রাবেয়ার মৃত আত্মা পর্ব ১

@Admin
0

 গায়ে হলুদের দিন রাতে আমার সদ্য প্রেমিকা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে বসলো।সাদা কাগজে গোটাগোটা অক্ষরে লিখে যায়,"আমি আবার ফিরে আসবো।"মৃত্যুর খবরটি আমার কানে পৌঁছাতেই হলুদ সন্ধ্যা ফেলে রেখে তার বাড়িতে ছুটে যাই আমি।রাবেয়ার সাথে আমার সাত বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।স্কুল জীবন থেকেই খুব পছন্দ করতাম মেয়েটিকে।তার সাথে পরিচয়টাও হয়েছিল একটু অদ্ভুতভাবে।একবার স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম আমরা কয়েকজন।ব্যাপারটা কিভাবে যেন বাসায় জেনে ফেলে।পরদিন বাবা আসেন স্কুলে,ঘটনা সত্যি কিনা জানার জন্য।রাবেয়া স্যারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘটনা মিথ্যা বলে বাবাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।অথচ রাবেয়াকে তখনও আমি ভালো করে চিনতাম না।স্কুল ছুটির পর কথাটা জিজ্ঞেস করতেই সে শুধু মুচকি হেসে বলেছিল,মন বলেছে তাই।কিন্তু সেদিন তার চোখে আমার প্রতি অগাধ ভালোবাসা দেখতে পেয়েছিলাম আমি।তারপর থেকেই টুকটাক কথা বলা শুরু দুজনের।রাবেয়ার বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে কিছু পথের দূরত্ব ছিল।স্কুল ছুটির পর এগিয়ে দেয়ার বাহানায় অনেকক্ষণ গল্প করা যেতো মন খুলে।কিন্তু তখনও কেউ কাউকে ভালোবাসার কথাটা বলতে পারিনি।নবম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরের ঘটনা।রাবেয়া আচমকা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিল।সারাটা দিন ওর বাড়ির পাশে ঘুরঘুর করতাম মেয়েটাকে একটু দেখার জন্য।কিন্তু রাবেয়ার ছোট বোন ছাড়া কাউকেই চোখে পড়তো না।জানাজানি হওয়ার ভয়ে তার বোনকে জিজ্ঞেস করার সাহস আমার তখনও হয়ে উঠেনি।এই কয়টা দিনের ছটফট করার সময়টুকুতে আমি বুঝে গিয়েছিলাম,রাবেয়া আমার মনের পুরো স্থান দখল করে ফেলেছে।তাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারবো না আমি।দিন পনেরো পর সন্ধ্যার দিকে আমার রুমের জানালায় দুটো টোকা পড়ে।ধড়মড় করে জানালা খুলতেই দেখি,রাবেয়া দাঁড়িয়ে।রাবেয়াকে জড়িয়ে ধরে আমার সে কি কান্না!এমন আচরণে রাবেয়া পুরো হতভম্ব হয়ে যায়।জিজ্ঞেস করল,কি হয়েছে তোমার?বললাম,কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে?সে বলল,নানাবাড়িতে গিয়েছিলাম।প্রচন্ড জ্বরে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারিনি।রাবেয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,খুব ভালোবাসি।থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া।রাবেয়ার চোখ সেদিন আমার কথায় ভিজেছিল।শুধু বলল,এই কথাটা বলতে এতদিন সময় লাগে?বাকি রাতটুকু পুকুরপাড়ে বসে জ্যোৎস্নার আলোতে গল্প করে কেটে গেল দুজনের।

স্কুল জীবন পেরিয়ে কলেজে উঠতেই রাবেয়ার কথাটা বাবার কানে চলে গেল।বাবা ছিলেন খুব রাগী প্রকৃতির মানুষ।তার একমাত্র ছেলের প্রেমের প্রণয় ঠিক মেনে নিতে পারলেন না।তাছাড়া রাবেয়ার পরিবারের আর্থিক অবস্থা একটু কম ছিল আমাদের থেকে।বাবা গিয়ে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিলেন রাবেয়ার বাবার সাথে।দুজনের মাঝে হাতাহাতি হয়েছিল গ্রামের বাজারে।এই নিয়ে বিচারও বসে।কিন্তু বাবার প্রতিপত্তির জোরে গায়ে আঁচ লাগেনি এতটুকু।উল্টো রাবেয়ার বাবাকে জরিমানা করা হয় পাঁচ হাজার টাকা।এতকিছুর মাঝেও আমি ছিলাম অবিচল।প্রায়ই বাবার সাথে ঝগড়া হতো আমার।বাড়িতে ঢুকলেই রাবেয়ার প্রসঙ্গটা টেনে আনতেন তিনি।আবেগের বয়সে তখন মাথায় রাবেয়া ছাড়া আর কিছুই কল্পনা করতে পারতাম না।শেষ পর্যন্ত বাবার সাথে কথা বলাটা বন্ধ হয়ে গেল।তারপরও দুজনে লুকিয়ে কথা বলা ছাড়িনি।সম্পর্কটা ঠিক আগের মতোই ছিল আমার আর রাবেয়ার মাঝে।রাবেয়াকে কথা দিয়েছিলাম,"বাবাকে মানিয়ে তারপর তোমাকে বিয়ে করবো।সম্মতি ছাড়া পালিয়ে বিয়ে করার মতো ছেলে আমি নই।"
এই পরিস্থিতির মাঝে কলেজ ছেড়ে ভার্সিটিতে পা রাখলাম আমি।রাবেয়ার বাবা মেয়েকে আর পড়াবেন না বলে কলেজ জীবনেই ইতি টেনে দিলেন।উপায় না পেয়ে রাবেয়ার সাথে দেখা করতে তাদের বাড়িতে যেতে হতো আমাকে।একদিন ধরাও পড়লাম ওর বাবার কাছে।আমাকে নিয়ে আবার বিচার বসলো গ্রামে।কিন্তু এবার আর বাবা তার ছেলেকে রক্ষা করতে পারলেন না।শেষ পর্যন্ত গ্রামের সবার সামনে হাত ধরে ক্ষমা চাইতে হলো আমাকে।এই খবর শুনে মা স্ট্রোক করে বসলেন পরদিন।আমি পুরো পাগলের মতো হয়ে গেলাম মায়ের অবস্থা দেখে।ডাক্তার বলেছিল,এই সময়ে এমন কিছু করা যাবে না যাতে আপনার মায়ের মনে খারাপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।মা আমার হাত তার মাথায় রেখে প্রতিজ্ঞা করালেন,আমি যেন রাবেয়াকে ভুলে যাই।আর বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করি।চারদিক থেকে মানসিক নির্যাতন আর নিতে পারছিলাম না।রাবেয়ার সাথে শেষ বিদায় নিয়ে নতুন একটি মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী করার জন্য রাজি হয়ে গেলাম।রাবিয়া শুধু বলেছিল,"আমি ছাড়া তুমি কখনো সুখী হতে পারবে না।"
মৃত্যুর পর বাড়ির পরিবেশ কতটা ভয়াবহ হয় তা রাবেয়ার লাশ দেখতে না গেলে কখনো বুঝতেই পারতাম না।পুরো বাড়ি অন্ধকারে ডুবে ছিল।পূর্ব কোণের টিনের ঘরের সামনে একটি বাতি জ্বলছিল টিমটিম করে।তার নিচে বিছানার চাদরের উপর রাবেয়ার লাশ।আমাদের গ্রামে আত্মহত্যা করা মানুষের বাড়িতে কেউ উঁকিও দিতো না।চরম পাপের কাজ হিসেবে গণ্য করা হতো।শুধু দুজন পুলিশ ডোমের অপেক্ষায় আমগাছের পাশে দাঁড়িয়ে পায়চারি করছিল।ঘরের ভেতর থেকে রাবেয়ার মায়ের মুখ চেপে কান্না ভেসে আসছিল ক্ষণেক্ষণে।আর রাবেয়ার বাবা তো টিনের দরজার সামনে বসে আক্ষেপ করছিল,"এভাবে মরতে গেলি কেন রে মা?আমি জানাযা দিবো কেমনে?"আমার শরীর সমানে কাঁপছিল।পুলিশ দুজনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ধুরুধুরু বুকে রাবেয়ার লাশের পাশে গিয়ে বসে পড়লাম।মৃত মানুষের মুখ আগে কখনো দেখিনি।এমনকি আত্মীয়ের কেউ মারা গেলেও যেতাম না।কিন্তু হাজার হলেও আমার ভালোবাসার মানুষ বলে কথা।খুব সাবধানে রাবেয়ার মুখের উপর থেকে চাদর সরিয়ে দিলাম।মুখটা ফ্যাকাশে ছিল।গলার মাঝের কালচে দাগটা দেখে খিঁচুনি দিতে শুরু করল শরীরটা।বড় ভয়ঙ্কর ছিল সে দৃশ্য!আমি আর সহ্য করতে পারলাম না।গুঙিয়ে কেঁদে উঠলাম রাবেয়ার জন্য।আর তখনই ঘটল ভয়ঙ্কর এক কান্ড!আচমকা আমার ডানহাত শক্ত করে চেপে ধরল রাবেয়া।ঠোঁটগুলি দাঁতের কড়মড় শব্দে কেঁপে বলল,"মৃত্যুর আগে এই মায়া কই ছিল তোর?আমি ফিরবো।খুব তাড়াতাড়ি ফিরবো।"চিৎকার দিয়ে এক ছিটকে দূরে গিয়ে পড়লাম।সঙ্গেসঙ্গে পুলিশ দুজন দৌঁড়ে আসে আমার কাছে।জিজ্ঞেস করতেই বললাম,রাবেয়া আমার হাত চেপে ধরেছিল।একজন পুলিশ বিরক্ত হয়ে বলল,গাঁজা কি বেশি খাওয়া হয়েছে নাকি?আমার কথা খুব একটা বিশ্বাস করেনি দুজনে।কিন্তু বাসায় ফিরতেই কব্জিতে আঙুলের ছাপ দেখে ভয়টা আরও প্রবলভাবে ঘিরে ধরলো আমায়।সত্যি তাহলে রাবেয়ার মৃত শরীর আমাকে শক্ত করে ধরেছিল?
রাবেয়ার ঝামেলা মিটমাট করতে দুদিন পেরিয়ে গেল আমাদের।রাবেয়ার বাবা মৃত্যুর অভিযোগ তুলে আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন।কিন্তু কাগজের পাতায় আমার নাম লিখা না থাকায় পুলিশি ঝামেলা সহজেই এড়ানো গেল।বাবা আর দেরি করতে চাইলেন না।পরদিন সোমবারে বড় অনুষ্ঠান করে আমার বিবাহিত স্ত্রী নিশিকে বাড়িতে তুলে আনা হলো।নিশি দেখতে ছিল খুব সুন্দরী।নম্র আচরণ আর মিষ্টিমুখে বাড়ির সবার মন জয় করে নিয়েছিল।কিন্তু আমার মন থেকে তখনও রাবেয়ার মৃত্যুর ধকলটা কাটিয়ে উঠতে পারিনি।প্রায়ই মনে হতো,কেউ আমাকে দূর থেকে খুব মায়া নিয়ে তাকিয়ে আছে।পরিচিত কন্ঠে আমায় ডাক দিবে।কিন্তু আশপাশে তাকালে তেমন কিছুই চোখে পড়তো না।বাবা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে খুব সুন্দর করে তার ছেলের বাসর সাজিয়েছিলেন।হাজার হলেও একমাত্র ছেলে বলে কথা।নানা ব্যস্ততায় পুরো দিন কেটে গেল চোখের পলকে।আস্তেআস্তে মানুষজন চলে যেতেই বন্ধুবান্ধব জোর করে বাসরঘরে ঢুকিয়ে দিল আমাকে।দরজা বন্ধ করে দেখতে পেলাম,লাল শাড়ি পড়ে নিশি বিছানায় চুপটি করে বসে আছে।আমি ধীরেধীরে গিয়ে মেয়েটির পাশে বসলাম।পাঞ্জাবির পকেট থেকে আংটি বের করে ডান হাতে পড়াতে গিয়ে মনে হলো,আমি একটি মৃত মানুষের হাত ধরে ফেলেছি।কাঁচা মাংসের খসখসে চামড়ার আস্তরণ খসে পড়ছিল বিছানার উপর।পঁচা গন্ধে বমি বের হবার উপক্রম।ভয়ে শরীর ঘামতে শুরু করল আমার।কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম,কে তুমি?বিচ্ছিরি এক কন্ঠে বলল,আমি রাবেয়া।এক লাফে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি।লাল শাড়ির ঘোমটা উঠাতেই ঝলসানো ফ্যাকাশে মুখটা দেখে আর সহ্য করতে পারলাম না।এক চিৎকার দিয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে পড়লাম বাসর ঘর থেকে।উঠানে দাঁড়িয়ে থাকা সকলে তখন ঘিরে ধরলো আমায়।আতঙ্কের ছাপ দেখে সবাই অনুমান করতে পারল,মজা করার মতো সময় এখন নয়।মুরব্বিরা জিজ্ঞেস করল,কি হয়েছে বাদল?কিছু দেখে ভয় পেয়েছিস?
আমি তখনও কথা বলতে পারছিলাম না।খুব কষ্টে হাঁপিয়ে বললাম,রাবেয়া ফিরে এসেছে।লাল শাড়ি পড়ে আমার বিছানার উপর বসে আছে।
কথাটা শুনে সবাই সঙ্গেসঙ্গে দৌঁড়ে গেল বাসর ঘরের দিকে।দরজা খুলে দেখতে পেল,সত্যি বিছানায় লাল শাড়ি পড়ে কেউ একজন বসে আছে।ছোট মামা সাহস করে এগিয়ে আসলেন তার দিকে।ঘোমটা তুলতেই দেখতে পেল,নিশি বসে আছে।এমন কান্ডে নিশি বেশ লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।বড় চাচা আমার কাঁধে মৃদু আঘাত করে বলল,তোর দুষ্টুমি আর গেল না।বিয়ের দিনও আমাদের সবাইকে বোকা বানিয়ে ছাড়লি।
সবার থেকে ইচ্ছেমতো বকা শুনে আমার তখন লেজেগোবরে অবস্থা।দরজা বন্ধ করে আবার বিছানায় গিয়ে বসলাম।নিশিকে জিজ্ঞেস করলাম,তুমি কি একটু আগে সত্যিই বিছানায় ছিলে?নিশি মাথা নেড়ে বলল,একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।কিন্তু কেন বলো তো?তুমি কি আমাকে দেখতে না পেয়ে রাগ করে বের হয়ে গিয়েছিলে নাকি?আমি আর বিস্তারিত না ঘেটে নিজেকে স্বাভাবিক করে কথা বলতে শুরু করলাম নিশির সাথে।কিন্তু রাবেয়ার ভূত তখনও মাথা থেকে নামেনি।আমি নিশ্চিত ছিলাম,আমার চোখ ভুল কিছু দেখেনি।আর আমার কান ভুল কিছু শুনেনি।সেটা আরও দৃঢ়ভাবে মনে গেঁথে গেল যখন বিছানার একপাশ থেকে বিয়ের আংটি হাতে নিয়ে দেখতে পেলাম,সেখানে চামড়ার হালকা আস্তরণ পড়ে আছে।যেন কেউ খুব রেগে হাত থেকে খুলে ফেলে দিয়ে গেছে বিয়ের আংটিখানা।এমন ছোটখাটো ভয়ের মাঝে কেটে গেল আমার বাসর রাত।
পরদিন থেকে নতুন এক ভয় আমার চারপাশ ঘিরে ধরলো।প্রায়ই রাবেয়াকে দেখতে পেতে শুরু করলাম আমি।কিন্তু তার চেহারার মাঝে অস্বাভাবিকতার ছাপ ছিল।আগুনে ঝলসানো ভয়ঙ্কর সে মুখ।এক পলক তাকালে বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিতো।সে বাগানে হেঁটে বেড়াতো,কখনো বা দেখা যেতো পুকুরপাড়ে।এমনকি মাঝেমাঝে আমার বারান্দায়ও দেখতে পেতে শুরু করলাম রাবেয়াকে।কিন্তু মুখফুটে কাউকে কথাগুলো বলতে পারতাম না।শেষে পাগল ভেবে বসে কিনা?দেখা যেতো,আমি রুমে বসে নিশিকে নিয়ে প্রাণ খুলে কথা বলছি।আর তখনই রাবেয়া জানালার পাশে এসে দাঁড়াতো।তার চোখেমুখে রাজ্যের ক্রোধ দেখে আমি ঠিকমতো কথা বলতে পারতাম না।ভয়ে চুপসে যেতাম বিছানার কোণে।আমাকে নিয়ে বাড়ির সবার মাঝে ফিসফিসানি শুরু হয়ে গেল।নিশিই অবশ্য আমার পাগলামি আচরণের কথা তাদের বলে দেয়।বড়চাচা প্রায়ই জিজ্ঞেস করতো,তোর কি মাথায় যন্রণা হয়?আমার লজ্জায় অপলক চেয়ে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না।ছোটরাও আড়ালে আমাকে পাগল বলে উপাধি দিল।আমি যেন এক অন্যরকম নরকে বসবাস করতে লাগলাম।
এক শুক্রবার বিকালের ঘটনা।বাড়ির ছেলে-বুড়ো সবাই আমার এক চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে খেতে পাশের গ্রামে যায়।আমার সকাল থেকে জ্বর থাকার কারণে যেতে রাজি হইনি।দেখাশোনা করার জন্য বাবা নিশিকে থেকে যেতে বললেন।নিশিও আর না করেনি।সবাইকে বিদায় দিয়ে বাড়িতে থেকে গেল।দুজনে খোশ মেজাজে গল্প করে দিনটা পার করে দিলাম।দুপুরের পর শরীর ভালো লাগতে শুরু করল আমার।বিছানা ছেড়ে উঠানে পায়চারি করতে লাগলাম।বিকালের দিকে নিশি বলল,তার নুডলস খেতে ইচ্ছে করছে।আমাদের বাড়ি থেকে দোকান বেশ ভালোই দূরে ছিল।গায়ে জামা পড়ে নুডুলস আনতে বাজারে গেলাম।আর এটাই যেন আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।নুডলস নিয়ে উঠোনে ঢুকতেই ভীষণরকম ভিড়মি খেলাম।উঠোন জুড়ে ছোপছোপ রক্তের দাগ।ডিমপাড়া লাল মুরগিটা এককোনায় নিথর হয়ে পড়ে আছে।আর পোষা বিড়ালটার মাথা থেঁতলানো।হাত থেকে নুডলসের প্যাকেট পড়ে গেল আমার।নিশিকে জোরেজোরে ডাকতে শুরু করলাম।কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না।এমন সময়ে গোঁগোঁ একটা শব্দ শুনতে পেলাম রুম থেকে।ভয়ে আমার শরীর চলছিল না।একা বাড়িতে অঘটন ঘটে গেলে কে আসবে আমাকে বাঁচাতে?এমন দোটানার মাঝে গোঁগোঁ শব্দটা আরও বেড়ে গেল।আমি ধীরপায়ে দরজা সরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লাম।বাবার রুম পেরিয়ে আমার রুমের দরজার সামনে আসতেই চোখদুটো এক জায়গায় এসে থেমে গেল।নিশি গলায় দড়ি দিয়ে ফ্যানে ঝুলে আছে।তার চোখদুটো একদম স্থির।আর ঠিক তার নিচে বসে আছে রাবেয়া।তার হাতে আমাদের বিয়ের আংটি।বলছে,"কখনো ভালো থাকতে দিব না।আমার আত্মা বড্ড কষ্টে আছে রে।"
আর সহ্য করতে পারলাম না।লুটিয়ে পড়লাম মাটিতে।তাহলে কি সত্যিই রাবেয়া ফিরে এসেছে?আমার সাথে এতদিন যা ঘটেছিল তা কল্পনা ছিল না।একদম দিনের আলোর মতো পরিষ্কার ছিল?কিন্তু মৃত্যুর পর মানুষের তো ফিরে আসা সম্ভব নয়।তাহলে রাবেয়া ফিরে আসলো কিভাবে?আর রাবেয়া মারা গিয়েছিল ফাঁসিতে ঝুলে।তবে তার মুখ ঝলসে গেল কিভাবে?
............চলবে.............
পর্ব:০১
written by Habib Khan Hridoy






Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)