রিশফা পর্ব - ০৫

@Admin
0

 


**রিশফা**
গালিব আবরার
পঞ্চম পর্ব
লোকটা আমার মুখের সামনে এসে ঠান্ডা নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বললো " আমি ডোরিয়া.....!
**আমি যেনো হতভম্ব হয়ে গেলাম। চোখ বড় করে শুধু তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
এরপরে অদ্ভুত একটা হাসি দিয়ে আমার চোখের সামনে সে কালো ধোয়ার মতো বাতাসে মিশে গেলো।
এখানে সবকিছু-ই যেনো আমার বিরুদ্ধে চলছে। আমি মনে মনে ঠিক করেই নিলাম এ থেকে বাঁচার কোনো রাস্তা নেই। কিন্তু এতো সহজে হার মানবো না আমি। সবাইকে দেখে নিবো।
হাতে ভর দিয়ে উঠতে যাবো এমন সময় হাত টা কাদা মাটির মতো কিছুতে দেবে গেলো। হাত বের করে আনলাম। এগুলো কি লেগে আছে হাতে। এতক্ষণে খেয়াল করলাম আমি গাছের গোঁড়া মনে করে তার সাথে যেখানে বসে ছিলাম সেটা আসলে একটা মানুষের মৃতদেহ। আমি তাড়াহুড়ো করে সেখান থেকে উঠে গেলাম।
খেয়াল করে দেখলাম মৃতদেহ টার শরীরে মাথা নেই। অনেকদিন আগে মারা যাওয়ার কারণে পঁচে গিয়েছে দেহ টা। এ জন্যই আমার হাত দেবে গিয়েছিলো। খুব খারাপ একটা গন্ধ নাকে ভেসে এলো। মনে হলো যেনো আমার ভিতরের সবকিছু উল্টে চলে আসবে বমির সাথে।
নাক চেপে সেখান থেকে দৌড় দিলাম। যেভাবেই হোক আমাকে পালাতে হবে। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ আমার জামা টেনে ধরে আবার সেই পঁচা লাশের কাছে নিয়ে ফেললো।
কোকরাতে কোকরাতে আবার উঠে দাড়িয়ে বললাম " আমাকে কি এখন-ই মেরে ফেলবি নাকি। আমাবস্যা পর্যন্ত অপেক্ষা কর....!
হঠাৎ আমার নাম ধরে কেউ ডাক দিলো " গালিব তুই চাইলে বাঁচতে পারবি। আমি তোকে ওদের হাত থেকে বাঁচার উপায় বলে দিবো....।
এটদ তো আবিরের কন্ঠ। আবির কোথায় তুই। সামনে আয় শা*লা। তুই আমাকে কোথায় এনে ফাঁসিয়ে দিলি....।
ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো " আমি বাধ্য ছিলাম এটা করার জন্য। আমাকে ক্ষমা করে দিস। এই দেখ এখানে আমি। আমাকে বের কর এখান থেকে।
আমি আবিরের কন্ঠের উৎস খুঁজতে লাগলাম। কোথা থেকে কথা বলছে ও। হঠাৎ চোখ পড়লো একটা কাপড়ের ব্যাগের দিকে। এটা তো সেই ডোরিয়া নামের পিচাশ টা নিয়ে এসেছিলো। সে কি ব্যাগ টা নিতে ভুলে গিয়েছে নাকি ইচ্ছে করেই ফেলে গেছে।
আমি গিয়ে ব্যাগ টা হাতে নিলাম। ভিতরে ফুটবলের মতো কিছু একটা লাগছে। ব্যাগ টা উল্টো করে ঝাঁকি দিতেই একটা মানুষের কাঁটা মাথা ধপাস করে গড়িয়ে একটু সামনে গিয়ে পড়লো।
আমি চমকে উঠলাম। এটা কার মাথা হতে পারে। ধীরে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম। হঠাৎ আবিরের কন্ঠ " এটা আমার কাঁটা মাথা গালিব। আর ঐখানে যে পঁচা গলা লাশটা পড়ে আছে সেটা আমার মৃতদেহ....।
**মানে কি বলছিস তুই। তোকে কি তারা মেরে ফেলেছে...?
এবার আবির আমার সামনে দৃশ্যমান হলো একটা সাদা আলোর মতো। আবির বললো " গত আমাবস্যায় আমি ছিলাম রিশফার শিকার। তোর মতো সাহসী ছিলাম না আমি। তাই আমি এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারি নি। কিন্তু তুই বাঁচতে পারবি চেষ্টা করলে। কারণ তুই-ই একমাত্র যে ঐ বিল্ডিং থেকে বের হতে সফল হয়েছিলি।
আবিরের মৃত্যুর কথা শুনে কষ্ট লাগলেও খুব রাগ উঠলো।
তুই আমাকে কেন এর ভিতর টেনে আনলি। আমি ছাড়া অন্য কাউকে পেলি না।
আবির বললো " আমি তোকে টেনে আনি নি। রিশফা যাকে ডোরিয়ার উদ্দেশ্যে বলি দেয় তারপরের বলির জন্য ঐ মানুষটার সবচেয়ে কাছের বন্ধু-কে টার্গেট করে। আমাকে বলি দেওয়ার পর তুই রিশফার টার্গেটে চলে আসলি কারণ আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু তুই-ই।
**তোর মতো কাছের বন্ধুর কপালে ঠাডা পরুক। তুই যদি এখন অল্প একটুও বেঁচে থাকতি আমি তোকে পুরো মেরে ফেলতাম।
যাই হোক এখন আমাকে বল রিশফার কাছ থেকে আমি কিভাবে বাঁচতে পারি। শুধু আমি না। আমি চাই এই রিশফার চ্যাপটার এখানেই ক্লোজ করতে। আর কাউকে যেনো সে তার শিকার বানাতে না পারে। এর জন্য যা দরকার হয় তাই করবো.....!
আবির বললো " রিশফা-কে হারাতে হলে তোর একটা কাজ করতে হবে। কিন্তু এই কাজ টা সেদিন-ই করতে হবে যেদিন রিশফা তোকে বলি দেওয়ার জন্য ডোরিয়ার সামনে হাজির করবে। মানে সেই আমাবস্যার রাতে।
আমি প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকালাম আবিরের দিকে...?
**কাজ টা হলো সেই ওয়াশরুমের আয়না। ঐ আয়নার মাঝেই রিশফার আত্মা বন্দি হয়ে আছে। তুই যদি ঐ আয়না টা ভেঙে ফেলতে পারিস এবং ভাঙা যে কোনো একটা টুকরো দিয়ে রিশফার শরীরে আঘাত করতে পারিস তাহলেই রিশফার আত্মা মুক্ত হয়ে যাবে। এবং মানুষ মরার পর যেখানে যায় সেখানে চলে যাবে এই পৃথিবী ছেড়ে। সাথে এই পর্যন্ত যাদেরকে মেরেছে তাদের আত্মাও মুক্তি পাবে। আমি সহ...।
**এটা কি সম্ভব। আয়না ভেঙে রিশফার শরীরে আঘাত করতে হবে। এটা কি করে হবে। আমি তো এখনো বেঁচে আছি। তুই তো মরে ভূত হয়ে গেছিস। তুই এটা করে রিশফাকে মুক্ত করছিস না কেন।
আবির বললো " আমি পারবো না এটা করতে। এটা শুধু জীবিত মানুষ-ই করতে পারবে। আর মৃত্যুর পর অনেক কাজ চাইলেও করা যায় না। আর আমার বিশ্বাস তুই-ই এটা করতে পারবি। কারণ তোকে এখনো তারা ভয় দেখাতে পারে নি...।
**হ্যাঁ না পারলে আর কি। মরে ভূত হয়ে আবার অন্য কারো মরার জন্য অপেক্ষা করবো। তবে আমি তোর কাছে একটা কথা জানতে চাই। রিশফা কিভাবে মারা গিয়েছিলো তুই কি জানোস...?
**প্রতিদিনের মতো সেদিনও রিশফা স্কুল থেকে ফিরছিলো। হঠাৎ সে দেখতে পেলো তার ক্লাসের তিন-চার জন ছেলে পুরনো মন্দিরের পিছনের দিকে যাচ্ছে। রিশফা কৌতুহল বশত চুপিচুপি তাদের অনুসরণ করলো। মন্দিরের পিছনের দিকে গিয়ে ছেলেগুলো একটা নির্জন জায়গায় বসলো। তারপর একটা ব্যাগ থেকে ইনজেকশন বের করে তার ভিতর কিছু ভরে নিজেদের শরীরে পুশ করছে। এটা দেখে রিশফা বুঝতে পারলো ছেলে গুলো ড্রাগ নিচ্ছে।
রিশফা সাহস করে তাদের সামনে গেলো। রিশফাকে দেখে সবাই চমকে গিয়ে তাড়াতাড়ি সব লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করলো।
রিশফা বললো " লুকিয়ে লাভ নেই। আমি যা দেখার দেখে ফেলেছি। তোদের লজ্জা করে না এই বয়সে এসব করছিস। আমি কালকেই স্কুলে গিয়ে স্যার-এর কাছে বিচার দিবো তোদের নামে।
ছেলেগুলো কয়েকবার অনুরোধ করলো রিশফাকে যেনো স্যার-কে না বলে। কিন্তু রিশফা বললো আমি বলবোই।
এই বলে চলে আসছিলো এমন সময় তারা রিশফাকে মুখ চেপে ধরে হাত পা বেঁধে ফেলে। রিশফা চিৎকার করতে পারছে না কারণ একজন তার মুখ টাকে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছিলো। তারপর রিশফার মুখ হাত পা বেঁধে ফেললো তারা। মুখের ভিতর লতাপাতা ঢুকিয়ে রিশফার স্কার্ফ দিয়ে মুখটাও বেঁধে ফেললো। এবার রিশফার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো ধীরে ধীরে। তার রিশফাকে তুলে জঙ্গলের দিক দিয়ে রিশফাদের বাড়ির পিছনে নিয়ে এসে নালার ভিতর ফেলে দিলো। রিশফা হাজার চেষ্টা করেও সেদিন বাঁচতে পারে নি.....।
**তাহলে এই ছিলো রিশফার মৃত্যু রহস্য। যারা ওকে মেরে ফেললো তাদের কে না মেরে আমাদের মতো সহজ সরল মানুষ-কে মারছে কেন সে।
আবির বললো " তোর কি মনে হয় তারা এখনো বেঁচে আছে। তাদের শরীর টুকরো টুকরো করে রিশফা খেয়ে নিয়েছে। লাশের খোঁজও পায় নি তাদের মা বাবা রা....।
**আচ্ছা সব-ই বুঝলাম। কিন্তু একটা বিষয় আমার মাথায় ঢুকছে না এখনো। তুই আমার কাছে আসলি এবং আমাকে রিশফা থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিলি। রিশফা কবলে থেকেও এটা কিভাবে করলি। রিশফা যদি এটা জানে তাহলে কি হবে....?
আবির হাসি দিয়ে বললো " এটা নিয়ে তোর চিন্তা করার দরকার নেই। কারণ রিশফা-ই আমাকে তোর কাছে পাঠিয়েছে। যাতে তুই বাঁচতে পারিস..........💀💀💀
#রিশফা
Continue.....
Written by: Galib Abraar



Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)