতনী ও তোর মেয়ের কিচ্ছু হবে না। আল্লাহ ইতি দিদিভাইকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবে। আম্মু নানা নানী কে জরিয়ে ধরে পাগলের মতো হাউমাউ করে কাঁদছে।
দাদা দাদী ও আব্বুকে জরিয়ে ধরে একই কথা বললেন।
আব্বু দাদা দাদীকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন।
এদিকে আমার এক্সিডেন্টের খবর পেয়ে আমার কলিজার টুকরা বন্ধু গুলাও চলে আসলো।
মুন্নী, মিম, আব্রু, রুবেল, নাঈম ওরাও হাসপাতালে এসে কাঁদছে কতই না দুষ্টামি শয়তানি করছি এক সাথে আর আজ আমি জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছি সব কিছুর জন্য ওরা স্যারকে দ্বায়ী করে।
এদিকে ২ঘন্টা পার হয়ে গেছে ডাক্তার দের মধ্যে কেউ এখনো বের হয়নি। আর না কোনো খবর আছে।
তারা সবাই ও.টির সামনে চেয়ারে বসে পরেন কাঁদতে কাঁদতে হয়রান হয়ে গেছেন। আম্মু তো দুইবার সেন্সলেস হয়ে পরে গিয়েছিল।
ড্রাইবার আঙ্কেল বাহির থেকে পানির বোতল কিনে নিয়ে আসে আর সবাইকে খাওয়ার জন্য দেয়।
আমার নয়নের মনি আম্মুর যে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুখিয়ে গেছে তবুও আম্মু কেঁদেই যাচ্ছে।
আমার জান্নাত বাহিরে বসে কাঁদছে।
আমার আম্মুকে এখন যদি জরিয়ে ধরতে পারতাম তাহলে হয়তো আমার আম্মুর কলিজা ঠান্ডা হতো কিন্তু তার যে কোনো উপায় নেই। ২০মিনিট পর একজন ডাক্তার বের হলেন।
তাকে সবাই আমার কথা জিজ্ঞেস করলো।
ডাক্তার আবারও আগের কতা গুলোই বললেন বেশি বেশি দোয়া করতে বললেন।
ড্রাইবার আঙ্কেল আব্বুকে নিয়ে মসজিদে চলে গেলেন সাথে নাঈম আর রুবেল ও যায়।
এদিকে আম্মুকে নিয়ে মুন্নী মিম আব্রু নানা নানী দাদা দাদী সবাই একটা পরিষ্কার রুমে যায় সবাই নামাজ পরছে আর আল্লাহর কাছে আমার হায়াত ভিক্ষা চাইছে.!
নামাজ শেষ হতে সবাই আবারও ও.টির সামনে চলে আসে আর আগের ন্যায় অপেক্ষা করছে।
চলবে

------------------------

স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_১৮
____________
১ঘন্টা পর~
ও.টি থেকে ডাক্তাররা সবাই এক সাথে বের হলেন।
আমার আম্মুর আব্বুর সামনে গিয়ে ডাক্তাররা বললেন।
ডাক্তার- আল্লাহর অসীম রহমতে আমরা আপনাদের মেয়েকে বাঁচাতে পেরেছি কিন্তু মাথায় খুব খারাপ ভাবে আঘাত লাগার জন্য পেসেন্ট কোমায় চলে গেছে। আর যে কোনো সময় কোমা থেকে বেরিয়ে আসতেও পারে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।
আপনার মেয়েকে আমরা কেবিনে সিফট করছি ৩০মিনিট পর আপনারা সবাই পেসেন্টের সাথে দেখা করতে পারবেন।
আমাকে কেবিনে সিফট করা হয় একে একে সবাই আমাকে এসে দেখে যায়।
১মাস পর~
আমি এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ হাসপাতাল থেকে দুইদিন পর রিলিজ করে দেবেন।
বাড়িতে এসে সবাই কে এক সাথে দেখেও আমার কেনো জানি ভালো লাগছে না কিন্তু কেনো আমি তো ছোটো থেকে এটাই চেয়ে ছিলাম আমার দাদা দাদী নানা নানী সবাই আমরা এক সাথে থাকবো কত মজা হবে কিন্তু আমার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে দেখেও আমি খুশি হতে পারছি না মনের ভেতরে খা খা করছে। হল রুমে আর বসে থাকতে পারলাম না আম্মুকে বললাম আমাকে রুমে দিয়ে আসতে।
রুমে এসে আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে ওই চেয়ারটা তে বসে স্যার আমাকে পড়াতো আর আমি উনাকে কত জ্বালাতাম। চোখের কোণে পানি মুছে নিলাম।
কারো সাথে তেমন কথা বলতেও ইচ্ছে করে না। চুপচাপ একা একা বসে থাকতেই ভালো লাগে।
আমাকে এভাবে দেখে আব্বু আম্মু আড়ালে চোখের
জল ফেলছে।
১ সপ্তাহ পর ~
আল্লাহর রহমতে আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
আর সুস্থ হয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরি স্যারের খোঁজে ২দিন ধরে খোঁজেও গাজীপুরের কোথাও স্যারকে পেলাম না।
আর পাবোই বা কিভাবে স্যারের বাম শাওন ছাড়া তো কিছুই জানি না। আমার আগের ফোনে একটা ছবি ছিলো সেটাও এক্সিডেন্ট এর পর রাস্তা থেকে হয়তো কেউ কুড়িয়ে নিয়ে গেছে। দেড় মাস হয়েগেছে ফোন কি এখনও থাকবে নাকি?
যাইহোক সারাদিন খুঁজে রাত ৯টায় বাড়ি ফিরলাম।
বাড়িতে এসেই আব্বু আম্মু আমাকে ধরলেন।
আব্বু- তুমি কেনো বাহিরে ঘুরাঘুরি করছো তমি সম্পূর্ণ সুস্থ হও নাই এখনো আর এভাবে ঘুরাঘুরি করে লাভ নাই যে যাওয়ার সে চলে গেছে কেনো খুঁজছো তাকে ছেড়ে দাও শাওনকে ভুলে যাও জীবনে এগিয়ে যাও।
আব্বুর শেষের কথা গুলো আমার পছন্দ হলো না আর অনেক রাগ উঠে গেলো।
আমি- ভুলে যাবো খোঁজা বন্ধ করে দেবো কিন্তু কেনো বলতে পারো। আমি খুঁজবো সারাজীবন কারণ আমি স্যারকে ভালোবাসি। আর তুমি বলছো এইসব কথা তুমি বলছো স্যারকে ভুলে যেতে বলছো আব্বু কিভাবে পারছো বলতে তুমিও জানো স্যার আমাকে ভালোবাসি বলে ছিলো শুধু আমি কোটিপতি বিজনেসম্যানের মেয়ে বলে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে শুধু এই এই তোমার সম্পত্তির জন্য কি হবে এই সম্পত্তি দিয়ে আব্বু যে সম্পত্তি তোমার মেয়ের থেকে তারই ভালোবাসার মানুষকে কেড়ে নেয় আব্বু কি হবে এই সম্পত্তি দিয়ে আমার ধম বন্ধ হয়ে আসে এই বাড়িতে মনে পরে যায় স্যার এই বাড়ি গাড়ির জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেছে আমি স্যারকে কখনো ভুলবো না আর না কখনো স্যারের জায়গা আমি কাউকে দেবো না আমি স্যারের জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবো আমি শুধু স্যারকেই ভালোবাসি আমি খুঁজবো আমার স্যারকে আমি খুঁজবো তারপর আবারও চিৎকার করে বলবো।
স্যার_I_Love_you ~
কথাগুলো শেষ হতেই ফ্লোরে হাঁটু ভাজ করে বসে পরলাম আর কাঁদতে শুরু করলাম।
আব্বু আম্মু দু’জনেই আমার কাছে এসে আমাকে জরিয়ে ধরেন আর আব্বু প্রমিজ করে আমার সাথে আব্বুও স্যারকে খোঁজবে।
তারপরে দু’জনে মিলে স্যারকে অনেক খুঁজি কিন্তু কোথাও পাই না।
এদিকে আমার কেরিয়ার নষ্ট হবে ভেবে আব্বু আম্মু আমাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়।
এদিকে পড়াশোনার পাশাপাশি স্যারকেও খুঁজি কিন্তু কোথায় পাই না।
প্রতি রাতে এক দীর্ঘ শ্বাসে স্যারকে অনুভব করে ঘুমিয়ে পরি এইটা ভেবে আগামীকাল কের নতুন ভোরে নতুন দিনে হয়তো স্যারকে খুঁজে পাবো।
কিন্তু স্যারকে কোথাও পাই না।
জানি না কোন সাপের গুহায় গিয়ে ঢুকে গেছে খুঁজেই পাই না।
প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার সন্ধ্যার পর ওই হাইওয়ে রোডে আমি আসি আর কিছু দাঁড়িয়ে থাকি আর সেই দিনটা কল্পনা করি যে দিনে স্যার আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল সেই জায়গা টায় দাঁড়িয়ে থাকি সেই দিনটা তেই তো আমি আমার স্যারকে শেষ দেখেছিলাম আমি কি আর জানতাম নাকি তখনই যে শেষ দেখা।
এভাবেই দিন চলে যাচ্ছে কেটে যাচ্ছে সময়।
দিনের পর দিন বছরের পর বছর। সময় কারো জন্য থেমে থাকে না সময় সময়ের মতো চলতেই থাকে শুধু কিছু মানুষ অতীতের কিছু খারাপ সময়ে আঁটকে যায়।
আজও আমি স্যারকে খুঁজে চলেছি।
ফিরে আসা যাক বর্তমানে_____
হঠাৎ কারো ডাকে ঘুম ভেঙে যায়!
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আম্মু মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর আমায় ডাকছে। চোখ খুলে বুঝতে পারলাম স্যারকে ভাবতে ভাবতে আমি সাদের দোলনা তেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।
আম্মু- এভাবে আর কতদিন চলবে?
আমি- যতদিন চলার চলবে।
আম্মু- ৬, ৬ টা বছর পার হয়ে গেছে আর তুই এখনো তোর অতীত আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছিস। এমন ও তো হতে পারে তুই যার জন্য অপেক্ষা করছিস সে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে।
আমি- আম্মু প্লিজ এমনটা বলো না আমি বেঁচে থাকতে মরে যাবো স্যার আমার কাছে নেই ছয়টা বছর উনার স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছি উনি ফিরে আসবেন এই আশায় আছি। প্লিজ আম্মু তোমরা আমার থেকে এইটুকু ছিনিয়ে নিয়ো না প্লিজ।
আম্মু- আচ্ছা খাবি চল!
সাদ থেকে সোজা রুমে চলে আসলাম ফ্রেশ হয়ে টোটাল রেডি হয়েই নিচে নামলাম।
ডাইনিং টেবিল~
আম্মু- বলো না বলো। (আব্বুকে কি জেনো বলার জন্য জোর করছে)
আব্বু- আরে তুমি বলো।
আমি- কি বলা নিয়ে এত বকবক করছো?
আম্মু- তোর আব্বু বলবে।
আব্বু- মামনি একটা কথা ছিলো।
আমি- হুম বলো।
আব্বু- তোর ওই যে ছোট ফুপি মিনা ওর বড় মেয়ে তোর মায়া আপুর বিয়ে ফিক্সড হয়েছে। আমাদের সবাইকে ইনভাইট করেছে কিন্তু তুই তো জানিসই আমার এখানে কত কাজ আর তোর আম্মুও তো এতদূর জার্নি করতে পারবে না তাই বলছিলাম আমাদের হয়ে তুই যদি চলে যেতি।
আমি- আমার কি এখানে কাজ নেই। আমার পেসেন্টদের কি হবে?
আম্মু- মাত্র তিন দিনের ব্যাপার ছুটি নিয়ে নে। আর হাসপাতাল তো তোরই কোনো সমস্যা হবে না।
আব্বু- আর কোথাও ঘুরতে গেলে তোরও মন ভালো হয়ে যাবে।
আমি- হুম দেখছি। পুরো প্লেন করে নিয়েছো আমাকে তাড়ানোর চেষ্টা করবো ১০০% যাওয়ার হ্যাপি তোমরা?
আব্বু, আম্মু- হুমমমম।
আমি- আচ্ছা আমি এখন যাই টাটা।
আম্মু- আল্লাহ হাফেজ!
দুই দিন পর~
হাসপাতালের এত পেসেন্টের জন্য আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমাকে মিরপুর যেতে হবে। ফুপির বাড়ি।
হাসপাতালের ম্যানেজারদের সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে বেরোতে যাবো এমন টাইমে চলে এলো একজন সিজারের রোগী আমি একজন ডাক্তার আর একজন ডাক্তার কি তার পেসেন্ট রেখে চলে যেতে পারে আপনারাই বলুন?
পারে না তো আমিও পারিনি। মহিলাকে আইসিইউ তে নিয়ে আসলে। অপারেশন শুরু করি।
ওইদিকে আব্বু আম্মু অস্থির হয়ে গেছে আমি এখনও যাচ্ছি না কেনো বারবার কল দিচ্ছে কল দিলে লাভ কি আমি তো আমা চেম্বারে নাই আইসিইউতে!
আমি- আপনার ছেলে হয়েছে দেখবেন? (বাচ্চা টা বের করে গাতে নিলাম আর উনাকে জিজ্ঞেস করলাম)
উনিও চোখ দিয়ে ইশারা করলেন সে দেখতে চায়।
পাশে থাকা ভুয়ার কাছে দিলাম সে টাওয়াল দিয়ে বাচ্চা টাকে টেকে ফেলেছে আর মহিলা টাকে এক নজর দেখিয়ে বাহিরে চলে যায়। এদিকে মহিলাও ঘুমিয়ে যায়।
আমাদের অপারেশন কমপ্লিট হলে পেসেন্ট কে কেবিনে সিফট করা হয়।
আমি ফ্রেশ হয়ে চেম্বারে এসে বসতেই আমার আবারও মনে পরে যায়। বসা থেকে উঠে মোবাইল পার্স নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পরি।
বাড়ি এসে ইচ্ছা মতো কথা শুনতে হয়।
আমি- আব্বু আম্মু আমি একজন ডাক্তার আমার ইমারজেন্সি পেসেন্ট আসছিলো আমি তো আর আমার পেসেন্ট রেখে চলে আসতে পারি না। আমি তো বলেছি যাবো মানে যাবো।
আব্বু- ফোন দিয়ে বলতে তো পারতি কত গুলা কল দিছি?
আমি- কি জানি দেখি নাই। আর অনেক বকছো আর বকতে হবে না এখন যাচ্ছি তো। বলে আব্বু আম্মু কে জরিয়ে ধরলাম।
ড্রাইবার আঙ্কেল লাগেজ গাড়ির ডিঁকি তে ডুকালেন।
আমিও গাড়ি উঠে বসলাম গাড়িও চলতে শুরু করলো।
আমার যাওয়ার একটু ও ইচ্ছে নেই শুধু যাচ্ছি আব্বু আম্মুর খুশির জন্য ~
চলবে,

----------------------
স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
পর্ব_১৯
_____________
দীর্ঘ তিন ঘন্টা জার্নির পর চলে আসলাম গুলশান ফুপির বাড়ি।
তিনদিনে মাথা পুরা হ্যাং হয়ে যাবে এসে যা বুঝতে পারছি। আসতে না আসতেই সবাই বলছে উনাদের সাথে শপিংয়ে যেতে কি কি নাকি কেনা বাকি রয়ে গেছে। উফফ! ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও যেতে হবে।
এত্তগুলা মানুষ নাকি এক গাড়ি দিয়ে যাবে উফফ 100% লাভ মুভির মতো হয়ে গেছে। যাক বাবা তাতে আমার কি আমি এদের সাথে ঠেলাঠেলি করে যেতে পারবো না। আমি তো ডাইরেক্ট বলে দিয়েছি আমি তো আমার গাড়ি দিয়েই যাবো বাবারে জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে ওই ঠেলাঠেলি করে গেলে।
শপিংমলে এসে আরও বিরক্তিকর লাগছে।
এ বলছে এটা ভালো না এটার কালার সুন্দর না এই বেনারসি মানাচ্ছে না। না না এটা চলবে না মায়াকে মানাবে না এই সেই হেনতেন হুনতে হুনতে মোর কান জ্বালাপালা হইয়া গেতাছে।
শপিং করতে এত মানুষ কি আসে নাকি একেক মানুষের পছন্দ একেক রকমের হয় আমার এখন প্রচুর মেজাজ হচ্ছে। আপনারাই বলেন এইরকম কি সহ্য হয়।
আমি- আপনারা সবাই চুপ করেন আর ফুপি তুমিও চুপ করো আর চুপ করো বসো মায়া আপুর জন্য আমি Wedding Dress কিনবো। ছোটো বোনের তরফ থেকে ছোট্টো গিফট!
মায়া চলো আমার সাথে আর ফুপি তুমি সহ সবাই এখানেই বসে থাকবে আমরা না আসা পর্যন্ত.!
কথা শেষ করে আপুর হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম।
অনেক দেখে অনেক বেছে একটা গরজিয়াস লেহেঙ্গা চয়েস করলাম লাল কালার।
মায়া আপু- শুধু কি আমার জন্য নিবি তোর জন্য ও নে।
আমি- আমি নিয়ে আসছি।
মায়া আপু- নিচ্ছি আমার জন্য ও একটা নিলাম।
তারপর উনাদের কাছে যাি আর উনারা উনাদের টুকিটাকি জিনিস কিনেন। তারপর সবাই বাড়ি ফিরে এলাম। রাত গেয়ি বাত গেয়ি এমন টাইপ।
পরেরদিন সকালে সকাল ৭টা~
মায়া আপু সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে উঠায় আর আমিও তো এমনিতেই সকালেই উঠি।
আপু বিয়ের আগে লাস্ট বার সবাইকে নিয়ে এনজয় করতে চায় বাড়িতে কাউকে কিছুনা বলে।
সবাইকে ঘুম থেকে উঠে রেডিও হতে দেয়নি যে যা পরে রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম সেগুলো পরেই বেরোতে হলো।
দীর্ঘ দুই ঘন্টা সবাই বাইরে ঘুরাঘুরি করলাম বাহিরে এটা ওটা অনেই কিছুই খেলাম। এই ছয় বছরে আজ প্রথম মন খুলো হাসলাম আর এত এনজয় করলাম। আপুকে জরিয়ে দরে গালে চুমু দেই আর থ্যাংকস জানাই।
২দিন পর ~
আপুর বিয়ে অন্য বিয়ের মতোই হয়। খুব সুন্দর ভাবে আপুর বিদায় ও হয়ে যায়।
আমি আজ রাতেই চলে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু ফুপি এখন বেরোলে যেতে অনেক রাত হবে সাথে রাস্তায় বিপদ আপদের কথা ভেবে যেতে দিলো না কাল সকালে যেতে হবে।
কি আর করার রাতে খেয়ে শুয়ে পরলাম।
সকাল ছয়টা বাজে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হই আর নিচে চলে আসি এখনও ফুপি যেতে দিচ্ছে না। বিকেলে যেতে বলছে খুব রাগ হচ্ছে এখন। তারপর রুমে চলে এলাম ফুপিও পেছন পেছন এলো আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
ফুপি- ইতি মা তুই তো আমার একমাত্র ভাতিজি তোর যা অবস্থা তুই তো অনেক বড় ডাক্তার সহজে তো কোথাও যাস না আর সময়ও পাসনা আর ছোটো থেকে তো তোকে আদরও করতে পারিনি তাই তোকে নিজের কাছে একটু রাখতে চাচ্ছি।
আমি- ফুপি আমি কিন্তু সিউর বিকালে চলে যাবো।
ফুপি- ঠিক আছে।
দুপুরে লাঞ্চ শেষ করে সবাই বসে কিছুক্ষণ গল্প করি। এখন সময় হয়েগেছে আমার চলে যাওয়ার সবাইকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পরলাম আবার সেই আগের জীবনে ফিরে যেতে হবে।
২ঘন্টা পর~
রাস্তায় জেম ছিলো না তাই তারাতাড়ি চলে আসতে পারছি। আর কিছুদূর গেলেই আমার বাড়ি চলে আসবে। ভাবতে ভাবতে গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই দেখলাম একটা পরীর মতো দেখতে কিউট একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে মেয়েটার আশে পাশে কেউ নেই।
সাথে স্কুল ড্রেস পরে আছে কিন্তু এদিকে কাছাকাছি কোনো স্কুল নেই। হয়তো বাচ্চা টা হারিয়ে গেছে ভেবে গাড়ি থেকে নেমে বাচ্চার কাছে আসলাম আর নাম কি জিজ্ঞেস করলাম।
মেয়েটা কাঁদছে ঠিকই কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না।
মেয়েটাকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পর ওর নাম বললো আমি কিছুটা অবাক হই শুনে তবে আশ্চর্যের তো কিছু নেই হতেই পারে।
মেয়েটা বললো ওর- আমার নাম ইতি।
আমি- আচ্ছা আমার নামও ইতি!
মেয়েটা- আচ্ছা?
আমি- হুম তো আমরা কি হলাম মিতা।
মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলাম।
মেয়েটা- মিতা কি আন্টি?
আমি- উঁহু আন্টি না বললাম তো মিতা। আর মিতা হচ্ছে কারো নাম যদি অন্য কারো নামের সাথে মিলে তাহলে তাদের কে মিতা বলে আর মিতা অর্থ বন্ধু।
মেয়েটা- কিন্তু আপনি তো আমার থেকে অনেক তাহলে আপনি আমার বন্ধু কিভাবে হবেন।
আমি- উমম বন্ধুত্ব বয়স দেখে হয় না। আর আমরা আজ থেকে বন্ধু ঠিক আছে তুমি ছোট ইতি আর আমি বড় ইতি তুমি আমাকে বড় ইতি বললে আর আমি তোমাকে ছোট ইতি ওকে।
ছোট- আমি আপনাকে মিতাই বলবো। হিহিহি
মেয়েটার কথা শুনে অটোমেটিক হাসি চলে আসলো।
মেয়েটাকে জরিয়ে ধরে চুমু দিলাম গালে।
আমাদের কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
আমি- তোমার বাড়ি কোথায় আর হারিয়ে গেছো কিভাবে?
ছোট ইতি- আমি আব্বু দিদা নতুন আসছি এই শহরে।
আমি- আর আম্মু?
ছোট ইতি- আমার আম্মু আমায় জন্ম দিতে গিয়ে মারূ গেছে। আব্বু বলেছে। বলেই ও কেঁদে দিলো। আমি ওর চোখের পানি মুছে দিলাম আবারও জরিয়ে ধরলাম।
আমি- তোমার বাড়ির এড্রেস জানো? এমনিতেও সন্ধ্যা হয়ে গেছে তোমার এভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরাঘুরি করা বিপদজনক। এড্রেস জানলে বলো আমি তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি। তোমার আব্বু আর দিদা তোমাকে খুঁজছে হয়তো।
ছোট ইতি- হুম জানি। এড্রেস হলো-
ও এড্রেস বলতেই ওকে গাড়িতে উঠিয়ে বসালাম আর নিজেও বসলাম। ড্রাইবার আঙ্কেলকে এড্রেস বললাম উনিও গাড়ি ঘোড়ালেন আর চলতে লাগলাম।
মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
খুবই মিষ্টি মেয়ে।
গাড়ির জানালা দিয়ে ছোট ইতি ওর স্কুল দেখালো আমাকে।
ছোট ইতি- মিতা ওই স্কুলে টাতে পড়ি আমি।
আমি- আচ্ছা তাহলে আমি প্রতিদিন তোমার সাথে এখানেই দেখা করতে আসবো।
ছোট ইতি- সত্যি?
আমি- হুম।
ছোট ইতি- প্রমিজ।
আমি- ওকে প্রমিজ। হেসে দিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলাম আর কপালে গালে চুমু দিলাম। একটু সময়ে আমাকে ওর অনেকটা মায়ায় জরিয়ে ফেলেছে।
দেখতে দেখতে চলে এলাম ওর বাড়ি,, কলিংবেল বাজাতেই একটা মহিলা কাঁদতে কাঁদতে দরজা খুললো।
আর আমার সাথে ছোট ইতিকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ওকে জরিয়ে ধরলো আর উড়াধুড়া কিস করছে।
নিশ্চয়ই ওর দিদাই হবে।
পাঁচ মিনিট পর নাতনীকে ছেড়ে আমার দিকে তাকালেন আমি উনার দিকে হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছি।
উনি দাঁড়িয়ে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
নিরবতা ভেঙে আমিই বললাম।
আমি- আসসালামু আলাইকুম আন্টি আপনি নিশ্চয়ই ইতির দিদা?
আন্টি- হ্যাঁ মা কিন্তু তুমি কে তোমাকে তো চিনলাম না।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই পিচ্চি ইতি।
ছোট ইতি- দিদা ও হচ্ছে আমার মিতা.! আমার নতুন বন্ধু।
ওর কথা শুনে হেসে দিলাম আর বসে ওকে জরিয়ে ধরলাম।
আমাদের কে দেখে আন্টি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন।
আমি- কি হয়েছে আন্টি এভাবে কেনো তাকিয়ে আছেন?
ছোট ইতি- মিতা ভেতরে চলো না।
আন্টি- ভেতরে এসো মা।
আমিও ভেতরে গেলাম সোফায় বসলাম আমার পাশেই ইতি বসছে।।
আন্টি আবার ও আগের মতো তাকিয়ে আছে।আমি আবার ও জিজ্ঞেস করলাম।
আন্টি বললেন- ইতি কারো সাথেই কথা বলে না, খুব কম কথা বলে। আর তোমার সাথে এত কথা বলছে হাসছে মনে হচ্ছে তুমি ওর অনেক দিনের চেনা।
আমি- আন্টি আমরা বন্ধু আর বন্ধুত্বে সব চলে।
আন্টি- তুমি ওকে কোথায় পেলে আমরা ও অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম ও হারিয়ে গেছে তাই।
তারপর আমি সব বললাম কিভাবে আর কোথায় পেলাম।
আন্টি সব শুনে আমার হাতে ধরে আমাকে অনেকবার ধন্যবাদ জানালেন। আর বললেন এই যুগে আমার তো মানুষের নাকি খুব অভাব।
আন্টি আমার সাথে কথা বলার ফাঁকে ছোট ইতির আব্বুকে কল দেয়। আর সে বাড়ি আসছে বলে কল কেটে দেয় আর আমাকেও থাকতে বলে।
আমার সম্পর্কে তেমন কোনো কিছুই বলি নাই।
আন্টি- সারাদিন ধরে খুঁজছে আমার ছেলে ওকে। তুমি আর একটু অপেক্ষা করো ও এখন চলেই আসবে।
কিন্তু আমার এদিকে অনেক লেইট হয়ে যাচ্ছে বাড়ি যেতে হবে। আব্বু আম্মু ও অনেকবার কল দিয়েছে।
আমি- অনেক তো হলো আন্টি এবার আমাকে যেতে হবে আবার অন্য দিন আসবো। আর আমি যদি ইতির সাথে ওর স্কুলে দেখা করতে যাই তাহলে কি আপনাদের কোনো সমস্যা হবে?
আন্টি- না না আমার কোনো সমস্যা নেই মাঝে মাঝে বাড়িতেও এসো।
আমি- আচ্ছা আন্টি এখন আমি আসি।
উঠে দাঁড়ালাম ছোট ইতিকে জরিয়ে ধরে ওর গালে কপালে চুমু একে দিলাম আর ওর সাথে একটা সেলফি তুললাম। তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম।
আমাদের গাড়ি গেইট দিয়ে বেরোতেই অন্য একটা গাড়ি ঢুকলো হয়তো ছোট ইতির আব্বু।
বাড়িতে এসে আম্মু আব্বু জিজ্ঞেস করলেন আমি দেরি কেনো করছি।
আমিও সব খুলে বলি। তারপর রুমে চলে আসি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসি।
ডিনারের সময় হয়ে গেছে তাই ডিনার করে রুমে চলে আসি। ফোনের গ্যালারিতে গিয়ে ছোট্ট ইতির ছবিটা দেখি তারপর ফোন সাইডে রেখে ঘুমিয়ে পরি।
সকালে নাস্তা করে হাসপাতাল চলে আসি।
তিনদিন পর আসছি তাই একটু ব্যস্ত হয়ে পরেছি।
এদিকে ভুলেই গেছি ছোট্ট ইতির কথা।
ফোনের এলার্ম বাজতেই মনে হলো স্কুলের কথা।
সব কাজ ফেলে চলে এলাম স্কুলের সামনে আসতেই কিছুক্ষণের মধ্যে স্কুল ছুটি হয় আর ছোট্ট ইতি দৌঁড়ে আসছে আমার দিকে।
ছোট ইতি- মিতততততা।
এসেই আমাকে জরিয়ে ধরে আমিও ধরি সাথে ইতি আমাকে অনেকগুলা চুমু দেয়।
সামনেই দাঁড়িয়ে আছে ইতির দিদা।
আমাদের বন্ধুত্ব এভাবেই চলছে। আমিও প্রতিদিন স্কুলে যাই ইতির সাথে দেখা করতে আজব মিল আমাদের আমার যা যা পছন্দ ঠিক সেগুলো ওরও পছন্দ।
আজ মুন্নী কল দিয়েছিলো আর সবাই এক সাথে দেখা করার কথা বললো।
এই ছয় বছরে মুন্নী, রুবেল। আব্রু, শ্রাবন। মিম আর নাঈমের বিয়ে হয়েগেছে।
তিনজনেরই বাচ্চা আছে।
মুন্নীর ছেলে চার বছরের।
মিমের মেয়ে দুই বছর হয় নাই।
আব্রুর ও ছেলে বয়স তিন বছর।
আর আমি সিঙ্গেল একেই বলে সৌভাগ্য।
বিকালে~
সবাই মিলে চলে আসলাম একটি পার্কে ওদের তিনজনের বাচ্চারা খুব দুষ্ট।
আমাকে আন্টি আন্টি বলছে শুনতে খুব কিউট লাগছে। ওদেরকে আমি ছোট্ট ইতির কথা বলি।
মুন্নী- ওও তাই ডাক্তার ইতি ম্যামের মুখে হাসি ফুটেছে।
আব্রু- তাই তুই আমাদের ভুলে গেছিস?
মিম- মেয়েটা কেমন?
ওদেরকে ছোট ইতির ছবি দেখালাম।
আমি- জানিস ওর নাম তো সেমই আবার আমাদের পছন্দ ও এক।
তারপরও অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম আমার সব কথা শুধু ছোট ইতিকে নিয়েই ছিলো।
এভাবেই চলছে আমার দিন। ছোট ইতি জেনো আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে ওর সাথে দেখা না করলে আমার ভালোই লাগে না। ওর মিষ্টি চেহারাটা না দেখলে জেনো ঘুমই আসে না। স্যারের পর স্যারের মতো করে আজ আমি ছোট্ট ইতিকে ভালোবাসি।
আজও যাচ্ছি ওর সাথে দেখা করতে।
স্কুল এর সামনে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে ইতি আর ওর দিদা।
গাড়ি থেকে নেমে ওদের কাছে যেতেই ইতি আমাকে জরিয়ে ধরলো।
আন্টি- মা আমার নাতনি বাড়িতে গিয়ে সারাদিন শুধু তোমার কথাই বলে। আর ওর কালকে জন্মদিন এই নাও কার্ড তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে। ও তোমার কথা এত বলে যে আমার ছেলেও রিকুয়েষ্ট করেছে তোমাকে যেতেই হবে।
আমি- আচ্ছা আন্টি যাবো।
তারপর দু’জনেই একটা দোকান থেকে আইসক্রিম কিনলাম আর হাত ধরে রাস্তার পাশে হাটছি আর খাচ্ছি সাথে ছোট ইতি খিলখিল করে হাসছে সাথে আমিও হাসছি ওর হাসি দেখে। আর আমাদেরকে মুগ্ধ নয়নে দেখছে আন্টি। না জানি কি ভাবছে মনে মনে।
তারপর চলে আসি।
পরেরদিন হাসপাতাল থেকে বাড়ি তাড়াতাড়ি চলে আসি।
তেমন সাজগুজ করিনি শুধু চুল বেঁধেছি আর শাড়ি পরেছি আজ ছয় বছর পর আবারও শাড়ি পরতে ইচ্ছে হলো তাই পরলাম।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে মার্কেটে চলে আসি আর ওর জন্য খুব সুন্দর দেখে একটা গিফট কিনি।
গিফট নিয়ে আবারও গাড়িতে উঠি আর চলে আসে ওর বাড়িতে।
ভালোই বড় করে অনুষ্ঠান করেছে বাড়ি সাজানোও খুব সুন্দর হয়েছে।
ভেতরে ঢুকতেই ইতি না জানি কিভাবে আমাকে দেখে ফেলছে আমাকে দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরে।
সামনে আন্টি দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি ইতির সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে আছি আর ওর গাল চেপে ধরছি।
পেছন থেকে~
– ইতির মুখে আপনার কথা অনেক শুনেছি কিন্তু আপনার সাথে কখনো কথা-ই হয় নি।
ছোট ইতির আব্বুর ভয়েস শুনে থমকে গেলাম।
আমি- স্যা.র স্যার.?
কোনো ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে দাঁড়ালাম।
সাহস হচ্ছে না পেছনে তাকাতে তবুও তাকালাম।
পেছনে তাকাতেই ৪২০ বোল্টের শকট খেলাম।
দুই চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি পরছে।
আমি- স্যার. আপনি।
পাশ থেকে ছোট ইতি।
– আব্বু। বলেই আমার হাত ছেড়ে দিয়ে স্যারকে গিয়ে জরিয়ে ধরে।
আমি- আব্বু?
ছোট ইতি- মিতা তুমি কাঁদছো কেনো?
স্যার নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
আর আমার চোখ বেয়ে পানি পরছে।
আন্টি- কি বললে তুমি স্যার?
আন্টির দিকে ঘুরে তাকালাম।
আন্টি- মা তুমি কাঁদছো কেনো?
আন্টির থেকে মুখ সরিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসলাম।
বাহিরে এসে।
আমি- ড্রাইবার আঙ্কেল গাড়ি স্টার্ট দাও! বলেই দুই হাত মুখ চেপে কেঁদে দিলাম।
ড্রাইবার আঙ্কেল- মামনি কি হয়েছে তোমার মা কাঁদছো কেনো?
আমি- আঙ্কেল গাড়ি চালাও প্লিজ।
বাড়িতে এসেই দৌড়ে উপরে চলে আসলাম।
রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম।
চিৎকার করে কাঁদছি।
আব্বু আম্মু আমাকে পেছন থেকে অনেক ডেকে ছিলো সারা না পেয়ে পেছন পেছন উপরে।
চলবে

-------------- -------

স্যার I Love You
পর্ব ২০
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
________________
বাড়িতে এসেই দৌড়ে উপরে চলে আসলাম। রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম। চিৎকার করে কাঁদছি।
আব্বু আম্মু আমাকে পেছন থেকে অনেক ডেকে ছিলো সারা না পেয়ে পেছন পেছন উপরে চলে আসে সাথে ড্রাইবার আঙ্কেল ও উনার পেটের মধ্যে কোনো কথাই থাকে না এবারও এসে সব বলে দেয়। আমি কাঁদছি কিন্তু কেনো সেটা অজানা।
আব্বু অনেকবার দরজা ধাক্কাচ্ছে খুলছে না। এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে ফেলে ভেতরে চলে আসে।
আমি রুমের এক কোনায় বসে দুই হাঁটুর মাঝে পা গুজে কাঁদতেছি। আম্মু আব্বু দৌঁড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে।
চোখের পানি মুছে দিচ্ছে আর বার বার জিজ্ঞেস করছে।
আব্বু আম্মু ছোট ইতির কথা সব জানে আমি বলেছি।
আমি কেঁদেই যাচ্ছি।
আব্বু আম্মু- কি হয়েছে মামনি বল।
আমি- আ.ব্বু!
আব্বু- আমার সোনা মা কাঁদিস না মা প্লিজ বল কি হয়েছে।
আম্মু- কেনো কাঁদছিস এভাবে?
আমি- আম্মু ওই ছোট্ট ইতি।
আব্বু- ইতি কি মামনি?
আমি- আমি আজকে ওর বা’বাবাকে দেখেছি!
আব্বু- তাতে এভাবে কান্না করার কি আছে?
আম্মু- ওর বাবা তোকে কিছু বলেছে বলে কাঁদছিস?
আমি মাথা নাড়িয়ে নাবোধক ইশারা করলাম।
আব্বু- তাহলে বল প্লিজ কি হয়েছে কে কি বলেছে আমার মেয়েকে বল।
আমি- আব্বু আমি যাকে তন্নতন্ন করে খুঁজছিলাম এই ছয় বছরে তাকে আমি পেয়ে গেছি আর সে ওই ছোট ইতির বাবা।
আব্বু- মানে?
আম্মু- কি বললি?
আমি- আব্বু আম্মু ইতির বাবা আর কেউ নয় আমার স্যার।
আর স্যারের পাঁচ বছরের মেয়েও আছে।
কাঁদতে কাঁদতে আব্বু কে জরিয়ে ধরলাম। আজ আবার সেই ছয় বছর আগের পরিস্থিতিতে চলে আসলাম।
আম্মু- তুই আর বাচ্চা মেয়েটার সাথে দেখা করিস না।
অনেক রাতে আব্বু কাঁধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরি।
আব্বি আম্মু আজ আমার পাশেই বসে থাকে সারারাত।
রাতে ঘুমের মধ্যে অনেকবার কাঁদতে কাঁদতে গুঙিয়ে উঠি।
আমি স্যারের বাড়ি থেকে চলে আসার পর ছোট ইতি কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে যায় স্যার অনেক বার বুঝানোর চেষ্টা করে জন্মদিনের গেস্ট আসছে কেক কাটতে নিচে চলার জন্য কিন্তু ইতি বেবি কোনো ভাবেই রাজি হয়নি এক কথা আমার মিতা না আসলে আমি কেক কাটবো না। কোনো উপায় না পেশে স্যার ও পার্টি ক্যানসেল করে দেয়।
পরেরদিন সকাল থেকে আমি আগের রুটিনে চলা শুরু করে দেই।
আজ আর ছোট ইতির স্কুলেও যাই না সে অনেকবার কল দিয়েছিলো কিন্তু আমি রিসিভ করিনি।
বাচ্চা মেয়ে কি বলতো তার ঠিক নেই কল রিসিভ করলেই হাজারটা প্রশ্ন করবে যার উত্তর আমি দিতে পারবো না।
দুইদিন আর স্কুলের সামনে যাইনি।
ওইদিকে ছোটো ইতি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিছে। কান্না করছে জিদ ধরেছে সে তার মিতার সাথে দেখা করবে কেনো তার মিতা তার সাথে দেখা করতে আসছে না। তাকে যদি তার মিতার কাছে নিয়ে না যায় তাহলে সে আর কখনোই খাবে না।
আন্টি- শাওন বাবা ওকে নিয়ে যা ডাক্তার ইতির হাসপাতালের নাম আমি জানি তুই ওকে একটি বার নিয়ে দেখা করে আয়।
শাওন- কিন্তু মা আমি?
আন্টি- শাওন আমি কোনো কথা শুনতে চাই না তুই যাবি বাস।
শাওন- ঠিক আছে এড্রেস বলো।
আন্টি এড্রেস দিলে শাওন ছোট ইতিকে নিয়ে বেরিয়ে পরে।
আন্টি- তুই কেনো যেতে চাচ্ছিস না সেটা আমি জানি। আর ওইদিন ইতি কেনো কেঁদে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো সেটা তখন না বুঝলেও আজ সকালে তোর মানিব্যাগে ওর ছবি দেখে বুঝেছি এতদিন শুধু ওই মেয়েটার নাম জানতাম তুই ওকে কত ভালোবাসিস সেটা আমাকে বলেছিস ওকে ছাড়া কখনো কাউকে বিয়ে করবি না সেটাও বলেছিলি কিন্তু ওর ছবি কখনো দেখাসনি আজ আমি নিজেই দেখেছি। ওর সাথে দ্বিতীয় দিন দেখা হয় স্কুলে আর তখন ওর নাম টা শুনে আমার মনে কেমন জেনো সন্দেহ হয় তোকে জিজ্ঞেস করিনি জানতাম তুই কিছু বলবি না। তাইতো আজ যখন তুই শাওয়ার নিতে ঢুকেছিলি তখন তোর মানিব্যাগ সার্চ করি আর মানিব্যাগেই লুকানো ছিলো ছোট্ট একটা ছবি আর সে ছবিটা ইতির ছিলো তখনই আমি সবটা বুঝতে পারি আর ওই মেয়ের নাম আমি কখনো ভুলিনি কারণ ওই মেয়ের নামেই যে তুই আমার দিদি ভাইয়ের নামকরণ করেছিলি সে নাম কি করে ভুলে যেতাম। আমার দিদি ভাইয়ের জন্য তোদের দু’জনের ভালোবাসা কখনোই অপূর্ণ আমি হতে দিবো না তোদের মিল আমি করাবোই। আমাকে ইতির সাথে কথা বলতেই হবে।
এই মাত্র একটা সার্জারী করে আমার চেম্বারে ঢুকতে যাবো। পেছন থেকে নাহিদা বলে উঠল,
নাহিদা- ম্যাম আপনার সাথে একজন দেখা করতে আসছে খুব জরুরি।
আমি- আচ্ছা আমার চেম্বারে পাঠিয়ে দাও!
নাহিদা- আচ্ছা ম্যাম।
চেম্বারে এসে বসতে যাবো এমন সময় কেউ পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো পুরো জেনো থমকে গেলাম।
ছোট্ট ছোট্ট দুটি হাত ওর স্পর্শ চিনতে আমার একটু সময় লাগেনি।
ওর হাতের উপর আমার হাত রাখলাম।
আমি- ইতি!
পেছনে ঘুরে ওর সামনে বসলাম। ওর গুলুমুলু গালে হাত রাখলাম ওকে জরিয়ে ধরলাম ওর গালে কপালে চুমু দিলাম।
ছোট ইতি- মিতা তুমি আমার উপর রাগ করেছো?
আমি- কোই না তো সোনা আমি কি তোমার সাথে রাগ করতে পারি হুম বলো?
ছোট ইতি- তাহলে তুমি আমার সাথে দেখা করতে যেতে না কেনো? তুমি জানো আমি তোমার জন্য কত অপেক্ষা করেছি এতগুলো মিস করছি তোমাকে?
আমি- আমিও তোমাকে অনেক মিস করছি সোনা কিন্তু আমি এদিকে ব্যস্ত ছিলাম তাই যেতে পারিনি সরি।
ছোট ইতি- ইট’স ওকে। তুমি যাওনি তো কি হইছে দেখো আমি চলে আসছি।
আমি- হুম তুমি তুমি এখানে কিভাবে আসছো? কে আসছে তোমার সাথে?
ছোট ইতি- আব্বু নিয়ে আসছে আমাকে?
আমি- আব্বু?
ছোট্ট ইতি- ওই তো আব্বু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ওর কথা শুনে দরজার দিকে তাকালাম স্যার দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
স্যারকে দেখে উঠে দাঁড়ালাম কিন্তু কোনো কথা বলিনি।
আমি ইতিকে নিয়ে আমার চেয়ারে বসলাম স্যারও আমার সামনের চেয়ারে বসলেন।
আমি স্যারের সাথে কোনো কথা বলছি না স্যারও বলছে না শুধু তাকিয়ে দেখছে।
আমি শুধু ইতির সাথেই গল্প করছি।
নাহিদা- আসবো ম্যাম?
আমি- হুম আসো?
নাহিদা- ম্যাম আপনাদের কারো জন্য কিছু আনবো?
আমি- হট কফি আর উনাকে জিজ্ঞেস করো উনি কি নিবেন।
নাহিদা- স্যার আপনার জন্য কি আনবো?
স্যার- হট কফি।
আমি- ইতি তুমি কি খাবা?
ছোট্ট ইতি- আইসক্রিম।
আমি- তোমার না ঠান্ডা লাগছে আইসক্রিম খাওয়া যাবে না চকলেট খাবা?
ছোট্ট ইতি- হু খাবো তো!
আমি- নাহিদা ইতির জন্য চকলেট নিয়ে এসো এখন যাও!
ছোট্ট ইতি- মিতা তুমি জানলে কিভাবে আমার যে ঠান্ডা লেগেছে আমি তো তোমাকে বলিওনি তাহলে?
আমি- কারণ আমি ডাক্তার তাই তোমাকে দেখেই বুঝে গেছি।
ছোট্ট ইতি- ডাক্তাররা বুঝি দেখলেই সব বুঝে যায়।
আমি- হুম বুঝে যায় তো যেমন আমি বুঝে গেছি।
কিছুক্ষণ পর নাহিদা কফি এনে দিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর ছোট ইতি- চলো না মিতা আমরা বাহিরে যাই।
আমি- কিন্তু আমার পেসেন্ট চলে আসবে ৩টা থেকে আমার থাকতে হবে।
স্যার- তিনটা এখনো বাজেনি তিনটা বাজতে এখনও এক ঘন্টা বাকি!
ছোট ইতি- চলো না প্লিজ চলো।
আমি- আচ্ছা চলো।
বলেই পিচ্চিটার হাত ধরে বাহিরে চলে এলাম।
স্যার ড্রাইবিং সিটে বসেছেন।
ইতি- মিতা তুমি আমার সাথে সামনে বসবে আমি তোমার কোলে বসবো।
আমি- কিন্তু?
ছোট্ট ইতি আমার আর কিছু বলতেই দিলো না হাত ধরে টেনে ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে দিলো আর ও কোলে বসলো। কেমন জেনো আনইজি ফিল হচ্ছে।
এই প্রথম স্যারের পাশে বসছি না কিন্তু আজ এমন কেনো লাগছে তা নিজেও জানি না। কিছুক্ষণ পর রাস্তার পাশে গাড়ি থামে।
ছোট্ট ইতি মাঝখানে ওপাশে স্যার এপাশে আমি।
আজ আমার সেই ছয় বছর আগে স্যারের সাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা মনে পরছে। স্যারের হাত ধরতে চাওয়া স্যারের তাতে রাগ করা কৃষক কে মারা তারপর দৌড়ে পালানো। ভাবতে ভাবতে হেঁসে দিলাম।
ছোট্ট ইতি- মিতা তুমি হাসছো কেনো?
আমি- ওই কিছু না। কিছু পুরানো কথা মনে পরে গেলো তাই।
নীরবতা পালন করছি! ছোট্ট ইতি বেলুন নিয়ে খেলতে খেলতে একটু দুরে চলে গেছে।
স্যার- কিছু বলছো না কেনো ইতি?
আমি- আমাকে বলছেন?
স্যার- হুম!
আমি- ও বলার মতো কিছু নেই তাই বলছি না।
স্যার- সত্যিই নেই?
আমি- উমম আছে কিন্তু বলতে চাই না।
স্যার- বিয়ে করো নি কেনো এখনো?
আমি- আপনাকে খুঁজে পাইনি তাই।
স্যার- কেনো?
আমি- কেনো কেনো? আপনি জিজ্ঞেস করছেন কেনো? আপনি জানেন না কেনো?
ছয় বছর আগে হঠাৎ না বলে চলে গিয়ে ছিলেন আর ফিরে আসেননি এমন কি কোথায় যাচ্ছেন কেনো যাচ্ছেন কোনো কিচ্ছু বলে যান নি। এমন কোনো জায়গা বাকি রাখিনি আপনাকে খোঁজা লর সব জায়গাতে খুঁজেছি কোথাও পাইনি। কেনো পালিয়ে গিয়েছিলেন আজ পর্যন্ত আপনার অপেক্ষায় পহর গুনছিলাম আর ছয় বছর পর এলেন তো সাথে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে সঙ্গে নিয়ে। আপনি তো বলেছিলেন আমকে ভালোবাসেন তাহলে পারলেন কি করে অন্য কাউকে বিয়ে করতে আমি তো পারিনি আপনার জায়গায় অন্য কাউকে চিন্তা করতে আপনি কিভাবে পারলেন। কেনো চলে গিয়েছিলেন এত কষ্ট দিয়ে কি পেয়েছেন আপনি শান্তি পেয়েছেন আপনি?
স্যার- কষ্ট কি শুধু তুমিই পেয়েছো আমি পাইনি?
আমি- আপনি আর কষ্ট কেনো কি জন্য পেয়েছেন? বলেই স্যারকে ধাক্কা দিয়ে একটু দূরে সরিয়ে দিলাম হাত দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে স্যারের সামনে থেকে চলে আসছি। আর এক মিনিটও উনার সামনে দাঁড়াতে চাই না একটা ট্যাক্সি করে বাড়ির উদ্দেশ্য চলে আসলাম আজ আর হাসপাতাল যাবো না কল করে নাহিদাকে জানিয়ে দেই।
স্যার- আমিও যে আজও শুধু তোমাকেই ভালোবাসি ইতি কিন্তু তোমাকে আমি আমার করতে পারবো না। আমার মেয়ে যে আমার দায়িত্ব আমি আজও শুধু তোমারই আছি ইতি আর শুধু তোমারই থাকবো। আমার মনের রাজ্যে শুধু তোমারই বসবাস।
তুমি তোমার ভালোবাসা কষ্ট প্রকাশ করতে পারো কাঁদতে পারো কিন্তু আমি তো সেটাও করতে পারি না। কারণ আমি যে ছেলে এই শহরে ছেলেদের কষ্ট শুধু তাদের মনের মধ্যেই দাফন করে রাখতে হয়। ছেলেদের যে কাঁদতে নেই। আমি শুধুই তোমার ইতি তোমাকে হয়তো আর কখনো বলা হবে না।
পেছনে দাঁড়িয়ে ছোট্ট ইতি সব শুনেছে তা খেয়াল করেনি শাওন।
বাড়ি এসে!
ছোট ইতি- দিদা ও দিদা!
আন্টি- আরে দিদিভাই এত খুশি কেনো আজ?
ছোট ইতি- আমি মিতার সাথে দেখা করেছি আর সাথে ঘুরতেও গিয়েছি অনেক মজা হয়েছে।
শাওন ওখান থেকে সোজা রুমে চলে আসে।
ইতি- দিদা এই ভালোবাসা কি? কেউ কাউকে ভালোবাসলে তাকে আপন করতে পারে না কেনো?
আন্টি- দিদিভাই তুমি এইসব কথা কোথায় শুনেছো?
ইতি- দিদা আজ যখন আনরা ঘুরতে গেছিলাম তখন মিতা কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় আর মিতাকে যেতে দেখে আমিও সামনে এগিয়ে আসি আর আব্বুকে নিজে নিজে বলতে শুনি।
আন্টি- কি শুনেছো কি বলেছে তোমার আব্বু?
তারপর ছোট্ট ইতি সব কথা যা যা শুনেছিলো সব বলে।
আন্টি- দিদিভাই তুমি যে তোমার মিতার জন্য কেদেছিলো দেখা করতে আসেনি বলে আর খাওয়া ও বন্ধ করে দিয়েছিলো কেনো জানো?
ছোট্ট ইতি- কেনো দিদা?
আন্টি- কারণ তুমি তোমার মিতাকে ভালোবাসো আর একেই বলে ভালাবাসা। আর তোমার আব্বু ও তোমার মিতাকে ভালোবাসে।
ছোট ইতি- ওওও এক আঙুল থুতনিতে দিয়ে।
আন্টি- আমাদের ওদের দুজনের ভালোবাসা মিল করানো উচিত।
ইতি- কিভাবে?
আন্টি- তুমি কি চাও তোমার মিতা সারাজীবনের জন্য তোমার কাছে থাকুক?
ইতি- হো চাই তো দিদা।
আন্টি- তাহলে তোমার মিতাকে তোমার আব্বুর সাথে বিয়ে দিতে হবে তাহলেই তোমার মিতা সারাজীবন তোমার কাছে থাকবে আর কোথাও যাবে না।
ইতি- তাইলে বিয়ে দিয়া দাও দিদা।
আন্টি- তোমার আব্বুর সাথে বিয়ে হইলে তোমার মিতা তোমার আম্মু হয়ে যাবে কিন্তু.?
ইতি- আম্মু?
আন্টি- তুমি তো এতদিন আম্মুর জন্য কান্না করেছো আজ তোমার প্রিয় মিতা তোমার আম্মু হয়ে এলে তোমাকে অনেক ভালোবাসবে আদর করবে একসাথে ঘুমাবে খাইয়ে দিবে।
ইতি- সত্যি দিদা তাহলে এনে দাও আমার মিতাকে আমার আম্মু বানিয়ে।
আন্টি- তার জন্য আমাদের একটা কাজ করতে হবে।
ইতি- কি দিদা।
আন্টি- কানে কানে শোনো।
তারপর কানাকানি হলো।
পরেরদিন সকালে-
শাওন ডাইনিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছে।
ইতি- আব্বু।
শাওন- বলো আম্মু?
ইতি- আব্বু আমার আম্মু চাই!
ইতির কথা শুনে শাওনের কাশি উঠে গেলো!
শাওনের মা- নে নে বাবা পানি খা।
শাওন গ্লাস টা নিয়ে পানি খেয়ে শাওন গলা কেশে নেয়।
শাওন- কি বললে তুমি?
ইতি- আমি আম্মু চাই আমার মিতাকে এনে দাও।
শাওন ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইতির দিকে।
শাওন- মা ও কি বলছে?
– বাচ্চা মেয়ে যা বুঝেছে তাই বলছে আর ইতি তো দিদি ভাইকে অনেক ভালোও বাসে।
শাওন- মা তুমি বুঝছো না।
– কি ভাববো? তুই ও তো ওকেই ভালোবাসিস তাহলে বিয়ে করতে পারবি না কেন? কেনো দূরে সরিয়ে রেখেছিস মেয়েটাকে? মেয়েটা তো তোকে আজও ভালোবাসে তাহলে কেনো কষ্ট পাচ্ছিস দু’জনে?
শাওন- মা চুপ করো আর তুমি কিভাবে জানলে ওই সেই ইতি!
– আমি তোর মানিব্যাগে ইতির ছবি দেখেছি এই ছয় বছরে তুই ও অনেক কষ্ট পাচ্ছিস বাবা আমি মা হয়ে তোর কষ্ট সহ্য করতে পারি না বাবা।
শাওন- মা তা আর হবে না মা আমার সাথে যে ছোট্ট ইতি আছে বড় ইতি নাই বা হলো।
আন্টি- শাওন শোন বাবা।
শাওন টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো।
ইতি- দিদা।
– চিন্তা করিস না দিদিভাই আমি তোর মিতাকে তোর আম্মু বানাবোই। তোর মিতার নাম্বার টা দে তো।
এদিকে আমি বাড়ির সাদে বসে দোলনায় দোল খাচ্ছিলাম আর গল্প পড়ছিলাম লেখিকা শারমিন আক্তার বর্ষা গল্পের নাম “পাগল প্রেমিকা” খুব শুরুটা অনেক সুন্দর কিন্তু শেষের দিকে কষ্ট কান্না চলে আসলো।
এদিকে হঠাৎ ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখি আননোন নাম্বার রিসিভ করতে চাইনি তবুও করলম।
ফোন রিসিভ করে কানে লাগাতেই অপর পাশ থেকে বললো।
আন্টি- হ্যালো ইতি?
আমি- আসসালামু আলাইকুম কে আপনি?
আন্টি- ওয়াআলাকুমুস সালাম। আমি তোমার ছোট্ট ইতির দিদা বলছি।
আমি- ও আন্টি আ’ম সরি আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।
আন্টি- চিনবেই বা কিভাবে আজ আমরা প্রথম ফোনে কথা বলছি। যাক বাদ দাও কেমন আছো মা?
আমি- আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি আন্টি আপনি কেমন আছেন?
আন্টি- আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমাকে যার জন্য কল দিয়েছিলাম আজ লাঞ্চে আমার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে পারবে তোমাকে অনেক কথা বলার আছে যদি তুমি ফ্রি থাকো তাহলে এসো আমি অপেক্ষা করবো।
আমি- আচ্ছা আন্টি আমি আসবো আর আমি আজ বাড়িতেই আমার আজ ছুটি আমি আসবো। কোন রেস্টুরেন্টে যেতে হবে আপনি এড্রেস মেসেজ করে দিবেন ওকে আন্টি।
আন্টি- আচ্ছা মা তাহলে এখন রাখি।
আমি- জি আল্লাহ হাফেজ।
কল কেটে দিলাম।
সাড়ে ১২টা বাজে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলাম।
রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামতেই গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা দিলাম। রেস্টুরেন্টের ভেতরে আসতেই দেখি আন্টি আগে থেকেই ওখান একটা টেবিল বুক করে বসে আছে। আমিও হাঁটতে হাঁটতে গেলাম ওনার কাছে। আর একটা চেয়ার টেনে বসলাম।
আন্টিকে সালাম দেই উনি উত্তর নেন। কেমন আছে জিজ্ঞেস করি উনি বলেন ভালো আছি।
তারপর টুকটাক কথা হলো আমাদের।
এরই মধ্যে ওয়েটার অর্ডার নিতে আসছে।
আন্টি- মা কি খাবে বলো!
আমি- আপনি যা অর্ডার দিবেন তাই।
তারপর আন্টি অর্ডার দিলো।
ক্ষণিকের মধ্যে খাবার সার্ভ করা হলো। দুজনেই খেতে শুরু করি।
একটু আসতে আর কম কম খাচ্ছি বেশি তারাহুড়া করে খাওয়া ঠিক না। তবে বেশি বেশি খেলে আমাকে খাদক ভাববে তাই কমকম খাচ্ছি তাছাড়া আমি এমনিতেও কম-ই খাই।
আমি- আন্টি আপনি আমাকে কিছু বলার জন্য এখানে ডেকে ছিলেন কিন্তু কিছুই তো বললেন না। (খেতে খেতে প্রশ্ন করলাম)
আন্টি- এখানে নয় মা। অন্য কোথাও বলবো এখন খাও।
আমাদের খাবারের পর্ব শেষ হলে রেস্টুরেন্টের বিল দিয়ে আমরা বেরিয়ে যাই।
বিল দিতে সময় একখান কান্ড ঘটে ছিলো।
আমি আর আন্টি বিল আমি দেবো এইটা নিয়া একটু কথা কাটাকাটি হচ্ছিল শেষে আমিই হেরে গেলাম বিল আন্টিই দিলো।
এখন জানি না কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।
চলুন আমার সাথে আপনারাও দেখি কোথায় নিয়ে যান।
শহর থেকে কিছুটা দূরে গ্রাম্য পরিবেশ। একটা চায়ের দোকানে আন্টি ঢুকলেন দুইটা চা দিতে বললেন। আমরা বাহিরের বেঞ্চে বসেছি।
আশে পাশে তেমন বাড়ি-ঘর নেই অনেকটা দূরে দূরে।
দোকানের সামনে পেছনে ধান ক্ষেত অনেক বড়…!
প্রত্যেকটি ধান ক্ষেত দেখতে অপূর্ব সুন্দর লাগছে।
ধানগুলো পেকে গেছে। অনেক কৃষকেরা তো অনেক ক্ষেতের ধান কাটা শুরুও করে দিয়েছে।
দোকানদার আঙ্কেল এসে চা দিয়ে গেলেন।
চায়ে চুমুক দিচ্ছি আর ভাবছি এখানে সকালটা না জানি কত সুন্দর হয়।
একদিন আসবো এই শীতে কুয়াশা মাখা সকাল দেখতে।
খালি পায়ে হাঁটবো ভেজা ঘাসে।
ভেজা ঘাসের উপর থাকা
বিন্দু বিন্দু কুয়াশার ফোঁটা ফোঁটা পানি
যখন আমার পায়ের নিচে পা স্পর্শ করবে
উষ্ণতা ছুঁয়ে যাবে পুরো দেহে
শীতল হয়ে যাবো ওই ঠান্ডা সকালে।
(মনে মনে কবিতা বানিয়ে ফেললাম)
আমার ভাবনার সাদ ভেদ করতে বাধ্য হলাম পাশ থেকে আন্টির ডাক শুনে।
আন্টি- একটা কথা জিজ্ঞেস করবো তোমাকে?
আমি- হ্যা হ্যা আন্টি প্লিজ।
আন্টি- ইতি তুমি তো মাশা আল্লাহ অনেক সুন্দরী তাহলে এখনও বিয়ে করোনি কেনো?
আমি আন্টির কথা শুনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম। সাথে বললাম- কি বলবো আন্টি?
আন্টি- মা আপন আন্টি ভেবে যা সত্যি তাই বলো।
আমি শুনতে চাই।
আমি- হুম যাকে ভালোবেসে ছিলাম তাকে পাইনি তাই করিনি।
আন্টি- সব বলো।
কি করি এখন এই সব কথা জিজ্ঞেস করার জন্যই কি এখানে নিয়ে আসছে নাকি? (মনে মনে)
তারপর আন্টিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানে স্যারের সাথে ফাস্ট দেখা হওয়ার দিন থেকে এই পর্যন্ত সব বলি।
আন্টি গম্ভীর মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো কিছু বলতে চায় কিন্তু বলছে না।
কিছুক্ষণ পর-
আন্টি- তোমার ওই স্যারের নাম কি?
আমি আন্টির এই প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়ার বিথা চেষ্টা করলাম। আমি তো আর জানি না যে উনি সব জানেন। কিন্তু স্যার চলে যাওয়ার পর থেকে আমার সাথে কি কি হয়েছে তা জানতেন না এখন জানলেন।
আন্টি- আমার ছেলে শাওন খুবই চাপা স্বভাবের নিজে কষ্ট পাবে কিন্তু নিজের কষ্ট মুখ ফুটে অন্য কাউকে বলে না। আমার ছেলেটাও একটা মেয়ে কে খুব বেশি ভালোবাসে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে শুধু তাকেই ভালোবাসে আর তার একটা ছবি নিজের মানিব্যাগে লুকিয়ে রেখেছে।
আমি জানি তুমি এতক্ষণ শাওনের কথাই বলেছো আমার ছেলে কখনোই আমার থেকে কোনো কিছু লুকাতো না শুরু থেকে সব কিছুই আমি জানতাম তোমার নামটাও আমাকে বলেছিলো কিন্তু তোমাকে বা তোমার ছবি দেখার ভাগ্য হয়নি।
ওইদিন শাওন তোমার থেকে দূরে চলে এসেছিলো ঠিকই মা কিন্তু বাড়িতে এসে দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে কেঁদে ছিলো নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা যে অনেক বেশি মা।
শাওন জানতো তুমি ওকে খুঁজতে বাড়ি আসতে পারো তাই সেই রাতেই আমরা বাড়ি ছেড়ে দেই। পরেরদিন সকালের ফ্লাইটে মাদ্রাস চলে আসি। আমার দুইটা কিডনি ডেমেজ হয়ে যায়। সারাদিন অসুস্থই থাকতাম কোনো হাসপাতাল বাদ রাখেনি আমার ছেলে আমার চিকিৎসা করার জন্য শেষে মাদ্রাস নিয়ে যায় অনেক কষ্ট একটা কিডনি ম্যানেজ হয় আর ডাক্তাররা আমার অপারেশন করেন।
আমার অপারেশন সাকসেসফুল হলে শাওন তোমার কাছে ফিরে আসবে ভাবে আর আমাদের দেখা হয়ে যায় শিলার সাথে।
আমি- শিলা?
আন্টি- ইতির মা।
আমি- ওও (আমার মুখটা জেনো শুকিয়ে গেলো)
আমার ছেলে আজও শুধু তোমাকেই ভালোবাসে মা। ইতি আমার দিদিভাই পুরো পৃথিবীর জন্য ইতির বাবা হলেও ইতি শাওনের মেয়ে না।
শাওন তোমার জায়গা কাউকে দেয়নি আর কখনো দেবেও না ঠিক করে আর কখনো বিয়েও করবে না বলে দেয়।
আমি- মানে তাহলে বিয়ে না করা মেয়ে ইতি?
আন্টি- বলছি! শিলা হচ্ছে আমার একমাত্র মেয়ে যে আজ থেকে ১০ বছর আগে বিয়ের আসর থেকে আমাদের মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে অন্য একটা ছেলের হাত ধরে আমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
আর সে আঘার সহ্য করতে না পেরে আমার স্বামী শাওনের বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তারপর থেকে আমাদের বাড়িতে শিলার নাম উচ্চারণ করা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেদিনের পর শিলা অনেকবার আমাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু শাওন তা হতে দেয়নি শাওন ক্ষমা করেনি ওর আদরের ছোট বোনটাকে।
আমার অপারেশন হওয়ার চার দিনের দিন একই হসপিটালে কার এক্সিডেন্ট করে দু’জন দম্পতি এডমিট হয় স্বামী রাস্তা তেই মারা যায়। আর স্ত্রী পেগন্যান্ট তবে দু’জনকে বাঁচানো অনেক রিস্ক যে কোনো একজন বাঁচবে আমরা চলে আসছিলাম হাসপাতাল থেকে আর সবার কাছে এক্সিডেন্ট শুনে আমি শাওনকে বলি ওদেরকে একটু দেখবে।
ছেলেটাকে চিনি না যেই মেয়েটার কাছে যাই।
শিলা বলে চিৎকার দিয়ে মেয়েকে জরিয়ে ধরি।
শাওন শিলাকে দেখে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়।
আমার চোখের জল সেদিন আর বাধা মানে না। ডাক্তার এসে বলেন আমরা কারা।
আমি বলি আমি ওর মা। ডাক্তার বলেন বাচ্চা বা মা’কে বাঁচানো যাবে ৫০% চান্স। আমি ডাক্তার কে বললাম মা’কে বাঁচাতে কিন্তু আমার মেয়ে বলেছিলো।
শিলা- মা হয়ে তুমি চাও তোমার মেয়ে জেনো বাঁচে মা তাহলে আমি মা হয়ে কিভাবে চাইবো আমার মেয়ে মরুক। আমি চাই মা আমার মেয়ে এই পৃথিবীর আলো দেখুক।
শিলা শাওনকে অনেকবার ডাকে। শাওন শিলার কাছে এসে দাড়ায়।
শিলা শাওনের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে।
শিলা- ভাই অনেক পাপ করেছি তার শাস্তি ও পেয়েছি প্লিজ ভাই আমাকে মাফ করে দিস আর আমার মেয়েটাকে দেখিস ভাই ওকে কখনো মা বাবার অভাব বুঝতে দিস না ভাই আমাকে তো অনেক আদর করতি। আমার মেয়েটাকে আদর নাই করলি কিন্তু কখনো অনাত আশ্রমে পাঠিয়ে দিস না ভাই তাহলে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না আমার কলিজার টুকরা টাকে না দেখেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেবো ভাই প্লিজ একটু ঠাই দিস আমার কলিজার টুকরা টাকে তোর বাড়ির এক কোনায় আমার মেয়ে টাকে দেখিস ভাই।
মা আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আর কিছু বলার আগেই ডাক্তার রা ওকে ও.টি তে নিয়ে যায়।
শাওন তখনো কোনো কথা বলে না পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
কিন্তু ও ভেতর থেকে যে ভেঙে চুর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে একমাত্র আদরের ছোট বোন সে কি না আজ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে আর তার মেয়েকে নাকি বাড়ির এক কোনায় ঠাই দিতে বললো।
আমি শাড়ির আঁচল মুখে ঘুচে কাঁদতে থাকি।
এক ঘন্টা পর একটা ফুটফুটে মেয়েকে এনে নার্স শাওনের কোলে দেয়। বাচ্চা টা এতক্ষণ অনেক চিৎকার করছিলো কিন্তু যেই শাওনের কোলে দেয় একদম চুপ হয়ে যায়।
বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে শাওনের চোখের কার্নিশ ভেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে।
শাওন- ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করে ওর বোন?
ডাক্তার বলে সরি আমরা আগেও বলেছিলাম আমরা যে কোনো একজনকে বাঁচাতে পারবো। আর আপনার বোন এক্সিডেন্টে কুব গুরুতর ভাবে আঘাত পায় উনি এমনিও বাঁচতেন না। আল্লাহর অসীম রহমত এত বড় এক্সিডেন্টের পরেও বাচ্চা টার কিচ্ছু হয়নি সব আল্লাহর রহমত আপনারা পেসেন্টের বডি দেখতে পারেন।
শাওন ডাক্তারের কথা শেষ না হতেই ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে।
আমি ওর কাছে বসে ওকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকি।
শাওন উঠে গিয়ে শিলার বডির পাশে দাঁড়ায় আর ওর গালে হাত দিয়ে বলে।
শাওন- আমার প্রিন্সেস আমাকে এভাবে ছেড়ে চলে গেলি। আমি তো রাগ অভিমান করে ছিলাম রাগ অভিমান না ভাঙিয়ে চলে গেলি না ফেরার দেশে। তোর কলিজার টুকরা কে আমি আমার বুকের মধ্যে খানে রেখে বড় করবো কখনো তোদের অভাব বুঝতে দেবো না। আমার বাড়ির এক কোনায় না রে প্রিন্সেস আমার পুরো বাড়ি জুড়ে ওকে রাখবো ও আমার লিটল প্রিন্সেস আজ থেকে আমিই ওর বাবা।
আমি শাওনের পাশে গিয়ে দাঁড়াই। শাওন আরও বলে।
শাওন- আজ থেকে ওর নাম হবে ইতি!
আমি ওকে বললাম ইতি কেনো?
তুই তো বাংলাদেশ যাচ্ছিস ইতির কাছেই তাহলে ওর নাম ইতি কেনো?
শাওন- আমি ওকে নিয়ে ইতির কাছে যেতে পারবো না মা। একটা বাচ্চা নিয়ে আমি ওর কাছে গিয়ে কি করে বলবো আমাকে বিয়ে করো। তা হয় না মা আমি ইতিকে ভালোবাসি আর ইতিকেই ভালোবাসবো ইতির পরে দ্বিতীয় কোনো মেয়ে আমার জীবনে আসবে না আজ থেকে এই ছোট ইতিই আমার জীবনের বড় ইতির শুন্যস্থান পূরণ করবে। আমি আমার সব টুকু দিয়ে ওকে মানুষ করবো।
আমি ওকে বলি- আর তোর জীবনের কি হবে ভুলতে পারবি ইতিকে আমাকে বল কোন মেয়ে আমি ওকে বুঝিয়ে বলবো।
শাওন- না মা। আমরা আর বাংলাদেশে যাবো না এখানেই থাকবো আর চলো ওদের দাফনের ব্যবস্থা করতে গবে।
তারপর থেকেই শাওনের জীবনে তুমি না থেকেও তুমি আছো। আমরা বাংলাদেশে আসছি কারণ শাওন তোমাকে একটাবার দেখতে চেয়েছিলো। তোমাকে দূর থেকে দেখার জন্য তোমার বাড়িতে গিয়েছিল হাসপাতালেও গিয়েছিল কিন্তু তোমাকে পায়নি কারণ তুমি গিয়ে ছিলে তোমার ফুপির বাড়ি। আর দেখো ভাগ্যের কি পরিহাস আল্লাহ তোমাকে রাস্তায় ইতির সাথে দেখা করিয়ে দেয়।
আমার ছেলে টা নিজে নিজে কষ্ট পাচ্ছে শুধু ইতির কথা ভেবে আমি মা হয়ে সেটা দেখতে পাচ্ছি না।
আমি আর ইতি দু’জনেই চাই তুমি শাওনকে বিয়ে করো।
ইতি তোমাকে ওর মা হিসাবে চায়। আমিও চাই তোমাদের ভালোবাসা পুর্নতা পাক। কিন্তু ইতিকে কোনো কিচ্ছু বলা যাবে না।
আমি তোমার কাছে হাত জোর করে রিকুয়েষ্ট করছি প্লিজ আমার ছেলেকে বিয়ে করো।
আমি- আন্টি প্লিজ এভাবে বলবেন না হাত জোর করতে হবে না।
আন্টির বলা কথা গুলো শুনতে শুনতে কেঁদে দিলাম।
আন্টি- কাঁদছো কেনো মা?
আমি- আমাকে স্যার এত ভালোবাসে কিন্তু বলে না ফাজিল একটা যা করার আমাদেরই করতে হবে আন্টিকে বললাম।
আন্টি- কি করতে চাও।
আমি- কাল দেখবেন এখন চলুন বাড়ি যাই অনেকটা লেইট হয়ে গেছে।
আন্টি- হ্যাঁ চলো।
তারপর চায়ের দোকান থেকে উঠে দু’জনই গাড়িতে উঠে বসলাম।
চলবে,

------------------------------------
স্যার I Love You
শারমিন_আক্তার_বর্ষা
২১ এবং শেষ পর্ব
_____________
দুপুরে বাড়ি এসে আব্বু আম্মুকে বলি তাদের সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে। তারাও আমার কথা শুনার জন্য আমারই সামনে বসে আছে।
সবাই নিরবতা পালন করছি। এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলাম, “ আব্বু আম্মু আমার জরুরি কথা হচ্ছে। ”
“ তুমি এই কথা এই নিয়ে ১০ বার বলেছো। তোমার কথার গাড়ি এর থেকেও আগে যাবে নাকি এখানেই আটকে থাকবে। ” আব্বু বলল।
আম্মু- কি বলবি খুলে বল।
“ আমি বিয়ে করবো। ” এক নিশ্বাসে বলে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। না জানি উনারা কি বলবেন। কিন্তু উনাদের কোনো কথা শুনতে পাচ্ছি না বলে এক চোখ একটু খোলে উনাদের দিকে আড়চোখে তাকাতেই আমার অন্য চোখও অটোমেটিক খুলে গেলো।
উনারা দুই চোখ গোল টমাটোর মতো করে তাকিয়ে আছে সাথে মুখ হা করে আছে।
আমি- কি হয়েছে তোমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছো কেনো?
আব্বু- এর থেকে ভালো কোনো খবরই হতে পারে না।
আম্মু- আমাকে এসে জরিয়ে ধরে চুমু দেয়।
আব্বু- আমি সব থেকে ভালো দেখে ছেলেকে তোর লাইফ পার্টনার চুজ করবো।
আমি- আব্বু তার কোনো দরকার নেই,, আমি ছেলে দেখেছি আর আমি তাকেই বিয়ে করবো।
আব্বু- কে সে নাম বল। আমি আজই তার সাথে দেখা করে কথা বলবো।
আমি- তুমি না আব্বু আগে তো আমার উনার সাথে কথা বলতে হবে উনাকে রাজি করাতে হবে।
তারপর তোমরা কথা বলবে তারপর বিয়ে।
আম্মু- কে সেই ছেলে নাম বল।
আব্বু- মানে?
আমি- সে আর কেউ না আমার স্যার।
আব্বু- শাওন…?
আম্মু- কি বলছিস তুই পাগল হয়ে গেছিস ওর পাঁচ বছরের একটা মেয়ে আছে।
আমি- আম্মু মেয়ে আছে বউ তো নেই। আর ওই ছোট্ট মেয়েটার ও তো মার প্রয়োজন আম্মু।
আম্মু- আম্মু এই সম্পর্ক কোনো ভাবেই হতে পারে না।
আব্বু- নিশ্চুপ।
আমি- তোমরা কেউ রাজি নও কেনো শুধু স্যারের মেয়ে আছে বলে।
আম্মু- হ্যাঁ ও অবিবাহিত হলে সমস্যা ছিলো না কিন্তু।
আমি- কিন্তু কি আম্মু ইতিকে নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই তাহলে তোমাদের এত কেনো সমস্যা হচ্ছে?
আব্বু- কারণ তুমি আমাদের একমাত্র মেয়ে আমরা তোমার ভালো চাই।
আমি- আমি ভালো থাকবো শুধু স্যারের সাথে আর কারো সাথে না।
আম্মু- ইতি…..।
আমি- আমি জাস্ট বলে দিয়েছি আমি বিয়ে করবো তো শুধু স্যারকেই করবো। এখন তোমরা ঠিক করো সারাজীবন আমাকে একা একা কষ্ট পেতে দেখবে নাকি আমার স্যারের সাথে সুখের সংসার করতে দেখবে।ডিসিশন তোমরা নিবা আর ঠিক এক ঘন্টা পর আমাকে জানাবা তারপর আমি ডিসিশন নেবো। সারাজীবনের জন্য তোমাদের থেকেও দূরে দেশের বাহিরে চলে যাবো।
আব্বু- মামনি।
আর কারো কোনো কথা না শুনে চলে আসলাম নিজের রুমে।
৩০ মিনিট পর আব্বু আম্মু দু’জনেই আমার রুমে আসে। আর আমার দুইপাশে দু’জন বসে।
আব্বু আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।
আম্মু- তুই কিভাবে বলতে পারলি মা আমাদের ছেড়ে চলে যাবি নল কিভাবে পারলি? আম্মু কেঁদে দিলো।
আব্বু- তুই শাওন কে রাজি করা আমরা রাজি।
আব্বুর কথা শুনে কাঁদতে কাঁদতে আব্বুকে জরিয়ে ধরলাম সাথে আম্মুকেও।
আমি চাইলেই উনাদের সত্যি কথা বলতে পারতাম কিন্তু আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না। কোনো ভাবেই জেনো ইতি সত্যি যানতে না পারে ও স্যারের মেয়ে নয় আব্বু আম্মু যদি কোনোদিন ওর সামনে বলে দেয়।
সন্ধ্যা ৬টা বাজে আজ আমি সেই ব্রীজটার উপর সেই একই সাজে হাতে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
গাড়ি স্যারের অফিসের সামনে ওয়েট করছে কখন বের হবে। বিশ মিনিট পর স্যার বের হলেন।
ড্রাইবার- স্যার উঠে বসুন।
স্যার- হুম।
স্যার গাড়িতে উঠে বসতেই ড্রাইবার গাড়ি স্টার্ট দেয়।
কিছুক্ষণ পর….
স্যার- ড্রাইবার আমরা হাইওয়ের রোডে কেনো যাচ্ছি?
ড্রাইবার- স্যার সারপ্রাইজ!
স্যার- কিসের সারপ্রাইজ?
ড্রাইবার- সেটা গেলেই দেখতে পারবেন।
গাড়ি থামতেই ড্রাইবার নিচে নেমে স্যারকে নিচে নামতে বলে। স্যারও গাড়ি থেকে নামে।
স্যার- কি সারপ্রাইজ?
ড্রাইবার- ওই তো আপনার সারপ্রাইজ।
আমাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো।
স্যারের আজ সেই ছয় বছর আগের লাস্ট রাতের কথা মনে পরে যাচ্ছে এভাবেই তো উনার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে ছিলাম উনাকে প্রপোজ করে ছিলাম।
আর উনি আমাকে ছেড়ে চলে যায়।
স্যার- ইতি……..
ড্রাইবার- যান স্যার ম্যাম অপেক্ষা করছে।
স্যার এক পা এক পা করে আমার সামনে আসছে।
ঠিক আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকলেন।
স্যার- ইতি……
স্যারের ভয়েস শুনে পেছনে তাকালাম।
আমি স্যারের দিকে ঘুরতেই স্যার আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি- কেমন আছেন স্যার
স্যার- হুমমম ভালো! কেনো ডেকেছো আমায়।
আমি- আমি তো আপনাকে ডাকিনি আমি তো আপনাকে এখানে আনিয়েছি।
স্যার- হুম সেটাই কিন্তু কেনো? ইতি তুমি যদি আজও সেই আগের মতো প্রপোজ করার কথা চিন্তা করে এইগুলো করো তাহলে সব ভুলে যাও আমি আমার মেয়ের সঙ্গে ভালো আছি। আর…..
আমি- থামুন থামুন আর বলতে হবে না। আপনার জন্য ফুল এনেছি ফুলগুলো নিন।
ফুলগুলো স্যারের দিকে বাড়িয়ে দিলাম।
স্যার- আমি ফুল কেনো নেবো? নেবো না।
আমি- নিন না স্যার প্লিজ শুধু মাত্র আপনার জন্য এনেছি। একটা টেডি স্টাইল হাসি দিয়ে।
আমার হাসি দেখে স্যার সব ভুলে গেছে আর ফুলগুলো নিয়ে নিছে।
আমি- আমি আপনাকে এখানে ডেকেছি কারণ হচ্ছে।
স্যার- আজ প্লিজ প্রপোজ করো না ইতি আজ তুমি প্রপোজ করলে আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না প্লিজ করো না।
আমি- এই নেন!
স্যার- কি এটা? আমার হাত থেকে উনার হাতে নিয়ে।
আমি- আমার বিয়ের কার্ড।
স্যার- হোয়াট?
আমি- হুম আমার বিয়ের কার্ড সর্ব প্রথম কার্ড আপনাকে দিলাম। আপনাকে কিন্তু আসতেই হবে।
আমার কথূ শুনে স্যারের হাত থেকে কার্ডটা নিচে মাটিতে পরে যায়। স্যারের বা চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে।
স্যার আমার থেকে জল লুকানোর জন্য বিপরীত সাইডে ঘুরে যায় নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে একহাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়।
পরে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
স্যার- তুমি রাজি?
আমি- হুমমমম।
স্যার- তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবা?
আমি- পারবো না কিন্তু আমি যাকে চাই সে তো চায় না।
স্যার- তার কাছে যে দ্বিতীয় কোনো অপশন নেই।
আমি- অপশন আছে স্যার! আপনি যদি চান তাহলে সব সম্ভব আমার ছোট্ট ইতিকে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই নিজের মেয়ের মতো করে ওকে রাখবো সবার আগে ইতি থাকবে আমার জীবনে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইতি হবে। আমি আপনার সাথে থাকতে চাই আপনার সাথে চলতে চাই আপনার সুখে দুঃখে পাশে থাকতে চাই আপনার জীবন সঙ্গী হতে চাই।
ইতির মা হতে চাই। আপনি আমাকে ভালোবাসেন এটাই সত্যি।
আপনি কার্ডে ছেলের নাম দেখেননি।
কার সাথে বিয়ে হচ্ছে। কার্ডটা উঠান আর দেখুন।
স্যার কিছু না বলে মাটি থেকে কার্ডটা হাতে নিয়ে সেটা খুললো।
স্যার- শাওন….
আমি- আমি আপনার ছিলাম আপনার থাকবো।
এখন ডিসিশন আপনার আপনার জন্য দুইটা অপশন।
১/ এই কার্ডের নাম অনুভব কালকে আপনি আমাকে বিয়ে করবেন।
আর ২/ আর এটা যদি আপনি না করেন। আর আজ যদি আপনি আমাকে ফিরিয়ে দেন বা ছেড়ে চলে যান তাহলে শুনে রাখুন আমারও শেষ কথা আমি এখানেই এই হাইওয়ে তে ট্রাক এক্সিডেন্টে নিজের জীবন শেষ করে দেবো আর হ্যাঁ সেটা এখনই আমি আপনাকে ভালোবাসি আপনাকে না পেলে আমার জীবন আমি শেষ করে দেবো মরে যাবো আমি।
বলতে বলতেই স্যার উনার হাত আমার মুখের উপর রাখে।
স্যার- এর আগেও একবার এক্সিডেন্ট করেছো ইতি সেটা আমার জন্য আর এখন এই কথা ভুলেও বলো না। প্লিজ আমি তোমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে মাদ্রাস থেকে চলে আসি। তোমাকে দূর দেখে দেখি।
তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি প্লিজ কখনো ছেড়ে যাওয়ার কথা বলো না।
কথা শেষ করেই আজ প্রথম স্যার আমাকে জরিয়ে ধরলেন। আমি ও স্যারকে শক্ত করে জরিয়ে ধরি আর কাঁদতে থাকি দু’জনেই কাঁদতে কাঁদতে সমুদ্র বানিয়ে দিচ্ছি।
স্যার আমাকে উনার থেকে ছাড়িয়ে আমার কপালে চুমু দেয়।
“ ইতি! আমার মেয়ে আসলে ও ” স্যার হতবিহ্বল তাকিয়ে সরু কন্ঠে বলল। উনাকে থামিয়ে দিয়ে ইতি নিজে বলে উঠল, “ আমি জানি সব জানি আন্টি বলেছে। আর হ্যাঁ, ছোট্ট ইতি এখন শুধু আপনার মেয়ে না আজ থেকে ও আমাদের মেয়ে। ”
স্যার আবারও আমাকে জরিয়ে ধরলেন। তারপর আজ রাতেই সব কথা পাকাপাকি হয়ে যায়। দুইদিন পর বিয়ে ফিক্সড হয় আমার অনুরোধে বিয়ে খুব সিম্পল ভাবে হবে শুধু আত্মীয়স্বজন আর বন্ধু বান্ধব’রা থাকবে। সবাই তাতেই রাজি হয়ে যায়।
দুইদিন পর!
আজ গায়ে হলুদ ফাইনালি আমি আমার স্যার এক হবো। এই আশা তো আমি ছেড়েই দিয়েছিলাম।
দুই হাত ভর্তি মেহেদী দিয়ে বসে আসি।
এরইমধ্যে কল বেজে উঠে। হাতে মেহেদী তাই কল রিসিভ করতে পারছি না। মুন্নী কল রিসিভ করে ওরা ওদের মতো শয়তানি করে কথা বলছে।
স্যারও কম নয় উনিও উনার ফোন উনার বন্ধুদের কাছে দিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পর কল কেটে দিয়ে মিম ও মুন্নী রাগী গলায় বলল, ‘ তোর স্যার তো খুব চালাক রে। ’
আমি- কেন কি হইছে?
মুন্নী- আমরা কথা বলছি শুনে ফোন অন্য ছেলেদের কাছে দিয়ে দিছে আর জানিস কত ফাজিল ছেলে গুলো।
ওদের কথা শুনে হেসে দিলাম।
আব্রু- ফাইনালি।
রুবেল, নাঈম এক সাথে বলে উঠল, “ কি? ”
আব্রু- কি আবার ওর বিয়েটা ওর স্যারের সাথেই হচ্ছে।
আমি- হুম।
মিম- তুই খুশি তো?
আমি- হ্যাঁ অনেক।
মুন্নী- খুশি তো হবেই রে কষ্ট না করেই যে এত বড় বাচ্চার মা হয়ে গেছে।
মুন্নীর টিটকারি মারা কথা শুনে সব গুলো শব্দ করে হেসে দিলাম। ‘হাহাহা’
সবাই হলুদ দেওয়া বাদ দিয়ে আমাদের হাসি দেখছে।
পরেরদিন বর আসে সাথে বর যাত্রী আসে কাজী আসে আর সম্পূর্ণ বিয়ে হয়ে যায় সাথে বিদায় ও ফ্রিতে হয়।
বাসর ঘরে বসে আছি সাথে আমার মেয়ে ইতি
মা ইতি মেয়েও ইতি বাব্বাহ ভাবা যায়।
রাত সাড়ে ১০টা বাজে ইতি আমার পাশেই বসে আছে।
কিছুক্ষণ পর আমার শাশুড়ী মা ইতিকে নিতে আসে কিন্তু ইতি যাবে না বলে দেয় রাতে আমার সাথেই থাকবে জিদ ধরে।
শাশুড়ী মা- লক্ষী দিদি ভাই আজ চলো দিদার সাথে কাল থেকে থেকো তুমি তোমার আম্মুর সাথে।
ইতি- আজ থেকে থাকলে কি হবে?
এখন এই পিচ্চি মেয়ের প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
আমি- থাক না মা সমস্যা নেই। বলেই ইতিকে আমার কোলে শুয়ালাম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই ও ঘুমিয়ে যায়।
ইতি ঘুমানোর পর ওকে নিয়ে কেউ নদীতে ফেলে দিলেও ও টের পাবে না এমন ঘুম ওর। ঘুমাতেই শাশুড়ী মা ইতিকে কোলে করে নিয়ে যান।
আমি এখন রুমে একা কোনো কিছু নেই সময় পাস করার মতো তাই বসে বসে খাট কত গুলো ফুল আর কয়টা গোলাপ দিয়ে সাজানো আছে গুনতে লাগলাম। কোনো কিছু না করার থেকে এইটা করা অনেক বেটার।
বিছানা থেকে নেমে রুমের বড় আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখছি। কতই না ইচ্ছে ছিলো বউ সাজবো আর আজ আমার ইচ্ছা পূরণ হলো।
ভাবতে ভাবতে দরজা আটকানোর শব্দ পেলাম।
পেছনে ঘুরে তাকালাম।
স্যার- কি দেখছো আমার মিষ্টি বউ?
আমি- বউ আবার মিষ্টি হয় না কি?
স্যার- হয় তো, দেখাবো নাকি? (দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল)
আমি- এই না আমি দেখতে চাই না।
দেখাবো বলেই শেরওয়ানি খুলতে লাগলো।
স্যার- আজই তো সঠিক দিন দেখানোর জন্য না বললে কি চলে?
আমি- হ্যাঁ হ্যাঁ চলে। আমাকে কষ্ট দিয়েছেন না বলে চলে গিয়েছিলেন তার জন্য শাস্তি পেতে হবে। ছয় বছর আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি সো আপনি আমার জন্য ছয় মাস অপেক্ষা করবেন। ছয় মাস না হওয়া পর্যন্ত স্পর্শ করবেন না আমাকে।
স্যার- আচ্ছা অপেক্ষা তুমি একাই করেছো কষ্ট তুমি একাই পেয়েছো আমি পাইনি?
কথা বলছে আর এক পা দু পা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমিও পিছিয়ে যাচ্ছি।
আমি- এত কিছু জানি না ছোঁবেন না মানে ছোঁবেন না। বলেই অন্য দিকে দৌঁড় দিতে নিলে স্যার আমার হাত ধরে উনার দিকে টান মারে। আর আমিও গিয়ে পরি উনার উপরে। অসভ্য লোক খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে লজ্জা ও করে না। একটা সেন্টু গেঞ্জি পরলে কি হতো।
লজ্জা লাগছে সোজা গিয়ে উনার লোমহীন বুকের মধ্যখানে আমার ঠোঁট জোড়া গিয়ে স্পর্শ করল।
মনে হলো আমি কিস করছি আর উনি ও তো তাই ভাববে। কিন্তু সত্যি বলছি আমি কিস করি নাই উনি যেভাবে টান দিছে ওভাবে পরা স্বাভাবিক।
স্যার- এই না তুমি বললে। ছয় মাস দূরে থাকতে আর নিজেই এসে আগে সোজা আমার বুকে কিস করলে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারোনি বুঝি?
কথা গুলো বলে একটা শয়তানি হাসি দিলো।
আমি- ইচ্ছা করছে আপনাকে?
স্যার- কি কিস করতে? এই তুমি এত লুচ্চি কেন?
আমি- আমি লুচ্চি না।
বলতে বলতে স্যার আমার সামনে এসে আমার কোমড়ে হাত দিলেন আর উনার লোমহীন বুকের সাথে জরিয়ে ধরেন। আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। স্যার আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মলিনকন্ঠে বললেন, “ অনেক কষ্ট পেয়েছি তোমার থেকে দূরে থেকে এই ছয় বছরে। আর এক মুহুর্ত ও তোমার থেকে দূরে থাকতে পারবো না। ”
বলেই উনার ঠোঁট জোড়া আমার ঠোঁট জোড়ার সাথে মিশিয়ে দিলেন।
আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলো না।
পরেরদিন সকাল ১১টা!
আমি আমার মেয়েকে গোসল করিয়ে রুমে নিয়ে আসি। আর ওকে ড্রেস পরাচ্ছি সাথে মা ও আছেন।
হঠাৎ স্যার রুমে এসে বললেন।
স্যার- ইতি শোনো!
আমি- জি স্যার?
আমাদের মেয়ে- জি আব্বু?
শাশুড়ি মা বললেন:- কোন ইতিকে ডাকছিস বাবা? (বলেই তিনি শব্দ করে হেসে দিলেন)
আমি আর আমার মেয়ে দু’জনেই দু’জনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি- স্যার কাকে ডাকছেন?
স্যার- কাউকে না। বলেই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
মা- এখনো কি স্যারই বলবে বউমা?
আমি- হুম বলবো আরও বলবো স্যার I Love You
আমার কথা শুনে স্যার রুমের মধ্যে প্রবেশ করলেন।
আমাকে আমাদের মেয়ে ছোট্ট ইতি আর মা’কে জড়িয়ে ধরলেন। আমরাও জড়িয়ে ধরলাম উনাকে।
স্যার- আমি তোমাদের তিনজনকেই খুব বেশি ভালোবাসি।
ছোট্ট ইতি, শাশুড়ী মা- আমরাও তোমাকে ভালোবাসি।
আমি বললাম, “ আমিও আপনাকে আপনার থেকেও বেশি ভালোবাসি যেমন- স্যার_I_Love_You ”
স্যার মৃদু হেসে বললেন, “ I Love You Too ”
বলেই আমার কপালে একটা চুমু একে দিলেন।
আমাদের সংসার এখন পরিপূর্ণ ছোট্ট ইতি ওর মা পেয়েছে আমি আমার স্যারকে পেয়েছি। স্যার আমাকে পেয়েছে আর মা আমাদের সবাইকে পেয়েছে।
আমাদের সংসার খুব সুন্দর করে চলছে ইতি আমাদের সবার চোখের মনি।
আজ ছোট্ট ইতির জন্মদিন, ইতিকে জিজ্ঞেস করলাম কি গিফট চাও আম্মুর কাছ থেকে?
ছোট্ট ইতি বলল, “ আমি ওই ছোট্ট ভাইটাকে চাই যে তোমার পেটের মধ্যে আছে আমি ওকে অনেক আদর করবো খাইয়ে দেবো গোসল করিয়ে দেবো ঘুম পারাবো। সব আমিই করবো। ”
আমি ওর কথা শুনে হেঁসে দিলাম।
স্যার পেছন থেকে অস্ফুটস্বরে বলে উঠলেন, “ মানে? ”
শাশুড়ী মা শাওনের কাঁধে হাত রেখে বললেন, “ মানে তুমি আবারও বাবা হতে চলেছো আর আমি দিদা, আমাদের পরিবারে নতুন আরও একজন মেহমান আসছে। ”
স্যার অবাক হয় প্রশ্ন ছুঁড়েন- ‘ মা কি বললো ইতি এটা সত্যি? ‘
আমি- হুম সত্যি। লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম।
স্যার এতটাই খুশি হয়েছেন এতগুলো গেস্টের সামনেই আমাকে জরিয়ে ধরলেন। সাথে আমাদের ছোট্ট মেয়ে টাকেও।
স্যার- মা এদিকে আসো। মা আমি বাবা হবো, মা আমাদের পরিবার সম্পূর্ণ হবে। বলেই ছোট্ট ইতিকে কোলে তুলে নেয়। আর আমাকে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু দেয়।
আমিও আমার শাশুড়ী মা আর স্যারকে জরিয়ে ধরি।
“একটা কথা বলবো? ” আমি স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম।
স্যার- হুম বলো একটা কেনো দশটা বলো।
আমি- একটাই বলবো।
স্যার- আচ্ছা বলো কি বলবে।
আমি লজ্জা মাখা কন্ঠ বললাম, “ স্যার I Love You ”
স্যার কিছু বললেন না আমার দুই গালে হাত রেখে কপালে চুমু দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। শক্ত করে জরিয়ে ধরেন।
স্যারের ডান হাত নিয়ে আমি আমার পেটের উপর রাখি। স্যারের চোখ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু কণা গড়িয়ে পরে।
স্যারের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরা পানি মুছে দিলাম এবার আমি স্যারকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলি, “ কাঁদলে লাগে তোমায় আরও ভালো ” স্যার শব্দ করে হেসে উঠল সাথে আমিও।



972

চ্চচAll reacti

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)